ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

‘গরিব বলে কি বিচার পাব না’

প্রকাশিত: ০৩:৪১, ২৩ জুন ২০১৬

‘গরিব বলে কি বিচার পাব না’

তনু হত্যার তিন মাস উপলক্ষে ২০ জুন সোমবার গণজাগরণ মঞ্চ কুমিল্লা জেলা শাখা সর্বস্তরের মানুষদের নিয়ে একটি প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে। সেই সমাবেশে অনেক সুধীজনের পাশাপাশি বক্তব্য রেখেছেন তনুর মা। তিন মাসেও কলেজছাত্রী ও নাট্যকর্মী সোহাগী জাহান তনুর খুনী শনাক্ত কিংবা গ্রেফতার না হওয়ায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি। একপর্যায়ে আবেগতাড়িত হয়ে কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেই ফেলেন, ‘গরিব বলে কি বিচার পাব না? এভাবে মেরে ফেলবে?’ প্রসঙ্গত স্মরণ করা যেতে পারে যে, কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারী কলেজের অনার্সপর্বের ছাত্রী তনু খুন হন ২০ মার্চ। ওইদিন রাতে কুমিল্লা সেনানিবাসের ভেতর একটি ঝোপ থেকে তার লাশ উদ্ধার করেন তনুর বাবা। পরিবারের অভিযোগ, নির্মম ও নৃশংসভাবে হত্যার আগে তনুকে ধর্ষণ করা হয়েছিল। ঘটনার তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া হিসেবে এ নিয়ে শুধু কুমিল্লাই নয়; বরং রাজধানীসহ সারাদেশে তীব্র ক্ষোভ-বিক্ষোভ, মিছিল-মিটিং, মানববন্ধন, প্রতিবাদ সমাবেশ হয়। তনু হত্যার নিরপেক্ষ তদন্ত ও বিচারের দাবিতে দেশবাসী হয় ঐক্যবদ্ধ। তনুর প্রথম ময়নাতদন্ত রিপোর্ট হয় প্রশ্নবিদ্ধ। শুরু হয় জল্পনা-কল্পনা। পরে জনদাবির পরিপ্রেক্ষিতে তদন্ত কর্মকর্তা পরিবর্তনসহ মামলা হস্তান্তর করা হয় সিআইডিতে। অধিকতর তদন্তের জন্য তনুর লাশ দ্বিতীয় দফায় কবর থেকে উত্তোলন করে করা হয় ময়নাতদন্ত। দুর্ভাগ্যজনক হলো, লাশের দুই দফা ময়নাতদন্তেও তনুর মৃত্যুর কারণ উদ্ঘাটন করতে পারেনি সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক ও বিশেষজ্ঞরা। এ নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে ধূম্রজাল। তনুর পরিবারের সদস্যরা তার শরীরে আঘাতের চিহ্নসহ ধর্ষণের অভিযোগের কথা জোরালো ভাষায় বলেছেন। সিআইডিও বলছে, তনুর শরীর ও পরনের কাপড়ের নমুনা নিয়ে ডিএনএ পরীক্ষা করে পাওয়া গেছে ধর্ষণের আলামত। তাতে পৃথক তিন ব্যক্তির সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে। ওই তিন ব্যক্তির ডিএনএ প্রোফাইল তৈরিও করা হয়েছে। সেই প্রেক্ষাপটে চিকিৎসক দল কর্তৃক দুই দফা ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনে ধর্ষণের উল্লেখ না থাকার বিষয়টি প্রশ্নের উদ্রেক করে বৈকি! তনুর মা গত ১০ মে সিআইডি ও গণমাধ্যমে সন্দেহভাজনদের নামও বলেছেন, যারা তনুকে হত্যার দিন বিকেলে ডেকে নিয়ে যান। সর্বশেষ তনুর মা যে অভিযোগ করেছেন, সেটিও গুরুতর। কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডের অফিস সহকারী তনুর বাবাকে নাকি গাড়ি চাপা দিয়ে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। ঢাকার আন্তঃবাহিনী গণসংযোগ পরিদফতর (আইএসপিআর) থেকে অবশ্য বিষয়টি অস্বীকার করা হয়েছে। তবে এটা সত্য যে, তনুর পরিবারটিকে নানাভাবে হয়রানি করা হচ্ছে। সর্বশেষ যে বিষয়টি সামনে এসেছে তা হলো, সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের ডিএনএর সঙ্গে তনুর দেহে পাওয়া ডিএনএর নমুনা নিশ্চিতকরণে মিলিয়ে দেখা। বিচার পাওয়া একজন নাগরিকের ন্যায্য অধিকার। এক্ষেত্রে কোনরকম টালবাহানা কিংবা বার বার তদন্তের নামে সময়ক্ষেপণ কাম্য নয়। দুর্ভাগ্যজনক হলো, তনুর পরিবারটির ক্ষেত্রে তাই হচ্ছে। কুমিল্লা সেনানিবাস সংলগ্ন যেখানে তনুর লাশ পাওয়া গেছে, সেটি একটি স্পর্শকাতর ও সংরক্ষিত এলাকা। বহিরাগতদের সেখানে প্রবেশ দুঃসাধ্য ও নিয়ন্ত্রিত। তাই বলে তনু হত্যার যথাযথ তদন্ত ও বিচার হবে না, তা হতে পারে না। দুই দফা ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনে যা-ই বলা হোক না কেন, ডিএনএ পরীক্ষায় যেখানে ধর্ষণের আলামত মিলেছে, সেখানে তো প্রশ্ন ওঠা উচিত নয়। অতঃপর সন্দেহভাজনদের ডিএনএ নমুনার সঙ্গে তা মিলিয়ে দেখা যেতেই পারে। তাতে অহেতুক বিতর্ক ও দীর্ঘসূত্রতার অবসান হতে পারে। সে অবস্থায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নমনীয় মনোভাব গ্রহণ করবে বলেই প্রত্যাশা। এর পাশাপাশি পরিবারটিকে অহেতুক হয়রানি করাও কাম্য নয়।
×