ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সংসদে মতিয়া চৌধুরী

যারা মুহুরী ও বাঁশখালী হত্যার হোতা তারাই গুপ্তহত্যা চালাচ্ছে

প্রকাশিত: ০৬:২৫, ২৩ জুন ২০১৬

যারা মুহুরী ও বাঁশখালী হত্যার হোতা তারাই গুপ্তহত্যা চালাচ্ছে

সংসদ রিপোর্টার ॥ প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী বলেছেন, বর্তমান সরকারের ধারাবাহিকতা নষ্ট করার জন্যই বিএনপি-জামায়াত জঙ্গীগোষ্ঠী চোরাগোপ্তা হামলায় মেতে উঠেছে। তাদের উদ্দেশ্য বাংলাদেশকে একটি সন্ত্রাসী রাষ্ট্র হিসেবে চিহ্নিত করা। ব্যর্থ রাষ্ট্র হিসেবে বিশ্বের কাছে তুলে ধরা। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সন্ত্রাসী-জঙ্গীবাদী কর্মকা-ের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছেন এবং বিশ্ববাসীকে আশ্বস্ত করেছেন যে, বাংলাদেশ গণতন্ত্রকামী দেশ। এখানে উগ্রবাদীদের কোন স্থান নেই। তাই বর্তমান এ পরিস্থিতিরও উন্নতি অচিরেই ঘটবে। ডেপুটি স্পীকার এ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বি মিয়ার সভাপতিত্বে জাতীয় সংসদে বুধবার মতিয়া চৌধুরী ছাড়াও বাজেটের ওপর আলোচনায় অংশ নেনÑ সরকারী দলের মাহবুব-উল-আলম হানিফ, আবুল হাসনাত আবদুল্লাহ, এইচএন আশিকুর রহমান, দবিরুল ইসলাম, ফজিলাতুন নেসা বাপ্পি, খন্দকার আজিজুল হক আরজু, মনিরুল ইসলাম, পংকজ দেবনাথ, মীর শওকাত আলী বাদশা, সাবিনা আক্তার তুহিন, মনোরঞ্জন শীল গোপাল, কাজী নাবিল আহমেদ ও জাতীয় পার্টির সালাউদ্দিন আহমেদ মুক্তি। আলোচনায় অংশ নিয়ে মতিয়া চৌধুরী বিএনপি-জামায়াতের চক্রান্ত-ষড়যন্ত্র সম্পর্কে দেশবাসীকে সজাগ থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেন, আমরা মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়ার দিকে যাচ্ছি এবং এগিয়ে যাচ্ছি। আমরা এগিয়ে যাবই। কারণ এ অগ্রযাত্রার নেতৃত্ব দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিএনপি-জামায়াতের দিকে ইঙ্গিত করে তিনি আরও বলেন, এরা বিদেশী নাগরিকসহ মন্দিরের পুরোহিত, শিক্ষকসহ নিরীহ অরাজনৈতিক ব্যক্তিদের হত্যা করছে। বিশ্ববাসী ভুলে যায়নি ২০০১ সালের পরে গোপাল কৃষ্ণ মুহুরীকে মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে হত্যা করার কথা। দেশবাসী ভুলে যায়নি বাঁশখালীতে গানপাউডার দিয়ে একটি পুরো পরিবারকে পুড়িয়ে হত্যা করার ঘটনা। সেই একই শক্তি (বিএনপি-জামায়াত) মুসলিম বিশ্ব কর্তৃক ত্যাজ্য ইসরাইলের মোসাদের সঙ্গে মিলে বাংলাদেশে ত্রাস এবং নৈরাজ্য সৃষ্টির চেষ্টা করছে। এরা প্রধানমন্ত্রীর উচ্চশিক্ষিত পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়কে হত্যা করারও ষড়যন্ত্র করছে। কারণ তাদের উদ্দেশ্য বাংলাদেশকে একটি সন্ত্রাসী রাষ্ট্র হিসেবে চিহ্নিত করা। ব্যর্থ রাষ্ট্র হিসেবে বিশ্বের কাছে তুলে ধরা। ‘সরকারই এসব গুপ্তহত্যা করাচ্ছে’Ñ বিএনপি নেত্রীর এমন বক্তব্যের কড়া সমালোচনা করে কৃষিমন্ত্রী বলেন, এই সেই খালেদা জিয়া, যিনি একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলার পরে বলেছিলেন শেখ হাসিনাই নাকি ভ্যানিটি ভ্যাগে করে গ্রেনেড নিয়ে গিয়েছিল! এরা আহসানউল্লাহ মাস্টার হত্যা, প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী শাহ এএসএম কিবরিয়া হত্যা, সাবেক এমপি মমতাজ হত্যাসহ কোন হত্যাকা- নিয়েই ওই সময় এ সংসদে আলোচনা করতে দেয়নি। কিন্তু প্রমাণ হয়েছে এসব হত্যাকা-ের সঙ্গে বিএনপি-জামায়াতই জড়িত ছিল। বাংলাদেশের সাম্প্রতিক গুপ্তহত্যা নিয়ে ‘শক্তিধর’ দেশগুলো দ্বিচারিতা করছে দাবি করে মতিয়া চৌধুরী বলেন, এই শক্তিধর দেশগুলো চোরকে বলে চুরি করতে, আর গৃহস্থকে বলে সাবধান থাকতে। এরা সর্প হয়ে দংশন করে ওঝা হয়ে ঝাড়ে। তারা একদিকে লাদেনের প্রশংসা করে, আবার প্রয়োজন পড়লে হত্যা করে সমুদ্রে ফেলে দেয়। এরা আসলে একই শক্তি। এই শক্তি এবং দেশীয় ষড়যন্ত্রকারীরা জঙ্গী তৎপরতা চালিয়ে গুপ্তহত্যায় মেতে উঠেছে। চোরাগোপ্তা হত্যাকা- নিয়ে সময়ে-অসময়ে শক্তিধর এ সমস্ত দেশের আহা-উহু’র সীমা নেই। এখন ওই শক্তিধর দেশগুলোতে একের পর এক, গ-ায় গ-ায় মানুষ খুন হচ্ছে। এমনকি এমপিকেও হত্যা করা হচ্ছে। এখন তারা কী বলবেন? কথায় বলে ‘ঘুটে পোড়ে গোবর হাসে’। আমরা কিন্তু হাসি না, আমরা কষ্ট পাই। তবে অবস্থাদৃষ্টে মনে হয়, বানরের লেজে আগুন দিয়ে ছেড়ে দিয়েছিল অন্যের বাড়িতে আগুন লাগাতে। এখন সেই আগুন নিজেদের বাড়িতেও ছড়িয়ে পড়েছে। সাবেক চীফ হুইপ আবুল হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ক্ষমতায় থাকতে তারেক রহমান-আরাফাত রহমানরা হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছে। বিভিন্ন মামলার আসামি তারেক রহমান এখন লন্ডনে বসে জঙ্গী তৎপরতা চালাচ্ছে। লন্ডনে বসে বিভিন্ন ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হচ্ছে। তারা এখন ইসরাইল গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের দারস্ত হয়েছে। তাদের সেই ষড়যন্ত্র সফল হতে পরেনি। সবাইকে অপশক্তির বিরুদ্ধে সজাগ থাকতে হবে। তিনিও পদ্মা সেতুর নাম ‘শেখ হাসিনা’ সেতু করার দাবি জানান। মাহবুব-উল-আলম হানিফ বলেন, জিয়াউর রহমান এবং খালেদা জিয়া দম্পতি বাংলাদেশের ইতিহাসে খুনী দম্পতি হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে। এরা বারবার বাংলাদেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্র করার ষড়যন্ত্র করছে। এখনও আতঙ্ক সৃষ্টি হিসেবে গুপ্তহত্যাসহ বিভিন্ন ধর্মীয় গোষ্ঠীকে হত্যাসহ জঙ্গীবাদের খেলায় মেতে উঠেছে। কিন্তু শেখ হাসিনা কঠোরহস্তে এসব সন্ত্রাসী কর্মকা- দমন করে দেশকে উন্নতির দিকে নিয়ে যাচ্ছেন। আজ বিএনপি-জামায়াত রাজনীতির ময়দানে সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ এবং তারা ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। এইচএন আশিকুর রহমান বলেন, বিএনপি-জামায়াতের দানবীয় অগ্নিসন্ত্রাসের নৃশংসতা ভয়াবহতা থেকে দেশকে উদ্ধার করে উন্নয়ন-অগ্রগতির মহাসড়কে সামিল করেছেন। এখন আবার গুপ্তহত্যা চালানো হচ্ছে। কিন্তু অপশক্তিদের আবারও পরাজয় অবশ্যম্ভাবী। তিনি সঞ্চয়পত্রের ওপর থেকে সুদের হার বৈষম্যে দূর করার তাগিদ দেন। পংকজ দেবনাথ বলেন, দেশের সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রাকে ব্যহত করতেই বিএনপি-জামায়াত টার্গেট কিলিং চালাচ্ছে। সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা চালানো হচ্ছে। ধর্মীয় কারণে নয়, বিশ্বের কাছে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ করতেই এসব হামলা চালানো হচ্ছে। এ আঘাত গণতন্ত্র-স্বাধীনতা ও অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের প্রতি। এদের পরাজিত করতেই হবে। সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য ফজিলাতুন নেসা বাপ্পি বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে গ্রেফতার করার দাবি জানিয়ে বলেন, বিএনপি নেত্রীর কুলাঙ্গার পুত্র দুর্নীতিবাজ তারেক রহমান সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। জামায়াত-শিবিরকে নিয়ে খালেদা জিয়া-তারেক রহমানরা গুপ্তহত্যা করে দেশের অগ্রযাত্রাকে থমকে দিতে চান। কিন্তু অপশক্তিদের সেই স্বপ্ন কোনদিনই পূরণ হবে না।
×