ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

শিবিরের সঙ্গে জড়িত ছিল শরিফুল, সাতক্ষীরায় দাফন

প্রকাশিত: ০৫:৫৮, ২২ জুন ২০১৬

শিবিরের সঙ্গে জড়িত ছিল শরিফুল, সাতক্ষীরায় দাফন

স্টাফ রিপোর্টার, সাতক্ষীরা ॥ ব্লগার অভিজিত রায় হত্যার প্রধান সন্দেহভাজন আসামি ক্রসফায়ারে নিহত মুকুল রানা ওরফে শরিফুল কাগজে-কলমে এখনও সাতক্ষীরা সরকারী কলেজের ইংরেজী বিভাগের অনার্সের ছাত্র। কলেজ কর্তৃপক্ষের দাবি, সে অনিয়মিত। শরিফুলের গ্রামের বাড়ি সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ধুলিহর ইউনিয়নের বালুইগাছায়। তার পিতার নাম আবুল কালাম আজাদ। মায়ের নাম সখিনা বেগম। দাদার নাম আমির আলী ওরফে বোমা আমির। তবে ক্রসফায়ারে নিহত মুকুলের বাবা আবুল কালাম আজাদের দাবি, তার ছেলে খুব মেধাবী ছিল। সে কোন রাজনীতি করত না। তবে ঢাকায় গিয়ে সে কোন জঙ্গী সংগঠনের সঙ্গে জড়িত ছিল কি-না তা তিনি জানেন না। তিনি বলেন, তার ছেলেকে গত ফেব্রুয়ারি মাসে যশোরের বসুন্দিয়া বাজার থেকে ডিবি পরিচয়ে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। এর পর থেকে সে ছিল নিখোঁজ। পরে সংবাদপত্র ও টেলিভিশনে ছবি দেখে তাকে শনাক্ত করেন তিনি। এলাকাবাসী ও তার স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে নিহত শরিফুল ওরফে মুকুল সরাসরি কোন রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিল এমনটি নিশ্চিত করতে পারেনি কেউ। তবে অনেকের মতে মুকুল শিবির রাজনীতির মতাদর্শের ছিল। তবে সাতক্ষীরা সদর থানায় ও গোয়েন্দা বিভাগে মুকুলের বিষয়ে কোন তথ্য মেলেনি। মুকুলের দাদা আমির আলী এলাকার কুখ্যাত ডাকাত হিসেবে পরিচিত ছিল। আশাশুনির বুধহাটা এলাকায় ডাকাতি করতে গিয়ে আমির আলী নিজের কাছে থাকা বোমা বিস্ফোরণে আহত হন। সাতক্ষীরা সরকারী কলেজের অধ্যক্ষ লিয়াকত পারভেজ জানান, মুকুল রানা ২০১০-১১ শিক্ষাবর্ষে সাতক্ষীরা সরকারী কলেজে ইংরেজী অনার্স প্রথম বর্ষে ভর্তি হয়। এর পর থেকে সে আর কলেজে আসে না। নিয়মিত পরীক্ষাও দেয়নি। তার ছাত্রত্ব বাতিলের জন্য একটি দরখাস্ত প্রস্তুত করা আছে। শরিফুল ওরফে মুকুল ২০০৮ সালে সদরের ধুলিহর আইডিয়াল মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে জিপিএ-৫ পেয়ে এসএসসি পাস করে। এর পর সে সাতক্ষীরা দিবা-নৈশ কলেজ থেকে ২০১০ সালে জিপিএ-৫ পেয়ে এইচএসসি পাস করে। পরে ২০১০-১১ সেশনে সাতক্ষীরা সরকারী কলেজের ইংরেজী বিভাগে ভর্তি হয়ে প্রথম বর্ষের টেস্ট পরীক্ষা দেয়ার পর আর ক্লাস করেনি বলে জানান সাতক্ষীরা সরকারী কলেজের ইংরেজী বিভাগের বর্তমান প্রধান ও সহযোগী অধ্যাপক নজরুল ইসলাম। কলেজে মুকুল খুবই অনিয়মিত ছিল। নিহত মুকুলের বাবা আবুল কালাম আজাদ বলেন, ছেলের ঢাকায় যাওয়ার ব্যাপারে তার আপত্তি ছিল। কিন্তু মুকুল একসঙ্গে লেখাপড়া ও চাকরি করবে বলে বাবাকে জানায়। ঢাকায় রাজউকের ঠিকাদারি বিভাগের দ্বিতীয় হিসাবরক্ষক হিসেবে কাজ করত বলে তার বাবা জানত। মাঝে মাঝে মুকুলের সঙ্গে কথা হতো এবং সে বছরে অন্তত একবার বাড়ি আসত। তখনও তার মধ্যে এমন কোন খারাপ দিক বাবার নজরে আসেনি। তবে সে ঢাকার কোথায় থাকত তা জানতেন না আবুল কালাম আজাদ। মুকুলের বাবা বলেন, ‘গত ১৯ ফেব্রুয়ারি মুকুল যশোরের কোতোয়ালি থানার জগন্নাথপুর গ্রামের মোবারক বিশ্বাসের মেয়ে মহুয়া আক্তারকে বিয়ে করে। সে নিজেই পাত্রীর সন্ধান পেয়েছিল। মহুয়া যশোরের নোয়াপাড়া কওমি মাদ্রাসার ছাত্রী। বিয়ের পর নতুন বউকে নিয়ে মুকুল বাড়িতে আসে। আবার ফিরে যায় জগন্নাথপুরে। এর পর গত ২৩ ফেব্রুয়ারি বসুন্ধরা মোড় থেকে ডিবি পরিচয়ে মুকুলকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। সেই থেকে মুকুল নিখোঁজ ছিল। মুকুলের স্ত্রী মহুয়া থানায় যায় এ বিষয়ে জিডি করতে। পুলিশ জিডি নেয়নি। পরে মুকুলের শ্যালক আমির হোসেন যশোর কোতোয়ালি থানায় একটি জিডি (১৩৪৪/ ২৫.০২.১৬) করেন।’ মুকুলের বাবা জানান, কয়েকদিন আগে সংবাদপত্রে ছয় শীর্ষ জঙ্গীর নামের তালিকা ও ছবি দেখে তিনি ও তার এলাকার লোকজন মুকুলকে চিনতে পারেন। এর পর রবিবার তিনি টিভির খবরে জানতে পারেন মুকুল আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সদস্য হিসেবে পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয়েছে। তিনি বলেন, ‘গত ২৩ ফেব্রুয়ারি যে শার্ট পরা অবস্থায় তাঁকে তুলে নেয়া হয়েছিল ক্রসফায়ারের পরও তার গায়ে সেই একই শার্ট দেখা গেছে।’ নিহত মুকুলের পিতা আবুল কালাম আজাদ নিজেকে আওয়ামী লীগকর্মী দাবি করে বলেন, তিনি ধুলিহর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের একজন কাউন্সিলর। তার প্রথম স্ত্রী মর্জিনা খাতুন এক ছেলে মাসুদ হোসেনকে রেখে মারা যাওয়ার পর তিনি সখিনা খাতুনকে বিয়ে করেন। সখিনার দুই ছেলেমেয়ের মধ্যে মুকুল বড় ও শারমিন সুলতানা রিমা ছোট। রিমা সাতক্ষীরা মহিলা কলেজে ইসলামের ইতিহাস বিভাগে লেখাপড়া করছে। মুকুলকে ধরিয়ে দিতে পারলে পুলিশ পাঁচ লাখ টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দেয়। আবুল কালাম আজাদ বলেন, তখন থেকে ওর ছবি দেখে গ্রামের সবাই অবাক হয়েছিল। ধুলিহর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান ওরফে বাবু সানা বলেন, মুকুলের দাদা আমির আলী ডাকাত হিসেবে পরিচিত ছিলেন। তার বাবা আবুল কালাম আজাদ দুই বছর আগে আওয়ামী লীগের ইউনিয়ন সদস্য হন। তিনি কাউন্সিলর নন, সক্রিয় রাজনীতিও করেন না। মুকুল সম্পর্কে ভাল-মন্দ তেমন কোন খবর তার কাছে নেই বলেও জানান তিনি। এদিকে ঢাকার খিলগাঁও এলাকায় পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত অভিজিত হত্যা মামলার আসামি নিষিদ্ধ জঙ্গী সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সদস্য শরিফুল ইসলাম ওরফে মুকুল রানাকে তার গ্রামের বাড়ির পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে। মঙ্গলবার সকালে তাকে সাতক্ষীরার ধুলিহর ইউনিয়নের বালুইগাছা গ্রামে নিজ বাড়িতে আনা হয়। বেলা ১১টায় পরিবারের সদস্য ও আত্মীয়স্বজন ছাড়াও গ্রামবাসীর উপস্থিতিতে তাকে দাফন করা হয়। এ সময় মুকুলের বাড়িতে অসংখ্য মানুষের ভিড় জমে।
×