ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

গোলাম সারোয়ার

জনগণ সকল ষড়যন্ত্র রুখে দাঁড়াবে

প্রকাশিত: ০৪:০৩, ২২ জুন ২০১৬

জনগণ সকল ষড়যন্ত্র রুখে দাঁড়াবে

যে কোন রাষ্ট্রের অন্তর্নিহিত শক্তি হলো তার জনগণ । জনগণ ঘুরে দাঁড়ালে রাষ্ট্রও ঘুরে দাঁড়াবে যে কোন ষড়যন্ত্রের প্রতিকূলে। মাদারীপুরে কলেজ শিক্ষক রিপন চক্রবর্তীকে হত্যা চেষ্টার সময় জনগণ ধাওয়া করে এক জঙ্গীকে ধরে ফেলে। এটি অবশ্যই একটি প্রণিধানযোগ্য সামাজিক অগ্রগতি, জনগণের রুখে দাঁড়ানোর প্রতীক। আরেক অভাবনীয় ঘটনা ঘটে গেছে বাংলাদেশে। আর তা হলো লাখো আলেমের জঙ্গীবিরোধী ফতোয়া। ধর্মীয় উপাসনালয়ে হামলা, ইসলামসহ অন্যান্য ধর্মের মানুষকে হত্যা করে দেশে জঙ্গীদের উপস্থিতি প্রমাণ করার চেষ্টা হচ্ছিল ইদানীং। উদ্দেশ্য পরিষ্কার, রাষ্ট্রকে দুর্বল করা। এই অপপ্রচার প্রতিরোধে দেশের ১ লাখ ১ হাজার ৫২৪ জন ইসলামী চিন্তাবিদ, মুফতি, আলেম জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে ফতোয়ায় স্বাক্ষর করেছেন। এসব ফতোয়া মানুষের মাঝে ছড়িয়ে দিতে ১ কোটি কপি করা হচ্ছে। এতে করে ক্রমান্বয়ে সকল মানুষের মাঝে জঙ্গীবাদবিরোধী বার্তা পৌঁছে যাবে। ফতোয়ায় পরিষ্কার করে বলা হয়েছে, এসব হত্যাকাণ্ড জিহাদের অংশ নয়, বরং এটা সন্ত্রাস, অবৈধ ও মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ। ইদানীং ধর্মের সঙ্গে জঙ্গীবাদকে প্রায় জড়িয়ে ফেলা হয়েছে। তার প্রতিরোধে আলেম সমাজ এগিয়ে আসায় তাদের অভিবাদন জানাতে হয়। এটি সম্ভবত পৃথিবীতে প্রথম কোন ঘটনা যে, কোন রাষ্ট্রের লাখো আলেম ধর্মের নামে অপব্যাখ্যা দিয়ে নিরীহ মানুষ হত্যাকে অধর্ম বলে প্রতিবাদ করে এগিয়ে এলেন। আমরা বিবেচনায় রাখব, যে আলেমরা উক্ত ফতোয়ায় স্বাক্ষর করেছেন তাদের অনুসারী এ দেশে আরও লাখো কোটি আলেম ও ধর্মপ্রাণ আছেন। জঙ্গীবাদকে ধর্মের সঙ্গে একাকার করে দেয়া হলেও বিশ্বব্যাপী জঙ্গীবাদের জন্মের আঁতুড়ঘর হলো সিআইএ ও মোসাদ এবং তাদের প্রথম গবেষণা ক্ষেত্র হলো আফগানিস্তান। ইতিহাসের সত্য হলো গত শতাব্দীতে সোভিয়েত ইউনিয়ন আফগানিস্তান দখল করে। তারপর আফগানরা মুক্ত হতে লড়াইয়ে নামে। সে সময় পৃথিবী দুই ব্লকে বিভক্ত। এক ভাগে পুঁজিবাদ, নেতৃত্বে যুক্তরাষ্ট্র। আরেক ভাগে সমাজতন্ত্র, নেতৃত্বে সোভিয়েত ইউনিয়ন। এই দুই দর্শনের দ্বন্দ্ব তখন পৃথিবীর সব সংঘাতের নিয়ামক। আবার দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইসরাইল অন্যায়ভাবে আমেরিকার সাহায্যে মধ্যপ্রাচ্যের ফিলিস্তিনে গেঁড়ে বসে। তারা যুক্তরাষ্ট্র এবং ব্রিটেনের সাহায্যে ইহুদী রাষ্ট্রের গোড়াপত্তন করে। কিন্তু জবরদখল করে রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করার পরেও ইসরাইল কখনও রাষ্ট্রটি নিয়ে স্বস্তিতে ছিল না। তারা সব সময় উচ্ছেদের আশঙ্কা করত। এই অবস্থায় তারা দুটি কৌশল বেছে নেয়। একদিকে পৃথিবীকে সব সময় সংঘাতে ব্যতিব্যস্ত রাখার কৌশল, অপরদিকে বিশ্বের মুসলমানদের বিশ্ববাসীর সামনে উগ্র-জঙ্গীবাদী হিসেবে প্রমাণ করার কৌশল। উদ্দেশ্য, তাতে মুসলিমরা বিশ্বব্যাপী সহমর্মিতা হারাবে। কারণ চূড়ান্ত বিচারে ইহুদীদের সঙ্গে ভূমি নিয়ে মুসলিমদেরই সংঘাত। আবার বিশ্বের সব মানুষ যদি শান্তি ও স্বস্তিতে থাকে তাহলে সবাই ফিলিস্তিনে ইসরাইলের দখলদারিত্বের বিচার করতে বসবে। সে ভয়ে তারা একের পর এক সংঘাত সৃজন করে। সে মোতাবেক যার যার স্বার্থ বিবেচনায় সিআইএ এবং মোসাদ সম্মিলিতভাবে আফগানিস্তানে সোভিয়েতবিরোধী অপারেশন সাইক্লোনের মাধ্যমে যুদ্ধ পরিচালনা করে এবং সোভিয়েতদের আফগানিস্তান ত্যাগে বাধ্য করে। আজকের বিশ্বে জঙ্গীবাদের উত্থান ওই আফগান যুদ্ধের ফল। সিআইএর সদর দফতর ল্যাংগলে থেকে আমেরিকা আর ইসরাইল উস্কানি দিয়ে, অর্থ দিয়ে জঙ্গীবাদকে টিকিয়ে রেখেছে। বর্তমান বিশ্বের যত সমস্যা সব মূলত মধ্যপ্রাচ্য থেকে সৃজনকৃত এবং তা আসছে ইসরাইলের মাথা থেকে। বাংলাদেশ বিশ্বের বাইরের কোন দেশ নয়। বর্তমানে বাংলাদেশেও কিছু বিভ্রান্ত তরুণ জঙ্গীবাদের দিকে ঝুঁকে পড়েছে। তবে বাংলাদেশের সমাজ জঙ্গীবাদকে কখনও প্রশ্রয় দেয়নি। মোসাদকে আখ্যায়িত করা হয় বিশ্বের সবচেয়ে নিখুঁত গুপ্তহত্যার মেশিন হিসেবে। ইহুদী রাষ্ট্রটিকে বাংলাদেশ এখনও স্বীকৃতি দেয়নি। সম্প্রতি বিএনপির এক নেতার একজন ইহুদী নেতার সঙ্গে আঁতাত করার অভিযোগ উঠেছে। কথা উঠেছে তারা ক্ষমতায় আসলে ইসরাইলকে স্বীকৃতি দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। তাছাড়া বাংলাদেশের জাতশত্রু পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইয়ের সঙ্গে মোসাদের যোগাযোগ আছে এবং তা ওই আফগান যুদ্ধ থেকে। আমরা মনে করি ইসলাম ধর্মের খোলস ব্যবহার করে জঙ্গীবাদ চালিয়ে যাওয়া হলেও ইসলাম শান্তির ধর্ম। মাদারীপুরে জঙ্গীকে যারা ধরেছিল তারাও মুসলমান। বিশ্ব দেখেছে লক্ষাধিক আলেম জঙ্গীবিরোধী ফতোয়া দিলেন। তার মানে বাংলাদেশের সমাজ জঙ্গীবাদের পক্ষে নয়। কিছু স্বার্থান্বেষী মহলের প্রচার-প্রচারণায় মনে হতে পারে সকল অশান্তির মূলে বুঝি মুসলমানরা। কিন্তু প্রকৃত ব্যাপার হলো এই পৃথিবীতে বর্তমানে সবচেয়ে বেশি নিগৃহীত হচ্ছে মুসলমানরা। আজকের মধ্যপ্রাচ্য হচ্ছে খোদ হাবিয়া দোজখ। মানুষ প্রাণ হারাচ্ছে বেঘোরে। অথচ এসব যুদ্ধের পরিকল্পনা হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র, তার সামরিক জোট আর ইসরাইলের মাথা থেকে। গুটিকয়েক জঙ্গীর প্রভাবেই আজকের পৃথিবী নাকাল প্রায়। এই অবস্থায় দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের মোকাবেলা করতে হলে সমাজের ভেতর থেকে জঙ্গীবিরোধী প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। সে কাজে বাংলাদেশের আপামর জনতা আর আলেম সমাজ আজ ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। এ আন্দোলন সমুন্নত রাখতে হবে। তাহলেই বাংলাদেশ যে কোন হুমকি রুখে দেবে। লেখক : ব্যাঙ্কার
×