ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

রাজধানীতে তিন প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা

ঘন চিনি, স্যাকারিন ও কাপড়ের রং দিয়ে তৈরি হচ্ছে পাউডার ড্রিঙ্কস

প্রকাশিত: ০৬:৩৪, ২২ জুন ২০১৬

ঘন চিনি, স্যাকারিন ও কাপড়ের রং দিয়ে তৈরি হচ্ছে পাউডার ড্রিঙ্কস

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ঘন চিনি, স্যাকারিন, সাইট্রিক এ্যাসিড ও কাপড়ে ব্যবহৃত রং দিয়ে তৈরি করা হয় পাউডার ড্রিঙ্কস। সেগুলোই বাজারে সাজিয়ে রাখা হয়। ক্রেতা কিনে করেন পান। তারপর পেটে ফুটফাট ভুটভাট। অনিবার্য গমন টয়লেটে। ডাক্তারখানা যাবার পর নিশ্চিত- এটা ভেজাল ড্রিঙ্কসের পার্শ¦প্রতিক্রিয়া। এমনই বিপজ্জনক ড্রিঙ্কস তৈরির দায়ে রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে তিনটি প্রতিষ্ঠানকে পাঁচ লাখ পঞ্চাশ হাজার টাকা জরিমানা করেন র‌্যাব পরিচালিত ভ্রাম্যমাণ আদালত। মঙ্গলবার দুপুরে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলম এ আদেশ দেন। রাজধানীর মীর হাজীরবাগে ‘লাইফ ফুড প্রডাক্টস এ্যান্ড কনজিউমার প্রডাক্টস’ নামক কোম্পানির ড্রিঙ্কস পাউডার তৈরিতে এমনই চিত্র উঠে আসে র‌্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে। এ সময় আদালত দেখতে পান প্রতিষ্ঠানটিতে ঘন চিনির সঙ্গে কাপড় তৈরির রং, স্যাকারিন ও সাইট্রিক এ্যাসিডের সংমিশ্রণে কোন রসায়নবিদ, পুষ্টিবিদ ছাড়াই সাধারণ কর্মচারীরা তৈরি করছেন টিনস নামক সফট ড্রিঙ্কস পাউডার। অভিযানের সময় কারখানাটির গুদাম থেকে বিপুল পরিমাণ ঘন চিনি জব্দ করা হয়। আমদানি নিষিদ্ধ এসব ঘন চিনি একটি চক্র মিথ্যা তথ্য দিয়ে দেশে আমদানি করে নিয়ে এসে এসব কারখানায় সরবরাহ করে। চিনির পরিবর্তে এ ঘন চিনি ব্যবহার করা হচ্ছে- যা মানবদেহের জন্য চরম ক্ষতিকর। তাছাড়া বিএসটিআইর অনুমোদন ছাড়াই অত্যন্ত অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে তৈরি করা হয় নুডলস। একই স্থানে দেখা যায়- রিম ডিটারজেন্ট নামক পাউডার তৈরির চিত্র। এ ধরনের অপরাধের দায়ে প্রতিষ্ঠানটিকে তিন লাখ টাকা টাকা জরিমানা করেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। এরপর নারিন্দা এলাকার পুলিশ ফাঁড়ির কাছে ‘ইয়ামিন ফুড প্রডাক্টস’ এ গিয়ে আদালত দেখতে পান এখানে অত্যন্ত নোংড়া ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে খালি গায়ে ও ময়লা হাতে কর্মচারীরা তৈরি করছে কোলাকোলা নামক নুডলস। অথচ এ প্রতিষ্ঠানটি বিএসটিআইর লাইসেন্স ছাড়াই মানচিহ্ন প্যাকেটের গায়ে ব্যবহার করছে। কারখানার মালিক মোঃ হাফিজুর রহমান (২৮) আদালতের নিকট অপরাধ স্বীকার করে ক্ষমা চান। এজন্য তাকে ১ লাখ টাকা জরিমানা ও আগামী এক মাসের মধ্যে বিএসটিআই এর লাইসেন্স সংগ্রহপূর্বক কারখানার পরিবেশ উন্নত করার নির্দেশ দেন আদালত। একই এলাকার ‘তানয়ীম সুইটস’ এ মবিল তেল দিয়ে জিলাপি ভাজা এবং অপরিষ্কার অবস্থায় মিষ্টি ও কেক উৎপাদন করার দায়ে মালিক মোঃ আনোয়ার হোসেন দেড় লাখ টাকা জরিমানা করেন আদালত। এদিকে রাজধানীর কাপ্তানবাজার এলাকায় ভেজালবিরোধী অভিযানে ৯টি প্রতিষ্ঠানকে ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা জরিমানা করেছেন এপিবিএন-৫ এর ভ্রাম্যমাণ আদালত। মঙ্গলবার দুপুরে এপিবিএন-৫ এর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আয়েশা হকের নেতৃত্বে ভ্রাম্যমাণ আদালত কাপ্তানবাজার এলাকায় অভিযান চালান। এ সময় এপিবিএন সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার আমিরুল ইসলাম, সহকারী পুলিশ সুপার মোঃ সাইদুর রহমান এবং বিএসটিআইর ফিল্ড অফিসার মোঃ মাজহারুল ইসলাম উপস্থিতি ছিলেন। এপিবিএন-৫ এর অপারেশন্স অফিসার আমিরুল ইসলাম জানান, গোপন সংবাদ পেয়ে দীর্ঘদিন পর্যবেক্ষণ করে এপিবিএন-৫ এর অপারেশনাল টিম মঙ্গলবার বিকেলে এই অভিযান পরিচালনা করে। ৬১/৬২ কাপ্তানবাজারে অবস্থিত অবৈধ প্রতিষ্ঠান বিএসটিআইর লাইসেন্স ব্যতীত, পণ্যে মূল্যতালিকা না থাকা, বিএসটিআই অনুমোদনহীন পণ্য বিক্রি করার অপরাধে ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। এ সময় মেসার্স হৃদম স্টোরের মালিক মোঃ মোশাররফ হোসেন, আল্লাহর দান স্টোরের মালিক মোঃ সিরাজ উদ্দিন, নিউ সুলতান স্টোরের মালিক মোঃ হাজী সুলতান, জাকির স্টোরের মালিক জাকির হোসেন, আল কাদের স্টোরের মালিক আব্দুল কাদের ঢালী, সুলতান স্টোরের মালিক সুলতান আহম্মেদ, তুহিন স্টোরের মালিক সুলতান আহম্মেদ, সুমন স্টোরের মালিক শাহজাহান, নেয়ামুল স্টোরের মালিক এমডি জুয়েল মিয়া তাদের প্রত্যেককে ২০ হাজার টাকা করে মোট ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
×