ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ইইউতে থাকা না থাকা নির্ধারিত হবে

ব্রিটেনে আজ ঐতিহাসিক গণভোট

প্রকাশিত: ০৪:১৯, ২৩ জুন ২০১৬

ব্রিটেনে আজ ঐতিহাসিক গণভোট

ব্রিটেনে আজ ঐতিহাসিক গণভোট। দেশটি ইউরোপীয় ইউনিয়নে থাকবে, নাকি ২৮ জাতির এই জোট থেকে বেরিয়ে যাবেÑ সে বিষয়ে নির্ধারিত হবে এ গণভোটের মাধ্যমে। ইইউ থেকে ব্রিটেনের বেরিয়ে যাওয়াকে সংক্ষেপে বলা হচ্ছে ব্রেক্সিট (ব্রিটেন+এক্সিট)। ব্রিটেনে বসবাসরত ব্রিটিশ, আইরিশ ও কমনওয়েলথ নাগরিকদের মধ্যে যাদের বয়স কমপক্ষে ১৮ বছর এবং বিদেশে অবস্থানরত ব্রিটেনের যেসব নাগরিকের নাম কমপক্ষে ১৫ বছর ধরে ভোটার তালিকায় আছে তারা এ গণভোটে অংশ নিতে পারবে। বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিতব্য এ ঐতিহাসিক গণভোটকে সামনে রেখে সমগ্র ব্রিটেন এখন দৃশ্যত দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে গেছে। শনিবার সানডে টাইমসে প্রকাশিত ইউগভ সমীক্ষায় গেছে, ইইউতে থাকার পক্ষে রয়েছে শতকরা ৪৪ ভাগ উত্তরদাতা। আর বিপক্ষে রয়েছেন শতকরা ৪৩ শতাংশ। সোমবার ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের জনমত সমীক্ষায় দেখা যায়, দুই পক্ষেই রয়েছে শতকরা ৪৪ ভাগ মানুষ। অর্থাৎ ১০ থেকে ১২ শতাংশ ভোটার এখন মনস্থির করেননি কোনদিকে ভোট দেবেন। গণভোটের ফলে এই ভোটাররা নির্ণয়কের ভূমিকায় অবতীর্ণ হবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। খবর বিবিসি/এএফপি/ওয়েবসাইটের। ‘লিভ’ অথবা ‘রিমেইন’ ॥ ইইউ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পক্ষে যারা প্রচার চালাচ্ছেন, তাদের আলোচনার কেন্দ্রে রয়েছে অভিবাসনের বিষয়টি। আর যারা ইইউতে থাকার পক্ষে বলছেন, তাদের প্রচারের ভিত্তি হলো অর্থনীতি। ‘ভোট লিভ’ এর প্রচারকরা অভিবাসীদের ব্রিটেনে আসা বন্ধ করতে চায়। বিশেষ করে ইউরোপ থেকে কেউ যাতে অবাধে যুক্তরাজ্যে এসে বসবাস করতে না পারে, সে দিকেই সবচেয়ে বেশি জোর দিচ্ছেন তারা। আর সেজন্য ইইউ থেকে ব্রিটেনের বেরিয়ে আসা জরুরী। অন্যদিকে ‘রিমেইন গ্রুপ’ বলছে, ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে এলে ৫০ কোটি মানুষের বাজার হারাবে ব্রিটেন। তাতে অর্থনীতিতে আবার ‘ধস’ নামবে, যা এক যুগেও কাটিয়ে ওঠা যাবে না। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনও বলেছেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ত্যাগের পক্ষে ভোট দিলে তা হবে ‘একটি বিরাট ভুল’ এবং তা দেশকে অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দেবে। সানডে টেলিগ্রাফ পত্রিকায় এক নিবন্ধে ক্যামেরন ব্রিটিশ নাগরিকদের সতর্ক করে বলেছেন, এই গণভোটের রায়ে যুক্তরাজ্য নিঃসঙ্গ হয়ে পড়তে পারে, যেখান থেকে ফিরে আসার পথ নেই। ব্রিটেনের সাবেক প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ার, সাবেক দুই উপ-প্রধানমন্ত্রী মাইকেল হেজেলটাইন ও নিক ক্লেইগও সানডে অবজারভারে প্রকাশিক এক যৌথ চিঠিতে ইইউতে থাকার পক্ষে ভোট দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। ‘বিভাজন নিঃসঙ্গতাকে’ প্রত্যাখ্যান করার ডাক দিয়েছেন তারা। ঐতিহাসিক গণভোট ॥ অধিকাংশ রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের আলোচনা ও বিতর্কের মীমাংসা পার্লামেন্টেই করা সম্ভব হওয়ায় যুক্তরাজ্যে গণভোটের ঘটনা বিরল। পুরো যুক্তরাজ্যের জনগণের অংশগ্রহণে ইতিহাসের প্রথম গণভোটটি হয় ১৯৭৫ সালে, যুক্তরাজ্য ইউরোপীয় কমন মার্কেটে থাকবে কিনাÑ সে প্রশ্নে। এরপর ইউরোপীয় ইউনিয়নে ব্রিটেনের অবস্থান নিয়ে সব প্রশ্নের সমাধান ইউকে পার্লামেন্ট বা ইউরোপীয় পার্লামেন্টে আলোচনার মাধ্যমেই সম্ভব হয়েছে। ব্রিটেনজুড়ে দ্বিতীয় ও সবশেষ গণভোটটি হয় ২০১১ সালে, বিকল্প ভোটিং ব্যবস্থা নিয়ে। ১৯৭৩ সালে কনজারভেটিভ পার্টির প্রধানমন্ত্রী এ্যাডওয়ার্ড হিথ ক্ষমতায় থাকার সময় যুক্তরাজ্য তখনকার ইউরোপিয়ান ইকোনমিক কমিউনিটিতে (ইইসি) যোগ দেয়। ব্রিটেন ইইসিতে যাবে কিনা- সে প্রশ্নে গণভোটের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ১৯৭৪ সালে লেবার পার্টি হিথের কনজারভেটিভ পার্টিকে হারিয়ে ক্ষমতায় আসে। ১৯৭৫ সালের ৫ জুন সেই গণভোটে ৬৭ শতাংশ ভোটার ইউরোপিয়ান কমন মার্জেটে থাকার পক্ষে রায় দেয়। ব্রিটেন ইউরোপীয় ইউনিয়নে থাকবে কিনা- সে সিদ্ধান্ত নিতে ৪১ বছর পর আবারও গণভোটে যাচ্ছে যুক্তরাজ্য। ব্রিটেন ইউরোপীয় সিঙ্গেল কারেন্সি এলাকা অর্থাৎ ইউরোজোনে যোগ দেবে কিনা- সে প্রশ্নে ১৯৯২ সালে গণভোট করার চাপ ছিল যুক্তরাজ্য সরকারের ওপর। কিন্তু সংসদীয় গণতন্ত্রে গণভোটের তেমন প্রয়োজন নেইÑ এমন যুক্তিতে সেবার ভোট এড়ানো সম্ভব হয়। যার যা যুক্তি ॥ ১৯৭৫ সালে ইইসিতে থাকা নিয়ে ব্রিটেনে যে গণভোট হয়েছিল, তখন জাতিগত সংখ্যালঘু ছিল অনেক কম। তারপরও রায় এসেছিল জোটে থাকার পক্ষে। ২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী ব্রিটেনে তখন জাতিগত সংখ্যালঘু জনসংখ্যা ছিল ৪৩ লাখ। আর এখন তা ৫০ লাখের কাছাকাছি। ফলে কৃষ্ণাঙ্গ ও এশীয় অভিবাসীদের ভোট অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। কৃষ্ণাঙ্গ ও এশীয় অভিবাসী এ জনগোষ্ঠীকে ব্রিটেনে একসঙ্গে ‘বিএমএই কমিউনিটি’ বলা হয়। তাদের ভোট টানতে ব্রেক্সিটের পক্ষে-বিপক্ষের রাজনীতিবিদরা দিচ্ছেন নানা প্রতিশ্রুতি। ‘ভোট লিভ’ পক্ষ বলছে, ব্রিটেন ইইউ ছাড়লে ‘নন-ইউরোপিয়ান ইমিগ্র্যান্টরা’ সবচেয়ে বেশি সুফল পাবে। এর ব্যাখ্যায় কনজারভেটিভ পার্টির বরিস জনসন, মাইকেল গোভ ও প্রীতি প্যাটেল বলছেন, ব্রিটেন ইইউ থেকে বেরিয়ে গেলে ইউরোপের অভিবাসীরা আর অবাধে যুক্তরাজ্যে আসতে পারবে না। অভিবাসন থাকবে পুরোপুরি ব্রিটিশ সরকারের নিয়ন্ত্রণে। তখন কমনওয়েলথভুক্ত দেশ থেকে অভিবাসীদের সুযোগ করে দিতে বাধা থাকবে না। ব্রেক্সিট ক্যাম্পে তাদের সহযোগী নাইজেল ফারাজ অবশ্য অভিবাসন শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনার পক্ষে। ‘ভোট লিভ’ বলছে, ইইউ থেকে বেরিয়ে গেলে ব্রিটেনের অর্থনীতি লাভবান হবে। ইউরোপীয় ইউনিয়নে সদস্য পদের জন্য ব্রিটেনকে আর বার্ষিক ১৩ বিলিয়ন পাউন্ড দিতে হবে না। যুক্তরাজ্যের কোম্পানিগুলো ইইউ’র আমলাতান্ত্রিক জটিলতামুক্ত থাকবে। ব্রিটেন ইউরোপ থেকে রফতানির চেয়ে আমদানি করে বেশিÑ এমন তথ্য দিয়ে এই পক্ষ বলছে, যুক্তরাজ্য ইইউ থেকে বেরিয়ে গেলে বাণিজ্যের কোন বিরূপ প্রভাব পড়বে না, বরং দর কষাকষি থেকে লাভবান হওয়ার সুযোগ বাড়বে। অন্যদিকে ‘ভোট রিমেইন’ গ্রুপ বলে আসছে, যুক্তরাজ্যে ৩০ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান সরাসরি ইইউ বাণিজ্যের সঙ্গে সম্পৃক্ত।
×