ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

কাজী শাহাদাত

মেঘনা পাড়ের সাহিত্য

প্রকাশিত: ০৬:৫৮, ২৪ জুন ২০১৬

মেঘনা পাড়ের সাহিত্য

অন্যান্য জেলার মতোই মেঘনা পাড়ের চাঁদপুর শিল্প-সাহিত্য ও সংস্কৃতি চর্চায় সমৃদ্ধ। ইতিহাসের সূত্র ধরে কেউ কেউ এ জেলাকে চাঁদ সওদাগরের জেলা, কেউ কেউ ঐতিহ্যের রেশ ধরে চাঁদপুরকে ইলিশের রাজধানী চিহ্নিত করে থাকেন। সারাদেশে চাঁদপুরের সুখ্যাতি যেমন ইলিশের সুস্বাদের জন্য রয়েছে, তেমনি শিল্প-সাহিত্য চর্চায়ও জাতীয় সাহিত্যে চাঁদপুরের রয়েছে একটি সম্মানজনক অবস্থান। চাঁদপুরে সাহিত্য চর্চার ইতিহাস নেহায়ত এক শ’-দু’শ’ বছরের নয়, বরং সেই মধ্যযুগ থেকে, মহাকবি আলাওলের আবির্ভাবের পূর্ব হতেই এ অঞ্চলে সাহিত্যচর্চা শুরু হয়েছিল। এ প্রসঙ্গে কবি দোনা গাজীর নাম না বললেই নয়। ধরতে গেলে মধ্যযুগের সাহিত্যচর্চায় দোনা গাজী একাই তাঁর সয়ফুলমূলক-বদিউজ্জামাল গ্রন্থের মাধ্যমে বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে চাঁদপুরের নামকে উজ্জ্বল করে রেখেছেন। দোনা গাজীর পরবর্তী সময়ে মরমী সাধক কবি মীর্জা হুসেন আলী, কবিয়াল মনি জয়চন্দ্র, কালশশী চক্রবর্তী, কালীমোহন ঘোষ, প-িত হীরেণ দত্ত, রাসমোহন চক্রবর্তী, শৈলদেবী, ধীরেন্দ্র চন্দ্র দত্ত, কবি আবদুর রশিদ খান, সিরাজ উদ্দিন আহমেদ, অবনীমোহন চক্রবর্তী, চপলা বসু, সুলতান মাহমুদ, নিরঞ্জন মজুমদার প্রমুখ সাহিত্যিকদের সরব পদচারণার ফলস্বরূপ চাঁদপুরের শিল্প-সাহিত্য চর্চার গৌরবময় ধারা বর্তমানেও অব্যাহত রয়েছে। এ প্রবন্ধে সওগাত সম্পাদক মোহাম্মদ নাসির উদ্দিনের কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করা প্রয়োজন। সাহিত্যিক হিসেবে যতটা না, সওগাত সম্পাদক হিসেবে নাসির উদ্দিন বাংলা সাহিত্যের অগ্রগতিকে ত্বরান্বিত করতে তারচেয়ে বহুগুণ শক্তিশালী ভূমিকা পালন করেছেন। আমরা আমাদের জাতীয় কবি হিসেবে আজ যে নজরুলকে পাচ্ছি, সেই নজরুল কালজয়ী নজরুল হয়ে ওঠার পেছনে মোহাম্মদ নাসির উদ্দিনের অবদান যে কী অসামান্য ছিল তা সাহিত্যবোদ্ধামাত্রই স্বীকার করবেন। আর এ কারণেই সওগাত সম্পাদক নাসির উদ্দিন চাঁদপুরের সাহিত্যেই কেবল কৃতীজন নন, তিনিও জাতীয় সাহিত্যের একজন উজ্জ্বল ব্যক্তিত্ব। নাসির উদ্দিনের সঙ্গে সঙ্গে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের গুরুতুল্য ভারতের বিখ্যাত দেশ পত্রিকার সম্পাদক চাঁদপুরের কৃতী সন্তান সাগরময় ঘোষের কথাও বিশেষভাবে স্মরণযোগ্য। স্বাধীনতা পূর্ব ও স্বাধীনতা পরবর্তীতে চাঁদপুরের অনেক বরেণ্য সন্তান নিজের চর্চা ও সাধনার মাধ্যমে জাতীয় সাহিত্যে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখতে সক্ষম হয়েছেন। এঁদের মধ্যে কেউ কেউ একুশে পদক, বাংলা একাডেমি পুরস্কারসহ নানা সম্মান ও পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। স্বাধীনতা পূর্ব ও স্বাধীনতা পরবর্তীতে জাতীয় সাহিত্যে চাঁদপুরের যাঁরা বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখতে সক্ষম হয়েছেন তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছেন : বোরহান উদ্দীন খান জাহাঙ্গীর, নজরুল গবেষক প্রফেসর ড. রফিকুল ইসলাম সদ্য প্রয়াত বেগম পত্রিকার সম্পাদক নূরজাহান বেগম, মোহাম্মদ আবদুল কুদ্দুস, হীরেন্দ্রনাথ দত্ত (ছদ্ম নাম ইন্দ্রজিৎ), শান্তনু কায়সার, চারণ কবি সামছুল হক মোল্লা, আহমদ জামান চৌধুরী, ফখরুজ্জামান চৌধুরী, মুনতাসীর মামুন, নীলুফার বেগম, কামরুল হাসান শায়ক, শামসুল আরেফিন প্রমুখ। অগ্রজদের পথে হেঁটে এ জেলার নবীন লেখকরা সাহিত্যচর্চায় জাতীয় পর্যায়ে শক্তিশালী অবস্থান জানান দিতে সক্ষম হয়েছেন। বর্তমান সময়ে যারা লেখনশৈলী দিয়ে জাতীয় পর্যায়ে চাঁদপুরের প্রতিনিধিত্ব করছেন তাঁদের মধ্যে গীতিকার কবির বকুল, মিলন খান, ছড়াকার ফারুক হোসেন, হাসান মোস্তাফিজুর রহমান, গোলাম নবী পান্না, তারিক টুকু, মেহেদী উল্লাহ্, মনসুর আজিজ, সৌম্য সালেক, আহমেদ রিয়াজ, জামসেদ ওয়াজেদ, গাজী মুনছুর আজীজ, জব্বার আল নাঈম, রফিকুজ্জামান রনি, মুহাম্মদ ফরিদ হাসানের নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। চাঁদপুরের স্থায়ী বাসিন্দা না হলেও চাঁদপুরে অবস্থান করে লেখনশৈলীতে ব্যাপক পাঠকপ্রিয়তা অর্জন করেছেন পীযূষ কান্তি বড়ুয়া, ঈষাণ সামী প্রমুখ। তবে চাঁদপুরের সমকালীন সাহিত্যকর্মীরা জাতীয় বিভিন্ন দৈনিক, পাক্ষিক ও মাসিক সাহিত্যপত্র, লিটলম্যাগগুলোতে লিখলেও তারা উপন্যাস, প্রবন্ধ ও ছড়ার জমিনগুলো উল্লেখ করার মতো চাষবাষ করতে সক্ষম হননি। তবে এর পাশাপাশি এটাও স্বীকার্য যে, ভবিষ্যতে এ তিনটি শাখা নিয়েও বিস্তর কাজ করার ও নৈপুণ্য প্রদর্শনের সুযোগ এখনো উন্মুক্ত রয়েছে। গদ্যের চেয়ে চাঁদপুরের সাহিত্যিকরা যে কবিতায় ভাল করছেন এ কথা জোর দিয়ে বলা যায়। তাদের কবিতার ভাব ও বিষয়, চিন্তা ও মুখরতা, অনুভব ও প্রতিবাদের প্রকাশ বহুমুখী এবং বহুবিচিত্রতাকে ধারণ করে আছে। তারুণ্যের উচ্ছ্বাস ও নতুনত্বের পথে ধাবিতের যে সাধনা তার ছাপ সাম্প্রতিক কবিতাগুলোতে উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে। রূপক, উৎপ্রেক্ষা, উপমার নান্দনিক প্রয়োগে এ জেলার কবিরা সাম্প্রতিক ধারণ, শতবর্ষী ঐতিহ্যকে লালন এবং ভবিষ্যতের স্বপ্নকে আরাধ্য ও দৃষ্টিগোচর করে রাখছেন। এসব বিষয়-আশয়কে সামনে রেখে চাঁদপুরের কয়েকজন কবির কবিতাংশ উল্লেখ করা যেতে পারে : ক) ‘কুপির আলোয় যেইদিন আমি তোর তামাম রূপ দেখছি অন্যরম ধান লাগানোর খোয়াব জাগলো মনে নয়াধানে আমার ঘরে নতুন আইসের বাজনা আহারে! এ কেমন ধানচারা! অন্তর বড় আনন্দের রে বউ। শইলে অহন তাকত নাই চউখ্যের মিহি চাইয়া ল মনের খবর আউলা বাতাসে নিরানির শব্দ ভাসে কানে-’ - নয়াধানে নতুন আইসের বাজনা/মনসুর আজিজ খ) ‘পথ হাঁটলেই সবাই বলে, তুমি কেন এত স্পর্ধিত দীর্ঘ দীর্ঘ পা ফেলে কেবলি হেঁটে চলো দূর পানে সুদূরে, নভো-নীলে কেবলি বাড়িয়ে দাও হাত তপ্ত তামার পাতের মতো যে পথ, তাতেও পা পোড়ে না জ্বলে যায় না হাত, ফোস্কা পড়ে না নরম ত্বকে।’ -পরিচয়/ তছলিম হোসেন হাওলাদার ‘কবিতাকে নিলামে তুলেছি ব্রোকার হাউজে দরপতনের বাজারে কবিতার দাম নিম্নমুখী দশটির প্যাকেজ মূল্য একটি সিগারেট হাওয়ায় মিলিয়ে যায় উচ্চারণে খাদ্য তৈজসপত্রের সাথে কবিতা বেমানান ... কবিতার দাম বিবেচনাপ্রসূত মহামান্য খদ্দেরগণ আপনারা বিশিষ্টজন গাড়ির বাকেটে টাকার সাথে আমাকে নিন টাকার প্রয়োজন নিত্যে আমার যোগাযোগ চিত্তে আমি জানি কবিতা অবিক্রীত থেকে যাবে! -কবিতার নিলাম /ইকবাল পারভেজ ‘ প্রেমের অগ্নিশালায় বনজ রাত্রিযাপন অপেক্ষার রেলিংয়ে অনাগত ব্যর্থতার দিগন্ত বালিঝড়ে শিকস্তি জীবনের এই আমি প্রলয়ের খড়্গপাড়ায় সেই তো ভালো আছি। তোমার ডাহুক বেলায় একঝাঁক বনটিয়ার সাথে কালবৈশাখীর উজানে কেটেছে শতাব্দীকাল আমাজানের নির্জনতা মুঠোয় তুষের আগুনে।’ বেদনার ঝুপসি খ-/শাহ বুলবুল ‘কুপির আলোয় যেইদিন আমি তোর তামাম রূপ দেখছি অন্যরহম ধান লাগানোর খোয়াব জাগলো মনে নয়াধানে আমার ঘরে নতুন আইসের বাজনা আহারে! এ কেমন ধানচারা! অন্তর বড় আনন্দের রে বউ। শইলে অহন তাকত নাই চউখ্যের মিহি চাইয়া ল মনের খবর আউলা বাতাসে নিরানির শব্দ ভাসে কানেÑ’ - নয়াধানে নতুন আইসের বাজনা/মনসুর আজিজ ‘মেঘ, আমি ব্যাধের ধনুকে টানা অভিনিবেশের মতো সমুদ্রের নিরন্তর প্রার্থনায় ভাসি। তোমরা বস্তুত শিলা, জলে ছোড়া হিংসা, জাঁতাকল। ঘুমঘোরে অনন্ত আঁধি, কাচবৃষ্টি। আমার শরীরে লেগে লবণ রক্তের স্বাদ হাঙ্গরকে পৌঁছাও। ভাসো তুমি, প্রভুর দোমড়ানো রুটি ভেসে চলে যায়, অলিন্দ বিক্ষেপসহ ভাসে, ভাসে স্তনগুটি, উগ্রচাঁদ। তোমার মৌনতায়।’ -দাঁড়/ তারিক টুকু ‘তুমি-একটা হাটুরের গল্প শোনাও যার পদধ্বনি বাতাসে মিশেছে মৃদু সুরে তুমি-একটা পাহাড়ের গল্প শোনাও যার নিরল প্রপাত কেউ শোনেনি- দেখেনি কখনো তার মৌসমকলা-বিরল বাহার তুমি-সেই বালিকার গল্প শোনাও, সিন্ধুবোধিনী যারে নিয়ে গেছে ঠোঁটে করে টারশিয়ারি যুগেÑ নগরে পতন লাগে-মানুষ গল্প করে...’ -মানুষ গল্প করে/ সৌম্য সালেক ‘প্রাত্যহিক শূন্যতা থেকে কোটি কোটি আলোকবর্ষ দূরে ওই তো আমাদের প্রাচীন নগরী। শ্যাওলা ঢাকা এপিটাফের নিচ থেকে কারা সেখানে জেগে ওঠে আর বাওবাব গাছের তলায় ঘুমিয়ে যায় গান শুনতে শুনতে। নীলাকাশে তুলোর মতো সাদা মেঘ দেখতে আসে এলিয়েন পর্যটক। চাকতির ভেতর তাদের সীমাহীন মুগ্ধ দৃষ্টি দেখে মনে পড়ে এক দঙ্গল বালিহাঁসের কথা।’ Ñপ্রাচীন নগরী থেকে/ হাসানুজ্জামান ‘স্বচ্ছ নদীর গোপনাঙ্গ নেই আফ্রিকার সুখ সাদামেঘ কালো মানুষ বিপবী প্রেমিক ঝড়ের ব্যবধানÑ কচ্ছপ-পৃথিবী। নদীর দিকে তাকিয়ে দেখি পূর্ণিমার কালো শিশু সুরসুখে কালোমুখ সাদা দাঁত সন্ধ্যা সঙ্গীত আয়োজন করে এশিয়ার উঠোনে। আমাকে আয়না ভাবছো! ভাবো! আমি আয়না ঢাকা কালো পর্দা আফ্রিকা। Ñআয়না/ জব্বার আল নাঈম ‘বেদনামিশ্রিত এক অদ্ভুত আনন্দের নাম-জন্ম। মৃত্যু, তার বিপ্রতীপ গান নারীর স্পর্শে জন্ম নিয়েছে পৃথিবী পৃথিবীর প্রথম জ্যোৎ¯œাÑ ‘নারী’ তার লাবণ্য শিখিয়েছে রক্তপাত আর ভ্রাতৃত্ব বিচ্ছেদ তবু নারী যুধিষ্ঠির মা!’ Ñ নারী/ রফিকুজ্জামান রনি ‘পা ফেলে এসেছি রোদের ওপর, সেই যৌবন মেখে তোমার মন তো কবেই রাখা ইসরাফিলের ফুৎকারে, ফুঁ দাওÑ এবং দেখ, ধ্বংস ও পতন জলে স্নান শেষে আত্মার বাইরে দেহ আমার, দাঁড়িয়েছে দেখ!’ Ñপা ফেলেছি রোদের ওপর/মুহাম্মদ ফরিদ হাসান মাগন ঠাকুর, মুকুন্দ দাস, অতুল প্রসাদ সেন, চারু বন্দোপাধ্যায়, মহাত্মা গান্ধী, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম, জসীম উদ্দীন, বুদ্ধদেব বসু প্রমুখের স্মৃতিধন্য চাঁদপুর থেকে সাহিত্যচর্চার অংশ হিসেবে বিভিন্ন সময়ে প্রকাশিত হয়েছে নানা আকার-আঙ্গিকের বিষয় বৈচিত্র্যের অসংখ্য লিটলম্যাগ বা ছোটকাগজ। তবে অতীতের চেয়ে সাম্প্রতিক এ জেলা থেকে প্রকাশিত হচ্ছে বেশ কয়েকটি শক্তিশালী ছোটকাগজ। যার মধ্যে সৌম্য সালেক সম্পাদিত চাষারু, মুহাম্মদ ফরিদ হাসান সম্পাদিত বাঁক, কাদের পলাশ সম্পাদিত ত্রিনদী ও আশিক বিন রহিম সম্পাদিত তরী অগ্রগণ্য। গত এক দশকে চাঁদপুর থেকে প্রকাশিত ছোটকাগজগুলো হলো : ঢেউ, ডাকাতিয়ার বাঁকে, শেকড়, উপমা, কলম সৈনিক, নবীন প্রতিভা, বক্ষবুলি, মনের জানালা, সাহিত্য সময়, লালন, সাহিত্য দর্পণ, বনলতা, অনপেক্ষ, মৃত্তিকা ও উছল। আশির দশকের শুরুতে বৃহত্তর কুমিল্লার সাড়া জাগানো সাহিত্য মাসিক ছিলো ‘নির্ভীক’ ও ‘নির্ঝর’। এ দুটির সম্পাদনায় ছিলেন কাজী শাহাদাত। মাসিক নির্ঝরে চারবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত গীতিকার কবির বকুল, দেশের অন্যতম বৃহত্তম পুস্তক প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্সের প্রতিষ্ঠাতা, খ্যাতিমান লেখক কামরুল হাসান শায়ক, দেশের আরেক খ্যাতিমান গীতিকার মিলন খান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের বর্তমান প্রফেসর বায়তুল্লাহ কাদেরী, দেশের খ্যাতিমান লেখক প্রয়াত তিতাশ চৌধুরীসহ আরো অনেকে লেখালেখি করতেন। একই সময়ে ফরিদগঞ্জের চান্দ্রা থেকে জিয়াউদ্দিন বাবুল সম্পাদিত ‘তরঙ্গ’ এবং রহমতপুর কলোনি হতে দেওয়ান শাহ আলম মনা সম্পাদিত ‘বালার্ক’ বের হতো। পরবর্তীতে আবুল হোসেন বাঙালীর ‘এবং’, আবদুল্লাহিল কাফীর ‘অভিষেক’, দেবদাস খোকন সম্পাদিত ‘ফুলকি’, খিজির আহমেদ রনির ‘মুক্তাঙ্গন’ এবং শামীম আহমেদ খান সম্পাদিত ‘কাব্যলোক’ ও কবিতাপত্র ‘কথক’ ছিল উল্লেখযোগ্য ছোটকাগজ। এ ছাড়া চাঁদপুর সরকারী কলেজের ইংরেজীর অধ্যাপক হেলাল উদ্দিন আহমেদ ও মহিলা কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক জাকির হোসেন মজুমদারের সম্পাদিত ‘মোহনা’ ছিল স্বাধীনতা উত্তরকালে আলোচিত সাহিত্য পত্রিকা। ১৯৮৬ সালে চাঁদপুরে সাহিত্য একাডেমি প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে এখানকার সাহিত্যাঙ্গনে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। এক্ষেত্রে মুখ্য ভূমিকা পালন করেন অধ্যাপক কবি খুরশেদুল ইসলাম, যিনি ছিলেন এই একাডেমির প্রতিষ্ঠাতা মহাপরিচালক। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সাহিত্য একাডেমি চাঁদপুর ও ফরিদগঞ্জ লেখক ফোরাম নিয়মিত সাহিত্য আসর আয়োজন করে সাহিত্য আন্দোলন ও লেখক সৃষ্টিতে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখছে। হাজীগঞ্জে বিশিষ্ট লেখক, মুক্তিযোদ্ধা মাহবুবুল আলম চুন্নুর নেতৃত্বে হাজীগঞ্জ সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক পরিষদ, তাদের মুখপত্র ‘ডাকাতিয়া’ প্রকাশসহ বিভিন্ন কর্মসূচীতে সাহিত্য আন্দোলনে সরব রয়েছে। চাঁদপুর শহরের পুরনো বাজার এলাকায় বঙ্গজ সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সংগঠন এবং পরবর্তীতে স্বদেশ সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সংগঠন নিকট অতীতে সাহিত্য আন্দোলন সৃষ্টিতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখে। দিন যতই এগুচ্ছে, আমরা আশাবাদী হচ্ছি চাঁদপুরের শিল্প ও সাহিত্য অঙ্গন নিয়ে। নির্ভার থেকে এতটুকু বলা যায়, এ জেলা থেকে সাম্প্রতি যেসব তরুণ সাহিত্যচর্চা করছেন ভবিষ্যতে তারা জাতীয় সাহিত্যে তাদের লিখনীর জ্যোৎস্না ও সুবাস ছড়িয়ে দিতে সক্ষম হবেন বলে আমাদের বিশ্বাস।
×