ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

ঈদের কেনাকাটা আজিজ মার্কেটে

লোকঐতিহ্য ও শহুরে আধুনিকতার সুন্দর সমন্বয়

প্রকাশিত: ০৬:০৪, ২২ জুন ২০১৬

লোকঐতিহ্য ও শহুরে আধুনিকতার সুন্দর সমন্বয়

মোরসালিন মিজান ॥ কথা কবিতা গান নাটকের; বলা চলে, ঘরবাড়ি ছিল আজিজ মার্কেট। সমাজ বদলের স্বপ্ন সংগ্রাম নিয়ে যারা ছিলেন, এই ঠিকানায় আসতে হতো। সৃজনশীল মানুষের তুমুল আড্ডা মার্কেট থেকে শুরু করে নিচে নামার সিঁড়ি, সামনের ফুটপাথ পর্যন্ত গড়াত এক সময়। আর, তার পর আজকের বাস্তবতা। সত্যি সত্যি মার্কেটের চেহারা পেয়েছে ‘আজিজ’। এই সত্য মেনে নেয়া অনেকের জন্যই কঠিন। তবে মার্কেটটি আর সব মার্কেটের মতো নয়। এখানে দেশী পোশাকের চমৎকার প্রদর্শনী। লোকঐতিহ্য ও শহুরে আধুনিকতার একটি চমৎকার সমন্বয় ঘটানোর প্রয়াস। ফ্যাশন হাউসগুলোর নিজস্ব ভাবনা ও সৃজনশীলতা সৌখিন ক্রেতাকে মুগ্ধ করে। এ জায়গা থেকে দেখলে কিছুটা হলেও স্বস্তি দেয় আজিজ মার্কেট। ঈদে তাই জমে উঠেছে কেনাকাটা। মূল ভবনের তিনতলা পর্যন্ত মার্কেট। শোরুম ও দোকান প্রায় ৩০০। সারা বছরই চলে কেনা-বেচা। বিশেষ করে বাঙালীর উৎসব পার্বণ এগিয়ে নিতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখছে আজিজের ফ্যাশন হাউসগুলো। আর ঈদ হলে তো কথাই নেই। এরই মাঝে শুরু হয়ে গেছে বিপুল কেনাকাটা। গত কয়েকদিন বিভিন্ন শোরুম ঘুরে দেখা যায়, দারুণ সব সংগ্রহ। কৃষ্টির প্রতি বেশ সজাগ ফ্যাশন ডিজাইনাররা। নিজেদের পোশাককে অন্যদের থেকে আলাদা করতে চেষ্টার কমতি নেই। কাপড়, রং, কাটিং, সেলাইÑ সব কিছুতেই যতেœর ছাপ। মেয়েদের পোশাকের জন্য আজিজ মার্কেটের স্বতন্ত্র পরিচিতি আছে। ঈদে সেটি আরও বেশি করে দৃশ্যমান হয়। শোরুমগুলো থ্রিপিস ওড়না ইত্যাদি দিয়ে সাজানো। বাঙালী নারীর প্রিয় পোশাক শাড়ি আছে যথারীতি। নন্দন কুটির নামের একটি শোরুমে গিয়ে দেখা গেল, সব আয়োজনই মেয়েদের জন্য। এখানে উজ্জ্বল রঙের প্রাধান্য। কাটিংয়ে বেশ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। ফ্যাশন ভাবনাটাও স্বতন্ত্র। হাউসের স্বত্বাধিকারী শহিদুল হক বললেন, আমরা পোশাকে অনেক ভ্যারিয়েশন রাখার চেষ্টা করি। এটা হুটহাট হয় না। একটু একটু করে চেঞ্জ হয়। হয়েছে। উদাহরণ দিতে গিয়ে একটি পালাজো দেখিয়ে তিনি বলেন, গত ঈদে চুরিদার খুব বিক্রি হয়েছে। এবার যাচ্ছে পালাজো। অন্যরাও পালাজো তৈরি করছে। কিন্তু আমাদের কাটিং অন্যদের সঙ্গে মিলবে না। ‘কাপড়-ই বাংলা’র একটি শোরুমেও মেয়েদের পোশাকের প্রাধান্য। ফ্যাশন হাউসের স্বত্বাধিকারী মুরসালিন বিথুন বললেন, ঈদে আমরা মেয়েদের জন্য লং এবং শর্ট এই দুই ধরনের ড্রেসই তৈরি করেছি। লং কামিজের সঙ্গে পরার জন্য কটি তৈরি করেছি। আগ্রহীরা কামিজের রঙের সঙ্গে মিলিয়ে পরতে পারবেন। শর্ট কামিজগুলো প্যান্ট বা প্লাজোর সঙ্গে পরা যাবে। অল্প কাজ হলেও, প্রতিটি পোশাককে ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা হয়েছে বলে জানান তিনি। ঐশী নামের একটি শোরুমে ছেলেদের পোশাক থাকলেও মেয়েদের পোশাকই বেশি চোখে পড়ল। এখানেও দেশী কাপড়ে উজ্জ্বল রং। কাটিংয়েও কিছুটা নিজস্বতা। স্বত্বাধিকারী স্বপন বললেন, ব্লক বাটিকের কাজগুলো ভাল যাচ্ছে। ফ্লোরটাচ নামের মেঝে ছুঁয়ে থাকা পোশাকটিও নাকি খুব পছন্দ মেয়েদের। আজিজের পাঞ্জাবির বেলায় কটন লিলেন ও জর্জেট কাপড়ের ব্যবহার চোখে পড়ছে। প্রাধান্য পেয়েছে প্রিন্টের কাজ। গরমের কথা মাথায় রেখেই হয়ত ডিজাইনাররা হাল্কা রং বেছে নিয়েছেন। সাদা নীল আকাশি পেস্ট হাল্কা গোলাপি রঙের পাঞ্জাবি দেখা যায় বিভিন্ন শোরুমে। পাঞ্জাবির জন্য বেশ সুখ্যাতি বালুচরের। এই একটি ফ্যাশন হাউস সারা বছর আর কোন পোশাক নিয়ে এমনকি ভাবেও না। কেবল পাঞ্জাবি নিয়ে কাজ করে। ঈদ উপলক্ষে বালুচর এনেছে এক্সক্লুসিভ ৫০টি ডিজাইন। এখানে তারুণ্যের পছন্দ সিøমফিট পাঞ্জাবি। সেমি লং পাঞ্জাবিতে খুব বেশি কাজ নেই। কটন লিলেন জর্জেট কাপড়ে আকর্ষণীয় রং কথা বলছে। কলার ও প্লেটে সামান্য পরিবর্তন আনার চেষ্টা পরিলক্ষিত হয়। সামান্য পরিবর্তন। তবে চোখ আটকে যায়! ফ্যাশন হাউসের কর্ণধার শাহীন চৌধুরী শোরুমেই ছিলেন। জনকণ্ঠকে তিনি বলেন, আমাদের পাঞ্জাবি নিয়েই কাজ। এই কাজ আরও কত ভাল করা যায়, আমরা সারা বছর চিন্তা করি। ঈদে সেসব চিন্তার প্রকাশ ঘটানোর একটা চেষ্টা করেছি। এই যেমন এবারই প্রথম বালুচর জামদানি মোটিফ নিয়ে কাজ করেছে। আরও বেশ কিছু ডিজাইন আজকালের মধ্যে শোরুমে আসবে বলে জানান তিনি। ঢাক-ঢোল নামের শোরুমটিতেও অনেক রকমের পাঞ্জাবি। প্রিন্ট, এম্ব্রয়ডারি, কারচুপির কাজ বেশ নজরকাড়ে। আবির্ভাব নামের শোরুমটিতেও নানা রঙের পাঞ্জাবি। দামটাও সহনীয়। বেশ বিক্রি হচ্ছিল। বিসর্গ’র বেশ শোরুমে আছে যতœ করে বানানো পাঞ্জাবি। একই সঙ্গে আছে থ্রিপিস ও শাড়ি। জামার রঙের সঙ্গে মিলিয়ে পরার জন্য আছে অলঙ্কারও। প্রয়োজনীয় তথ্য হচ্ছে, আজিজ মার্কেটে পোশাক নিয়ে গবেষণা প্রচুর হলেও, দামটা সহনীয়। দু’একটা দোকানে নকল ডিজাইন ও ভারতীয় পোশাক ঢুকে গেছে। এগুলো এড়ানো গেলে স্বস্তির কোনাকাটা। সৌখিন কেনাকাটা।
×