ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

পলি আগ্রাসনে কর্ণফুলী চ্যানেল মারাত্মক হুমকিতে

চট্টগ্রাম বন্দরের ৩টি জেটি অকার্যকর

প্রকাশিত: ০৪:১১, ২৪ জুন ২০১৬

চট্টগ্রাম বন্দরের ৩টি জেটি অকার্যকর

মোয়াজ্জেমুল হক, চট্টগ্রাম অফিস ॥ সমুদ্র পথে পণ্য পরিবহনের পরিমাণ যেখানে দিনে দিনে কেবল বাড়ছে সেখানে গত দশ বছরে দেশের বৃহত্তম চট্টগ্রাম বন্দরে একটি জেটিও সম্প্রসারণ বা নতুনভাবে নির্মিত হয়নি। যা আগামী দিনগুলোর জন্য বড় ধরনের বিপর্যয় নেমে আসার আশঙ্কা করছে বন্দর ব্যবহারকারী বিভিন্ন সংস্থা। এদিকে, টার্মিনাল নির্মাণ ছাড়া যেখানে ভিন্ন কোন পথ খোলা নেই সেখানে চট্টগ্রাম বন্দর প্রস্তাবিত ‘বে-টার্মিনাল’ প্রকল্পের ওপর আপত্তি দিয়েছে নৌবাহিনী এবং নিরাপত্তা বাহিনীর পক্ষ থেকে প্রস্তাব করা হয়েছে ওই প্রকল্প স্থানে ফায়ারিং রেঞ্জ স্থাপনের। ফলে বহুল আকাক্সক্ষার বে-টার্মিনাল প্রকল্প আঁতুড় ঘরেই মরতে যাচ্ছে বলে প্রতীয়মান। উল্লেখ্য, চট্টগ্রামের পতেঙ্গা এলাকায় এ বে-টার্মিনাল নির্মাণের জন্য ৯০৭ একর জমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া চলছে সম্পূর্ণ ঢিমেতালে। প্রকল্পের জন্য অনাপত্তিতে সময় লেগে যায় আঠারো মাস। পরিবেশ অধিদফতর এখনও ছাড়পত্র দেয়নি। সম্ভাব্যতা পরীক্ষার কাজ সহসা শুরু হওয়ার কথা ছিল। এতে ৮শ’ থেকে এক হাজার মিটার প্রশস্ত ও ১২ থেকে ১৩ মিটার গভীর চ্যানেলের সুবিধার কথা রাখা আছে। ধারণা দেয়া হয়েছে ২০২৩ সালের মধ্যে প্রথম পর্যায়ের দেড় হাজার মিটার জেটি নির্মাণ কাজ শেষ হবে। কিন্তু চলমান এ প্রক্রিয়ায় নৌবাহিনী এ প্রকল্পের বিরুদ্ধে আপত্তি দিয়েছে। নিরাপত্তা বাহিনী আপত্তি দিয়েছে ফায়ারিং রেঞ্জ প্রতিষ্ঠার। ফলে বন্দরের প্লানিং বিভাগ বলেছে বন্দরের এ পরিকল্পনা অঙ্কুরেই বিলুপ্ত হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কর্ণফুলী চ্যানেলের ড্রেজিং কাজ বন্ধ রয়েছে দীর্ঘদিন ধরে। জয়েন্টভেঞ্চারের এমএমডিসি নামের একটি কোম্পানি এ কাজ সম্পন্ন না করে ১২৯ কোটি টাকা উত্তোলন করে পালিয়ে যাবার পর যে মামলা হয়েছে তা এখনও চলমান। এদিকে, ইতোমধ্যে বন্দরের ১৩টি জেটির মধ্যে তিনটি জেটি পলিতে ভরাট হয়ে সম্পূর্ণ অচল হয়ে গেছে। অবশিষ্ট ১০টি দিয়ে কন্টেনার ও বাল্ক কার্গো হ্যান্ডলিং কার্যক্রম চালাতে গিয়ে কর্তৃপক্ষকে হিমশিম খেতে হচ্ছে। বহির্নোঙ্গরে জাহাজ জট এখন নিত্যদিনের। যদিও বন্দর কর্মকর্তারা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন বাহানা তুলে ধরে সহসা এ জাতীয় জটের অবসান ঘটবে বলে আশার কথা শোনান। কিন্তু বাস্তবে এ বন্দরের প্রকৃত উন্নয়ন অর্থাৎ জেটি নির্মাণ বা সম্প্রসারণের এক ইঞ্চি কাজও গত প্রায় দশ বছরে দুর্ভাগ্যজনকভাবে হয়নি। অথচ এ বন্দরের তহবিল থেকে পায়রা বন্দরের উন্নয়নের জন্য নেয়া হয়েছে ৫০ কোটি টাকা। পাশাপাশি মহেষখালির সোনাদিয়ায় প্রস্তাবিত গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণ নিরীক্ষার কাজের জন্য নেয়া হয়েছে ৩৬ কোটি টাকা। অথচ, এ বন্দরের জেটি বৃদ্ধির জন্য কোন পরিকল্পনা কেন নেয়া হলো না তা সম্পূর্ণ রহস্যাবৃত। উল্টো তিনটি জেটি পলি ভরাট হয়ে অচল হয়ে গেছে জাহাজ ভেড়ানো যাচ্ছে না। পাশাপাশি কর্ণফুলী ব্রিজ থেকে উজানে পলি ভরাট হওয়ার প্রক্রিয়া ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। আগামীতে ৩ নম্বর জেটি পার হয়ে সামনের জেটিগুলি পর্যন্ত পলির আগ্রাসন চলতে থাকলে অপরাপর জেটিসমূহের অবস্থাও বিপর্যস্ত হবে। যা হবে বন্দরের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। এ কারণে যে অচলাবস্থা নেমে আসবে তা দেশের অর্থনীতির ক্ষেত্রে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব বয়ে আনবে। এসব বিষয় বিভিন্ন সময় আলোচিত হলেও নৌমন্ত্রণালয় ও বন্দর কর্তৃপক্ষ কেন রহস্যময় নীরবতা পালন করে যাচ্ছে তা নিয়ে বন্দর ও বন্দর ব্যবহারকারী মহলসহ সর্বত্র আলোচনা ও সমালোচনা চলছে। কিন্তু কর্তৃপক্ষ কেন জানি নির্বিকার। এ বন্দরের তহবিলে অর্থের অভাব নেই। পরিকল্পনার ঘাটতি নেই। কিন্তু বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ায় অদৃশ্য শক্তি ভর করেছে রহস্যময় কারণে। এ বন্দরে বছরে আড়াই হাজারেও বেশি দেশী-বিদেশী জাহাজ চলাচল করে থাকে। লাখ লাখ কন্টেনার হ্যান্ডলিং হচ্ছে। প্রবৃদ্ধির হার দশ শতাংশ ছাড়িয়ে যাচ্ছে। কিন্তু মন্ত্রণালয় এসব বিষয় নজরে না এনে উটকো ও অপ্রয়োজনীয় পরিকল্পনা নিয়েই ব্যস্ত থাকছে। এ বন্দরের টাকায় পায়রা বন্দরের উন্নয়ন হচ্ছে, গভীর সমুদ্র বন্দরে নির্মাণে সমীক্ষা চলছে। অথচ মূল সংস্থা প্রকৃত উন্নয়ন বলতে যা বোঝায় তা অনুপস্থিত। সহসা পলি আগ্রাসন বন্ধে ড্রেজিং কাজ শুরু করা না হলে এবং নতুন জেটি নির্মাণ বা বিদ্যমান জেটি সম্প্রসারণের উদ্যোগ নেয়া না হলে এ বন্দরের ভবিষ্যত যে বিপর্যয়ের মুখে পড়বে তা থেকে উত্তোরণ বড় ধরনের বাধা হয়ে দাঁড়াবে বলে বন্দর সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের মত রয়েছে।
×