ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

রূপপুর পরমাণু বিদ্যুতকেন্দ্রের লাইসেন্স দেয়া হচ্ছে

প্রকাশিত: ০৫:৪৯, ২১ জুন ২০১৬

রূপপুর পরমাণু বিদ্যুতকেন্দ্রের লাইসেন্স দেয়া হচ্ছে

রশিদ মামুন ॥ রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুতকেন্দ্র নির্মাণে লাইসেন্স দেয়া হচ্ছে। বাংলাদেশ পারমাণবিক শক্তি নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনকে এই লাইসেন্স প্রদান করবে। পারমাণবিক বিদ্যুতকেন্দ্র নির্মাণ কাজ শুরুর আগেই এ ধরনের লাইসেন্স প্রদান গুরুত্বপূর্ণ। এর মধ্যে দিয়ে আগামী বছর থেকে বিদ্যুতকেন্দ্রের আনুষ্ঠানিক নির্মাণ কাজ শুরুর অনুমোদন দেয়া হবে। বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তি মন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান এ প্রসঙ্গে সোমবার বিকেলে জনকণ্ঠকে বলেন, আমরা এর আগে ৬৩ ধরনের পরীক্ষা করেছি। মাটি, পানি, বায়ু, ভূমিকম্পসহ সকল বিষয় পরীক্ষা নিরীক্ষা করা হয়েছে। এসব পরীক্ষার পর রূপপুরকে পারমাণবিক বিদ্যুতকেন্দ্রর জন্য উপযুক্ত মনে করা হচ্ছে। এখন তাদের মূল কাজ শুরুর আগে একটি ‘গো এহেড’ বলে লাইসেন্স দিতে হয়। আজ সেই লাইসেন্স দেয়া হবে। সাম্প্রতিক সময়ে রূপপুর প্রকল্পের বাড়তি ব্যয়ের অভিযোগ প্রসঙ্গে বলেন, এ ধরনের অভিযোগ সঠিক নয়। রাশিয়া আমাদের কাছাকাছি সময়ে অন্যদেশের সঙ্গে করা চুক্তিগুলো আমাদের দেখিয়েছে। তারা আমাদের দাবির প্রেক্ষিতে বলছে আন্তর্জাতিক বাজারের তুলনায় কম দামে দেয়া সম্ভব নয়। আমরা এই মূল্যের মধ্যেই জেটি নির্মাণ, পরিবহন এবং এক হাজার ৬০০ কর্মীকে প্রশিক্ষণ দেয়া হবে অন্তর্ভুক্ত করতে অনুরোধ করেছি। তারা এতে সম্মত হয়েছে। যাতে আমাদের দেড় থেকে দুই বিলিয়ন ডলার সাশ্রয় হবে। চুক্তি অনুযায়ী ১২ দশমিক ৬৫ বিলিয়ন ডলার দেশীয় মুদ্র্ায় এক লাখ এক হাজার কোটি টাকায় রূপপুরে দুই হাজার ৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুতকেন্দ্রটি নির্মাণ করবে রাশিয়ান ফেডারেশন। চুক্তি অনুযায়ী বিদ্যুতকেন্দ্রটির প্রথম ইউনিট ২০২৩ সালের অক্টোবরে উৎপাদনে আসার কথা রয়েছে। অন্যদিকে এর এক বছর পর দ্বিতীয় ইউনিট ২০২৪ অক্টোবরে উৎপাদনে আসবে। কেন্দ্রটি ৫০ বছর ধরে বিদ্যুত উৎপাদন করবে। রূপপুর বিদ্যুতকেন্দ্রের সমীক্ষা শেষ হওয়ার পর আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থা (এইএইএ), ভারতের পারমাণবিক নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ এবং রাশিয়ান এ্যাটমিক এনার্জি রূপপুর পরিদর্শন করে স্বাধীনতা উত্তর ১৯৬১ সালে পরমাণু কেন্দ্র স্থাপনের উদ্যোগ নেয়ার পরে ১৯৬৩ সালে প্রস্তাবিত ১২টি এলাকার মধ্য থেকে বেছে নেয়া হয় রূপপুরকে। পরবর্তী সময়ে রূপপুর নিয়ে অনেক আলোচনা হলেও কার্যক্রম আর আগায়নি। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর পারমাণবিক বিদ্যুতকেন্দ্র স্থাপনের জন্য প্রায় ৫০ বছর আগের নেয়া উদ্যোগটি সক্রিয় করে তোলা হয়। দ্রুত পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্র স্থাপনের জন্য ২০১০ সালে সংসদে প্রস্তাব পাস করে গঠন করা হয় একটি জাতীয় কমিটি। পরবর্তীতে ২০১৩ সালের অক্টোবরে রূপপুরে এই বিদ্যুতকেন্দ্রের ভিত্তি স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গত আগস্ট মাসে পাবনার রূপপুরে বাংলাদেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুতকেন্দ্র পরিচালনায় কোম্পানি গঠন করতে সংসদে বিল পাস হয়। আইন অনুযায়ী, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুতকেন্দ্রের মালিকানা থাকবে বাংলাদেশ আণবিক শক্তি কমিশনের হাতে। আর কেন্দ্রটি পরিচালনার দায়িত্ব পাবে ‘নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্লান্ট কোম্পানি বাংলাদেশ’। চুক্তি অনুযায়ী বিদ্যুতকেন্দ্রটির নক্সা, যন্ত্রাংশ সরবরাহ, বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণ, উৎপাদন, নিশ্চয়তা বা গ্যারান্টি, পারমাণবিক জ্বালানি সরবরাহ, বিদ্যুতকেন্দ্র পর্যন্ত যন্ত্রাংশ পরিবহন এবং গ্যারান্টি পর্যায় পর্যন্ত বিভিন্ন সেবা প্রদানের কথা উল্লেখ করেছে। রাশিয়া এবং বাংলাদেশের মধ্যে ১৩ দফা আলোচনার ভিত্তিতে ৪৭টি অনুচ্ছেদ এবং ৫৭৩টি উপ অনুচ্ছেদের চুক্তিটি চূড়ান্ত করা হয়। চুক্তি অনুযায়ী রাশিয়া বিদ্যুতকেন্দ্রটি নির্মাণ এবং পরিচালনার জন্য দক্ষ জনবল সৃষ্টি করবে। বিদ্যুতকেন্দ্রটির প্রথম পর্যায়ের কাজ ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে শেষ হবে। এরপর মূল বিদ্যুতকেন্দ্রর নির্মাণ কাজ শুরু হবে। বিদ্যুতকেন্দ্রটির নক্সা প্রণয়নের কাজ শেষ করেছে এটমস্ট্রয়এক্সপোর্ট। চুক্তি বাস্তবায়নের সময়কাল সাত বছর ধরা হয়েছে। ঋণ পরিশোধের সময়কাল ২৮ বছর নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে ১০ বছর গ্রেস প্রিরিয়ড রয়েছে। ছয় মাসের লাইবরের সঙ্গে এক দশমিক ৭৫ শতাংশ যোগ করে ঋণের সুদের হার নির্ধারণ করা হবে। তবে কোন ক্রমেই বছরে চার ভাগের বেশি সুদের হার হতে পারবে না।
×