ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সরকারের ভরসা সঞ্চয়পত্র

প্রকাশিত: ০৪:১০, ২২ জুন ২০১৬

সরকারের ভরসা সঞ্চয়পত্র

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ চলতি ২০১৫-১৬ অর্থবছরের প্রথম দশ মাসে (জুলাই-এপ্রিল) সঞ্চয়পত্র থেকে সরকার নিট ঋণ নিয়েছে ২৬ হাজার ৪৯২ কোটি টাকা। সর্বশেষ এপ্রিল মাসে এ খাত থেকে নিট ঋণ এসেছে তিন হাজার ৩০৪ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটে ঘাটতি অর্থায়নের জন্য ব্যাংকবহির্ভূত উৎস থেকে ঋণ নেয়ার নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা ১৮ হাজার কোটি টাকার মধ্যে সঞ্চয়পত্র থেকে নিট ঋণ নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৫ হাজার কোটি টাকা। সংশোধিত বাজেটে এ খাত থেকে ঋণ নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা বাড়িয়ে ২৮ হাজার কোটি টাকা করা হয়েছে। ব্যাংকবহির্ভূত অন্যান্য উৎস থেকে ঋণ নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা ৫০০ কোটি টাকা কমিয়ে দুই হাজার ৫০০ কোটি টাকা করা হয়েছে। সঞ্চয় অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, অর্থবছরের প্রথম দশ মাসে দেশে কার্যরত ব্যাংক ও অন্যান্য সরকারী প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে মোট ৪৫ হাজার কোটি টাকারও বেশি সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে। এই সময়ের মধ্যে আগে বিক্রি হওয়া সঞ্চয়পত্রের নগদায়নের ফলে যে পরিমাণ অর্থ তুলে নেয়া হয়েছে, তা মোট বিক্রি থেকে বাদ দিয়ে নিট ঋণ দাঁড়িয়েছে ২৬ হাজার ৪৯২ কোটি টাকা। সঞ্চয়পত্র নগদায়নের ক্ষেত্রে গ্রাহকদের বিনিয়োগ করা অর্থের আসলের সঙ্গে নির্দিষ্ট হারে সুদ পরিশোধ করে সরকার। বাজেট ঘাটতি মেটাতে দেশী-বিদেশী উভয় উৎস থেকেই ঋণ নিয়ে থাকে সরকার। চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটে নির্ধারিত উন্নয়ন ও অনুন্নয়ন ব্যয় বাবদ দুই লাখ ৯৫ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করলেও প্রত্যাশিত রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা এর তুলনায় কম হওয়ায় বাকি অর্থের সংস্থানের জন্য অনুদান ছাড়া ৮৬ হাজার ৬৫৭ কোটি টাকা ঋণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল সরকার। সংশোধিত বাজেটে ঘাটতি অর্থায়ন কিছুটা বেড়ে ৮৭ হাজার ১৬৫ কোটি টাকা হয়। বিশাল এই ঘাটতি মেটাতে মূল বাজেটে বিদেশী ঋণ নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ২৪ হাজার ৩৩৫ কোটি টাকা। সংশোধিত বাজেটে সেটা কমিয়ে ১৯ হাজার ৯৬৩ কোটি টাকা করা হয়। তা ছাড়া অভ্যন্তরীণ ঋণের মধ্যে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ঋণ নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩৮ হাজার ৫২৩ কোটি টাকা। তবে এ অর্থবছরে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে সরকারের ঋণের তেমন প্রয়োজন না পড়ায় সংশোধিত বাজেটে লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে ৩১ হাজার ৬৭৫ কোটি টাকা করা হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায়, অর্থবছরের জুলাই থেকে মার্চ পর্যন্ত সময়ে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে সরকার যে পরিমাণ ঋণ নিয়েছে তার থেকে বেশি পরিশোধ করেছে। ফলে সরকারের নিট ঋণ কমেছে ১১ হাজার ৮৬৭ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে বাজেটে ব্যাংকবহির্ভূত উৎস থেকে ঋণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৮ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে সঞ্চয়পত্র থেকে নিট ঋণ নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৫ হাজার কোটি টাকা। ব্যাংকবহির্ভূত ‘অন্যান্য’ উৎস থেকে নেয়ার কথা ছিল তিন হাজার কোটি টাকা। সংশোধিত বাজেটে ব্যাংকবহির্ভূত ঋণের লক্ষ্যমাত্রা ১৮ হাজার কোটি থেকে বাড়িয়ে ৩০ হাজার ৫০০ কোটি টাকা করা হয়। যার মধ্যে কেবল সঞ্চয়পত্র থেকেই অর্থবছরের দশ মাসে সাড়ে ২৬ হাজার কোটি টাকা নিট ঋণ চলে এসেছে। অর্থনীতি বিশ্লেষকরা বলছেন, সঞ্চয়পত্রের সুদের হার বেশি হওয়ায় বিক্রি হু হু করে বেড়ে চলেছে। এর ফলে সরকারের সুদব্যয়ও বাড়ছে। বর্তমানে পাঁচ বছর মেয়াদী পারিবারিক সঞ্চয়পত্রে ১১ দশমিক ৫২ শতাংশ, পাঁচ বছর মেয়াদী পেনশনার সঞ্চয়পত্রে ১১ দশমিক ৭৬ শতাংশ, তিন বছর মেয়াদী তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্রে ১১ দশমিক ৪ শতাংশ, তিন বছর মেয়াদী ডাকঘর সঞ্চয়পত্রের ১১ দশমিক ২৮ শতাংশ এবং পাঁচ বছর মেয়াদী বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্রে ১১ দশমিক ২৮ শতাংশ হারে সুদ পাওয়া যাচ্ছে। অর্থনীতির গবেষক জায়েদ বখত বলেন, সাধারণ মানুষের বিনিয়োগের অন্য সব পথ প্রায় রুদ্ধ হয়ে গেছে বলা চলে। ব্যাংকে টাকা রাখলে ৭ থেকে ৮ শতাংশ সুদ পাওয়া যায়। শেয়ারবাজারের অবস্থা তো দিন দিন আরো খারাপ হচ্ছে। তাই বেশি মুনাফা পাওয়ায় সবচেয়ে বেশি নিরাপদ বিনিয়োগ সঞ্চয়পত্রের দিকেই ঝুঁকছে মানুষ। বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান বিআইডিএস’র ওই গবেষক বলেন, সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ থেকে ঋণ করাই সরকারের একমাত্র উদ্দেশ্য নয়। সরকার এর মাধ্যমে স্বল্প আয়ের মানুষদের সঞ্চয়মুখী করতে চেষ্টা করছে। তবে এ খাতের সুদের হার বেশি। তা ছাড়া এ খাতে অনেক অপ্রদর্শিত অর্থও ঢুকে পড়ছে। যেগুলো ভালভাবে দেখভাল করা উচিত।
×