ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

আবাহনী-দোলেশ্বর ম্যাচের পয়েন্ট ভাগাভাগি

প্রিমিয়ার ক্রিকেট লীগে চ্যাম্পিয়ন আবাহনী

প্রকাশিত: ০৭:১১, ২৩ জুন ২০১৬

প্রিমিয়ার ক্রিকেট লীগে চ্যাম্পিয়ন আবাহনী

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ হিসেবটা সহজ ছিল। আবাহনী-প্রাইম দোলেশ্বর স্পোর্টিং ক্লাবের ম্যাচটি স্থগিত ছিল। ম্যাচটির ফলাফল হলেই চ্যাম্পিয়নশিপ নির্ধারিত হয়ে যেত। শেষ পর্যন্ত বুধবার রাতে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) ম্যাচটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করে উভয় দলকে ১ পয়েন্ট করে ভাগ করে দেয়। ফলে ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লীগে (ডিপিএল) চ্যাম্পিয়ন হয়েছে আবাহনী। সুপার লীগের শেষ রাউন্ডের ম্যাচেও আবাহনী জিতেছে। ফলে লীগ শেষে আবাহনী ২৩ পয়েন্ট এবং প্রাইম দোলেশ্বর ২১ পয়েন্ট সংগ্রহ করেছে। রানার্সআপ হয়েছে দোলেশ্বর। বুধবার সুপার লীগের শেষ ম্যাচে আবাহনী তামিম ইকবালের ১৪২ রানের দুর্দান্ত নৈপুণ্যে প্রাইম ব্যাংককে ১১৫ রানের বড় ব্যবধানে হারিয়ে দিয়েছে। আর রূপগঞ্জকে ৭ উইকেটে হারিয়ে দেয় দোলেশ্বর। শেষ রাউন্ড সমাপ্তের পর আবাহনী ২২ ও দোলেশ্বর ২০ পয়েন্ট পেয়েছিল, শুধু এ দু’দলের পরস্পরের ম্যাচটির ভাগ্য নিয়েই শিরোপা কার ঘরে উঠবে সেটা নিয়ে ছিল সমস্যা। সেটাও বুধবার বিসিবির পরিচালক নাজমুল করিম টিঙ্কু ও শেখ সোহেল, বিসিবির প্রধান ম্যাচ রেফারি এএসএম রকিবুল হাসান ও বিসিবির টেকনিক্যাল কমিটির সদস্য আতহার আলী খানকে নিয়ে গঠিত কমিটি ম্যাচ পরিত্যক্ত করলে চ্যাম্পিয়ন হয়ে যায় আবাহনী। দিনের আরেক ম্যাচে মোহামেডানকে ১৭ রানে হারিয়ে দিয়েছে ভিক্টোরিয়া। দোলেশ্বর জিতেছে, তবু চ্যাম্পিয়ন হয়েছে তামিমের দল আবাহনী। তবে তামিম ইকবাল শুনলেন নিষিদ্ধ হওয়ার সংবাদ। তার শতকে জয়ও পেয়েছে আবাহনী। কিন্তু তামিম যে দোলেশ্বরের বিপক্ষে সুপার লীগের প্রথম ম্যাচে আম্পায়ারদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেছে, তার ফলও পেয়েছে। এক ম্যাচ নিষিদ্ধ করা হয়েছে তামিমকে। আবার এক লাখ টাকা জরিমানাও করা হয়েছে। বুধবার সকালে মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে টস জিতে প্রথমে ব্যাটিং করার সিদ্ধান্ত নেন আবাহনীর অধিনায়ক তামিম ইকবাল। দলও ৩১৬ রান করে। লিটন কুমার দাসকে নিয়ে ইনিংসের শুরু করেন তামিম। তবে কোন রান করার আগেই লিটন ফিরে গেলে চাপে পড়া আবাহনীর হাল ধরেন তামিম। পরে নাজমুল হোসেন শান্ত, দীনেশ কার্তিক ও মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতকে নিয়ে সামনে এগিয়ে যান বাঁহাতি এই হার্ডহিটার ওপেনার। শান্তর সঙ্গে ৪৯ রান, কার্তিকের সঙ্গে ৪৭ রান করার পর মোসাদ্দেকের সঙ্গে ১৭৩ রানের জুটি গড়েন আবাহনীর অধিনায়ক। দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ১৪২ রান করেন তামিম। ১৩২ বল মোকাবেলা ১১ চার ও ৪ ছক্কার সাহায্যে এ রান করেন তিনি। এছাড়া ৭৪ বলে ৩ চার ও ৫ ছক্কার সাহায্যে ৭৮ রান করেন মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত। তামিমের ১৩২ বলে ১৪২ রানের অনবদ্য ইনিংসের সঙ্গে তরুণ মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতের অবদানও অনেক। লিজেন্ডস অব রূপগঞ্জের বিপক্ষে আগের ম্যাচেই করেছিলেন ৫৫ বলে ৭৩। সেই ধারাবাহিকতা ধরে রেখে এবার করলেন ৭৪ বলে ৭৮। এমনকি ৯৭ রানে ৩ উইকেট পড়ার পর তামিম-মোসাদ্দেকের চতুর্থ উইকেট জুটিতে আসা ১৭৩-ই ৩০০ পার হওয়ার সিঁড়িতে তুলে দেয় ১৮তম লীগ শিরোপা জয়ের অপেক্ষায় থাকা আবাহনীকে। ৭ নম্বরে নেমে মাত্র ১০ বলে ২৬ রান করে ঝড়ের ঝাপটাটা শেষ পর্যন্ত ধরে রাখেন আবুল হাসান রাজু। আবাহনীর দেয়া ৩১৭ রানের বড় টার্গেটে ভাল সূচনার পরও ২০১ রানের বেশি করতে পারেনি প্রাইম ব্যাংক। সাব্বির রহমান-নুরুল হাসানদের বিপক্ষে এদিন ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠেন আবাহনীর বাঁহাতি স্পিনার সাকলাইন সজীব। একাই ৭ উইকেট নেন এই বাঁহাতি স্পিনার। সাকলাইনের ক্যারিয়ারসেরা বোলিংয়ে প্রতিরোধের বাঁধ ভেঙ্গে পড়ে প্রাইম ব্যাংকের। পেসার তাসকিন আহমেদ নেন দুটি উইকেট। শেষ পর্যন্ত ৩৭.২ ওভারে ২০১ রানে অলআউট হয়ে যায় প্রাইম ব্যাংক। যদিও ওপেনিং জুটির ৭২ রান পর্যন্ত সাবলীল ক্রিকেট খেলেছে প্রাইম ব্যাংক। দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৬৯ রান করেন ওপেনার মেহেদী মারুফ। শেষদিকে শুভাগত হোমের ব্যাট থেকে আসে ৫১ রান। সাকলাইস সজীব ৫৮ রানে ৭ এবং ৪৫ রানে ২ উইকেট পান তাসকিন আহমেদ। অনবদ্য ১৪২ রানের জন্য ম্যাচসেরা হয়েছেন আবাহনীর অধিনায়ক তামিম ইকবাল। শিরোপা স্বপ্ন বাঁচিয়ে রাখল দোলেশ্বর ॥ ঢাকা লীগের মৌসুমের শেষ ম্যাচে লিজেন্ডস অব রূপগঞ্জকে ৭ উইকেটে হারিয়ে শিরোপা স্বপ্ন বাঁচিয়ে রাখল প্রাইম দোলেশ্বর। রূপগঞ্জের দেয়া ১৪৪ রানের সহজ লক্ষ্য দোলেশ্বর টপকে গেছে মাত্র ৩ উইকেটের বিনিময়ে। এই জয়ে শিরোপা জয়ে আবাহনীর সঙ্গে এখন শুধু দোলেশ্বর থাকল। বিকেএসপিতে সুপার লীগের শেষ ম্যাচে প্রাইম দোলেশ্বরের কাছে টস হেরে ব্যাটিংয়ে নামে লিজেন্ডস অব রূপগঞ্জ। আর ব্যাটিংয়ে নেমে দোলেশ্বরের দুই বোলার আল-আমিন হেসেন ও রাহাতুল ফেরদৌসের বোলিং তোপে এক রকম অসহায় আত্মসমর্পণ করতে হয়েছে রূপগঞ্জকে। আল-আমিন একদিকে চালিয়েছেন পেস তোপ আর রাহাতুল ফেরদৌস ঝড় তুলেছেন স্পিন ঘুর্ণি দিয়ে। রূপগঞ্জের দুই ওপেনার মিজানুর রহমান ও সৌম্য সরকারকে ব্যক্তিগত ৬ ও ১৪ রানেই উইকেট ছাড়া করেছেন আল-আমিন। তার হাত থেকে রক্ষা পাননি রূপগঞ্জের ভারত অলরাউন্ডার পাওয়ান নেগিও। ব্যক্তিগত ১৬ রানে তাকে ক্রিজ ছাড়া করেছেন এই পেসার। আল-আমিনের উইকেট উৎসবের দিনে বল হাতে মেতেছেন রাহাতুল ফেরদৌসও। তার স্পিন ঘূর্ণি একে একে সাঝঘরের পথ দেখিয়েছে মোহাম্মদ মিঠুন (১৬), নাহিদুল ইসলাম (৪), সাজ্জাদুল হক (০) ও আলাউদ্দিন বাবুকে (৫)। বাদ বাকি তিন উইকেট নিয়েছেন সানজামুল ইসলাম, জাকারিয়া মাসুদ ও ইমতিয়াজ হোসেন। তবে রূপগঞ্জের হয়ে ব্যাট হাতে এদিন একাই লড়েছেন ব্যক্তিগত ৫৯ রানে অপরাজিত থাকা আসিফ আহমেদ। তার রানেই মূলত ৪১.২ ওভারে সব উইকেটের বিনিময়ে ১৪৩ রানের সংগ্রহ করতে পেরেছে লিজেন্ডস অব রূপগঞ্জ। জবাবে জয়ের জন্য ১৪৪ রানের সহজ লক্ষ্যে খেলতে নামে দোলেশ্বর। তবে দলীয় ১৬ রানে তাইজুল ইসলামের বলে মিঠুনের হাতে স্ট্যাম্পড হন ইমতিয়াজ হোসেন। ব্যক্তিগত ৯ রানে ফিরেছেন দোলেশ্বর ওপেনার। দ্বিতীয় উইকেটে দলের হয়ে হাল ধরেছেন রকিবুল ইসলাম ও রনি তালুকদার। তাদের ৭০ রানের জুটি অনেকটাই জয়ের সুবাস পেতে থাকে দোলশ্বর। কিন্তু দলীয় ৮৬ রান আলাউদ্দিন বাবুর মিডিয়াম পেস আঘাতে রনি তালুকদার মিডউইকেট থেকে সৌম্যর হাতে তালুবন্দী হলে জয়ের অপেক্ষা বাড়ে মিজানুর রহমান বাবুলের শিষ্যদের। এরপর আর ফিরে তাকাতে হয়নি দোলেশ্বরকে। তৃতীয় উইকেটে শচিন বেবি ও রকিবুল হসান দলকে নিয়ে যান জয়ের একেবারে দ্বারপ্রান্তে। রকিবুল ব্যক্তিগত ৬৬ রানে অপরাজিত থাকলেও শেষ পর্যন্ত থাকতে পারেননি শচিন। কেননা ব্যক্তিগত ২৩ ও দলীয় ১৪৩ রানে আবু হায়দার রনির বলে ক্যাচ তুলে দিয়েছেন সাজ্জাদুল হকের হাতে। এরপর জয়ের বাকি আনুষ্ঠানিকতা শেষ করেন জাকারিয়া মাসুদ। ব্যক্তিগত ১ রানে দলকে পৌঁছে দেন জয়ের বন্দরে। স্কোর ॥ আবাহনী ইনিংস ॥ ৩১৬/৭; ৫০ ওভার (তামিম ১৪২, মোসাদ্দেক ৭৮, রাজু ২৬; চাদ ৩/৫৯)। প্রাইম ব্যাংক ইনিংস ॥ ২০১/১০; ৩৭.২ ওভার (মেহেদী ৬৯, শুভাগত ৫১; সাকলায়েন ৭/৫৮, তাসকিন ২/৪৫)। ফল ॥ আবাহনী ১১৫ রানে জয়ী। ম্যাচসেরা ॥ তামিম ইকবাল (আবাহনী)। রূপগঞ্জ ইনিংস ॥ ১৪৩/১০; ৪১.২ ওভার (আসিফ ৫৯*, নেগি ১৬; রাহাতুল ৪/৩৬, আল আমিন ৩/২৯)। দোলেশ্বর ইনিংস ॥ ১৪৪/৩; ২৫.৫ ওভার (রকিবুল ৬৬*, রনি ৪২, বেবি ২৩)। ফল ॥ দোলেশ্বর ৭ উইকেটে জয়ী। ম্যাচসেরা ॥ আল আমিন (প্রাইম দোলেশ্বর)। ভিক্টোরিয়া-মোহামেডান ম্যাচ-ফতুল্লা ভিক্টোরিয়া ইনিংস ॥ ২০৫/১০; ৪৮.৩ ওভার (মুমিনুল ৫৮, আল আমিন ৫৫; এনামুল জুনিয়র ৩/৪৫)। মোহামেডান ইনিংস ॥ ১৮৮/১০; ৪২ ওভার (নাজিমুদ্দিন ৫০, মুশফিক ৪৬; মুমিনুল ৩/২৯)। ফল ॥ ভিক্টোরিয়া ১৭ রানে জয়ী। ম্যাচসেরা ॥ মুমিনুল হক (ভিক্টোরিয়া)।
×