ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

যুদ্ধাপরাধী বিচার

সলেমান মৌলবি ও ইদ্রিস আলীর বিরুদ্ধে পরবর্তী সাক্ষী ২৫ জুলাই

প্রকাশিত: ০৬:১৩, ২৪ জুন ২০১৬

সলেমান মৌলবি ও ইদ্রিস আলীর বিরুদ্ধে পরবর্তী সাক্ষী ২৫ জুলাই

স্টাফ রিপোর্টার ॥ একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত শরীয়তপুরের সোলায়মান মোল্লা ওরফে সলেমান মৌলবি ও ইদ্রিস আলী সরদারের বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের ৬ষ্ঠ সাক্ষী বিজয়া মালো জবানবন্দী প্রদান করেছেন। জবানবন্দীতে সাক্ষী বলেন, রাজাকার ও পাকিস্তানীরা ১৫ মহিলা ও ২০ পুরুষকে আটক করে। আমিসহ অন্য মহিলাদের মাদারীপুর জুটমিলে তিনদিন আটকিয়ে রেখে রাজাকার ও পাকিস্তানী সৈন্যরা ধর্ষণ করে। পরবর্তীতে আমরা লঞ্চযোগে আঙ্গারিয়া আসি। আটক পুরুষদের হত্যা করা হয়েছে। জবানবন্দী শেষে আসামিপক্ষের আইনজীবী সাক্ষীকে জেরা করেন। পরবর্তী সাক্ষীর জন্য ২৫ জুলাই দিন নির্ধারণ করা হয়েছে। চেয়ারম্যান বিচারপতি আনোয়ারুল হকের নেতৃত্বে তিন সদস্য বিশিষ্ট আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ বৃহস্পতিবার এ আদেশ প্রদান করেছেন। এ সময় ট্রাইব্যুনালে উপস্থিত ছিলেন প্রসিকিউটর (সাবেক জেলা জজ) হƒষিকেশ সাহা, প্রসিকিউটর সাবিনা ইয়াসমিন খান মুন্নি। প্রসিকিউটরের সাক্ষী জবানবন্দীতে বলেন, আমার নাম বিজয়া মালো। আমার বর্তমান বয়স আনুমানিক ৮০ বছর। আমার ঠিকানা গ্রাম- দক্ষিণ মধ্যপাড়া, থানা- পালং (শরীয়তপুর সদর), জেলা- শরীয়তপুর। ১৯৭১ সালে আমি আমার স্বামীর বাড়ি দক্ষিণ মধ্যপাড়া গ্রামে মালোপাড়ায় বসবাস করতাম। ঐ সময় আমার স্বামী পেশায় একজন জেলে ছিল। তখন আমার স্বামীর বাড়িতে আমিসহ আমার তিন জা উষা, অঞ্জলী ও যোগমায়াসহ আমার দুই মামা শাশুড়ি বসবাস করত। ১৯৭১ সালের জ্যৈষ্ঠ মাসের প্রথম দিকে একদিন দুপুর বেলা পাকিস্তান আর্মি ও রাজাকাররা আমাদের গ্রামে আসে এবং আমাদের গ্রাম থেকে ২০/২২ পুরুষ এবং আমাকেসহ ১৫/১৬ মহিলাকে আটক করে আমাদের বাড়ির উঠানের সামনে জড়ো করে। সেই সময় আমাদের অনেকের সঙ্গেই বাচ্চা ছিল। এরপর পাকিস্তানী আর্মি ও রাজাকাররা আমাদের বাড়ি ঘরে আগুন ধরিয়ে দেয়। তারা আমাদের আটককৃত পুরুষ ও মাহিলাদের আঙ্গারিয়া বাজার লঞ্চঘাটে নিয়ে আসে। আটককৃত পুরুষদের মধ্যে রাধিকা, মহাদেব মালো, পার্শ্বনাথ মালোও ছিল। আটককৃত মহিলাদের মধ্যে আমিসহ উষা রানী, অঞ্জলী, যোগমায়া, সুমিত্রা, আরতী মালোও ছিল। রাজাকার ও আর্মিরা আমাদের আটককৃত পুরুষ ও মহিলাদের লঞ্চযোগে মাদারীপুর জুটমিলে নিয়ে যায়। জুটমিলে নিয়ে যাওয়ার পর পাকিস্তানী আর্মি ও রাজাকাররা আমাদের পুরুষ ও মহিলাদের আলাদ করে সেখানে আটক করে রাখে। রাজাকাররা ও পাকিস্তানী আর্মিরা আমাদের মহিলাদের সেখানে তিনদিন আটক রেখে ধর্ষণ করে। এরপর আমাদের ছেড়ে দিলে লঞ্চযোগে আঙ্গারিয়া আসি। ঐ সময় আমাদের সঙ্গে আটককৃত পুরুষদের ছাড়েনি। তখন পাকিস্তান আর্মি ও রাজাকাররা বলেছিল যে, পুরুষদের তারা পরে ছেড়ে দেবে। কিন্তু পরবর্তীতে পুরুষদের ছাড়েনি। আমরা আঙ্গারিয়া বাজারে আসার পর সেই বাজারে থাকা লোকজন আমাদের জিজ্ঞাসা করলে আমরা ঐ সকল ঘটনা তাদের নিকট বলি। আমরা রাঙ্গারিয়া বাজার থেকে আমাদের বাড়িতে ফিরে এসে দেখতে পাই যে, আমাদের বাড়িঘর সব পুড়িয়ে দিয়েছে। যে সমস্ত রাজাকাররা আমাদের আটক করেছিল, তাদের মধ্যে মোঃ সোলায়মান মোল্লা ও ইদ্রিস আলী সরদারও ছিল।
×