ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

জঙ্গীবাদী অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানের সম্পদ বাজেয়াফত দাবি

প্রকাশিত: ০৬:০৫, ২২ জুন ২০১৬

জঙ্গীবাদী অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানের সম্পদ বাজেয়াফত দাবি

সংসদ রিপোর্টার ॥ প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে সরকার ও বিরোধী দলের সংসদ সদস্যরা জঙ্গীবাদী অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানের সম্পদ বাজেয়াফত ও তাদের নিষিদ্ধ করার দাবি জানিয়ে বলেছেন, দেশের মূল অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি ৬ শতাংশ হলেও মৌলবাদী অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি ৯ থেকে ১০ শতাংশ। আর এই অর্থ দিয়েই তারা ধর্মের নামে রাষ্ট্রক্ষমতা দখলের জন্য পূর্ণ স্বাধীন রাজনৈতিক কর্মী টেনে তুলছে, আধুনিক অস্ত্রাগার গড়ে তুলছে। তা দিয়ে এখন গুপ্তহত্যা চালানো হচ্ছে। এই আক্রমণ কোন একক সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে না, এই আক্রমণ বাংলাদেশের জনগণের বিরুদ্ধে। তাই ধর্মকে পণ্যে করে ধর্মের ধ্বজাধারী খুনী জঙ্গীদের নিরস্ত্র করা যাবে না বরং তাদের কাছে আত্মসমর্পণই করা হবে। গুপ্তহত্যাকারী ও তাদের মদদদাতাদের খুঁজে বের করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির মাধ্যমে ষড়যন্ত্রকারীদের দাঁতভাঙ্গা জবাব দিতে হবে। স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী এবং পরে ডেপুটি স্পীকার এ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বি মিয়ার সভাপতিত্বে বাজেটের ওপর মঙ্গলবার আলোচনায় অংশ নেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন, ভূমিমন্ত্রী শামসুর রহমান শরিফ ডিলু, ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি ও বিমানমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, জাসদের মইন উদ্দীন খান বাদল, বিদ্যুত প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ, সরকারী দলের আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, ড. হাছান মাহমুদ, শওকত হাছানুর রহমান রিমন, শামসুল হক, তাজুল ইসলাম, আবু জাহির, আলী আজম, সায়রা মহসীন, মাহবুব আলী, জাতীয় পার্টির শরিফুল ইসলাম জিন্নাহ ও মোহাম্মদ ইলিয়াছ। আলোচনা শেষে সংসদ অধিবেশন আজ বুধবার সকাল সাড়ে ১০টা পর্যন্ত মুলতবি করা হয়। আলোচনায় অংশ নিয়ে ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি ও বিমানমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন কথিত ক্রসফায়ারের সমালোচনা করে বলেন, প্রতিদিনই দেখছি ক্রসফায়ারে জঙ্গী নিহত হচ্ছে। কিন্তু ক্রসফায়ারে জঙ্গী সমস্যার সমাধান নয় বরং এটি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যর্থতা ও দুর্বলতার পরিচায়ক। জঙ্গীবাদের উত্থান সম্পর্কে মন্ত্রী বলেন, আমাদের মূল অর্থনীতির মধ্যে মৌলবাদী অর্থনীতি সরব উপস্থিতি। অর্থনীতি সমিতি পরিসংখ্যান অনুসারে, বাংলাদেশে মৌলবাদী অর্থনীতির নিট মুনাফা দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৫৬৫ কোটি টাকা। দেশের মূল অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি ৬ শতাংশ হলেও মৌলবাদী অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি ৯ থেকে ১০ শতাংশ। আর এই অর্থ দিয়েই তারা ধর্মের নামে রাষ্ট্রক্ষমতা দখলের জন্য পূর্ণ স্বাধীন রাজনৈতিক কর্মী টেনে তুলছেন। আধুনিক অস্ত্রাগার গড়ে তুলছে। তিনি বলেন, আমি নবম সংসদেই সমস্ত জঙ্গীবাদী অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানের সম্পদ বাজেয়াফত ও তাদের নিষিদ্ধ করার দাবি প্রস্তাব করেছিলাম। এই সংসদে সেটা নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হয়েছিল কিন্তু কোন মন্ত্রণালয় সেটা বাস্তবায়ন করবে এই অজুহাতে সেটা হিমাগারে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছিল। কিন্তু আজ এই মৌলবাদী, জঙ্গীবাদী তৎপরতা কত বাস্তব সেটা আজকে সবাই অনুধাবন করছি। মন্ত্রী বলেন, দেশী-বিদেশী অস্ত্রের সাহায্যে এই জঙ্গী গ্রুপ তৈরি হয়েছে। এই জঙ্গী গ্রুপগুলো বর্তমানে গুপ্তহত্যায় মেতে উঠছে। আমাদের দেশে আইএস নেই, তবে তাদের অনুগামী রয়েছে। এই জঙ্গী গোষ্ঠী কিছুদিন ধরে গুপ্তহত্যা চালাচ্ছে। তাদের হত্যার শিকার হয়েছে পুরোহিত, যাজক, ভিক্ষু, খ্রীস্টান সম্প্রদায়ের লোক, গবেষক, শিক্ষক, সমাজের সংখ্যালঘু দুর্বল শ্রেণীর মানুষ। তিনি বলেন, এই আক্রমণ কোন একক সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে না, এই আক্রমণ বাংলাদেশের জনগণের বিরুদ্ধে। এই আক্রমণের মধ্য দিয়ে তারা বাংলাদেশে একটি সাম্প্রদায়িক আবহ তৈরি করার চেষ্টা চালাচ্ছে। তিনি বলেন, ধর্মকে পণ্য করে ধর্মের ধ্বজাধারী খুনী জঙ্গীদের নিরস্ত্র করা যাবে না বরং তাদের কাছে আত্মসমর্পণই করা হবে। যেমন করা হয়েছে সংবিধানে রাষ্ট্র ধর্মের বিধান বজায় রেখে। সদ্য সমাপ্ত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের সমালোচনা সরকারের এই মন্ত্রী বলেন, অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচনের ঐতিহ্য আমরা কায়েম করেছিলাম। কিন্তু এবার ইউপি নির্বাচন আমাদের সেই অর্জনকে ধ্বংস করেছে। নির্বাচন কমিশন বসে বসে সেই ধ্বংসযোগ্য দেখেছে। তাই নির্বাচন ব্যবস্থা পুনর্গঠিত করতে না পারি তাহলে গণতন্ত্র কিন্তু সত্যিকার অর্থেই বিপন্ন হবে। সকল নির্বাচিত প্রতিষ্ঠানই বিপন্ন হবে। নির্বাচন কমিশনকে শক্তিশালী করা এবং নির্বাচন কমিশনকে অর্থ ও অস্ত্রের হাত থেকে নিয়ন্ত্রণমুক্ত করা। এ জন্য নির্বাচন কমিশনকে আজকে সকল রাজনীতি দলের অর্থবহ সংলাপের প্রস্তাব করেন তিনি। এ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন বলেন, দেশ যখন এগিয়ে যাচ্ছে তখন অগ্নিসন্ত্রাসে ব্যর্থ হয়ে এখন গুপ্তহত্যা শুরু করেছে বিএনপি-জামায়াত জোট। মুখে ইসলামের কথা বলে ক্ষমতার লোভে এখন ইসরাইলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের সঙ্গে হাত মিলিয়েছে। যে নেত্রী ক্ষমতার লোভে সারা ইসলাম উম্মাহ’র শত্রু ইসরাইলের সঙ্গে হাত মেলায়, তাঁর মাধ্যমে সব ষড়যন্ত্রই সম্ভব। এ ঘটনায় খালেদা জিয়া ইসলামের দুশমন হিসেবে চিহ্নিত হয়েছেন। ইসরাইলের মোসাদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে খালেদা জিয়া দেশবিরোধী কী কী ষড়যন্ত্র করছে তা তদন্ত করে বের করা উচিত। ভূমিমন্ত্রী শামসুর রহমান শরিফ ডিলু বিএনপি-জামায়াতের কঠোর সমালোচনা করে বলেন, নির্বিচারে অগ্নিসন্ত্রাস, মানুষকে পুড়িয়ে হত্যার নৃশংসতায় দেশের মানুষ বিএনপি-জামায়াতকে প্রত্যাখ্যান করেছে। মীরজাফর, গোলাপ আযম ও জেনারেল জিয়া জাতীয় বেইমান। আর তাঁর স্ত্রী খালেদা জিয়া নির্বিচারে মানুষ হত্যার পর এখন দেশকে ধ্বংসের ষড়যন্ত্র করছেন। জাসদের একাংশের কার্যকরী সভাপতি মইন উদ্দীন খান বাদল বলেন, আমরা প্রতিদিন বলছি সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স। আবার হরহামেশাই দেখছি ক্রসফায়ার হচ্ছে। কিন্তু দেশের হৃৎপি- খুবলে খায় যে অথনৈতিক সন্ত্রাসী ও জঙ্গীরা, তাদের প্রতি কোন টলারেন্স দেখাচ্ছেন? ব্যাংক থেকে টাকা লুট হচ্ছে, আমরা বিচার করতে পারছি না। স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশ হতে গড়ে তিন লাখ কোটি টাকা পাচার হয়ে গেছে। যা দেশের উৎপাদনের ৩ দশমিক ৪ শতাংশ এবং প্রতি বছর গড়ে দেশ হতে ৮০ কোটি ডলার পাচার হয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, এই আর্থিক জঙ্গীদের ব্যাপারে সরকার নির্মোহ হয়ে দৃঢ় আচরণ করতে না পারলে, আইনানুগ ব্যবস্থা না নিলে, তাদের প্রতি পক্ষপাতিত্ব করলে, তাদের শাস্তির হাতকড়া না পরালে- ইতিহাস আমাদের একদিন সংবিধান লঙ্ঘনকারী হিসেবে চিহ্নিত করতে পারে। বিদ্যুত প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, এখন আলোর পথে বাংলাদেশ। ২০২১ সালে যখন আমরা মধ্যম আয়ের দেশে যাব, তখন আমাদের প্রায় ৩৪ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুত প্রয়োজন পড়বে। আমরা সেই লক্ষ্য পূরণে কাজ করে যাচ্ছি। এখন ৭৬ ভাগ জনগণ বিদ্যুত সুবিধা ভোগ করছে। আগামী বিশ্ব হবে নবায়নযোগ্য বিদ্যুতের বিশ্ব। সেদিকেই যেতে হবে। ইনশাআল্লাহ ২০২১ সালের আগেই আমরা দেশের প্রতিটি মানুষের ঘরে ঘরে বিদ্যুত পৌঁছে দিতে পারব। সাবেক বন ও পরিবেশমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, পৃথিবীকে অবাক করে দিয়ে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ অদম্য গতিতে এগিয়ে চলছে। পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে বেশি জনঘনত্বের দেশ এবং সবচেয়ে কম জমির দেশ হওয়া সত্ত্বেও বাংলাদেশ শুধু খাদ্য স্বয়ংসম্পূর্ণই নয়, খাদ্য রফতানির দেশে পরিণত হয়েছে। দেশ যখন এভাবে এগিয়ে যাচ্ছে তখন অতীতের অগ্নিসন্ত্রাসের পর এখন বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ারা গুপ্তহত্যা শুরু করেছে। কিন্তু এসব করে দেশের অগ্রযাত্রা ব্যহত করা যাবে না।
×