ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

পাট, সবজি ও বীজতলার ব্যাপক ক্ষতি

ভারি বৃষ্টি ও উজানের ঢলে হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দী

প্রকাশিত: ০৫:৪৫, ২৫ জুন ২০১৬

ভারি বৃষ্টি ও উজানের ঢলে হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দী

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ ভারি বৃষ্টি, উজান থেকে নেমে আসা পানির ঢল ও জোয়ারের ফলে দেশের বিভিন্ন নদ-নদীর পানি বেড়ে বন্যা দেখা দিয়েছে। কুড়িগ্রামের অন্তত ৩০ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। এই জেলার পাট, সবজি, কলা ও আমন বীজতলার ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। গ্রামীণ সড়ক ডুবে যাওয়ায় যোগাযোগ ব্যবস্থা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। জোয়ারের পানির চাপে সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার ছয় গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। ফরিদপুর শহর রক্ষা বাঁধের অন্তত ৭৩ মিটার নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ফলে এলাকাবাসীর মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। নীলফামারীর ডালিয়া পয়েন্টে শুক্রবার তিস্তার পানিপ্রবাহ বিপদসীমার ১৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হলেও পানি বৃদ্ধি অব্যাহত ছিল। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় তিস্তা ব্যারাজের ৪৪টি জলকপাট খুলে রাখা হয়েছে। উজানের ঢলে ফুঁসে ওঠা তিস্তার গতিপথ পরিবর্তনে নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার ২০ হাজার মানুষ চরম আতঙ্কে রয়েছে। খবর স্টাফ রিপোর্টার ও নিজস্ব সংবাদদাতার। কুড়িগ্রাম ॥ বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলের কারণে কুড়িগ্রামে প্রধান নদ-নদীর পানি বেড়েই চলছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ধরলার পানি কিছুটা কমলেও পানি বেড়েছে ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা ও দুধকুমারে। ফলে ব্রহ্মপুত্র অববাহিকার প্রায় অর্ধশত চরের নিম্নাঞ্চল নতুন করে প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দী হয়েছে অন্তত ৩০ হাজার মানুষ। পাশাপাশি পাট, সবজি, কলা ও আমন বীজতলার ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। অনেক এলাকায় গ্রামীণ সড়ক ডুবে যাওয়ায় যোগাযোগ ব্যবস্থা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তা নুরুল হক জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় ধরলায় ১৪ সেন্টিমিটার পানি কমলেও এখনও বিপদসীমার কাছাকাছি রয়েছে। এ সময়ে কাউনিয়া পয়েন্টে তিস্তায় ৪২ সেমি, দুধকুমারে ২৩ সেমি ও ব্রহ্মপুত্রে ১৪ সেমি পানি বেড়েছে। প্রায় ৩-৪ দিন পানিবন্দী থাকার পরও এখন পর্যন্ত কোন সরকারী সহায়তা মেলেনি বন্যার্তদের ভাগ্যে। রোজার মাসে আয় রোজগার ও রান্না বন্ধ হওয়ায় কষ্টে আছে দিনমজুুর পরিবারগুলো। নীলফামারী ॥ ভারি বর্ষণ ও উজানের ঢলে তিস্তা নদীর পানি ফের বৃদ্ধি পেতে শুরু করেছে। শুক্রবার বিকেল ৬টা থেকে ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানিপ্রবাহ বিপদসীমার (৫২ দশমিক ৪০ মিটার) ১৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হলেও পানি বৃদ্ধি অব্যাহত ছিল। এই পয়েন্টে ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে ৬৪ মিলিমিটার। এছাড়া গত বুধবার এই পয়েন্টে তিস্তা বিপদসীমার ২৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। এরপর ২৪ ঘণ্টার মাথায় তিস্তা বিপদসীমার ৩৬ সেন্টিমিটার নিচে নেমে এসেছিল। এলাকাবাসী জানায়, নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় তিস্তা অববাহিকার চর ও চরবেষ্টিত গ্রামের মানুষ নিরাপদ স্থানে সরে যেতে শুরু করেছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেন ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোস্তাফিজার রহমান। তিনি জানান, পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় তিস্তা ব্যারাজের ৪৪টি জলকপাট খুলে রাখা হয়েছে। এদিকে উজানের ঢলে ফুঁসে ওঠা তিস্তা নদীর গতিপথ পরিবর্তনে নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার টেপাখড়িবাড়ি ও লালমনিরহাট জেলার সানিয়াজান এলাকার ২০ হাজার মানুষ এখন চরম আতঙ্কে। ওই এলাকা রক্ষার জন্য এলাকাবাসী স্বেচ্ছাশ্রমে এক হাজার মিটার বালির বাঁধ নির্মাণ করেছিল, তা রক্ষা করা অসম্ভব হয়ে উঠেছে। ফলে ওই এলাকার মানুষ ঘর ভেঙ্গে অন্যত্র সরে যেতে শুরু করেছে। শুক্রবার সকাল থেকে ওই বাঁধের আরও দুই শ’ মিটার বিলীন হয়। এছাড়া বিকেলে তিস্তা নদীতে বিলীন হয় টেপাখড়িবাড়ি ইউনিয়নের চরখড়িবাড়ি মধ্য সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়টির পুরাতন ভবনটি। এতে স্কুলের নতুন ভবনটিও হুমকির মুখে পড়েছে। এদিকে তিস্তার পানি বৃদ্ধি পেতে থাকায় ডিমলা ও জলঢাকা উপজেলার প্রায় ৪০ হাজার মানুষ দুর্ভোগে পড়েছে। সাতক্ষীরা ॥ প্রবল জোয়ারের পানির চাপে সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলায় খোলপেটুয়া নদীর বেড়িবাঁধ ২শ’ ফুট এলাকাজুড়ে ভেঙ্গে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। বাঁধ ভাঙ্গা পানিতে উপজেলার ছয়টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। ভেসে গেছে প্রায় তিন হাজার বিঘা জমির মৎস্য ঘের। শুক্রবার দুপুর আড়াইটার দিকে উপজেলার প্রতাপনগর ইউনিয়নের কোলাগ্রাম সংলগ্ন ৪নং পোল্ডার এলাকায় বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। এতে প্রতাপনগর ইউনিয়নের কোলা, হিজলিয়া, মাড়িয়ালা, হাজরাখালী, কলিমাখালী ও লাঙলদাড়িয়া গ্রাম প্লাবিত হয়। ফরিদপুর ॥ ফরিদপুরে শহর রক্ষা বাঁধের ৭৩ মিটার পদ্মা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ফরিদপুর সদরের আলীয়াবাদ ইউনিয়নের পূর্ব আলীয়াবাদ গ্রামের অংশে এ ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় এলাকাবাসীর মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। এলাকাবাসী জানান, বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে পদ্মা নদীর তীর সংরক্ষণ কাজের (যা শহর রক্ষা বাঁধ হিসেবে পরিচিত) ব্লক ধসে পড়া শুরু করে। ধসে পড়ার দুই ঘণ্টার মধ্যে ৭৩ মিটার অংশ ব্লক ও জিওব্যাগসহ নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। ওই এলাকার ইউপি সদস্য বাবুল সর্দার জানান, অনেক গভীর হয়ে ভয়াবহ ভাঙ্গন হয়েছে। ভাঙ্গন স্থানে পানির গভীরতা প্রায় ৩০ মিটার। তাই জরুরীভিত্তিতে এ ভাঙ্গন রোধে ব্যবস্থা নেয়া না গেলে পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করবে।
×