ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ঈদের কেনাকাটা

অনলাইন শপিং জমে উঠেছে ॥ এবার দ্বিগুণ বেচাকেনা

প্রকাশিত: ০৬:০৭, ২২ জুন ২০১৬

অনলাইন শপিং জমে উঠেছে ॥ এবার দ্বিগুণ বেচাকেনা

রহিম শেখ ॥ ঈদ উপলক্ষে অনলাইনে কেনাকাটা জমে উঠেছে। প্রতিদিনই বাড়ছে অনলাইন ক্রেতার সংখ্যা। যানজট এড়িয়ে যে কেউ কম্পিউটারের সামনে বসে করতে পারছেন কেনাকাটা। শিশু, কিশোর, তরুণ-তরুণী, বৃদ্ধ সব বয়সী মানুষের চাহিদা মতো পণ্য মেলে সেখানে। ছেলেদের পাঞ্জাবি, টি-শার্ট, জিন্স প্যান্ট, মহিলাদের শাড়ি দেশী কটন থ্রিপিস, ইন্ডিয়ান স্টিচ-আনস্টিচ কটন, জর্জেট সালোয়ার কামিজ, বিভিন্ন ব্র্যান্ডের জুতা, ঘড়ি, স্টাইলিশ সানগ্লাস, জুয়েলারি, কসমেটিক, খাদ্যদ্রব্য, ওয়ালেট, দৃষ্টিনন্দন গহনা, ব্যাগ-কসমেটিকস, টুপি, আতর, জায়নামাজ, বেল্টসহ কী নেই সেখানে? বর্তমানের সবচেয়ে জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ওই শপিং সাইটগুলোর প্রচারে মুখ্য ভূমিকা পালন করছে। ক্রেতারা ফেসবুক ব্যবহার করার সময় ওই সব অনলাইন বাজারের লিংক তাদের সামনে এসে হাজির হচ্ছে। অনেকেই ক্লিক করছেন তাতে। আর করে ফেলছেন কেনাকাটা। তাই ঈদ যতই ঘনিয়ে আসছে ততই সরগরম হয়ে উঠছে অনলাইনে কেনাকাট। গত বছরের তুলনায় এ বছর তাদের ক্রেতা বেশ বেড়েছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। দেশের নামী-দামী প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব ওয়েবসাইটের পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের মাধ্যমেও বেচাকেনা হচ্ছে বিভিন্ন পণ্য। জানা গেছে, মাত্র কয়েক বছর আগেও ঈদ শপিং মানেই ছিল ছোট-বড় বিভিন্ন শপিংমল, বিপণিবিতান ও ফ্যাশন হাউসে ঘুরে ঘুরে ব্যতিক্রমধর্মী পণ্য খুঁজে বের করে কেনার মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। কিন্তু সম্প্রতি ডিজিটাল প্রযুক্তির কল্যাণে ঈদ শপিংয়ে নতুনত্বের ছোঁয়া লেগেছে। ক্রেতাকে এখন আর যানজটে আটকে থেকে, মার্কেটে মার্কেটে ঘুরে ক্লান্ত ও গরমে ঘেমে অস্থির হতে হচ্ছে না। আর্থিকভাবে একটু স্বচ্ছল হলেই যে কেউ ঘরে বসেই কম্পিউটারের মাউসে ক্লিক করে শত শত পণ্য থেকে বাছাই করে পছন্দের পণ্যটি কিনতে পারছেন। শুধু তাই নয়, পণ্যটি সংগ্রহ করতে ক্রেতাকে এখন আর বিক্রেতার কাছে যেতেও হচ্ছে না, ইচ্ছে করলে ঘরে বসেই ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পণ্য হাতে পেয়ে যাচ্ছেন ক্রেতারা। এতে নগরীর যানজট যেমন এড়ানো যায়, তেমনি ভোগান্তিও কমে অনেকগুণ। অনলাইন শপিং প্রসঙ্গে কথা হয় একটি বেসরকারী ব্যাংকে কর্মরত ফারাহানা সুলতানার সঙ্গে। তিনি জনকণ্ঠকে জানান, ব্যস্ততার কারণে শপিং করার খুব একটা সময় হয়ে ওঠে না। যানজট আর ভিড় ঠেলে মার্কেটে যেতেও ইচ্ছা করে না। তাই অনলাইনে অর্ডার দিলে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পণ্য হাতে পেয়ে যাই। অনলাইনের বিভিন্ন সাইট থেকে গত সপ্তাহে চারটি থ্রিপিস কিনেছেন তিনি। অনলাইনের আরেক ক্রেতা আনিস আহমেদ জনকণ্ঠকে বলেন, অনলাইনের দুটি জনপ্রিয় সাইট থেকে ঈদের কেনাকাটায় এবার দুটি পাঞ্জাবি ও দুটি শাড়ি কিনেছি। বাসায় বসে অনলাইনে এসব কাপড় পরিবারের সবার পছন্দেই কেনা হয়েছে বলে তিনি জানান। জানা গেছে, দেশে দুই ধরনের অনলাইন সেবা চালু আছে। এক ধরনের সেবা পেতে আপনাকে পণ্য পছন্দ করে ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে আগে মূল্য দিতে হবে। পরে হাতে পাবেন পণ্যটি। অন্য প্রকার সেবা আপনাকে পণ্য পৌঁছে দিয়ে মূল্য নিয়ে যাবে। পণ্যভেদে কিছু পরিবহন খরচও আপনার কাছ থেকে নেবেন অনলাইন বিক্রেতারা। তবে পণ্যের দাম যত বেশি পরিবহন খরচও তত কম। অনলাইনে যেমন দেশের মধ্যে আপনি পণ্য কিনতে পারবেন তেমনি বিদেশেও পছন্দের পণ্য পাঠাতে পারবেন। ব্যাগ, ঘড়ি, জুয়েলারি যদি বন্ধুকে দিতে চান তাহলেও অনলাইনে তা পৌঁছে দেয়ার সুযোগ আছে। অনলাইন বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ঈদ উপলক্ষে তাদের ঈদের পোশাক, জুয়েলারি, জুতা, ব্যাগ, কসমেটিকস প্রভৃতি পণ্যের বিক্রি কয়েকগুণ বেড়েছে। তারা আরও জানান, সাধারণত কর্পোরেট শ্রেণীর মানুষ বেশি অনলাইনে কেনাকাটা করলেও এখন তা অনেক শ্রেণীর মধ্যে ছড়িয়ে গেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের মাধ্যমে ছোট বড় প্রায় শতাধিক ফ্যাশন ও বুটিক হাউস ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন পণ্যের বিজ্ঞাপন দিচ্ছেন। অনলাইনের বিভিন্ন সাইট পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, এবারে ঈদের সবচেয়ে বেশি বিক্রি হচ্ছে মেয়েদের দেশী কটন থ্রিপিস, ইন্ডিয়ান স্টিচ-আনস্টিচ কটন, জর্জেট সালোয়ার কামিজ। এছাড়া ছেলেদের পাঞ্জাবি, টি-শার্ট, জিন্স প্যান্ট, মহিলাদের শাড়ি বিভিন্ন ব্র্যান্ডের জুতা, ঘড়ি, স্টাইলিশ সানগ্লাস, জুয়েলারি, কসমেটিক, খাদ্যদ্রব্য, ওয়ালেট, দৃষ্টিনন্দন গহনা, ব্যাগ-কসমেটিকস, টুপি, আতর, খেজুর, জায়নামাজ, বেল্টসহ হরেক রকম পণ্য। আর গত ঈদের চেয়ে এবারে কেনাবেচা দ্বিগুণ হচ্ছে বলে জানালেন অনলাইন শপিংয়ের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা। প্রিয় শপের বিজনেস ডেভেলপমেন্ট ইনচার্জ রোমেল ডি রোজারিও বলেন, আসন্ন ঈদ উপলক্ষ করে প্রথম রমজান থেকেই আমাদের বিক্রি শুরু হয়ে গেছে। আশা করছি আমরা আমাদের কাক্সিক্ষত লক্ষ্য শতভাগ পূরণ করতে পারব। তিনি বলেন, বিকাশে পেমেন্ট করলেই সেখানে মিলছে ১৫ শতাংশ ক্যাশব্যাক। ঈদ উপলক্ষে প্রিয় শপ এনেছে ছেলেদের জন্য বাহারি কাজ করা পাঞ্জাবি, টি-শার্ট, জিন্স, মেয়েদের জন্য এনেছে শাড়ি, স্টিচ আনস্টিচ থ্রিপিস, এছাড়াও রয়েছে মেয়েদের আকর্ষণীয় ডিজাইনের ইন্ডিয়ান ও বাংলাদেশী ফ্লোর টাচ ড্রেস। ঢাকার মধ্যে আমরা ২৪ ঘণ্টায় ডেলিভারি দেই। আর ঢাকার বাইরে সময় নেই ৭২ ঘণ্টা। ১৮ থেকে ৪০ বছর বয়সীরাই তাদের ক্রেতা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমাদের টার্গেটই মূলত তারা। তবে পণ্য কেনার আগে ক্রেতাদের পণ্যের কোডটি সঠিকভাবে দেখে অর্ডার করার পরামর্শ দেন তিনি। ‘কেনাকাটার ধুম বাগডুম’Ñ এই সেøাগানে চলছে বাগডুম নামক শপিং সাইটটি। এখানে স্বল্প দামে পাওয়া যাচ্ছে সব ধরনের পণ্য। ছেলেদের পাঞ্জাবি শুরু হয়েছে ৪০০ টাকা থেকে। মেয়েদের শাড়ির সর্বনিম্ন মূল্য ৬৫০ টাকা। বিভিন্ন রকম কসমেটিকসের দাম শুরু ৯৯ টাকা থেকে। ছেলেমেয়েদের জুতোয় চলছে ১৫% ছাড়। সুগন্ধি চালে ছাড় চলছে ৫১% পর্যন্ত। ইলেকট্রনিক্স পণ্যে চলছে ৫০% ছাড়। বাগডুমে অর্ডার করলেই পাওয়া যাচ্ছে ৮% ছাড়। বিকাশে পেমেন্ট করলে মিলছে ৫০% ছাড়। মেয়েদের টাঙ্গাইলের তাঁতের শাড়ি, পিওর সিল্ক শাড়ি, সালোয়ার কামিজ, বেডশিট, জুয়েলারি ক্রেতারা সবই পাবেন এই সাইটটিতে। প্রতিদিন ১০০০ এরও বেশি পণ্য যুক্ত হচ্ছে আজকের ডিল সাইটে। পাওয়া যাচ্ছে ঈদ পাঞ্জাবি, শাড়ি, থ্রিপিস, জিন্স প্যান্ট, ব্রেসলেট, চুড়ি, নেকলেস, কানের দুল, পেনডেন্ট, স্টাইলিশ বোরকা, কালারফুল হিজাব, স্যান্ডেল, বেডশিট সেট। রয়েছে ইলেকট্রনিক্স পণ্য মোবাইল ফোন, ট্যাব, ঈদে পোশাক অলটারের ঝামেলা এড়াতে মিলছে ইলেকট্রনিক সেলাই মেশিন। এছাড়া বাংলাদেশ ব্রান্ডসে অনলাইন কেনাকাটায় থাকছে ১০% ছাড়। সাদাকালো, এক্সট্যাসি, রং, ক্যাটস আই, অ্যাড্রয়েড, নগরদোলা, সার্মটেক্স, ও-টুসহ নানা ব্র্যান্ডের পোশাক আর বিভিন্ন প্রয়োজনীয় সামগ্রী পাওয়া যাচ্ছে এখানে। এছাড়া আরও কিছু অনলাইনভিত্তিক শপিংমলের মাধ্যমে ক্রেতারা ঘরে বসেই কেনাকাটা করতে পারেন। এর মধ্যে আমার পণ্য ডটকম, ঢাকা শাড়ি ডটকম, বিডি হাট ডটকম, আমাদের শপ ডটকম, হাটবাজার ডটকম, সামগ্রী ডটকম অন্যতম। এছাড়া রয়েছে অগোরা, মিনাবাজার, ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ডসহ আরও অনেক প্রতিষ্ঠান। এসব অনলাইন শপিং সাইটে মাস্টার কার্ড, ক্রেডিট কার্ড, ডেবিট কার্ড, বিকাশ, ব্যাংক এ্যাকাউন্টের মাধ্যমে মূল্য পরিশোধ করা যায়। অধিকাংশ সাইটে ডেলিভারি চার্জ নেয়া হয় ৫০ টাকা থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত। কোন কোন শপিংমলে ঢাকার ভেতর রয়েছে ফ্রি ডেলিভারির ব্যবস্থা। ডেলিভারির সময় পণ্য সচক্ষে দেখে পছন্দ না হলে রয়েছে পরিবর্তন বা ফিরিয়ে দেয়ার সুযোগ। সেক্ষেত্রে শুধু ডেলিভারি চার্জ প্রযোজ্য।
×