ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

মুখ থুবড়ে পড়ল ব্রাজিলের ফুটবল

প্রকাশিত: ০৬:৩৫, ২২ জুন ২০১৬

মুখ থুবড়ে পড়ল ব্রাজিলের ফুটবল

ব্রাজিলের সাফল্যের বর্ণনা লিখে শেষ করার নয়। তবু ময়দানি লড়াইয়ে এমন সব কীর্তি সেলেসাওরা রচনা করে তাতে কলম স্থির রাখাই মুশকিল! এজন্য অনেক সময় নিজের অজান্তেই ব্রাজিল বন্দনায় কালির আঁচড় ব্যস্ত হয়ে পড়ে। তবে এমন বন্দনা লেখার প্রেক্ষাপট এখন আর নেই! সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নিজেদের চেনা সাম্বা ছন্দ হারিয়ে রীতিমতো ধুঁকছে ব্রাজিল ফুটবল দল। তবে এটা ঠিক অনিশ্চয়তা এবং আলোচনার বাইরে থেকেও ব্রাজিল যে অভাবনীয় সাফল্যগাথা রচনা করতে পারে তা অন্যদের কাছে অনেকটাই অসম্ভব। একমাত্র ব্রাজিলই পারে অসম্ভবকে সম্ভব করতে! এমন প্রমাণ ফুটবলপাগল দেশটি বহুবার রেখেছে। অনেকবার মৃত্যুকূপ থেকে বেরিয়ে চূড়ান্ত সাফল্য পেয়েছে পেলের দেশ। লাল-সবুজের এই দেশ যে বছর ইতিহাসে নিজের নামটি স্বর্ণাক্ষরে লিখেছিল তার আগের চারটি বিশ্বকাপের তিনটিরই (১৯৭০, ১৯৬২ ও ১৯৫৮) চ্যাম্পিয়ন ব্রাজিল। যে কারণে ১৯৭০-’৮০ দশকে বাংলাদেশের পঞ্চম শ্রেণীর পাঠ্যবইতে কিংবদন্তি পেলেসহ ব্রাজিলের সাফল্যের স্তূতিগাথা নিয়ে একটি গল্প ছিল। রূপকথার মতো সাফল্যের বর্ণনা শুনে তখন থেকেই এদেশের মানুষের হৃদয়ে স্থান করে নেন পেলে, ভাঁভা, জোয়ারজিনহো, কার্লোস আলবার্তো পেরেইরা, গ্যারিঞ্জাদের ব্রাজিল। শ্রেষ্ঠত্বের এই ধারা দীর্ঘ ২৪ বছর ছিল অনুপস্থিত। ১৯৯৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপ জয় করে ফের চিরচেনা রূপে ফেরে সাম্বার দেশ। শুধু তাই নয়, ’৯৪ থেকে ২০০২ টানা তিনটি বিশ্বকাপের ফাইনালে খেলে ব্রাজিল। এরমধ্যে ১৯৯৮ বাদে দুবার চ্যাম্পিয়ন। আধুনিক যুগে টানা একযুগ ফাইনালে খেলার নজির আর কোন দেশের নেই। এরপর ২০০৬ জার্মান বিশ্বকাপ থেকে যেন আবারও ছন্দপতন! প্রায় অর্ধযুগের সংগ্রামের পর ২০১৩ সালে বিশ্বকাপের ‘ড্রেস রিহার্সেল’ কনফেডারেশন্স কাপে হ্যাটট্রিক শিরোপা জিতে ফের কক্ষপথে পেরার আভাস দেয় রেকর্ড সর্বোচ্চ পাঁচবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৪ সালে নিজ দেশে বিশ্বকাপ ট্রফি উঁচিয়ে ধরার স্বপ্ন দেখেছিল ফুটবলপাগল দেশটি। কিন্তু সেমিফাইনালে জার্মানির কাছে বিধ্বস্ত হয়ে আরেকবার বেদনায় পুড়তে হয় পেলের দেশকে। এই ধকল কাটিয়ে উঠে আবারও সুদিন ফেরানোর স্বপ্ন বুনতে শুরু করে সেলেসাওরা। এ লক্ষ্যে কোচপদে ফিরিয়ে আনা হয় ১৯৯৪ সালের বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক কার্লোস দুঙ্গাকে। কিন্তু তিনিও ব্যর্থতার স্বাক্ষর রেখেছেন। অতিমাত্রায় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে যেয়ে যুক্তরাষ্ট্রে চলমান শতবর্ষী কোপা আমেরিকার গ্রুপপর্ব থেকেই বিদায় নিয়েছে নেইমারবিহীন ব্রাজিল। যে কারণে কোচপদ থেকে ছাঁটাই করা হয়েছে দুঙ্গাকে। হারানো গৌরব ও মর্যাদা ফিরিয়ে আনতে নতুন কোচ হিসেবে ব্রাজিলের দায়িত্ব পেয়েছেন আডেনর লিওনার্ডো টিটে। কোপা থেকে বিদায় নেয়া ব্রাজিলের এখন প্রধান টার্গেট ২০১৮ সালে রাশিয়া বিশ্বকাপের টিকেট কাটা। দক্ষিণ আমেরিকা অঞ্চলের বাছাইপর্বে বেশ বিপাকে আছে দেশটি। বর্তমানে যে অবস্থা তাতে অনেকেই মনে করছেন, হয়ত পরবর্তী বিশ্বকাপে খেলার যোগ্যতাই অর্জন করতে পারবে না ব্রাজিল। বাছাইপর্বের প্রথমদিকে আর্জেন্টিনার অবস্থাও সুবিধার ছিল না। সেক্ষেত্রে দুটি দলকে নিয়েই শঙ্কা ছিল। তবে বর্তমানে লিওনেল মেসির দল ভালভাবেই ঘুরে দাঁড়িয়েছে। ব্রাজিল কিংবা আর্জেন্টিনা, এই দুদলের একটি বা দুটিই যদি বিশ্বকাপে না থাকে তাহলে কি হবে একবার ভাবুন! নিশ্চিত করে বিশ্বকাপের আবেদনই শেষ হয়ে যাবে। পরবর্তী অর্থাৎ ২০১৮ রাশিয়া বিশ্বকাপে বিশ্ব ফুটবলের সবচেয়ে জনপ্রিয় দল দুটি থাকবে কিনা সেটা জোর দিয়ে কেউ বলতে পারছে না! বাছাইপর্বের প্রথম ম্যাচেই যে দল দুটি হারের স্বাদ পায়। বর্তমানে দক্ষিণ আমেরিকার দলগুলোর মধ্যে শক্তির পার্থক্য উনিশ-বিশ। যে কারণে সেরা চার দলের মধ্যে আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিল থাকতে পারবে কিনা তা নিয়ে ঢের সংশয় আছে বলে মনে করছেন ফুটবল প-িতরা। ফুটবল বিশ্বে দক্ষিণ আমেরিকার দুই পরাশক্তির নাম ব্রাজিল আর আর্জেন্টিনা। বিশ্ব ফুটবলেও সেরা দলের তকমা এদের। কিন্তু পরবর্তী বিশ্বকাপে এ দুদলের ভাগ্যে কি হয় সেদিকে দৃষ্টি সবার। শুরুর ব্যর্থতা থেকে বেরিয়ে অবশ্য দক্ষিণ আমেরিকা অঞ্চলের বাছাইপর্বে দরুণভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছে আর্জেন্টিনা। প্রাণভোমরা লিওনেল মেসিকে ফিরে পেয়ে পঞ্চম ও ষষ্ঠ পর্বের দুটি ম্যাচেই জয় পেয়েছে দিয়াগো ম্যারাডোনার দেশ। অন্যদিকে ঠিক উল্টো চিত্র ব্রাজিলের। প্রথম চার পর্বে সাফল্য দেখানো কার্লোস দুঙ্গার দল পঞ্চম ও ষষ্ঠ পর্বের দুটি ম্যাচেই ড্র করেছে। প্রথমে উরুগুয়ের বিরুদ্ধে জেতা ম্যাচে হতাশা নিয়ে মাঠ ছাড়ে। এরপর প্যারাগুয়ের বিরুদ্ধে হারতে হারতে কোনমতে ড্র করে রেকর্ড সর্বোচ্চ পাঁচবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা। গত মার্চে ষষ্ঠ পর্বের ম্যাচে স্বাগতিক প্যারাগুয়ে ২-২ গোলে রুখে দেয় অতিথি ব্রাজিলকে। ফলে পয়েন্ট তালিকায়ও অবনমন হয়েছে সেলেসাওদের। অন্যদিকে টানা দুই ম্যাচ জিতে পয়েন্ট তালিকার সেরা তিনে উঠে এসেছে জেরার্ডো মার্টিনোর দল। ষষ্ঠ পর্বের ম্যাচে আর্জেন্টিনা ২-০ গোলে হারায় বলিভিয়াকে। এছাড়া উড়তে থাকা ইকুয়েডরকে প্রথম হারের স্বাদ দিয়েছে কলম্বিয়া। কার্লোস বাক্কার জোড়া গোলে ৩-১ গোলে জয় পায় ব্রাজিল বিশ্বকাপে চমক দেখানো দলটি। পেরুকে ১-০ গোলে হারিয়ে পয়েন্ট তালিকার এক নম্বরে উঠে এসেছে উরুগুয়ে। ভেনিজুয়েলাকে ৪-১ গোলে উড়িয়ে দিয়েছে কোপা আমেরিকার চ্যাম্পিয়ন চিলি। বর্তমানে ৬টি করে ম্যাচ শেষে ১৩ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে উরুগুয়ে, সমান পয়েন্ট নিয়ে গোলগড়ে দুইয়ে ইকুয়েডর। ১১ পয়েন্ট নিয়ে আর্জেন্টিনা তিনে। ১০ পয়েন্ট করে নিয়ে চতুর্থ ও পঞ্চম স্থানে যথাক্রমে চিলি ও কলম্বিয়া। ৯ পয়েন্ট করে নিয়ে ষষ্ঠ ও সপ্তম স্থানে ব্রাজিল ও প্যারাগুয়ে। দক্ষিণ আমেরিকা অঞ্চল থেকে প্রথম চারটি দল সরাসরি ২০১৮ রাশিয়া বিশ্বকাপে খেলার সুযোগ পাবে। পঞ্চম হওয়া দলটিকে খেলতে হবে এশিয়া অঞ্চলের দলের সঙ্গে প্লেঅফ। তার মানে, এবার ব্রাজিলের জন্য বাছাইপর্ব পেরুনো অগ্নিপরীক্ষা। অনেকেই মনে করছেন, ব্রাজিল কিংবা আর্জেন্টিনা এবার বাছাইপর্ব থেকেই বাদ পড়তে পারে! সেটা হলে পরবর্তী বিশ্বকাপের জৌলুস নিশ্চিত করেই কমে যাবে। তবে আপাত দৃষ্টিতে দেখা যাচ্ছে, শঙ্কা অনেকটাই কাটিয়ে উঠেছে মেসির দল। যে কারণে আর্জেন্টিনাকে নিয়ে খুব একটা শঙ্কা দেখছেন না বিশেষজ্ঞরা। তবে ব্রাজিলের কপালে দুর্গতি আছে বলেই মনে করছেন অনেক ফুটবল প-িত।
×