ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

উদ্ধারকৃত বাইকটি হাত বদল হয়েছে ৭ বার

প্রকাশিত: ০৬:০৯, ২২ জুন ২০১৬

উদ্ধারকৃত বাইকটি হাত বদল হয়েছে ৭ বার

মোয়াজ্জেমুল হক, চট্টগ্রাম অফিস ॥ চট্টগ্রামে এসপি বাবুল আক্তারপতœী মাহমুদা খানম মিতু হত্যার রহস্যের জট খুলতে ব্যাপক তৎপরতা চালাচ্ছে পুলিশের একাধিক দল ও গঠিত ৫ উপকমিটির সদস্যরা। যে মোটরবাইক ব্যবহার করে কিলিং মিশনের ৩ সদস্য মিতুকে নৃশংসভাবে হত্যা করে পালিয়ে যায় তারা ভাড়াটিয়া ছিল বলে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে। হত্যাকা-ের পরদিন মোটরসাইকেলটি নগরীর বাদুরতলা থেকে পরিত্যক্ত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। মোটরসাইকেলটি ছিল চোরাই এবং সাতদফা এর হাত বদল হয়েছে। মালিক দাবিদার সপ্তম ব্যক্তিকে আটকের পর জিজ্ঞাসাবাদে এসপিপতœী মিতু হত্যাকা-ের একটি লাইন খুঁজে পেয়েছে পুলিশ। আশা করা হচ্ছে এরপর এর জট খুলতে শুরু করবে। এ হত্যাকা-ে যে ৩ কিলার অংশ নেয় তন্মধ্যে সন্দেহজনক ২ জনকে মঙ্গলবার গ্রেফতার করা হয়েছে। তদন্তে নিয়োজিত একটি বিশেষ দল সোমবার রাত থেকে অভিযান শুরু করে মঙ্গলবার সকালে রাউজানের রানিরহাট এলাকা থেকে একজনকে এবং দুপুর ২টায় নগরীর বাকলিয়া এলাকা থেকে একজনকে আটক করা হয়েছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে হত্যাকা-ে অংশ নেয়া অপরজনকে আটকের জন্য তখন থেকে অভিযান শুরু হয়েছে। পুলিশ এদের কারও নাম পরিচয় প্রকাশ যেমন করছে না, তেমন আটকের বিষয়টিও কেউ বলছে না। সিএমপির একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র স্বীকার করেছে, এ দু’জনকে আটকের ঘটনা এবং অপরজনকে গ্রেফতারের অভিযান অব্যাহত থাকার বিষয়টি। ওই সূত্র নিশ্চিত করেছে, মোটরসাইকেলটির চালক ও পেছনে বসা সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়েছে। যে মাঝখানে বসা ছিল তাকে এখনও গ্রেফতারের আওতায় আনা যায়নি। প্রসঙ্গত, মিতু হত্যাকা-ে রহস্য উদ্ঘাটনে তদন্তে রয়েছে বিশেষ দল। পিবিআই, সিটিইউ, সিআইডি, র‌্যাব ও ডিবি পুলিশকে এ হত্যাকা-ের রহস্য উদ্ঘাটনে নিয়োজিত রাখা হয়েছে। তদন্তের ভার দেয়া হয়েছে ডিবিকে। ডিবির এসি কামরুজ্জামান এ সংক্রান্ত মামলার তদন্ত কর্মকর্তা। পাশাপাশি নগর গোয়েন্দা পুলিশের উপ-কমিশনার নাজমুল হোসেন, কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এমএ মান্নান, ইন্সপেক্টর নিজাম, কামরুজ্জামান, বন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মহিউদ্দিন সেলিম, ইন্সপেক্টর জহিরসহ আরও কয়েক অভিজ্ঞ পুলিশ কর্মকর্তা ভিন্ন ভিন্ন গ্রুপে বিভক্ত হয়ে এ হত্যাকা-ের জট খুলতে মরিয়া হয়ে মাঠে চষে বেড়াচ্ছেন। তদন্তে এ পর্যন্ত যেসব তথ্য উদ্ঘাটিত হয়েছে সে অনুযায়ী পুলিশ সূত্রে বলা হচ্ছে, নগরীর লালখান বাজার মতিঝর্না এলাকার দুর্ধর্ষ একটি সন্ত্রাসী গ্রুপ ভাড়াটিয়া কিলার দিয়ে এ বর্বর হত্যাকা- সম্পন্ন করে থাকতে পারে। এর নেপথ্যে রয়েছে পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের ওপর ভয়ানক আক্রোশের জের। জানা গেছে, গত বছর চট্টগ্রামের ডিআইজির বাংলোতে গার্ড হিসেবে কর্মরত কনস্টেবল কাইয়ুম বাংলোর অনতিদূরে খুন হন। এ হত্যাকা-ের তদন্তের দায়িত্ব পান সিএমপির তৎকালীন এসি বাবুল আক্তার। এ ঘটনায় একটি সন্ত্রাসী গ্রুপের ৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারের সময় সংঘর্ষের ঘটনায় ওই সন্ত্রাসী গ্রুপের আলসার ও সুমন নামের দুই সন্ত্রাসী গুলিবিদ্ধ হয়। পরবর্তীতে হাসপাতালে এদের প্রত্যেকের হাঁটু পর্যন্ত দু’পা-ই কেটে ফেলতে হয়েছে। এছাড়া অপর একটি ঘটনায় বন্দুকযুদ্ধে দুই সন্ত্রাসী মারা যায়। এ ঘটনায় সন্দেহজনকভাবে শ্যোন এরেস্টকৃত জেলবন্দী জেএমবি সদস্য বুলবুলকে মঙ্গলবার রিমান্ড শেষে জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়েছে। রিমান্ডে সে জেএমবির লক্ষ্য ও আদর্শ বাস্তবায়নে যে নেটওয়ার্ক সম্পর্কে তথ্য দিয়েছে তা রীতিমতো পিলে চমকানো। পাশাপাশি বলেছে নারী ও শিশু হত্যার সঙ্গে জেএমবির আদর্শগত মিল নেই। সে আরও বলেছে, চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে থাকা জেএমবি, আনসারুল্লাহ বাংলা টিম ও হিযবুত তাহরীর সদস্যদের মধ্যে ঐক্য হয়েছে। তবে জামায়াত-শিবিরের সঙ্গে তারা কোন ঐক্য করেনি এবং করবেও না। তার এসব তথ্য মিতু হত্যা সম্পর্কিত নয়। তবে দেশে জঙ্গী নেটওয়ার্কের যে বিস্তৃতি রয়েছে তার কিছু অংশের। এদিকে মিত্যু হত্যাকা-ে যে মোটরসাইকেলটি যে ৩ জন ব্যবহার করেছে তারা যে ভাড়াটিয়া কিলার তা পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে। সে মোটরসাইকেলটি সাত হাত ঘুরে গেছে কিলার গ্রুপের সদস্যদের কাছে। সে সপ্তম ব্যক্তির নাম রাশেদ। তিনি বাদুরতলার একটি গ্যারেজের মালিক। তার কাছ থেকে যারা মোটরসাইকেলটি নিয়েছে তারাই মূলত ভাড়াটিয়া কিলার। এদের কিলিং মিশনে কারা পাঠিয়েছে তা এখনও অনুদ্ঘাটিত। যে দুজন সন্দেহজনকভাবে মঙ্গলবার গ্রেফতার হয়েছে এদের শারীরিক গঠন, মোটরসাইকেল চালনার ধরন এবং যে একজনকে সিসিটিভি ফুটেজে হাঁটতে হাঁটতে মোবাইলে কথা বলতে দেখা গেছে তা এখন স্পষ্ট হয়েছে এবং গ্রেফতারকৃত দুজনের সঙ্গে বহুলাংশে মিল রয়েছে। এ তিনজনের মধ্যে যে মোটরসাইকেলটি চালাচ্ছিল এবং যে পেছনে বসাছিল সে দুজনই আটক হয়েছে। মাঝখানে যে ছিল সে এখনও পলাতক। পুলিশ সূত্রে বলা হয়েছে, বাবুল আক্তারের পুলিশী তৎপরতায় ব্যাপকভাবে যারা ক্ষতিগ্রস্ত এবং অনেক সদস্যের একটি সিন্ডিকেট অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে ভাড়াটিয়া দিয়ে বাবুল আক্তারের স্ত্রীকে খুন করিয়েছে বলে এ পর্যন্ত পুলিশের ধারণা মিলেছে। চট্টগ্রাম জেল অভ্যন্তরে বন্দী সন্ত্রাসী, দুর্বৃত্ত, জঙ্গী গ্রুপগুলোর সদস্যের মাঝেও বাবুল আক্তার বিরোধী আক্রোশ রয়েছে। আক্রোশের বশবর্তী হয়ে বাইরে থাকা নিকটজনদের মাধ্যমে ভাড়াটিয়া কিলার নিয়োগ করে তারা বাবুল আক্তার ও তার পরিবারকে টার্গেট করে বলে এ পর্যন্ত তদন্তে অনেকাংশে নিশ্চিত হওয়া গেছে বলে পুলিশ সূত্রে জানানো হয়।
×