ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

পান্থ আফজাল

নারী আন্দোলনের অগ্রদূত

প্রকাশিত: ০৬:৫২, ২৪ জুন ২০১৬

নারী আন্দোলনের অগ্রদূত

সুফিয়া কামাল যে পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন সেখানে নারী শিক্ষাকে প্রয়োজনীয় মনে করা হতো না। তার বাবা সৈয়দ আবদুল বারী ছিলেন একজন আইনবিদ। মা সাবেরা বেগমের কাছে পড়তে শেখেন তিনি। তিনি ছিলেন বাংলা ভাষার বিশিষ্ট কবি ও সাহিত্যিক। নারীমুক্তি, সামাজিক-সাংস্কৃতিক ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনের পুরোধা কবি সুফিয়া কামালের জন্মদিন ছিল গত ২০ জুন, সোমবারে। ১৯১১ সালের ২০ জুন বরিশালের শায়েস্তাবাদে একটি অভিজাত পরিবারে তার জন্ম। মাত্র বারো বছর বয়সে সৈয়দ নেহাল হোসেনের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। তার স্বামী সাহিত্য পাঠে তাকে আগ্রহী করে তোলেন। যা তাকে পরবর্তীকালে সাহিত্য রচনায় উদ্বুদ্ধ করে তোলে। তেমন কোন প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা গ্রহণ না করেও তার মনোগঠনে দেশ, মানুষ, সমাজ, ভাষা ও সংস্কৃতি মূল প্রেরণা হিসেবে কাজ করেছে। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি রাজনীতিবিদ, সাহিত্যিক ও সংস্কৃতিকর্মীদের অনুপ্রেরণা যুগিয়েছেন। বাংলার মানুষ তাকে ‘জননী সাহসিকা’ উপাধিতে ভূষিত করে। সুফিয়া কামালের কাজেকর্মেও বেগম রোকেয়ার ছাপ পাওয়া যায়। ১৯২৩ সালে তিনি রচনা করেন প্রথম গল্প ‘সৈনিক বধূ’ যা বরিশালের তরুণ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। ১৯২৬ সালে সওগাত পত্রিকায় তার প্রথম কবিতা বাসন্তী প্রকাশিত হয়। মহাত্মা গান্ধীর সংগ্রামে উদ্বুদ্ধ হয়ে তিনি কিছুদিন চরকায় সুতা কাটেন। সে সময়ে ‘মাতৃমঙ্গল’ নামে একটি নারী কল্যাণমূলক সংগঠনে যোগ দেন। ১৯২৯ সালে তিনি বেগম রোকেয়ার ‘আঞ্জুমান-ই-খাওয়াতিন-ই-ইসলামে যোগ দেন। ১৯৩১ সালে তিনি মুসলিম মহিলাদের মধ্যে প্রথম ইন্ডিয়ান মহিলা ফেডারেশনের সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৩৮ সালে তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘সাঁঝের মায়া’ প্রকাশিত হয়। যার ভূমিকা লিখেছিলেন কাজী নজরুল ইসলাম। আর রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রশংসা করেছিলেন। ১৯৪৭ সালে তিনি সপরিবারে ঢাকায় চলে আসেন। সে সময়ের নারীবিষয়ক উপমহাদেশের প্রথম সাপ্তাহিক ‘বেগম’ পত্রিকার প্রথম সম্পাদক ছিলেন তিনি। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে তিনি সরাসরি যোগ দেন। ১৯৬৯ সালে মহিলা সংগ্রাম পরিষদ (বর্তমানে মহিলা পরিষদ) গঠিত হলে প্রতিষ্ঠাতা প্রধান নির্বাচিত হন। এ ছাড়া তিনি প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে ছায়ানটের সভাপতি ছিলেন। তার প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থগুলো হচ্ছেÑ সাঁঝের মায়া, মায়া কাজল, মন ও জীবন, শান্তি ও প্রার্থনা, উদাত্ত পৃথিবী, দিওয়ান, মোর জাদুদের সমাধি পরে প্রভৃতি। গল্পগ্রন্থ ‘কেয়ার কাঁটা’। স্মৃতিকথা ‘একাত্তরের ডায়েরি’। ১৯৯৯ সালের ২০ নবেম্বর তিনি মৃত্যুবরণ করেন। রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় তাকে দাফন করা হয়। বাংলাদেশী নারীদের মধ্যে তিনিই প্রথম এ সম্মান লাভ করেন।
×