শুধুমাত্র মেধা ও পরিশ্রমকে পুঁজি করে প্রচণ্ড ইচ্ছাশক্তি আর একাগ্রতা দিয়ে সফলতা পাওয়া যায়, এটা আজ অবাস্তব নয়। আর সেই সফলদের পদাঙ্ক অনুসরণ করেই ইতিহাসের তালিকায় উঠে এসেছে সাড়া জাগানো এক যুবকের নাম। ভারতের চেন্নাইয়ের মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে কর্পোরেট দুনিয়ার শীর্ষে উঠে আসার এ গল্প কল্পনাকেও হার মানায়! গুগলের সিইও হিসেবে নিয়োগ পাওয়া সেই আশ্চর্য যুবক হলেন সুন্দর রাজন পিচাই।আত্ম উন্নয়নের জন্য তার একটি তত্ত্ব রয়েছে। ডি-প্রজন্মের পাঠকের কাছে সে তত্ত্ব বা থিওরি তুলে ধরেছেন-
মুসান্না সাজ্জিল
একটি রেস্তরাঁয় একদিন হঠাৎ এক তেলাপোকা আগত এক মহিলা ক্রেতার গায়ে উড়ে বসল। এ ঘটনায় ভীত হয়ে মহিলা চিৎকার-চেঁচামেচি শুরু করলেন। মহিলার চেহারায় তখন আতঙ্কের ছাপ। ঘটনার আকস্মিকতায় তিনি রীতিমতো দাপাদাপি শুরু করলেন এবং হাত দুটো দিয়ে চেষ্টা করতে লাগলেন শরীর থেকে তেলাপোকাটি তাড়াতে। তার এই আতঙ্ক সংক্রামণের মতো হোটেলে আগত অন্য অতিথিদের মাঝে ছড়িয়ে পড়ল। সকলেই তেলাপোকার আতঙ্কে ভীতসন্ত্রস্ত। অবশেষে মহিলা তার শরীর থেকে তেলাপোকাটি ঝেড়ে ফেলতে সক্ষম হন। কিন্তু ... সেই তেলাপোকা গিয়ে পড়ল তার সঙ্গে আসা আরেকজন মহিলার গায়ে। একই কাহিনীর অবতারণা ঘটল। সে মহিলাও একই রকম চিৎকার ও চেঁচামেচি শুরু করলেন। এসব কাহিনী দেখে তাদের উদ্ধার করতে হোটেলের বয় এগিয়ে আসলো। কিন্তু, তেলাপোকা উল্টো তার গায়ে এসে পড়ল। হোটেল বয় দৃঢ় ও স্থিরভাবে দাঁড়িয়ে রইলেন এবং তার গায়ে ওঠা তেলাপোকার গতিবিধি লক্ষ্য করতে লাগলেন। যখন সে কিছুটা আত্মবিশ্বাসী হলো হাত দিয়ে তেলাপোকাটি জানালার বাইরে ছুড়ে ফেলে দিল। কফিতে চুমুক দিতে দিতে আমি ঘটনাটি লক্ষ্য করলাম এবং আমার মনে কিছু ভাবনার উদ্ভব হলো।
রেস্তরাঁয় আগত অতিথিদের এমন ভীতসন্ত্রস্ত ব্যবহারের জন্য কি তেলাপোকা দায়ী। যদি তাই হতো তবে হোটেল বয়টি কেন বিরক্ত হয়নি। সে কেন শান্ত ছিল। সে কোন রকম চেঁচামেচি ছাড়াই কিভাবে তেলাপোকাটি নিখুঁতভাবে বাইরে ছুড়ে ফেলল।
সত্যিকার অর্থে তেলাপোকাটি তাদের বিরক্ত কিংবা অস্বস্তির জন্য দায়ী ছিল না বরং তেলাপোকার কারণে তাদের মাঝে যে বিরক্তিবোধ তা নিয়ন্ত্রণ করতে না পারার জন্যই এই গ-গোল। পরে আমি উপলব্ধি করলাম অফিসে কিংবা বাসায় আমার বস, পিতা ও স্ত্রীর চিৎকার আমাকে বিরক্ত করে না বরং তাদের চিৎকারে যে বিরক্তির জন্ম দেয় তা নিয়ন্ত্রণ করতে না পারার জন্যই এত তিক্ততা।
এমন কথা প্রযোজ্য রাস্তার ট্রাফিক জ্যামের ক্ষেত্রে। ট্রাফিক জ্যাম আমাকে বিরক্ত করে না বরং ট্রাফিক জ্যামের কারণে যে বিরক্তির উদ্রেগ হয় তা নিয়ন্ত্রণ করতে না পারার জন্যই আমার বিরক্ততা। জীবনে সমস্যা থাকবেই। কিন্তু সমস্যা দেখে আমরা যে প্রতিক্রিয়া দেখাই, তাই আমাদের জীবনকে বিশৃঙ্খল করে তোলে।
এই গল্পের মাধ্যমে কিছু শিক্ষা পেয়েছি
আমি বুঝেছি, আমাদের জীবনে প্রতিক্রিয়া দেখানো উচিত নয়। বরং সব সময় সমস্যা দেখলে সাড়া দেয়া উচিত। রেস্তরাঁয় মহিলাটি প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিল কিন্তু হোটেলবয় সমস্যাটিতে সাড়া দিয়েছিল। প্রতিক্রিয়া সব সময় প্রবৃত্তিগত আচরণ, অন্যদিকে কোন সমস্যায় সাড়া দেয়া চিন্তাশীলতার লক্ষণ। জীবন হলো উপলব্ধির চমৎকার একটি পথ। যে মানুষটি জীবনে আনন্দিত বা সুখী, তার জীবনের সবকিছুই সঠিক নয়। বরং সে এই কারণে সুখী কারণ জীবনের প্রতি তার প্রতিটি পদক্ষেপ সঠিক।
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: