ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

ঈদের কেনাকাটা

ছুটির দিনে বিপণি বিতান, শপিংমলে উপচেপড়া ভিড়

প্রকাশিত: ০৫:৪৪, ২৫ জুন ২০১৬

ছুটির দিনে বিপণি বিতান, শপিংমলে উপচেপড়া ভিড়

রহিম শেখ ॥ হাতেগোনা ক’দিন বাদেই ঈদ। ক্রেতা সমাগম আর উপচেপড়া ভিড়ে জমে উঠেছে ঈদ বাজার। ধনী-গরিব সবাই এখন ঈদের কেনাকাটায় মহাব্যস্ত। ঈদের আগে শুক্রবার আছে মাত্র আর একটি। তাই রমজানের তৃতীয় শুক্রবারেই দেখা গেল জম্পেশ কেনাকাটার চিত্র। ছুটির দিন হওয়ায় রাজধানীর মার্কেট, বিপণিবিতান, শপিংমল থেকে শুরু করে ফুটপাথ জুড়ে ছিল ক্রেতার উপচেপড়া ভিড়। মূলত সকাল থেকেই মানুষের ভিড় বাড়তে থাকে। দুপুর গড়িয়ে বিকেলের দিকে মানুষের ভিড় জনস্রোতে পরিণত হয়। দিনভর যানবাহনের অতিরিক্ত চাপে নগরীর শপিংমলগুলোর মূল সড়কে ছিল প্রচ- যানজট। তারপরও ভোগান্তির সীমারেখা পাড়ি দিয়ে সবাই চেষ্টা করেছেন সাধ আর সাধ্যের সবটুকু দিয়ে ঈদের কেনাকাটায় ভাল জিনিসটি নিয়ে ঘরে ফিরতে। ক্রেতার এমন বাড়তি চাপ দেখে খুশি বিক্রেতারাও। রাজধানীর বিপণিবিতান, ফ্যাশন হাউস, শপিংমল, মার্কেট ও ফুটপাথ ঘুরে দেখা যায়, দিনভর মানুষ ও যানবাহনের বাড়তি চাপে মার্কেটের ভিড় এসে ঠেকেছে রাজপথে। দিনভর নিউমার্কেট ও আশপাশের মার্কেটে ক্রেতারা ঢুকেছেন স্রোতের মতো। অনেকেই গাড়ি নিয়ে কেনাকাটা করতে এসে গাড়ি পার্ক করার জায়গা পাননি। ওই এলাকায় অসহনীয় যানজটের মধ্যেই কেনাকাটা করেছেন সব শ্রেণী-পেশার মানুষ। রাজধানীর সবচেয়ে বড় শপিংমলখ্যাত বসুন্ধরা সিটিকে কেন্দ্র করে পান্থপথ, ফার্মগেট, কাওরানবাজার মোড়ে যানবাহন আটকে ছিল দীর্ঘ সময়। ফলে তীব্র যানজটে লোকজনকে দুর্ভোগ পোহাতে হয়। দুপুর থেকেই বসুন্ধরা সিটির সামনে সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দেয়া হয়। লেখা ছিল ‘পার্কিং পরিপূর্ণ’। নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা সাবেক সেনাসদস্য আবদুল আজিজ জনকণ্ঠকে জানান, ঈদ যত ঘনিয়ে আসছে ভিড় ততই বাড়ছে। ছুটির দিন হওয়ায় সকাল থেকে ক্রেতা সমাগম বেড়েছে। দুপুরের আগেই পূর্ণ হয়ে গেছে প্রায় আড়াই লাখ বর্গফুটের বিশাল পার্কিং। ভিড়ভাট্টা ঠেলে বসুন্ধরা সিটিতে প্রবেশের পরও একই চিত্র। স্রোতের মতোই মানুষ ঢুকছেন আর বেরুচ্ছেন। শুক্রবার সরেজমিন রাজধানীর নিউমার্কেট, ধানম-ি হকার্স মার্কেট, চাঁদনী চক ও গাউসিয়াসহ আশপাশের সব কয়টি মার্কেটে গিয়ে দেখা যায়, ছুটির দিন হওয়ায় সকাল থেকে ক্রেতা সমাগম বেড়েছে। ভিড়ভাট্টা ঠেলে একাধিক মার্কেটে প্রবেশের পরও একই চিত্র। মানুষ আর মানুষ। বিক্রেতারা জানান, মূলত মেয়েদের থ্রি-পিস ও শাড়ি বেশি বিক্রি হচ্ছে। তাই নারী ও তরুণীদের ভিড় মার্কেটে সবচেয়ে বেশি। তবে ছেলেদের পোশাক আশাকও বিক্রি হচ্ছে। বিক্রেতারা জানালেন, এখন ভিড় যেমন বাড়ছে, তেমনি বিক্রিও বেড়েছে। গাউসিয়া, চাঁদনী চক, ধানম-ি হকার্স ও নিউমার্কেটে ঈদ উপলক্ষে এবারও বিক্রি হচ্ছে ভারতীয় হিন্দী ছবি, সিরিয়াল ও নায়িকাদের নামে ট্যাগ করা পোশাক। এছাড়া আধুনিক ও নতুন নতুন ডিজাইনের ভারতীয়, পাকিস্তানী ও দেশী সেলাই করা এবং সেলাইবিহীন থ্রি-পিসও বিক্রি হচ্ছে বিপণিবিতানগুলোতে। এবারের ঈদে থ্রি-পিসের মধ্যে ইন্ডিয়ান কাসিস, বিনয় ও এলটি থ্রি-পিসের চাহিদা বেশি। মার্কেটে বাচ্চাদের পোশাক কেনার জন্য অনেক বাবা-মা আসছেন শিশুকে সঙ্গে নিয়ে। গাউসিয়াতে এবারের ঈদে থ্রি-পিসসহ অন্য কাপড়ের সঙ্গে রয়েছে বাহারি রঙের শাড়ি। প্রতিটি মার্কেটে দেশী কাপড়ের চেয়ে ইন্ডিয়ান শাড়ি ও থ্রি-পিসের চাহিদা বেশি। তবে দেশী জামদানি ও সুতি শাড়ির চাহিদা রয়েছে। বিক্রেতারা জানালেন, এবারের ঈদের মূল আর্কষণ হচ্ছে ইন্ডিয়ান কাতান শাড়ি। হালকা ও ভারি রংয়ের কাজের মিশ্রণ রয়েছে শাড়িগুলোতে। দাম সর্বনিম্ন ৩ হাজার থেকে ৫০ হাজারের মধ্যে। গাউসিয়ায় শাড়ির দোকানে কথা হয় বিক্রেতা মোঃ ইব্রাহীমের সঙ্গে। তিনি বলেন, আগের তুলনায় বিক্রি বেড়েছে। ভিড় বেশি হওয়ায় ক্রেতাদের সঙ্গে খুব বেশি কথা বলা সম্ভব নয় বলে এই বিক্রেতা জানান। নিউমার্কেটের একটি শাড়ির দোকানে কথা হয় আতিকা ইসলাম নামের এক নারীর সঙ্গে। তিনি বলেন, প্রতি ঈদেই শাড়ি কিনি। তাই এবারও পছন্দের তালিকায় রয়েছে শাড়ি। কাতান শাড়িই কিনব। কারণ কাতান শাড়ি ঈদ ছাড়াও যে কোন অনুষ্ঠানে পরা যায়। দেখতেও খুব সুন্দর লাগে। ধানম-ির এলাকার বাসিন্দা জাকিয়া সুলতানার সঙ্গে কথা হয় নিউমার্কেটের নিচে। তিনি জানান, অনেক ঘুরেফিরে তার এবং শাশুড়ির জন্য তিনটি শাড়ি কিনেছেন। গতবারের চেয়ে এবার দাম একটু বেশি বলে তিনি জানান। নিউমার্কেটের চাঁদনী চক মার্কেটের চিশতী ফ্যাশনের মালিক আবিদুর রহমান জনকণ্ঠকে জানান, পাঞ্জাবি, শাড়ি, থ্রি-পিস, ফতুয়া এবং শিশুদের পোশাক বেশি বিক্রি হচ্ছে। নিজের পছন্দের রঙের মধ্যে ছেলেরা যেমন বাছাই করছেন ভিসকোস বা কাতানের পাঞ্জাবি তেমনি মেয়েরাও পছন্দ করছেন লম্বাটে জামার মধ্যে হরেক রকমের নক্সার কামিজ বা কুর্তা। অনেক তরুণী সালোয়ার কামিজের চেয়ে গুরুত্ব দিচ্ছেন লেগিংস চুড়িদারের প্রতি। তবে ঈদ গরমে হওয়ায় সব বয়সের বেশিরভাগ ক্রেতার আগ্রহ সুতির কাপড়ের প্রতি। ঢাকার সবচেয়ে বড় বিপণিবিতান বসুন্ধরা সিটি ও যমুনা ফিউচার পার্কে উচ্চবিত্ত, মধ্যবিত্ত ও উচ্চ-মধ্যবিত্ত ক্রেতাই বেশি যান বলে বিক্রেতারা জানান। এ দুটি বিপণিবিতানের বিভিন্ন দোকানে আছে দরকারি ও বিলাসবহুল সব পণ্যের বিশাল সমাহার। শুক্রবার প্রতিটি দোকানেই ছিল উপচেপড়া ভিড়। তরুণদের পাঞ্জাবি, শার্ট, প্যান্ট, জুতার দোকানে ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। বসুন্ধরা সিটি শপিংমলের ইনফিনিটির ব্যবস্থাপক আনোয়ার হোসেন জনকণ্ঠকে জানান, গত শুক্রবারের তুলনায় ক্রেতা ও বিক্রির পরিমাণ দুটোই বেড়েছে। ছেলেদের পাঞ্জাবি ও প্যান্ট এবং মেয়েদের পোশাক বিক্রি হচ্ছে ভালই। এদিকে বসুন্ধরা শপিংমল, কর্ণফুলী গার্ডেন সিটি, পলওয়েল শপিংমল সরেজমিনে দেখা গেছে, অধিকাংশ দোকানের সামনে ‘নো চেঞ্জ’, ‘ফিক্সড প্রাইস’ সংবলিত ব্যানার ও স্টিকার সাঁটানো। বেচাকেনার ব্যস্ততায় বিক্রি করা কাপড় পরিবর্তন, দর কষাকষি এড়িয়ে বিক্রি করতে এমন কৌশল নিচ্ছেন দোকানিরা। ঈদ উপলক্ষে কয়েকদিন ধরে বেচাকেনায় দম ফেলার সময় নেই দোকানিদের। এক সময় বেইলি রোডের নাম শুনলে চোখে ভাসত নাটকের মঞ্চ। তাই রোডের নাম রাখা হয়েছে নাটক সরণি। এখন নাটক সরণি দেশী পোশাকের অন্যতম জনপ্রিয় বাজার হিসেবে পরিগণিত। ভারতীয় পোশাকের ভিড়ে দেশীয় পোশাকের প্রাপ্তি হিসেবে নাটক সরণির সুনাম চারদিকে ছড়িছে গেছে। নাবিলা শাড়ি কমপ্লেক্সে পাওয়া যাচ্ছে টাঙ্গাইলের ঐতিহ্যবাহীর সুতি কাপড়ের কানাইয়া শাড়ি। এক রঙা এ শাড়ির পাড় ও আঁচলে রয়েছে সুতার ভারি কাজ। দাম পড়ছে সাড়ে ৫ হাজার টাকা। এছাড়া এ দোকানের উল্লেখযোগ্য শাড়ির মধ্যে কালেঙ্গা সিল্ক আড়াই থেকে সাড়ে ৪ হাজার, পারাপার কাতান সাড়ে ৩ হাজার থেকে ৮ হাজার, বলরাম সিল্ক ২ থেকে সর্বোচ্চ সাড়ে ৩ হাজার, মিরপুরের তাঁতীদের তৈরি জমলট কাতান আড়াই থেকে সাড়ে ৩ হাজার এবং ক্লিওপেট্রা টাঙ্গাইল সাড়ে ৩ হাজার থেকে সাড়ে ৬ হাজার টাকার মধ্যে। এবারে ঈদ বাজারে লেনদেন ৩৫ হাজার কোটি টাকা! রাজধানীর গুলিস্তান, পল্টন, মতিঝিল, বায়তুল মোকাররম, মৎস্য ভবন রোড, ফার্মগেট, মিরপুর-১, মিরপুর-১০, যাত্রাবাড়ীসহ রাজধানীর প্রায় সব ফুটপাথে ক্রেতার উপচেপড়া ভিড় ছিল কাল। ছুটির দিনে জমে উঠে ফুটপাথের দোকানগুলোও। নিম্ন ও স্বল্প আয়ের মানুষের কেনাকাটার ভরসা ফুটপাথ। ফুটপাথে তিন শ’ টাকায় পাঞ্জাবি বিক্রি করা হচ্ছে। যদিও বায়তুল মোকাররমের সামনের ফুটপাথে সর্বনিম্ন ২৫০ থেকে ৫০০ টাকা দামের পাঞ্জাবি পাওয়া যাচ্ছে। এছাড়া শার্ট বিক্রি হচ্ছে ২৫০-৪৫০ টাকা। প্যান্ট ৩৫০-৫৫০, জুতা ৩০০-৫০০, স্যান্ডেল ১৫০-৩০০ এবং বাচ্চাদের বিভিন্ন আইটেমের পোশাক পাওয়া যাচ্ছে ১৫০ থেকে ৭০০ টাকায়। এছাড়া শাড়ি, লুঙ্গি, তরুণীদের থ্রি-পিস, জুতা ও কসমেটিক্স ফুটপাথে বিক্রি হচ্ছে।
×