ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ঈদের কেনাকাটা

শপিংয়ে বিত্তবানদের পছন্দ শপার্সওয়ার্ল্ড ভাসাবী, জারা ফ্যাশন

প্রকাশিত: ০৬:১২, ২৪ জুন ২০১৬

শপিংয়ে বিত্তবানদের পছন্দ শপার্সওয়ার্ল্ড ভাসাবী, জারা ফ্যাশন

রহিম শেখ ॥ বিত্তবানদের উৎসব বলে কথা! বড় উৎসব তাই বিরাট আয়োজন তাদের। কম করে হলেও লাখ টাকার কেনাকাটা করতে হবে। না হলে তো স্ট্যাটাস থাকে না, জমবে না ঈদের বাজার। করছেনও বটে। নগরীর অভিজাত গুলশান-বনানী-বারিধারা এলাকার ক্রেতাদের কথা বলছি। তাদের কাছে দাম কোন বিষয়ই নয়, বরং পছন্দটাই আসল। তাই ক্রেতা আকর্ষণে এসব মার্কেটে শোভা পাচ্ছে আধুনিক রুচির লাখ টাকার পোশাক। এদিকটি বিবেচনায় নিয়েই অভিজাত এলাকার শপিংমলগুলো বিভিন্ন দেশ থেকে পোশাকের সংগ্রহ বাড়ায়। যদিও শুধু পোশাকের মধ্যেই থেমে নেই বিত্তবানদের কেনাকাটা। আছে জুতো ও কসমেটিকসসহ নামী-দামী বিদেশী ব্র্যান্ডের হরেক রকম পণ্য। বিক্রেতারা জানালেন, রমজানের শুরুতে বেচাকেনা ভাল না হলেও এখন জমতে শুরু করেছে কেনাকাটা। রাজধানীর গুলশান শপার্স ওয়ার্ল্ড, নাভানা টাওয়ার, মনি ক্যাপিটাল সেন্টার, পিংক সিটি শপিং কমপ্লেক্স, বসুজা স্টিচ, রূপায়ন গোল্ডেন এজ, জব্বার টাওয়ারসহ অধিকাংশ শপিংমল ঘুরে দেখা গেছে, রাজনীতিবিদ, মন্ত্রী, সংসদ সদস্য, শিল্পপতি, ব্যবসায়ী, মিডিয়ার তারকা, সরকারী-বেসরকারী উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তারা পরিবার-পরিজন নিয়ে শপিংয়ে আসছেন। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত প্রতিটি মার্কেটের সামনে গাড়ির বিশাল জট। ঈদের শপিংয়ের জন্য বিত্তবান ও শৌখিন ক্রেতাদের প্রতি লক্ষ্য রেখে দেশী এবং বিদেশী বিভিন্ন পোশাক ও অলংকারে সাজানো হয়েছে অভিজাত এলাকার শপিংমলগুলো। দেশী পোশাকের পাশাপাশি পশ্চিমা বিশ্বের হাল ফ্যাশনের তৈরি পোশাক থরে থরে সাজানো হয়েছে এসব শপিংমলে। এসব এলাকার ক্রেতাদের কাছে দাম কোন সমস্যাই নয়, বরং পছন্দটাই আসল। নগদে কিংবা ক্রেডিট কার্ডে ধনাঢ্য ক্রেতারা কিনছেন লেটেস্ট ফ্যাশনের বাহারি ডিজাইনের পোশাক। বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শাড়ি, পাঞ্জাবি, মেয়েদের পোশাকের দোকান এবং নতুন কাপড়ের সঙ্গে মিলিয়ে জুতো ও কসমেটিকসের ক্রেতাই বেশি। গুলশান ও বনানীর বড় বড় ফ্যাশন হাউসের মধ্যে জারা ফ্যাশন, ভাসাবি, শপার্স ওয়ার্ল্ডসহ বিভিন্ন হাউসে ভারতীয় কাপড়ের প্রাধান্যই বেশি। শার্ট, প্যান্ট ও ব্লেজারসহ থান কাপড়ের পুরোটাই বিদেশী। বিক্রেতারা জানান, বেশ কয়েক বছর ধরে দেখা যাচ্ছে, জনপ্রিয় হিন্দী সিনেমা বা টিভি সিরিয়াল ও তারকাদের নামে ভারতে তৈরি থ্রি-পিস ঢাকাসহ সারা দেশের ঈদের বাজারে দেদার চলছে। এর ব্যাপক কাটতি দেখে প্রতিবছরই এ ধরনের পোশাকের সরবরাহ বাড়াচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। এবারও এসব অভিজাত মার্কেটে জায়গা দখল করেছে বাহারি সব নামের পোশাক। এসব মার্কেটের বিক্রেতারা জানালেন, ভারতীয় বলিউডের নামকরা ডিজাইনারদের তৈরি শিফন, লেইজ, নেটের কাপড়ের উপরে সুতা, স্টোন বা জাদৌজির জমকালো কাজ এসেছে নারীর পোশাকে। গুলশান ২ নম্বরে পিংক সিটি শপিং কমপ্লেক্সের গুলশান শাড়ি মিউজিয়ামের সেলস এক্সিকিউটিভ মাহবুব হোসেন জানান, ঈদ সামনে রেখে এবং বিত্তশালী ক্রেতাদের চাহিদা প্রাধান্য দিয়ে শাড়ির কালেকশন বাড়ানো হয়েছে। এ শপিংমলের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এক্সক্লুসিভ সব ধরনের টি-শার্ট, পাঞ্জাবি, শার্ট, থ্রি-পিস, শাড়ি, লেহেঙ্গা আনা হয়েছে বিদেশ থেকে। বিক্রেতারা জানালেন, শুরুতে বেচাকেনায় ভাটা থাকলেও এখন জমে উঠেছে কেনাকাটা। গুলশান-বনানী এলাকায় দেশীয় পোশাকের পাশাপাশি বিদেশী পোশাকের দোকানও রয়েছে প্রচুর। কাকলী মোড় থেকে শুরু করে কামাল আতাতুর্ক এ্যাভিনিউ, বনানী ১১ নম্বর রোড হয়ে গুলশান-১ ও ২ নম্বর জুড়ে রয়েছে পোশাকের দোকান। এসব এলাকায় দেশী পোশাকের শোরুম ছাড়াও প্রায় সব মার্কেট ও শোরুমে জমে উঠেছে ঈদের বেচাকেনা। বিভিন্ন বয়সী ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে আনা হচ্ছে নিত্যনতুন ডিজাইনের পোশাক। এসব মার্কেটের বিক্রেতারা জানালেন, পাকিস্তানের পাঞ্জাবি বিক্রি হচ্ছে ৫ হাজার থেকে ২৫ হাজার টাকায়, ভারতীয় শাড়ি ২০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা, লেহেঙ্গা পাওয়া যাচ্ছে ৫০ হাজার থেকে আড়াই লাখ টাকায়। এছাড়া বিভিন্ন দামের থ্রি পিস, শার্ট-প্যান্ট, স্যুট-টাই ও জুতা বিক্রি করা হচ্ছে। ঢাকার বিত্তশালীদের শপিংয়ের জন্য পছন্দ ভাসাবী, শপার্সওয়ার্ল্ড, জারা ফ্যাশন এবং নাবিলাসহ কয়েকটি শপিংমল। এসব শপিংমলে সাজিয়ে রাখা পোশাকে ফুটে ওঠে আভিজাত্য। ডিজাইন, রঙ ও ফ্যাশনে রয়েছে ভিন্নতা। ব্যবসায়ীরা জানান, এসব শপিংমলের পণ্য ভারত, পাকিস্তানসহ বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করা। গুলশানের জারা ফ্যাশনের এক কর্মকর্তা জানান, বিত্তশালীদের পছন্দ প্রাধান্য দিয়েই ঈদে পণ্য বাড়ানো হয়েছে। তবে এ বছর দাম একটু বেশি পড়বে। ভারত, পাকিস্তান, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়াসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নামি ব্র্যান্ডের পণ্যসম্ভার রয়েছে জারা ফ্যাশনে। জব্বার টাওয়ারের গুলশান ফেব্রিক্সের ম্যানেজার মোঃ জনি বলেন, বেচা- কেনা এবার জমে উঠতে শুরু করেছে। গুলশান-বনানীর বিভিন্ন রোডে দেশী বুটিকশপ কে-ক্র্যাফট, সাজ ফ্যাশন, রঙ, বিবিয়ানা, দেশাল, নাগরদোলা, অন্যমেলা, সাদাকালো, বাংলার মেলা, অন্যরকম, জয়নব, কীত্তনখোলা, ট্রেন্ডস, মাচমোরের পাশাপাশি আছে রেমন্ডসহ বিদেশী বিভিন্ন ব্র্যান্ডের বিক্রয়কেন্দ্র। বনানী ও গুলশানে ফ্যাশন হাউসগুলোর মধ্যে আছে ক্যাটস আই, দর্জিবাড়ি, কুমুদিনী হ্যান্ডি ক্রাফট, লুবনান, আড়ং ও মায়াসি। প্রতিষ্ঠানগুলো আকর্ষণীয় সব পোশাকে সাজিয়েছে নিজেদের শো-রুম।
×