ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

মাহে রমজান

প্রকাশিত: ০৬:০১, ২২ জুন ২০১৬

মাহে রমজান

অধ্যাপক মনিরুল ইসলাম রফিক ॥ আজ মাহে রমজানের ১৬তম দিবস। মাগফিরাতের দশকের মাঝামাঝিতে চলছে আমাদের সিয়াম সাধনা। মাহে রমজানে আল্লাহপাকের রহমত প্রাপ্তির সার্বিক কল্যাণময় সামিয়ানার নিচে মুসলিম উম্মাহ আজ আশ্রিত। গতকাল আমরা এ কলামে মাহে রমজান ও ইসলামের বিভিন্ন কল্যাণময় অবদানের কথা তুলে ধরেছিলাম। বিশেষ করে অন্যান্য ধর্মের পাশাপাশি আদর্শ স্বনির্ভর সমাজ বিনির্মাণে ইসলামের অবদান অগ্রগামী। হিন্দুধর্মের স্বামী বিবেকানন্দ বলেছেন, দুস্থ ও আর্তমানুষের মাঝেই ভগবান অবস্থান করেন। তাই তাদের সেবা করেই ভগবানকে তুষ্ট করা সম্ভব। দানশীলতা বা ‘দানম’ বলতে হিন্দুশাস্ত্র মতে অর্থ দান, অভয় দান, বিদ্যা দান এবং অর্ঘ্যদান বোঝায়। প্রাচীন ভারতে হর্ষবর্ধন একজন মহান ও উদার রাজা হিসেবে বিশেষভাবে প্রসিদ্ধ। প্রতি পাঁচ বছর অন্তর তার সমস্ত উদ্বৃত্ত সম্পদ দরিদ্র ও অভাবগ্রস্ত জনগণের মধ্যে বিতরণ করে দিতেন। বিখ্যাত চীনা পরিব্রাজক হিউয়েন সাং রাজা হর্ষবর্ধনের এরূপ এক দান বিতরণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। কথিত আছে যে, সমস্ত সম্পদ বিতরণ শেষে হর্ষবর্ধন তার রাজকীয় পোশাক ও অলঙ্কারাদি বিতরণ করে দিয়ে এ বলে তৃপ্তিলাভ করেন যে, তার সমস্ত সম্পদ পারমার্থিক কাজে ব্যয় হয়েছে। ভারতীয় মুসলিম মনীষীগণ তাদের বিভিন্ন কিতাবে এ হিন্দু রাজার মানবিক নানাবিধ গুণাবলীর ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। বৌদ্ধ ধর্মের মূল্যবোধগুলোর মধ্যে আছে মানুষে মানুষে কোন মতভেদ নেই। জাতি, ধর্ম, শ্রেণী নির্বিশেষে সকল মানুষের সমান সুযোগ ও অধিকার রয়েছে। জীবে দয়া ও অহিংসা পরমধর্ম। প্রেম-দান-দয়া ইত্যাদি সৎকর্মের মাধ্যমে সৌন্দর্যপূর্ণ সমাজ ব্যবস্থা সৃষ্টি করা বৌদ্ধ ধর্মানুসারীদের প্রধান কাজ। পাশাপাশি খ্রিস্টধর্মের মূল্যবোধগুলো লক্ষ্য করলে আমরা দেখতে পাই যে, সেখানেও মানবতার সেবার প্রতি যথেষ্ট গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে বলা হয়েছে, খোদার রাজ্যে সবই সমান। অহিংসা, মানবতাবোধ এবং ভ্রাতৃত্ববোধের ওপর এ ধর্ম যথেষ্ট গুরুত্বদান করেছে। খ্রিস্টধর্মে দানশীলতাকে ¯্রষ্টার নৈকট্য, করুণা এবং পরকালে আত্মার মুক্তিলাভের এক বিশেষ উপায় বলে বিবেচনা করা হয়েছে। ন্যায়বিচার ও সাম্য প্রচারে এ ধর্মে বলা হয়েছে : সুচের ছিদ্রের মধ্য দিয়ে উটের গমনাগমন সম্ভব হলেও বেহিসাবী ধনীদের খোদার রাজ্যে প্রবেশ সম্ভব হবে না। ‘দান করো, তাহলে তোমাকে আরো দান করা হবে। যে তোমার কাছে প্রার্থনা করে তারে দান করো এবং যে তোমার জিনিসপত্র নিয়ে যায় তার কাছে সেগুলো ফেরত চেয়ো না। শত্রুকেও প্রেম করো, তাকে ঋণ দাও এবং বিফল মনোরথ করো না। তোমার পুরস্কার হবে অনেক বিরাট এবং তুমি সে পবিত্র আত্মার সন্তানরূপে বরিত হবে। কেননা, তিনি অকৃতজ্ঞ এবং অবাধ্য মানুষের সাথেও সদয় ব্যবহার করেন। (লুক ৬-৩০.৩৫)। সহীহ বোখারি শরীফে বর্ণিত আছে, বিচারের দিনে আল্লাহ বলবেন- বান্দা আমি ক্ষুধার্ত ছিলাম আমাকে খাদ্য দাওনি, আমি বস্ত্রপ্রত্যাশী ছিলাম আমাকে বস্ত্র দাওনি. . . বান্দা বলবে, খোদা পরওয়ারদিগার তুমি তো এসব কিছু থেকে বেনিয়াজ আর কখনইবা তুমি এসব চেয়েছিলে? আল্লাহ বলবেন, এই এই সময় তোমার কাছে একজন ক্ষুধার্ত গিয়েছিল তুমি যদি তাকে খাদ্য দান করতে তা আমাকেই দান করা হতো। আর যদি অমুক বস্ত্রহীনকে বস্ত্র দান করতে তা যেন আমাকে দান করতে. . .। আসুননা বন্ধুগণ, পবিত্র কৃচ্ছ্র সাধনার মাসে আল্লাহ প্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে নিজের রুচি-শক্তি-সামর্থ্য দিয়ে দুর্গত এলাকায় কিংবা রেল স্টেশনের, ফুটপাথের ভাগ্যাহত বনী আদমদের পাশে দাঁড়াই।
×