ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

বঙ্গবন্ধু মেডিক্যালে অপূর্ণাঙ্গ জোড়া শিশুর সফল অস্ত্রোপচার

প্রকাশিত: ০৫:৫০, ২১ জুন ২০১৬

বঙ্গবন্ধু মেডিক্যালে অপূর্ণাঙ্গ জোড়া শিশুর সফল অস্ত্রোপচার

জনকণ্ঠ রিপোর্ট ॥ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি অপূর্ণাঙ্গ জোড়া শিশুর (অপূর্ণাঙ্গ যমজ) অস্ত্রোপচার সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের কেবিন ব্লকের ৯ তলায় আধুনিক অপারেশন থিয়েটার কমপ্লেক্সে সোমবার সকাল নয়টায় শুরু হওয়া অস্ত্রোপচার সম্পন্ন হয় আড়াই ঘণ্টায় অর্থাৎ সকাল এগারোটা ৩০ মিনিটে। অপূর্ণাঙ্গ এ জোড়া শিশুর অস্ত্রোপচারে গঠিত ১৮ সদস্যবিশিষ্ট মেডিক্যাল টিম অস্ত্রোপচারে অংশ নেয়। ১৮ সদস্য বিশিষ্ট মেডিক্যাল টিমের নেতৃত্বে ছিলেন পেডিয়াট্রিক সার্জারি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডাঃ মোঃ রুহুল আমিন। প্রযুক্তির সহায়তায় প্রজেক্টরের মাধ্যমে অস্ত্রোপচারের ঘটনাটি স্ক্রিনে সরাসরি দেখানোর ব্যবস্থা করা হয়। অস্ত্রোপচার সম্পন্ন হওয়ার পর পেডিয়াট্রিক সার্জারি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডাঃ রুহুল আমিন জানান, অপূর্ণাঙ্গ জোড়া শিশুর অস্ত্রোপচার সফল হয়েছে। পূর্ণাঙ্গ শিশুটি শঙ্কা মুক্ত আছে। তবে আগামী ৪৮ ঘণ্টা পোস্ট আপারেটিভ রুমে নিবিড় পর্যবেক্ষণে থাকবে। এ্যানেসথেশিয়া, এনালজেসিয়া এন্ড ইনটেনসিভ কেয়ার মেডিসিন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডাঃ দেবব্রত বণিক জানান, অস্ত্রোপচারের পর পূর্ণাঙ্গ শিশুটি ভাল আছে। শিশুটির জ্ঞান ফিরেছে। প্রয়োজনে শিশুটি তাঁর মায়ের বুকের দুধও পান করতে পারবে। অপূর্ণাঙ্গ জোড়া শিশুর অস্ত্রোপচার সুন্দরভাবে সম্পন্ন ও সফল হওয়ায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কামরুল হাসান খান, শিশু সার্জারি বিভাগ, এনেসথেশিয়া, এনালজেসিয়া এ্যান্ড ইনটেনসিভ কেয়ার মেডিসিন বিভাগ ও নবজাতক বিভাগসহ সংশ্লিষ্ট বিভাগের চিকিসকবৃন্দ ও সহায়ক স্টাফদের ধন্যবাদ জানিয়েছে। এদিকে অপূর্ণাঙ্গ জোড়া শিশুর মা হীরামনি ও বাবা মোঃ জাকারিয়া তাদের সন্তানের অস্ত্রোপচার সফল হওয়ায় তারা খুশি। শিশুটির মা হীরামনি বলেন, এমন অপূর্ণাঙ্গ জোড়া বাচ্চার চিকিৎসা আছে তা ভাবতেই অবাক লাগে। অপারেশন সফল হওয়ায় মহান আল্লাহ্তালার কাছে শুকরিয়া আদায় করছি। আমার ছেলে যাতে দ্রুত আরোগ্যলাভ করে সেজন্য আল্লাহ্তায়ালার কাছে এবং সকলের কাছে দোয়া কামনা করছি। একই সঙ্গে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকদের ধন্যবাদ জানাই। অপূর্ণাঙ্গ জোড়া শিশুর চিকিৎসা ও অস্ত্রোপচারের সকল ব্যয়ভার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বহন করছে। ১৮ সদস্যের মেডিক্যাল টিমের মধ্যে উপদেষ্টা সার্জন হলেনÑপেডিয়াট্রিক বা শিশু সার্জারি বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডাঃ শফিকুল হক, অধ্যাপক ডাঃ মোঃ মতিউর রহমান ও অধ্যাপক ডাঃ মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম। সার্জিক্যাল টিমের চিকিৎসকরা হলেন- পেডিয়াট্রিক সার্জারি বিভাগের চেয়ারম্যানÑ অধ্যাপক ডাঃ মোঃ রুহুল আমিন, অধ্যাপক ডাঃ মোঃ তোসাদ্দেক হোসেন সিদ্দিকী, সহযোগী অধ্যাপক ডাঃ কে এম দিদারুল ইসলাম, ডাঃ দিনেশ প্রসাদ কৈরালা, ডাঃ একেএম খায়রুল বাসার, ডাঃ নূর মোহাম্মদ ও ডাঃ মাফিয়া আফসিন লাজ। এ্যানেসথেসিয়া টিমের চিকিৎসকরা হলেনÑ এ্যানেসথেশিয়া, এনালজেসিয়া এ্যান্ড ইনটেনসিভ কেয়ার মেডিসিন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডাঃ দেবব্রত বণিক, সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডাঃ মোঃ আব্দুল হাই, সিনিয়র কনসালটেন্ট ডাঃ মনজুরুল হক লস্কর, ডাঃ মোঃ আব্দুল আলীম ও ডাঃ সাফিনা সুলতানা সম্পা এবং নবজাতক বিভাগের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের মধ্যে রয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপ-উপাচার্য ও নবজাতক বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডাঃ মোহাম্মদ সহিদুল্লা, নবজাতক বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডাঃ মোঃ আব্দুল মান্নান ও সহযোগী অধ্যাপক ডাঃ সঞ্জয় কুমার দে। আরেকটি শিশুর শরীরের প্রায় অর্ধেক অংশ নিয়ে জন্মানো মোহাম্মদ আলী নামের পূর্ণাঙ্গ শিশুটি জন্মায় ঐতিহাসিক ৭ মার্চ ২০১৬ নতুন ইতিহাস নিয়ে। তা হলো সে একটি পূর্ণাঙ্গ শিশু কিন্তু তার উপর ভর করে আছে আর একটি শিশুর পেটের নিচের অর্ধেকসহ শরীরের নি¤œাঙ্গ। উর্ধাঙ্গর মাথা, বুক ও দু’ হাত নেই অর্থাৎ আংশিক বা অপূর্ণাঙ্গ শিশুটি তার আংশিক অস্তিত্ব নিয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ শিশুর উপর ভর করে বেঁচে আছে। চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষা একে বলা হয়, প্যারাসাইটিক টুইন বা অপূর্ণাঙ্গ যমজ। প্যারাসাইটিক টুইন সমস্যা নিয়ে জন্মানো এ ঐতিহাসিক শিশুটির স্বাভাবিক জন্ম দেন বাগেরহাটের হীরামনি। এর আগে শিশুটির মা হীরামনি তিনটি সুস্থ স্বাভাবিক কন্যা সন্তানের জন্ম দিয়েছেন। মোহাম্মদ আলী হলো তাঁর চতুর্থ সন্তান। শিশুটির বাবার নাম মোঃ জাকারিয়া। অপূর্ণাঙ্গ যমজ শিশুটি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিশু সার্জারি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডাঃ মোঃ রুহুল আমিনের অধীনে ভর্তি রয়েছে। শিশুটিকে অধ্যাপক ডাঃ মোঃ রুহুল আমিনের অধীনে ভর্তি করানো হয়, শিশুটির জন্মের তৃতীয় দিন অর্থাৎ ১০ মার্চ ২০১৬ । শিশুটির বয়স এখন ৩ মাস ১৩ দিন। অপূর্ণাঙ্গ যমজ শিশুটির চিকিৎসকার বিষয়ে শিশু সার্জারি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডাঃ মোঃ রুহুল আমিন জানান, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডাঃ কামরুল হাসান খান প্যারাসাইটিক টুইন সমস্যা নিয়ে জন্মানো শিশুটির চিকিৎসার ব্যয়ভার বিশ্ববিদ্যালয় বহন করবে বলে আশ্বাস প্রদান করেছেন। উপাচার্যের আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে প্যারাসাইটিক টুইন সমস্যা নিয়ে জন্মানো শিশুটিকে অপূর্ণাঙ্গ শিশু থেকে আলাদা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে শিশু সার্জারি বিভাগ। উল্লেখ্য, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে শিশু সার্জারি বিভাগ অতীতেও এ ধরনের জটিল অস্ত্রোপচারের ক্ষেত্রে গৌরবোজ্জ্বল নেতৃত্বের ভূমিকা পালন করে আসছে। গত ২০০৮ সালে বহুল আলোচিত বন্যা ও বর্ষাকে মাত্র তিন মাস বয়সে শিশু সার্জারি বিভাগের তৎকালীন চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডাঃ মোঃ শফিকুল হকের নেতৃত্বে দীর্ঘ ৮ ঘণ্টাব্যাপী সফল অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে আলাদা করা হয়েছিল। তবে বর্ষার হৃদযন্ত্র বন্যার উপরে নির্ভরশীল থাকায় আলাদা করার পর বর্ষাকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি। বন্যা গত ২৪ মার্চ ২০১৬ ইং তারিখে আট বছর পূর্ণ করেছে।
×