ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সংসদে প্রশ্নোত্তরে প্রধানমন্ত্রী ॥ ‘সৌদি আরব-বাংলাদেশ একযোগে কাজ করবে’

যা যা করার করব ॥ জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে মুসলিম উম্মাহর ঐক্যবদ্ধ হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে

প্রকাশিত: ০৫:৫৮, ২৩ জুন ২০১৬

যা যা করার করব ॥ জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে মুসলিম উম্মাহর ঐক্যবদ্ধ হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে

সংসদ রিপোর্টার ॥ প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি ও কঠোর অবস্থানের কথা পুনর্ব্যক্ত করে বলেছেন, সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে আমাদের দৃঢ় ভূমিকা সব সময়ই ছিল। এর বিরুদ্ধে বাংলাদেশ ইতোমধ্যে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি নিয়েছে। সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদকে কখনই প্রশ্রয় দেয়া হবে না বলেও সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ রোধে যা যা করার করব। এ ধরনের ঘটনা যেন আর না ঘটে সে বিষয়েও আমরা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে বুধবার দশম জাতীয় সংসদের একাদশ অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রীর জন্য নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্বে শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন। সরকারী দলের হুইপ শহীদুজ্জামান সরকারের সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে সংসদ নেতা শেখ হাসিনা আরও বলেন, বিশ্ব মুসলিম উম্মাহকে ঐক্যবদ্ধ হওয়া এবং সন্ত্রাসবাদ-জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান তিনি সবসময়ই করে থাকেন। মুসলিম উম্মাহর বিভিন্ন সম্মেলনে যতবার গেছেন, এ আহ্বানটা সবসময়ই তিনি তুলে ধরেছেন। তাঁর সাম্প্রতিক সৌদি আরব সফরকালেও সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের এমন কঠোর অবস্থানের কথা তিনি সৌদি বাদশাহর কাছে তুলে ধরেছেন। ওআইসি মহাসচিবের কাছেও বাংলাদেশের দৃঢ় অবস্থানের কথা তুলে ধরেছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে সৌদি আরব একটি উদ্যোগও নিয়েছে। দেশটির নেতৃত্বে গড়ে ওঠা সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদবিরোধী ইসলামিক জোটে বাংলাদেশও যোগ দিয়েছে। ৪০ মুসলিম দেশের এই জোটে যোগদানের ফলে জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে মুসলিম দেশগুলোর ঐক্যবদ্ধ হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। ইসলাম শান্তির ধর্ম। এই শান্তির ধর্মের সম্মান যাতে আরও উচ্চশিখরে নিয়ে যেতে পারি, সেই প্রচেষ্টাও আমাদের অব্যাহত থাকবে। আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য আবুল কালাম আজাদের সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে সৌদি আরবে অবস্থানরত সাবেক ধর্মমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদকে দেশে ফিরিয়ে এনে শাস্তির পদক্ষেপ নেয়ার আশ^াস দেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, এ রকম অনেক অপরাধী পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে রয়েছে। বাংলাদেশ সব সময় সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলেছে। যেসব অপরাধীর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানাও রয়েছে- তাদের দেশে ফিরিয়ে এনে সাজা দেয়া যায়। সৌদি আরবে অবস্থান নিয়ে ষড়যন্ত্র-চক্রান্তে লিপ্ত, সেই ব্যক্তি যার (মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ) কথা সংসদ সদস্য বললেন- নিশ্চয়ই এ ব্যাপারে খোঁজ-খবর নেয়া হবে তিনি কোথায় আছেন। স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও এ ব্যাপারে কাজ করবে, যেন তাকে খুঁজে বের করে দেশে ফেরত এনে সাজা দেয়া যায়। আওয়ামী লীগের সামশুল হক চৌধুরীর লিখিত প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্ব শান্তি রক্ষায় বাংলাদেশকে সন্ত্রাস, জঙ্গীবাদ ও নৈরাজ্যমুক্ত একটি শান্তির আবাসভূমিতে পরিণত করার জন্য তাঁর সরকার গভীর নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে। এক্ষেত্রে দক্ষিণ এশিয়াসহ আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের অর্জনকে সমুন্নত রাখতেও তাঁর সরকার কাজ করছে। এ লক্ষ্যে পেট্রোলসহ অন্যান্য রাসায়নিক দ্রব্যের অপব্যবহার ও সব ধরনের অস্ত্র বিস্তাররোধে জাতীয়, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে গঠনমূলক ভূমিকা পালন করে যাওয়া হবে। এর পাশাপাশি আগামী দিনগুলোতে শান্তি ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠায় জাতিসংঘ এবং অন্যান্য আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর পাশাপাশি বিভিন্ন দেশের যে কোন শুভ উদ্যোগের সঙ্গে সম্পৃক্ত থেকে বাংলাদেশ একযোগে কাজ করে যাবে। বিশ্ববাসীর কাছে বাংলাদেশের এই শান্তিপ্রিয় ভাবমূর্তি বজায় রাখতে দেশের সব নাগরিকের প্রতি সংযত ও দায়িত্বশীল আচরণ করার আহ্বানও জানান প্রধানমন্ত্রী। হুইপ শহীদুজ্জামানের লিখিত প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সাম্প্রতিক সৌদি আরব সফরের মাধ্যমে মুসলিম বিশ্বে আওয়ামী লীগ সরকারের দূরদর্শী নেতৃত্ব পুনর্স্বীকৃত হয়েছে। এর মাধ্যমে বাংলাদেশ ও সৌদি আরবের মধ্যকার ভ্রাতৃপ্রতিম সম্পর্ক দৃঢ় ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত করার পাশাপাশি বাংলাদেশের সঙ্গে মুসলিম বিশ্বের সম্পর্কের ক্ষেত্রে গতিশীলতা আনবে। এ সফর বাংলাদেশ ও সৌদি আরবের সম্পর্ককে এক নতুন মাত্রায় নিয়ে গেছে। রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, বাণিজ্যিক ও নিরাপত্তা বিষয়ে সম্পর্কোন্নয়নে এক নতুন ও পূর্ণাঙ্গ ভিত্তি তৈরি হয়েছে। সৌদি আরবের সঙ্গে বাংলাদেশের এ নতুন সম্পর্কের ফলে মুসলিম বিশ্বে বাংলাদেশের গুরুত্ব বৃদ্ধি পাবে এবং দেশের ভাবমূর্তি আরও উজ্জ্বলতর হবে বলেই আশা করা যায়। তিনি জানান, এই সফরকালে সৌদি সরকার ও ব্যবসায়ী নেতারা প্রথমবারের স্বতঃস্ফূর্তভাবে বাংলাদেশে বিনিয়োগ ও ব্যবসা বৃদ্ধির আগ্রহ দেখিয়েছে। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়ন এবং নারীর ক্ষমতায়নে সফলতা মুসলিম বিশ্বেও একটি রোল মডেল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বলে সৌদি নেতৃত্বও মত প্রকাশ করেছেন। আওয়ামী লীগের এ কে এম শাহাজাহান কামালের সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী জানান, তাঁর সরকার দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে কাজ করে চলেছে। বাংলাদেশের উদার নীতির কারণে এদেশে বিদেশী বিনিয়োগের চমৎকার সুযোগও হয়েছে। এসব উদ্যোগের ফলে ২০১৪ সালের তুলনায় দেশে ৪০ শতাংশ বিনিয়োগ বেড়েছে। একই প্রশ্নকর্তার লিখিত প্রশ্নের জবাবে সংসদ নেতা বলেন, তাঁর সাম্প্রতিক বুলগেরিয়া সফর অত্যন্ত সফল হয়েছে। এই সফরের ফলে স্বাধীনতার পর বাংলাদেশকে দ্বিতীয় স্বীকৃতিদানকারী দেশ বুলগেরিয়ার সঙ্গে আমাদের অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সম্পর্ক আরও উন্নত হবে। জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য কাজী ফিরোজ রশিদের সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা তৃণমূলে নারীর ক্ষমতায়নে তাঁর সরকারের পদক্ষেপ তুলে ধরেন। এক্ষেত্রে ১৯৯৬ সালের তাঁর প্রথম সরকারের নেয়া স্থানীয় সরকার নির্বাচনে নারীদের জন্য ৩০ শতাংশ সংরক্ষিত আসনে নির্বাচন ব্যবস্থা চালুর কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, এক সময় এই পদ্ধতিতে নির্বাচনে অনেক বাধা দেয়া হয়েছে। এমনকি পরিবারের সদস্যরাও নারীদের সংরক্ষিত আসনে নির্বাচনের অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে বাধা দিয়েছেন। পরে তাঁরাই নারীর পক্ষে নির্বাচনে নেমেছেন। এই পদক্ষেপ তৃণমূলে নারীর ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ ও মাইলফলক। হাস্যরস করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি ভেবেছিলাম উনি (কাজী ফিরোজ রশীদ) প্রশ্ন করবেন, নারীদের জন্য এত কিছু করেছেন, পুরুষদের জন্য কী করেছেন? সেদিন বেশি দূরে নয়, হয়ত ভবিষ্যতে দেখা যাবে পুরুষ অধিকার সংরক্ষণ কমিটি করা হচ্ছে। সেই কমিটিতেও আমার সমর্থন থাকবে। এ সময় উপস্থিত সংসদ সদস্যরা টেবিল চাপড়িয়ে প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানান। সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য আখতার জাহানের লিখিত প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমান সরকার রূপকল্প-২০২১ সামনে রেখে অগ্রসর হচ্ছে। এ কারণে সরকারের দৃষ্টি কেবল এক বছরে সীমাবদ্ধ নয়। আওয়ামী লীগ ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উচ্চ মধ্য আয়ের দেশ পেরিয়ে একটি শান্তিপূর্ণ, সমৃদ্ধ, সুখী এবং উন্নত জনপদে পরিণত করার ব্যাপারে দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ। ‘এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ’ শীর্ষক নির্বাচনী ইশতেহার ২০১৪- এ দীর্ঘমেয়াদী লক্ষ্য ২০৫০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে বিশ্বের প্রথম সারির উন্নত দেশগুলোর সমপর্যায়ে উন্নীত করার রূপরেখা অঙ্কিত হয়েছে বলেও জানান তিনি।
×