খোকন আহম্মেদ হীরা, বরিশাল ॥ আসন্ন ঈদ-উল-ফিতর উপলক্ষে নাড়ির টানে বাড়ি ফেরা নদীবেষ্টিত দক্ষিণাঞ্চলের লাখো মানুষের প্রতিবছর একমাত্র ভরসাই থাকত নৌরুটের লঞ্চের ওপর। লোকসানের অজুহাতে আকাশ পথের বিমান ছিল দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ। অতীতে খানাখন্দের কারণে সড়ক পথে মানুষের চাপ কমাতে সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকেই নৌপথের ওপর গুরুত্ব দেয়া হতো বেশি। ফলে লঞ্চযাত্রীদের থাকতে হতো দালালদের কাছে জিম্মি। যাত্রীদের অগ্রিম টিকেট দালালদের হাত ঘুরে চলে যেত কালোবাজারে। তখন একটি টিকেট যেন ঘরমুখী মানুষের কাছে সোনার হরিণ হয়ে যেত।
সূত্রমতে, পুরনো দিনের সকল ব্যর্থতার অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশকে এগিয়ে নেয়ার জন্য মন্ত্রী ও এমপিদের পরামর্শ দেয়ার পর সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ও উর্ধতন কর্মকর্তাদের নিরলস প্রচেষ্ঠায় গোটা দেশের ন্যায় বরিশালসহ পুরো দক্ষিণাঞ্চলবাসীর ভাগ্যের পরিবর্তন হতে শুরু করেছে। একসময় লোকসানের অজুহাতে বন্ধ হয়ে যায় আকাশ পথে ঢাকা-বরিশাল রুটের বিমান। বর্তমান সরকারের বিমান ও পর্যটন মন্ত্রীর সাহসী উদ্যোগে বর্তমানে একই রুটে সরকারী ও বেসরকারী কোম্পানীর তিনটি বিমান লভ্যাংশের মাধ্যমে চলাচল করছে বীরদর্পে। যোগাযোগ ও সেতুমন্ত্রী একাধিকবার সফর করেছেন দক্ষিণাঞ্চলে। তারই দূরদর্শিতায় পর্যায়ক্রমে খানাখন্দের ঢাকা-বরিশাল মহাসড়ক ফিরে পায় যৌবন। নৌমন্ত্রীর অসংখ্যবার সফরের মধ্য দিয়ে আধুনিক নৌবন্দর থেকে শুরু করে দক্ষিণাঞ্চলে ফিরে আসে নৌরুটের জৌলুস। একে একে নৌরুটে যোগ হয় সরকারী এবং বেসরকারী কোম্পানির বিলাসবহুল জাহাজ ও লঞ্চ। ফলে এখন আর ঈদে ঘরে ফেরা দক্ষিণাঞ্চলের যাত্রীদের কেবল লঞ্চের ওপর ভরসা করে থাকতে হচ্ছে না। নৌরুট, আকাশ এবং সড়ক পথ সচল থাকায় এবারই কেবল কোন প্রকার ঝক্কিঝামেলা ছাড়াই নিরাপদ ও আরামদায়ক অবস্থায় ঈদে নাড়ির টানে শেকড়ের কাছে আসা দক্ষিণের লাখো যাত্রী যাতায়াত করতে যাচ্ছেন।
স্পেশাল সার্ভিসে ২৩ লঞ্চ ও ৫ রকেট ॥ ঈদ-উল-ফিতর উপলক্ষে অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার নাড়ির টানে বাড়ি ফেরা দক্ষিণাঞ্চলের লাখো যাত্রীর সুবিধার্থে সবচেয়ে বেশি লঞ্চ ও জাহাজ যুক্ত হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা-বরিশাল নৌরুটে এবারের ঈদে বেসরকারী কোম্পানির নিয়মিত লঞ্চসহ মোট ১৭টি লঞ্চ সরাসরি ঢাকা-বরিশাল রুটে যাত্রী পরিবহন করবে। এর মধ্যে পারাবত কোম্পানির ৫টি, সুন্দরবন কোম্পানির ৩টি, সুরভী কোম্পানির ৩টি, কীর্তনখোলার ২টি, টিপুর ১টি, ফারহানের ১টি, কালাম খানের ১টি, দ্বীপরাজের ১টি। দিবা সার্ভিসের গ্রীনলাইন ওয়াটার ওয়েজের দুটি জাহাজ এ রুটে যাত্রী পরিবহন করবে। এছাড়া চাঁদপুর-বরিশাল ভায়া ফতুল্লা সুন্দরবন, ফারহান, পূবালীসহ চারটি লঞ্চ চলাচল করবে। পাশাপাশি সরকারী জাহাজ সার্ভিসে বিআইডব্লিউটিসি’র পিএস মাহসুদ, অস্ট্রিস, লেপচা, নামের তিনটি রকেট ও নতুন সংযুক্ত এমভি মধুমতি, এমভি বাঙালীসহ মোট পাঁচটি জাহাজ যাত্রীপরিবহন করবে।
স্পেশাল সার্ভিস লঞ্চের টিকেট বিতরণ শুরু ॥ ঢাকা-বরিশাল নৌরুটে যাত্রীবাহী ঈদ স্পেশাল সার্ভিসের লঞ্চের কেবিনের অগ্রিম টিকেট বরিশাল থেকে বিতরণ করা শুরু হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে এ টিকেট যাত্রীদের মাঝে বিতরণ করা হয়। এর আগে বরিশাল-ঢাকা রুটের যাত্রীবাহী লঞ্চগুলোর পক্ষ থেকে যাত্রীদের কাছ থেকে টোকেন বা কেবিন প্রাপ্তির আবেদন সরবরাহ করা হয়েছিল।
আকাশ পথে তিন বিমান ॥ আকাশ পথে ঢাকা-বরিশাল রুটে এবারই প্রথম বেসরকারী কোম্পানির নভোএয়ার, ইউএস বাংলা ও সরকারী বাংলাদেশ বিমান একত্রে নিয়মানুযায়ী তাদের ফ্লাইট পরিচালনা করবে। যাত্রীদের চাহিদা অনুযায়ী প্রতিটি বিমান তাদের ফ্লাইট বাড়াবেন বলেও জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। তিন বিমানের প্রতিযোগিতায় ঈদে আকাশ পথে যাতায়াতকারী যাত্রীদের জন্যও থাকছে নানাধরনের অফার।
সড়ক পথে নেই খানাখন্দ ॥ অন্যান্য বছরের ন্যায় এবার ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কে নেই কোন খানাখন্দ। ফলে যাত্রীরা নিরাপদেই এবার সড়ক পথে তাদের গন্তব্যে যাতায়াত করতে পারবেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এবারের ঈদে ঢাকা-বরিশাল সড়ক পথে ঈগল, হানিফ, সাকুরা, গোল্ডেনলাইন, সোনারতরী, মেঘনাসহ প্রায় অর্ধশতাধিক পরিবহন যাত্রীসেবা প্রদান করবে। পাশাপাশি মাওয়া-বরিশাল রুটে রয়েছে বিআরটিসি এসি বাস সার্ভিসের সঙ্গে মাইক্রোবাসে যাতায়াতের সুবিধা। ঈদের আগেই নতুন করে যাত্রীসেবায় ঢাকা-বরিশাল সড়ক পথে ডিপজল পরিবহনের এসি বাস সার্ভিস চালু হওয়ারও কথা রয়েছে। বিআইডব্লিউটিসি’র কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সংস্থার ফেরিগুলো পাটুরিয়া, দৌলতদিয়া, আরিচা, শিমুলিয়া ও চরজানাজাতসহ সকল রুটে অতিরিক্ত ট্রিপ দিয়ে যানবাহন পারাপার করবে।