ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

প্রকাশিত: ০৬:১০, ২৪ জুন ২০১৬

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

মোরসালিন মিজান ॥ শহর ঢাকার অজস্র গল্প। কিন্তু সব গল্পকেই ছাপিয়ে গেছে ঈদ। এখন আর কোন আলোচনা নেই। নেই বললেই চলে। সবাই ঈদ নিয়ে ব্যস্ত। ঈদ মানে ঈদের প্রস্তুতি। বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলির শহর ঢাকায় প্রতি প্রান্তে এখন উৎসবের আমেজ। বিশেষ করে পোশাকের মার্কেট ও শপিংমলগুলোতে ঢল নেমেছে মানুষের। ছেলে বুড়ো সকলেই নিজের জন্য, স্বজনের জন্য কেনাকাটায় ব্যস্ত। একেবারে সকাল থেকে শুরু হয়ে যাচ্ছে ছোটাছুটি। চলছে মধ্যরাত পর্যন্ত। এবারও ভিনদেশী পোশাক নিয়ে মাতামাতি আছে। তবে, দেশীয় পোশাকের প্রতি আলাদা টান। ঐতিহ্য ও আধুনিকতার সমন্বয়ে তৈরি পোশাক দারুণ জনপ্রিয়। ঈদে ছেলেদের কেনাকাটা বলতে পাঞ্জাবি। ঈদের দিন সকালে পাঞ্জাবি পরা চাই, চাই-ই। মেয়েদে জন্য আছে জামা থ্রিপিস। বাঙালীর ঐতিহ্য মেনে অনেকেই যত্ন করে শাড়ি পরে থাকেন। সবই পাওয়া যাচ্ছে দেশী ফ্যাশন হাউসগুলোতে। উদাহরণ হতে পারে হস্ত ও কারুশিল্পের জন্য বিখ্যাত প্রতিষ্ঠান আড়ং। অত্যন্ত নাম করা দেশী এই ব্র্যান্ড শপে একবার না ঢুকে ঈদের কেনাকাটার কথা যেন ভাবতেই পারেন না শহুরে শৌখিন ক্রেতা। দামটাও বেশি। আভিজাত কেনাকাটা। তবুও প্রতিটি শোরুমে মানুষ আর মানুষ। বৃহস্পতিবার রাতে আড়ংয়ের আসাদ গেট শাখায় গিয়ে খুব বেশি অবাক হতে হলো না। যেমন দৃশ্য দেখার কথা, তেমনটিই দেখা গেল। প্রতিটি ফ্লোরে ক্রেতা গিজগিজ করছে। এরই মাঝে চলছে পোশাক পছন্দ ও কেনার কাজ। পাঞ্জাবির ফ্লোরে গিয়ে দেখা গেল, ছেলেদের তুলনায় মেয়েদের সংখ্যাই বেশি! স্বামীর জন্য পাঞ্জাবি পছন্দ করে দিচ্ছিলেন স্ত্রী। প্রেমিকের জন্য প্রেমিকা। আর সন্তানের জন্য ব্যস্ত দেখা যাচ্ছিল মা-বাবাকে। সঙ্গে আসা প্রিয় মানুষগুলোর কথা মতো ছেলেরা এক পাঞ্জাবি পরছিলেন। খুলছিলেন অন্যটা। আয়নার সামনে দাঁড়াচ্ছিলেন কখনও কখনও। দশে দশ নম্বর পাওয়া হয়েছে মনে হলে কাউন্টারে জমা দিচ্ছিলেন। মেয়েদের পোশাকেরও চমৎকার সংগ্রহ আড়ংয়ে। দেশী সুতি কাপড়ের উপর বিভিন্ন ডিজাইন করা। একটি ফ্লোর থ্রিপিস দিয়ে সাজানো। মেয়েরা নিজেরাই নিজেদের ড্রেস পছন্দ করছিলেন। বাচ্চাদের পোশাকগুলো অনেক বেশি গাদাগাদি করে রাখা। একসঙ্গে বহু বাবা-মা দেখছিলেন। একদল জায়গা ছাড়লে সুযোগ নিচ্ছিল অন্যদল। এদিন মনিপুরীপাড়া থেকে শপিং করতে এসেছিলেন আনিস ও সুনন্দা। নতুন দম্পতি। ভিড় ঠেলে ক্লান্ত হয়ে এক পাশে কিছু সময় দাঁড়িয়েছিলেন তারা। আনিস বললেন, ভাই, টায়ার্ড। পোশাক তো আছেই। দেখার সুযোগ পাচ্ছি না। মানুষের ধাক্কায় খেয়ে হাঁড় গুঁড়ো হয়ে যাওয়ার অবস্থা। কিন্তু সুনন্দা নাছোড়বান্দা। স্বামীর হাতে ধরে টান দিয়ে বললেন, চলো তো। আরও রেস্ট নিলে জামা কেনা লাগবে না! ঈদে প্রতিবছর সরকারী ছুটি থাকে তিনদিন। এর সঙ্গে দু’ একদিন বাড়িয়ে নিয়ে বড় অংশটি ছুটে গ্রামের বাড়ির দিকে। দেখতে দেখতে ফাঁকা হয়ে যায় শহর ঢাকা। আর এবার তো ঘটে গেল বিরল ঘটনা। মানুষের আবেগকে গুরুত্ব দিয়ে এবার সরকার টানা নয় দিনের ছুটি ঘোষণা করেছে! গত বুধবার প্রধানমন্ত্রীর নির্বাহী আদেশে ১ জুলাই থেকে ৯ জুলাই পর্যন্ত ছুটি ঘোষণা করা হয়। ছুটির তালিকা অনুযায়ী, ১ ও ২ জুলাই শুক্র এবং শনিবার। ৩ জুলাই শব-ই-কদরের ছুটি। মাঝে একদিন ৪ জুলাই সোমবার অফিস খোলা থাকার কথা। নির্বাহী আদেশে এদিনও ছুটি দেয়া হয়েছে। ৬ জুলাই সম্ভাব্য ঈদ ধরে ৫ থেকে ৭ জুলাই তিন দিনও ঈদের ছুটি থাকবে। ৮ ও ৯ জুলাই শুক্র এবং শনিবার। এভাবে টানা ৯ দিনই ছুটি পাবেন সরকারী চাকুরেরা। এই দীর্ঘ ছুটির প্রভাব শহর ঢাকার উপর ভীষণভাবে পরবে বলেই মনে করা হচ্ছে। সরকারী ছুটি লম্বা হওয়ায় যারা ঢাকার বাইরে ঈদ করতে চাননি তারাও করছেন। ফলে বিভিন্ন যানবাহনের টিকেট কাটতে শুরু হয়ে গেছে হুড়োহুড়ি। রেল ভ্রমণটা ঈদে খুব জনিপ্রয়। এরই মাঝে জনসমুদ্রে রূপ নিয়েছে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন। প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ ভিড় করছেন টিকেটের জন্য। বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা থেকে টিকিট বিক্রি শুরু হয়। অথচ বহু মানুষ চলে এসেছিলেন সেহরি সেরেই! সব দেখে বোঝা যায়, ঈদ আসছে!
×