ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বরগুনায় খাল খননে চরম অনিয়ম

প্রকাশিত: ০৪:১২, ২৩ জুন ২০১৬

বরগুনায় খাল খননে চরম অনিয়ম

নিজস্ব সংবাদদাতা, বরগুনা, ২২ জুন ॥ স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের (এলজিইডি) ক্ষুদ্রাকার পানি সেচ প্রকল্পের আওতায় বরগুনা জেলার ৬টি উপজেলায় ১৩টি খাল খননে কোটি কোটি টাকা লুটপাটের অভিযোগ উঠেছে। চারটি খালের খনন কাজে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। খনন প্রকল্পে ব্যয় হচ্ছে ৮ কোটি ৩০ লাখ টাকা। ক্ষুদ্রাকার পানি সেচ প্রকল্পের শর্ত অনুযায়ী, এসব খালের দুই পাড়ের সুবিধাভোগী ও উপকারভোগীদের নিয়ে আলোচনার মাধ্যমে পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতি নামে কমিটি করে খনন কাজ বাস্তবায়ন করতে হবে। খাল খননের পুরো দায়িত্ব সম্মিলিতভাবে পালন করবেন সংশ্লিষ্ট সমিতির সদস্যরা। কিন্তু ১৩টি খালের চারটির কাজ করাচ্ছেন সংশ্লিষ্ট এলাকার ইউপি চেয়ারম্যান ও সদস্যরা। এরা স্থানীয় আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। জনপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) ১৯৭২-এ ¯পষ্ট বলা আছে, জনপ্রতিনিধিদের সরকারের সঙ্গে কোন ধরনের ব্যবসা কিংবা ঠিকাদারি নিষিদ্ধ। এলজিইডির সূত্র জানায়, বেশিরভাগ খাল খননের ক্ষেত্রে প্রকল্পের শর্ত মানা হয়নি। খালপাড়ের মানুষদের বাদ দিয়ে সাতটি খালই খনন করা হচ্ছে খননযন্ত্র ব্যবহার করে। বাইরে থেকে ঠিকা শ্রমিক এনে খাল খনন করা হচ্ছে। এতে প্রকল্পের শর্ত ভঙ্গ হলেও রাজনৈতিক কারণে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা কোন ব্যবস্থা নিতে পারছেন না। ইতোমধ্যে প্রকল্পের ৭০ শতাংশ বরাদ্দ তুলে নিয়ে গেছেন সংশ্লিষ্ট ঠিকাদাররা। বাকি ৩০ শতাংশ অর্থ চলতি জুন মাসে পরিশোধ করার কথা রয়েছে। প্রকল্পের আওতায় রয়েছে বরগুনা সদরের বালিয়াতলী ইউনিয়নের জেলখানা খাল, মনসাতলী খাল, নলী-মাইঠা খাল, বাইশতবক-উত্তর লাকুরতলা খাল; আমতলী উপজেলার হলদিয়া ইউনিয়নের পূর্ব চিলা ড্রেনেজ এবং ডব্লিউসি উপপ্রকল্পের আওতায় কালীর খাল, আশিকা খাল, ডুমুনিয়া খাল, বলইবুনিয়া খাল; কুকুয়া ইউনিয়নের নিমতার খাল; তালতলী উপজেলার কড়ইবাড়িয়া খাল; বেতাগী উপজেলার হোসনাবাদ ইউনিয়নের হোসনাবাদ-করুণা খাল, খোন্তাকাটা খাল, বামনা রুহিতা-রামনা খাল, খাজুরা খাল, গারদের খাল ও আমতলী খাল; পাথরঘাটা উপজেলার নাচনাপাড়া খাল। সম্প্রতি আমতলী উপজেলার হলদিয়া ইউনিয়নের পূর্ব চিলা এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, খননযন্ত্র দিয়ে দেড়-দুই ফুট মাটি কেটে যেনতেনভাবে কাজ করা হচ্ছে। এতে কোনভাবেই খালের পানি চলাচল নির্বিঘœ হবে না। সরেজমিনে দেখা যায়, খালের দুই পাড়ের কিছু অংশে সামান্য কাদামাটি তোলা হয়েছে। খালের মাঝে মাঝে বাঁধ দিয়ে পানি অপসারণ করে সামান্য কাদামাটি তুলে কাজ শেষ করা হয়েছে। সব জায়গায় কাজও হয়নি। স্থানীয় বাসিন্দা রিপন মোল্লা বলেন, সমিতির সদস্যরা দূরে থাক, স্থানীয় শ্রমিকদেরও কাজের সুযোগ দেয়া হয়নি। পার্শ্ববর্তী কলাপাড়া উপজেলার চাউলাপাড়া এলাকা থেকে ঠিকা শ্রমিক এনে এক সপ্তাহ যেনতেনভাবে কাজ সারা হয়েছে। আবদুল মোল্লা নামে স্থানীয় আরেক বাসিন্দা বলেন, জীবনে প্রথম দেখলাম বালতি দিয়ে কাদাপানি তুলে খাল খনন করা হচ্ছে। খননের নামে মূলত ওপরের অংশের হালকা কাদামাটি অপসারণ ছাড়া আর কোন কাজই হয়নি। যেভাবে খনন করা হয়েছে, এতে খালটি এলাকার মানুষের কোন উপকারেই আসবে না। প্রকল্পের দায়িত্বপ্রাপ্ত সামাজিক অর্থনীতিবিদ আবদুর রহিম বলেন, আমরাও শুনেছি ছয়-সাতটি খাল খননযন্ত্র দিয়ে কাটা হয়েছে। এসব বিষয়ে নির্বাহী প্রকৌশলীর সঙ্গে আলাপ করে ব্যবস্থা নেব। এলজিইডির বরগুনার নির্বাহী প্রকৌশলী আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, এখন পর্যন্ত আমার কাছে কেউ অনিয়মের লিখিত অভিযোগ দেয়নি। কাজ শেষে নক্সা অনুযায়ী যতটুকু কাজ হয়েছে, ততটুকুর বিল দেব আমরা।
×