ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

ক্যারিয়ার বিপর্যয়ে শারাপোভা

প্রকাশিত: ০৬:৩৭, ২২ জুন ২০১৬

ক্যারিয়ার বিপর্যয়ে শারাপোভা

ইংরেজীতে একটা কথা আছে, ‘হ্যাভ এ্য ব্যাড টাইম’। বাংলায় যাকে বলা হয় দুঃসময়। এই দুঃসময়টা জীবনে আসেনি এমন মানুষ নেই বললেই চলে। দুঃসময়ের টানাপড়েনে অনেকের জীবন পর্যন্ত বরবাদ হয়ে যায়। আর খেলোয়াড়দের জীবনে দুঃসময় তো লেগেই থাকে। সেটা অফ ফর্মের কারণেই হোক বা স্ক্যান্ডালের জন্যই হোক অথবা পারিবারিক জীবনেই হোক। সেই দুঃসময় কাটিয়ে কেউ আবার খেলার মাঠে ফিরে আসতে পারে কেউ আর ফিরতে পারে না। হারিয়ে যায় চিরতরে। রাশান টেনিস তারকা মারিয়া শারাপোভা তার দুঃসময় কাটিয়ে আবার টেনি অঙ্গনে ফিরে আসতে পারবেন কিনা তা নিয়ে জল্পনা-কল্পনার অন্ত নেই। রাশান এই টেনিস সুন্দরী ও এক সময়ের নম্বর ওয়ান মহিলা টেনিস তারকা মারিয়া শারাপোভাকে বিশ্ব টেনিস অঙ্গন থেকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে ওয়ার্ল্ড উইমেন্স টেনিস এ্যাসোসিয়েশন। মারিয়ার অগণিত ভক্তরা অপেক্ষায় ছিলেন তিনি আবার ফিরে আসবেন টেনিস কোর্টে। কিন্তু সে সম্ভাবনা এখন অনেকটাই ক্ষীণ হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে রাশিয়ান টেনিস ফেডারেশনের প্রেসিডেন্ট যখন বলেছেন- ‘হয়ত আর কোনদিন শারাপোভা খেলায় ফিরতে পারবেন না। তার বিষয়টি এখনও খারাপ অবস্থার মধ্যেই আছে।’ যার অর্থ দাঁড়াচ্ছে টেনিস কোর্টে আর নাও দেখা যেতে পারে রাশান টেনিস সুন্দরী মারিয়া শারাপোভাকে। আর যদি সেটাই হয় তাহলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। আর তাই ধারণা করা যেতেই পারে, শারাপোভার ক্যারিয়ার শেষ হওয়ার পথে। যারা জানেন না তাদের জন্য উল্লেখ করা যেতে পারে যে, এ বছর জানুয়ারিতে অস্ট্রেলিয়ান ওপেনে ডোপ টেস্টে ব্লাডে পজেটিভ আসে শারাপোভার। আর তখন থেকেই তাঁর বিদায়ের বার্তা মুখে মুখে ফিরতে থাকে। ৫ বারের হার্ড কোর্ট ও গ্রাশ কোট গ্র্যান্ড সø্যাম চ্যাম্পিয়ন, সাবেক নম্বর ওয়ান রাশান তারকা মারিয়া অবশ্য তখনই নিজের মুখেই ডোপ টেস্টে পজিটিভের কথা স্বীকার করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন- ‘আমি ডোপ টেস্টে ধরা পড়েছি। এর পুরো দায়-দায়িত্ব আমার। আমি আসলে ভুল করেছি। ভক্তদের হতাশ করেছি। আমাকে যে শাস্তি দেয়া হবে তা আগেই মেনে নিচ্ছি। আশা করি, এই দুঃসময়টা কাটিয়ে উঠে দ্রুতই আবার কোর্টে ফিরে আসব।’ শারাপোভা নিজের শারীরিক কারণে ২০০৬ সাল থেকে ‘মেলডোনিয়াম ড্রাগ’ নিয়ে আসছিলেন। তিনি বলেনÑ ‘গত ২২ ডিসেম্বর বিশ্ব ডোপবিরোধী সংস্থা ডব্লুএডিএ একটা মেইলে নিষিদ্ধ ড্রাগের হালনাগাদ তালিকা সবার কাছে পাঠিয়েছিল। কিন্তু আমি মেইলটা পড়ে দেখিনি। তাই এ বিষয়ে আগে থেকে কিছুই জানতাম না।’ রাশান টেনিসের রানী মারিয়া শারাপোভার জন্ম ১৯৮৭ সালের ২২ আগস্ট। এক্কেবারে ছেলেবেলা থেকেই টেনিসের প্রতি ভালবাসা। ২০০২ সালে জুনিয়র গ্রান্ড স্লামের ২টি আসরের ফাইনালে উঠে সবাইকে চমকে দেন। শিরোপা জিততে না পারলেও তিনি উইম্বলডন টেনিসের ঘাসের কোর্টে বারবারা স্টাইকোভার কাছে ০-৬, ৫-৭ সেটে ও অস্ট্রেলিয়ান ওপেন হেরা দুসভিনার বিপক্ষে প্রথম সেটে ৬-৪ জিতলেও পরের দুই সেটে ১-৬, ২-৬ পরাজিত হলে শিরোপা হাতছাড়া হয়। তবে তাতে করে দমে যাননি তিনি। বরং তিনি টেনিস বিশ্বকে জানিয়ে দেন, ‘আমি আসছি।’ এরপর তিনি সত্যি সত্যি এলেন, খেললেন এবং জয় করলেন। পরের বছর ২০০৩ সালে রাশিয়ান কাপ জিতে নিজের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করলেন। এর পরের বছর ২০০৪ সালে বিশ্বের সবচেয়ে মর্যাদার টেনিস আসর উইম্বলডন টেনিসের শিরোপা জিতে সবাইকে তাক লাগিয়ে দেন। ২০০৫ সালের ২২ আগস্ট দিনটি মারিয়ার জন্য জীবনের সেরা দিন। এ দিন তিনি বিশ্ব মহিলা টেনিসের এক নম্বর আসনটিতে বসেন। এর পরের গল্প কেবলই মারিয়ার সাফল্যেগাথা। ২০০৬ সালে তিনি ইউএস ওপেনের শিরোপা লাভ করেন ১-৮৮ মিটার লম্বা ডান হাতি এ টেনিস তারকা। ২০০৮ সালে লাভ করেন অস্ট্রেলিযান ওপেন। এ বছরই তিনি ফেডারেশন কাপ টেনিসের শিরোপা জেতেন। ২০১২ ও ‘১৪ সালে জেতেন ফ্রেন্স ওপেন। খেলেয়াড়ি জীবনে ১০ বার গ্রান্ড স্লাম টুর্নামেন্টের ফাইনালে খেলেছেন। পাশাপাশি পেয়েছেন অগণিত পুরস্কার ও সম্মাননা। ২০০৩ সালে পান উইমেন্স টেনিস এ্যাসোসিয়েশনের উদীয়মান তারকা পুরস্কার। ২০০৪ সালে পান উইমেন্স টেনিস এ্যাসোসিয়েশনের বর্ষসেরা পুরস্কার। খেলোয়াড়ি জীবনে এ রকম পুরস্কারে তিনি অসংখ্যবার ভূষিত হন। ২০০৫ সালে বিশ্ব মহিলা টেনিসের এক নম্বর হওয়া ছাড়ার এ বছর ২০১৬ সালে তিনি রাশিয়ার ‘অর্ডার অব মেরিট পুরস্কারে ভূষিত হন। হরিষে বিষাদের মতো এ বছরই তিনি ডোপ টেস্টে ধরা পড়ে ক্যারিয়ার বিপর্যয়ে পড়েন। এই বিপর্যয়ে কাটিয়ে তিনি আবার টেনিস কোর্টে ফিরতে পারেন কিনা সেটাই দেখার অপেক্ষায় তামাম বিশ্বক্রীড়াঙ্গন। লেখক : কবি, কথাসাহিত্যিক ও ক্রীড়ালেখক [email protected]
×