ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

বর্ষার শুরুতেই ভারি বর্ষণ, উজানের ঢলে তিস্তার রুদ্রমূর্তি

প্রকাশিত: ০৬:০৬, ২৩ জুন ২০১৬

বর্ষার শুরুতেই ভারি বর্ষণ, উজানের ঢলে তিস্তার রুদ্রমূর্তি

স্টাফ রিপোর্টার, নীলফামারী ॥ বর্ষা মৌসুমের শুরুতেই তিস্তা রুদ্রমূর্তি ধারণ করতে শুরু করেছে। ভারি বর্ষণ ও উজানের পাহাড়ী ঢলে তিস্তায় বন্যা দেখা দিয়েছে। বুধবার সকাল থেকেই ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানি বিপদসীমার ২৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় নীলফামারী ও রংপুরের তিস্তা অববাহিকার চর ও নদী বেষ্টিত গ্রামগুলোর নিমাঞ্চল প্লাবিত করেছে। নদী বেষ্টিত গ্রামের কাঁচা সড়কগুলো তলিয়ে গেছে। রোজার মাসে এমন বন্যায় প্রায় ১৫ হাজার পরিবার বিপাকে পড়েছে। এদিকে উজানের ঢলে ডিমলার টেপাখড়িবাড়ি ইউনিয়নের চরখড়িবাড়িতে স্বেচ্ছাশ্রমে নির্মিত এক হাজার মিটার দীর্ঘ বালির বাঁধের একশত মিটার ধসে গেছে। বুধবার সকাল ৬টা থেকে ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তা নদীর পানি বিপদসীমার ২৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। এই পয়েন্টে বিপদসীমা ৫২ দশমিক ৪০ মিটার। এই পয়েন্টে মঙ্গলবার সকাল ৬টা থেকে পানি প্রবাহিত হয় ৫২ দশমিক ৩২ মিটার। যা বিপদসীমার ৮ সেন্টিমিটার নিচে ছিল। ফলে গত ২৪ ঘণ্টায় তিস্তায় পানি বৃদ্ধি পেয়েছে ৩৩ সেন্টিমিটার। এ ছাড়া ভারি বৃষ্টিপাত অব্যাহত রয়েছে। একই সূত্রমতে ২৪ ঘণ্টায় তিস্তা অববাহিকার ডালিয়ায় বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয় ১০৮ মিলিমিটার। সূত্র মতে গত বছর (২০১৫) তিস্তা নদীর পানি ডালিয়া পয়েন্টে বিপদসীমা অতিক্রম করেছিল ১৩ জুন। সে সময় তিস্তার পানি বিপদসীমার ২৪ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। এদিকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে দেশের সর্ববৃহৎ তিস্তা ব্যারাজের সবকটি (৪৪টি) জলকপাট খুলে রাখা হয়েছে জানিয়ে ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, উজানের পাহাড়ী ঢল ও ভারি বর্ষণে মঙ্গলবার গভীররাত থেকে তিস্তার পানি বাড়তে শুরু করে বুধবার সকাল থেকে বিপদসীমার ২৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। তবে দুপুর ১২টায় তিন সেন্টিমিটার পানি কমে বিপদসীমার ২২ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তিনি আরও জানান, উজানের ঢল কমে এলে বন্যার পানি নিমিষেই কমে যাবে। তিস্তার বন্যায় ডিমলার পূর্বছাতনাই, খগাখড়িবাড়ি, টেপাখড়িবাড়ি, খালিশা চাঁপানী, ঝুনাগাছ চাঁপানী, গয়াবাড়ি, জলঢাকা উপজেলার, গোলমুন্ড, ডাউয়াবাড়ি, শৌলমারী ও কৈমারী, লালমনিরহাটের হাতিবান্ধা, কালিগঞ্জ, রংপুরের গঙ্গচড়া উপজেলার তিস্তা নদী বেষ্টিত চর ও চর গ্রামগুলোর এলাকার ২৫টি চর ও গ্রামের ১৫ হাজার পরিবার বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে বলে জনপ্রতিনিধিরা ধারণা করছেন। এদিকে ডিমলার টেপাখড়িবাড়ি ইউনিয়নের তিস্তা নদীর বামতীরে চরখড়িবাড়ি এলাকায় ভারত বাংলাদেশ সীমান্তে স্বেচ্ছাশ্রমে নির্মাণ করা যৌথ বাঁধটির ১০০ মিটার ধ্বসে গেছে। বালির বাঁধটি রক্ষার জন্য এলাকায় মাইকিং করে রক্ষার চেষ্টা করছে স্থানীয়রা। বাঁধটি ভেঙ্গে গেলে ইউনিয়নের একতার বাজার, চরখড়িবাড়ী, ঝিঞ্জির পাড়া, লালমনিরহাটে হাতিবান্ধা উপজেলার সানিয়াজান, গুড্ডিমারী ও বাউরা ইউনিয়নের ২০ হাজার মানুষের ঘরবাড়ি বন্যাকবলিত হয়ে পড়বে। পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, বাঁধটি বালির কারণে সেখানে জিও টেক্সটাইল ও সিসি ব্লক ছাড়া বাঁধটিকে রক্ষা করা সম্ভব নয়। বুধবার পর্যন্ত অব্যাহতভাবে পানি বৃদ্ধির কারণে পূর্বছাতনাই ইউনিয়নের তিস্তাবেষ্টিত পূর্বছাতনাই ও ঝাড়শিহেরশ্বর গ্রামের প্রায় ৮০০ পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েন। ডিমলার ঝুনাগাছ চাঁপানী ইউনিয়নের ভেন্ডাবাড়ি এলাকায় গ্রামীণ রাস্তা তলিয়ে যাওয়ায় মানুষজন কলার ভেলায় চলাচল করছে বলে এলাকাবাসী জানায়। রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার নোহালী, আলমবিদিতর, কোলকোন্দ, গঙ্গাচড়া, লক্ষ্মীটারী, গজঘণ্টা ও মর্নেয়া ইউনিয়নের গ্রামগুলো প্লাাবিত হয়েছে।
×