ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

গ্রাম পর্যায়ে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবা খুব শীঘ্রই

প্রকাশিত: ০৬:২১, ২১ জুন ২০১৬

গ্রাম পর্যায়ে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবা খুব শীঘ্রই

ফিরোজ মান্না ॥ চলতি বছর সারাদেশে গ্রাম পর্যায়ে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবা পৌঁছে দেয়ার জন্য ‘টেলিযোগাযোগ নেটওয়ার্ক বিস্তার’ নামে প্রকল্পটির কাজ শেষ হচ্ছে। বিটিসিএলের এই প্রকল্পের আওতায় ৭ লাখ ৮ হাজার ৩০ কিলোমিটার ফাইবার কেবল স্থাপন করা হবে। এর মধ্যে ৫ হাজার কিলোমিটার কেবল স্থাপনের কাজ শেষ হয়েছে। বাকি কাজ এ বছরের শেষনাগাদ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৪৯৯ কোটি ১৪ লাখ টাকা। গ্রাম ও শহরের মধ্যে পার্থক্য ঘুচাতে বিটিসিএলের এই প্রকল্পে (এনএসএন ভিত্তিক টেলিকমিউনিকেশন নেটওয়ার্ক) চীন অর্থ সহযোগিতা দিচ্ছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে গ্রামের মানুষও ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট ব্যবহার সুবিধা পাবেন। বর্তমানে মোবাইল অপারেটররা সারাদেশে ওয়্যারলেস নেটওয়ার্কের মাধ্যমে ইন্টারনেট সেবা দিচ্ছে। এই সেবা অনেক ব্যয়বহুল হওয়ায় গ্রামের মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার থেকে শহরের মানুষের চেয়ে অনেকাংশে পিছিয়ে রয়েছেন। বিটিসিএল সূত্র জানিয়েছে, সারাদেশকে ইন্টারনেট সুবিধার আওতায় আনতে ‘অপটিক্যাল ফাইবার নেটওয়ার্ক ডেভেলপমেন্ট এ্যাট উপজেলা লেভেল প্রজেক্ট’ নামের একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন কোম্পানি লিমিটেড (বিটিসিএল)। এ প্রকল্পের আওতায় ৭ বিভাগের ৬৪ জেলার ২৯০টি উপজেলায় অপটিক্যাল ফাইবার কেবল বসানো হচ্ছে। সরকারী অর্থায়নে এই প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে ৪৯৯ কোটি ১৪ লাখ টাকা। অপটিক্যাল ফাইবার কেবল সংযোগ স্থাপিত হলে গ্রাহকরা নিরবচ্ছিন্নভাবে ইন্টারনেট সুবিধা পাবেন। তখন শহর ও গ্রামের বৈষম্য অনেকাংশে কমে যাবে। গ্রামে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সুবিধা না দিলে শহরের মানুষের চেয়ে তারা পিছিয়েই থাকবে। ইন্টারনেট এখন একটি মৌলিক অধিকারের কাছাকাছি জায়গায় অবস্থান করছে। তাই এই সেবা সবার জন্য সমানভাবে হতে হবে। প্রকল্পের এক কর্মকর্তা জানান, প্রকল্পের কাজ দ্রুত এগিয়ে নিতে কাজ শুরু করা হয়েছে। গত বছরের জুলাই মাসে প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে। এই প্রকল্পের কাজ শেষ করার সময় সীমা ২০১৬ সালের ৩০ জুন। কিন্তু নানা কারণে প্রকল্প বাস্তবায়নের মেয়াদ কিছুটা বেড়েছে। প্রকল্পের আওতায় রয়েছে ঢাকা বিভাগের ১৬ জেলার ৬৭ উপজেলায়, চট্টগ্রাম বিভাগের ১১ জেলার ৫৯ উপজেলা, রাজশাহী বিভাগের ৮ জেলার ৩৮ উপজেলা, খুলনা বিভাগের ১০ জেলার ৩৭ উপজেলা, রংপুর বিভাগের ৮ জেলার ৪২ উপজেলায়, সিলেট বিভাগের ৪ জেলার ২৬ উপজেলা এবং বরিশাল বিভাগের ৬ জেলার ২১ উপজেলায় অপটিক্যাল ফাইবার কেবল সংযোগ স্থাপন করা হবে। জানা গেছে, প্রকল্পের কেবল কেনা হবে খুলনা কেবল কোম্পানি থেকে। তবে যন্ত্রপাতি স্থাপনের কাজ করবে বিদেশী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। মাটি খননের কাজ করবে স্থানীয় ঠিকাদার। ৭ লাখ ৮ হাজার ৩০ মাইল এলাকায় অপটিক্যাল ফাইবার কেবল বসানো হবে। এই অপটিক্যাল ফাইবার উপজেলা এক্সচেঞ্জের সঙ্গে জেলা এক্সচেঞ্জকে সংযুক্ত করবে। উপজেলা এক্সচেঞ্জ থেকে প্রতিটি ইউনিয়নে যে কোনও সময় এ নেটওয়ার্ক বিস্তার করা যাবে। বেসরকারী অপারেটররাও এই অপটিক্যাল ফাইবার কেবলের সংযোগ সুবিধা নিতে পারবে। সারাদেশে ইতোমধ্যে প্রায় পাঁচ হাজার কিলোমিটারের বেশি অপটিক্যাল ফাইবার কেবল স্থাপনের কাজ শেষ হয়েছে। ৪২ জেলার দেড় শতাধিক নোডে মোট ৪৬ হাজার ক্ষমতাসম্পন্ন এডিএসএল এক্সেস নেটওয়ার্ক তৈরি করা হয়েছে। ২০১২ সালের জুন পর্যন্ত বিটিসিএলের ৭৪৭টি এক্সচেঞ্জের (৬৪ জেলার) অপটিক্যাল ফাইবার কেবলের সঙ্গে সংযোগ ঘটেছে। দেশে টেলিফোনের সংযোগ ক্ষমতা ১৪ লাখের বেশি হলেও এই সুবিধার আওতায় আসেনি বেশিরভাগ টেলিফোন। ইন্টারনেট সেবা দেয়ার যথেষ্ট সুযোগ সৃষ্টি হলেও সেই সেবা থেকে গ্রাহক বঞ্চিত হচ্ছে। ফলে কম দামে গ্রাহক ইন্টারনেট সেবা পাচ্ছেন না। বিটিসিএল জানিয়েছে, টেলিফোন, এডিএসএল, ইন্টারনেট ব্যান্ডউইথের চার্জ কমিয়ে আনা হয়েছে। ব ্যয়বহুল কপার কেবলের বদলে অপটিক্যাল ফাইবার ব্যবহার করে খরচ কমানোর পদক্ষেপ হাতে নেয়া হয়েছে। এরই মধ্যে দেশের বিভিন্ন স্থানে মোট সাড়ে চার হাজার কিলোমিটার ফাইবার কেবল লাইন স্থাপনের কাজ শেষ করা হয়। বিটিসিএলের অপটিক্যাল ফাইবার কেবলের সংযোগের কারণেই এসব করা সম্ভব হয়েছে। তবে এক হাজার ইউনিয়নে সংযোগ প্রকল্পটি বার বার পিছিয়ে যাচ্ছে টাকার অভাবে। ইউনিয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে গ্রাম পর্যায়ে ইন্টারনেট সেবা পৌঁছে যেত। বিটিসিএলের এক কর্মকর্তা বলেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়নের সব প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করা হয়েছে। এখন টাকা পেলেই প্রকল্পের কাজ শুরু করা যাবে। তবে বিটিসিএল এর টার্গেট রয়েছে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই ইউনিয়ন প্রকল্পের কাজ শেষ করা হবে। এক হাজার চারটি ইউনিয়নে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট পৌঁছে দেয়া হয়েছে। পর্যায়ক্রমে দেশের সব ইউনিয়নে উচ্চগতির ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট লাইন স্থান করা হবে।
×