ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

জিএম মোস্তফা

ডোপ কেলেঙ্কারি- কঠিন সময়ে রাশিয়া

প্রকাশিত: ০৬:৩৬, ২২ জুন ২০১৬

ডোপ কেলেঙ্কারি- কঠিন সময়ে রাশিয়া

রাশিয়ার নিষেধাজ্ঞা বহাল রেখেছে আন্তর্জাতিক এ্যাথলেটিক্সের নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইএএএফ। গত শুক্রবার বিশ্ব এ্যাথলেটিক্সের গবর্নিং বডির সভায় এমন সিদ্ধান্ত হয়। এর ফলে আগস্টে শুরু হতে যাওয়া ক্রীড়া জগতের মহাযজ্ঞ রিও অলিম্পিকে অংশগ্রহণ করতে পারবেন না রাশিয়ার এ্যাথলেটরা। এর আগে ডোপিং কেলেঙ্কারির দায়ে গত বছরের নবেম্বরে ট্র্যাক এ্যান্ড ফিল্ড থেকে রাশিয়াকে সাময়িক নিষিদ্ধ করেছিল আন্তর্জাতিক এ্যাথলেটিকস ফেডারেশন (আইএএএফ)। এর আগে ১৯৮৪ সালে লস এ্যাঞ্জেলস গেমস বয়কট করেছিল রাশিয়া। তার দীর্ঘ ৩২ বছর পর এবার রিও অলিম্পিকে অংশগ্রহণ করতে পারবে না রাশিয়া। ক্রীড়া জগতের সবচেয়ে বড় আসর অলিম্পিক। যেখানে নিয়মিতই আলো ছড়ায় রাশিয়ার এ্যাথলেটরা। অথচ এবার সেই রাশিয়াই নেই! অবিশ্বাস্য মনে হলেও আগামী অলিম্পিকে থাকছেন না রাশিয়ার ট্র্যাক এ্যান্ড ফিল্ড এ্যাথলেটরা। বিষয়টি নিশ্চিত হয় শুক্রবার রাতে ভিয়েনায় অনুষ্ঠিত এ্যাথলেটিক্স ফেডারেশন্সের আন্তর্জাতিক সংস্থার (আইএএএফ) গবর্নিং বডির সভা শেষে। বিষয়টি নিয়ে রাশিয়াজুড়েই চলছে তোলপাড়। দেশটির কেন্দ্রীয় তদন্তকারীরা সাবেক এ্যান্টি ডোপিং ল্যাবরেটরি প্রধান গ্রিগোরি রডচেনকভের বিরুদ্ধে মামলা ঠুকে দিয়েছে। রাশিয়ার ক্রীড়ামন্ত্রী ভিটালি মুটকো দাবি করেছেন শুধুমাত্র রাশিয়ান এ্যাথলেটিক ফেডারেশনের ওপর ঢালাওভাবে দোষ চাপিয়ে বিশ্বব্যাপী অন্য অপরাধসমূহকে আড়াল করেছে আইএএএফ। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘রাশিয়ান এ্যাথলেটিক ফেডারেশনের ওপর সব দোষ চাপিয়ে আসলে আইএএএফ নিজেদের দায়িত্ব পালনের দায়টা সেরেছে। কিন্তু আইএএএফকেই এখন বিষয়টি খোলাসা করতে হবে। আরেকটি বিষয় এখানে সবাইকে জানাতে হবে পরিষ্কার করে যে আইএএএফ সভাপতি নিজেই ঘুষ গ্রহণের অভিযোগে তদন্তাধীন আছেন।’ রাশিয়াকে দেয়া এ নিষেধাজ্ঞায় দেশটির প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনও তীব্র ক্ষোভ জানিয়ে সিদ্ধান্তকে ‘অন্যায় ও অবিচার’ বলে দাবি করেন। তার মতে, ‘বৈশ্বিকভাবে স্বীকৃত কিছু আইনী নীতিমালা রয়েছে। এর একটি হলো, দায়ী করার ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট হতে হবে। গুটিকয়েকের জন্য সবাইকে দায়ী করা যাবে না। যেসব মানুষ সহিংসতার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নয় তাদের কেন অন্যদের কর্মকা-ের জন্য সাজা পেতে হবে?’ এ ব্যাপারে আন্তর্জাতিক ক্রীড়া কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করে পুতিন বলেন, ‘আমার ধারণা বিশ্বের বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিরা মিলে ডোপিংবিরোধী কাঠামো তৈরির ব্যাপারে একটি আলোচনায় বসতে পারব। আশা করছি আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটি এ ব্যাপারে যথোপযুক্ত প্রতিক্রিয়া খুব দ্রুতই জানাবে।’ কিন্তু আইএএএফ প্রধান সেবাস্তিয়ান কো উল্টো অভিযোগ করেছেন এ্যাথলেটদের এই দুর্ভাগ্য বরণের জন্য দায়ী মূলত রাশিয়াই। রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা পেয়ে রাশিয়ার এ্যাথলেটরা বড় আকারেই নিষিদ্ধ ড্রাগ গ্রহণ করে থাকেন এমন অভিযোগে গত নবেম্বরেই সাময়িক নিষেধাজ্ঞা ছিল রাশিয়ান এ্যাথলেটিক ফেডারেশনের ওপর। ২৭ সদস্যের কাউন্সিল ভোটে সেই সাময়িক নিষেধাজ্ঞা বর্ধিত করার রায় দেয় আইএএএফ। তবে মজার ব্যাপার হলো, ঘটনাটির সূত্রপাত মূলত একটি ডকুমেন্টারি মুভি থেকে। ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে জার্মানির এআরডি চ্যানেল একটি মুভি মুক্তি দেয়। মুভিটির নাম ছিল, ‘দ্য ডোপিং সিক্রেট- হাউ রাশিয়া ক্রিয়েটস চ্যাম্পিয়ন্স।’ ওষুধের অসদ্ব্যবহার এবং দুর্নীতি রাশিয়ান ক্রীড়া ক্ষেত্রে কেমন প্রভাব ফেলেছে সেটা দেখানো হয় সেই ছবিতে। পরে সরেজমিনে কিছু প্রত্যক্ষ ঘটনা নিয়ে একটি ডকুমেন্টারিও হয়। এরপর বিশ্ব ডোপবিরোধী সংস্থার (ডব্লিউএডিএ) দৃষ্টিতে আসে তা এবং টনক নড়ে কর্তাদের, রাশিয়ার এ্যাথলেটদের ওপর বিশেষ তদন্ত পরিচালনা করে তারা দীর্ঘদিন। অবশেষে গত বছর নবেম্বরে ব্যাপক ডোপপাপের তথ্যাদি ও ঘটনা শনাক্ত করে ডব্লিউএডিএ এবং তাদের রিপোর্টের ভিত্তিতেই রাশিয়ান এ্যাথলেটিক্স ফেডারেশনের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়। গত ১৩ নবেম্বর আইএএএফ রাশিয়ান মেম্বার ফেডারেশনকে (রুসাফ) সাময়িকভাবে এবং ২৬ নবেম্বর পূর্ণ সমর্থন নিয়ে নিষিদ্ধ করে। ফলে এরপর থেকে সব আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে পারেনি রাশিয়ান এ্যাথলেটরা। আর শুক্রবার আইএএএফের ঘোষণার কারণে এখন অলিম্পিকেও অংশ নেয়া হবে না রাশিয়ার ট্র্যাক এ্যান্ড ফিল্ড এ্যাথলেটদের। নিষেধাজ্ঞা বহালের পরপরই সক্রিয় হয়ে উঠেছে রাশিয়ার এ্যাথলেটিক ফেডারেশন। কেন্দ্রীয় অপরাধ তদন্ত কর্মকর্তাদের কাছে তারা মামলা ঠুকে দিয়েছে রাশিয়ান এন্টি ডোপিং ল্যাবরেটরির সাবে প্রধান রডচেনকোভের বিরুদ্ধে। তার বিরুদ্ধে মামলায় বলা হয়েছে তিনি তার কার্যালয়ের অপব্যবহার করেছেন। তিনি অবশ্য দায়িত্ব শেষে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমিয়েছেন। সে সময় তিনি বলেছিলেন, ‘২০১৪ সোচি অলিম্পিকে অনেক এ্যাথলেটকে প্রস্তুত করার জন্য রাশিয়াকে লড়তে হচ্ছে ডোপিংয়ের বিরুদ্ধে।’ তদন্তকারীরা এখন বলছেন রডচেনকোভ ২০১৪ সালে তার নিম্নপদস্থদের নির্দেশ দিয়েছিলেন এ্যাথলেটদের দেয়া রক্তের নমুনাগুলো ওলট-পালট করতে। সেসব সংরক্ষণেরও কোন দায়িত্ব নেননি তিনি। তবে এসব কার্যক্রম আরও আগেই পরিচালনা করা উচিত ছিল রাশিয়ার এমনটাই দাবি করলেন আইএএএফ প্রধান সেবাস্তিয়ান কো। অনেকে বলছেন, রাশিয়ান এ্যাথলেটিক ফেডারেশনকে নিষিদ্ধ করায় যারা দোষী নয় তারাও বঞ্চিত হচ্ছে এবার অলিম্পিকে অংশ নিতে না পেরে। আইএএএফ সভাপতি কো মনে করছেন এজন্য দায়ী রাশিয়ার কর্মকর্তারাই। তিনি বলেন, ‘আমি একটা বিষয়ে খুবই পরিষ্কারভাবে বলতে চাই যে কোন নির্দোষ এ্যাথলেটের বিরুদ্ধে আমরা কোন ব্যবস্থা নেইনি। আমরা সিস্টেমটাকে প্রক্রিয়াজাত করেছি যাদের ওপর অভিযোগ কিংবা সন্দেহ হয়েছে। কিন্তু যাদের এমন কিছু নেই তারা অবশ্যই অলিম্পিকে অংশ নিতে পারে। শুধু তারা রাশিয়ার নাম নিয়ে অংশ নিতে পারবে না। এ্যাথলেটদের এমন দুর্ভাগ্যজনক পরিস্থিতির জন্য আসলে কর্মকর্তাদের উদাসীনতাই দায়ী, আমরা নই। কোন খেলোয়াড় যদি নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করতে পারেন তবে তিনি স্বতন্ত্র প্রতিযোগী হিসেবে খেলায় অংশ নিতে পারবেন।’ এই নিষেধাজ্ঞাকে মানবাধিকারের লঙ্গন বলে মন্তব্য করেছেন ইয়েলিনা ইসিনবায়েভা। ২০০৪ এবং ২০০৮ সালে পল ভোল্টে স্বর্ণপদকজয়ী এই এ্যাথলেট মানবাধিকার কোর্টে গিয়ে আইএএএফকে ভুল প্রমাণ করার হুমকিও দিয়ে দিয়েছেন। এমন নিষেধাজ্ঞায় দুঃখ প্রকাশ করেছেন দেশটির তারকা সাতারু ইয়ানা মার্টিনোভাও। এদিকে রাশিয়ান টেনিস তারকা মারিয়া শারাপোভাও সম্প্রতি দুই বছরের জন্য নিষিদ্ধ হয়েছেন। তবে তার নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে আপিল করেছেন পাঁচটি গ্র্যান্ডসøামের মালিক।
×