ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

নাজনীন বেগম

গণমাধ্যমে নারীদের যুগান্তকারী ভূমিকা

প্রকাশিত: ০৬:৫০, ২৪ জুন ২০১৬

গণমাধ্যমে নারীদের যুগান্তকারী ভূমিকা

বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের বিভিন্ন ধারায় সফলতার সঙ্গে সামনে এগিয়ে যাচ্ছে। সমৃদ্ধির এই মাপকাঠির বিচারে নারীরাও পিছিয়ে নেই। সমাজ যখন এগুতো থাকে তখন নারী-পুরুষের সম্মিলিত শক্তিকেই তার গতিপথ অবাধ এবং নিরন্তর হয়। সমাজের অর্ধাংশ নারী জাতিকে উন্নয়নের ব্যাপক কর্মযজ্ঞে সম্পৃক্ত করতে না পারলে দেশের সামগ্রিক উন্নয়নের গতি ত্বরান্বিত হয় না। সমাজ প্রগতির ধারা শিথিল হয়ে যায়, অর্থনৈতিক কর্মকা- ব্যাহত হয়, সামাজিক-সাংস্কৃতিক গতি ধারা হুমকির মুখে পড়ে। সুতরাং দেশজুড়ে উন্নয়নের যে সুফল তার সমান না হলেও অনেক কৃতিত্বের দাবিদার জনগোষ্ঠীর এই অর্ধেক অংশ নারী, গণমাধ্যমেও নারীর ভূমিকা প্রশংসনীয়। উপমহাদেশের প্রথম মহিলা সম্পাদক নূরজাহান বেগমের হাত ধরে আমাদের নারী সাংবাদিকতার যাত্রা শুরু। সেটা পঞ্চাশের দশক। বেগম পত্রিকার মাধ্যমে অনেক খ্যাতনামা মহিলা সংস্কৃতিসেবীর যাত্রা শুরু হলেও সাংবাদিকতায় অনুপ্রবেশ নারীদের জন্য এখনও পর্যন্ত অবারিত হয়নি। নারীরা শিক্ষাঙ্গনে প্রবেশ করছে, উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হচ্ছে, বিভিন্ন পেশায় নিজেদের সম্পৃক্ত করছে, ফলে নারীর সামনে এগিয়ে চলার পথ অনেকখানি প্রশস্ত হয়েছে। ভাষা আন্দোলনে নারীদের অংশ গ্রহণের কথা আমরা জানি। ১৯৬১ সালে রবীন্দ্র শতবার্ষিকীতে রবীন্দ্রবিরোধী প্রচারণার বিরুদ্ধে যে সুস্থ সামাজিক-সাংস্কৃতিক আবহ তৈরি হয়েছিল সেখানেও নারীদের ভূমিকা কোন অংশেই কম ছিল না। এখারন আমরা বেগস সুফিয়া কামাল, রবীন্দ্র সঙ্গীতশিল্পী ড. শানজিদা খাতুনের মতো মহিলা নেতৃত্বের কথা শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করতে পারি। কিন্তু সাংবাদিকতায় নারীদের আগমন একটু দেরিতে হলেও এখন এই সংবাদ মাধ্যমে নারীদের ভূমিকা অত্যন্ত উৎসাহ-উদ্দীপক, সাহসী এবং যুগান্তকারী। স্বাধীনতা উত্তর সত্তরের দশকেও নারীরা এই পেশায় সেভাবে নিজেদের যুক্ত করেনি। গণমাধ্যমে সাহিত্যিক হিসেবে লেখালেখি করতেন। মোটামুটি আশির দশক থেকেই এই অনন্য পেশায় নারীদের সত্যিকারের পদচারণা। এই দশকেও হাতে গোনার মতো নারীরা এ পেশায় নিজেদের সংশ্লিষ্ট করেন। নব্বইয়ের দশকের শুরুতেই নারীদের এই অগ্রযাত্রা অবিস্মরণীয়ভাবে এগিয়ে যেতে থাকে এবং এই দশকের শেষে তা প্রায়ই জোয়ারে প্ররিণত হন। অবশ্য এখানে তথ্যপ্রযুক্তিরও যুগান্তকারী অবদান রয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তির বিভন্ন গণমাধ্যমে নারীরাও পুরুষের সমান তালে এই পেশায় নিজদের জোরালোভাবে নিয়োজিত করেন। এই সংবাদ মাধ্যমের নারী সাংবাদিকদের পথিকৃৎ হিসেবে যাদের নাম আসে তারা হলেন সামিয়া জামান, সামিয়া রহমান, মিথিলা ফারজানা, প্রয়াত মেহেরুন্নেসা রুনী, শাহনাজ মুন্নী, মুন্নী শাহার মতো আরও অনেক নারী সাংবাদিক অত্যন্ত সাহস আর দৃঢ়তার সঙ্গে এই যোগাযোগের মাধ্যমে নিষ্ঠা এবং সততায় তাদের দায়িত্ব পালন করে যান। এর পরে সাংবাদিকতার আঙিনায় নারীদের সফল পদচারণা নারী অগ্রযাত্রার আর এক নতুন মাত্রা সংযোজিত হলো। সারাদেশে যখন যেখানে যা ঘটছে পুরুষের পাশাপাশি নারী সাংবাদিকরাও সাহসের সঙ্গে তাদের দায়িত্ব পালনে এতটুকু পিছপা হননি। ২০১৪ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচন থেকে শুরু করে আজ অবধি যত ধরনের ঘটনা, দুর্ঘটনা যাই ঘটে থাকুক না কেন নারীরাও সমানতালে সে সংবাদ আহরণের নিমিত্তে ঘটনাস্থানে পৌঁছে গেছে। উচ্ছৃঙ্খল গোষ্ঠীর হাতে নাজেহাল হওয়া থেকে শুরু করে পুলিশী লাঠিচার্জ পর্যন্ত এই নারী সাংবাদিকদের সহ্য করতে হয়েছে। তারা নিঃসঙ্কোচে দ্বিধাহীনভাবে, সমস্ত ভয়-শঙ্কাকে অতিক্রম করে এ সব বিপদশঙ্কুল ঘটনার সঙ্গে নিজেদের জড়িয়ে সঠিক সংবাদ সংগ্রহের দৃঢ়চিত্তের পরিচয় দেন। এই অকুতভয় নারী সাংবাদিকরাও নারী অগ্রযাত্রার আর এক সফল ইতিহাস। তথ্যপ্রযুক্তির এই যুগে দৃশমান সংবাদ সংগ্রহ সত্যিই এক উত্তেজক বিষয়। নারীরা অবলীলাক্রমে সেই সব সাহসী পদক্ষেপগুলোকে অত্যন্ত সফলতার সঙ্গে মোকাবেলা করেছেন। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে নতুন বাংলাদেশ গড়ার ক্ষেত্রে নারীদের বিজয়গাথা আজ সবখানেই ছড়িয়ে গেছে।
×