ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

তিস্তা নিয়ে মমতার সঙ্গে আলোচনা শীঘ্রই ॥ সুষমা স্বরাজ

প্রকাশিত: ০৫:৪৭, ২১ জুন ২০১৬

তিস্তা নিয়ে মমতার সঙ্গে আলোচনা শীঘ্রই ॥ সুষমা স্বরাজ

বিডিনিউজ ॥ তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি নিয়ে চূড়ান্ত সমঝোতার জন্য পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির সঙ্গে শীঘ্রই আলোচনা করতে যাচ্ছেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ। রবিবার নয়াদিল্লীতে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পশ্চিমবঙ্গে নির্বাচন থাকায় দীর্ঘদিন মমতার সঙ্গে এ নিয়ে কথা বলা যায়নি। সেই ব্যস্ততা মিটে গেছে, ভোটে জয়লাভ করে তিনি দ্বিতীয় বার ক্ষমতায় এসেছেন। তাই তিস্তা নিয়ে ত্রিপক্ষীয় সংলাপ শুরুর জন্য এটাই মোক্ষম সুযোগ। তিনটি পক্ষ হলো বাংলাদেশ, ভারত এবং পশ্চিমবঙ্গ সরকার। চুক্তি যদি ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে হয় তাহলে ত্রিপক্ষীয় আলোচনা কেন জানতে চাইলে সুষমা বলেন, তিস্তা নিয়ে তিন পক্ষের মতামত ও অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক ঐকমত্য তৈরি হওয়াটা জরুরী। সেক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গকে এই সংলাপের সমান একটি পক্ষ হিসেবে দেখার ওপর জোর দেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। সুষমা বলেন, তিনি (মমতা) নিজেও বাংলাদেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক এগিয়ে নিতে চান। তাছাড়া বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গেও মমতার সম্পর্ক ভাল। শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানেও উনি হাসিনাকে নিমন্ত্রণ করেছিলেন। বাংলাদেশ বিষয়ে অভিজ্ঞ পর্যবেক্ষক জাতীয় অধ্যাপক জয়ন্ত কুমার রায় বলেন, মমতা ব্যানার্জি, তার সরকার ও রাজ্যকে সংলাপে একটি পক্ষ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করার মধ্য দিয়ে সুষমা এমন ঐকমত্য তৈরির চেষ্টায় রয়েছেন যাতে ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে চূড়ান্ত চুক্তি দীর্ঘমেয়াদী ও ব্যাপকভিত্তিক হয়। এটাতে একটু সময় লাগলেও ভবিষ্যত তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তিটি জোরালোভাবে বাস্তবভিত্তিক হবে। নরেন্দ্র মোদির প্রশাসনের কর্মকর্তারা বলছেন, বাংলাদেশের বিজয় দিবসে অংশ নিতে মমতা ও সুষমাকে সঙ্গে নিয়ে দ্বিতীয়বার ঢাকা সফরের পরিকল্পনা রয়েছে প্রধানমন্ত্রীর। তার আগেই তিস্তা নিয়ে চূড়ান্ত সমঝোতা করে ফেলতে চান তিনি। এর পর ভারতের প্রজাতন্ত্র দিবস উদযাপন অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অতিথি করার পরিকল্পনা রয়েছেন নরেন্দ্র মোদির। তারা বলছেন, তিস্তা প্রশ্নে মমতা ব্যানার্জির সুর এখন অনেকটা নরম। গত বছর প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ঢাকায় গিয়ে দুদেশের মধ্যে স্থলসীমান্ত চুক্তি স্বাক্ষরে সাক্ষী হয়েছিলেন মমতা। সেই সময়ই তিন স্পষ্ট করেছিলেন, তিনি তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তির বিরুদ্ধে নন। রাজ্যের স্বার্থ নিশ্চিত করে চুক্তিটা হোক সেটাই তিনি চান। রবিবার কলকাতায় তিস্তার বিষয়ে জানতে চাইলে মুখ্যমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, ‘কে সমাধান চায় না, আমরা সবাই তা চাই।’ কলকাতাভিত্তিক থিঙ্ক ট্যাঙ্ক সিইএনইআরএসকের প্রেসিডেন্ট জে আর মুখার্জি মনে করেন, দ্বিতীয় বার ক্ষমতায় এসে মমতা দৃশ্যত সব তিক্ততা ভুলে বাংলাদেশের সঙ্গে আরও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক তৈরি করতে চান। ভারতের প্রতিবেশী দেশগুলোর বিষয়ে এই গবেষক বলেন, ‘বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িত এই বাংলার ভবিষ্যত প্রবৃদ্ধি- এটা তিনি যত তাড়াতাড়ি বুঝবেন ততো ভাল হবে।’ বিজেপির একাধিক নেতা বিডিনিউজকে বলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের ‘যোগাযোগহীন ধরনে’ মমতা খুব ক্ষেপে গিয়েছিলেন, যার জন্য ২০১০ সালে তার সঙ্গে ঢাকা সফরে যাননি। কিন্তু আমাদের নেতা মোদি ও সুষমা অনেক বেশি খোলা মনের এবং দৃষ্টিভঙ্গিতে ‘ফেডারেল’। তিস্তার সমস্যা সমাধানে তারা পশ্চিমবঙ্গকে প্রাপ্য গুরুত্ব দেবেন। বাংলাদেশের সঙ্গে এ বিষয়ে সমঝোতায় আসতে মোদি সরকার সঙ্কল্পবদ্ধ। কারণ বন্ধুসুলভ প্রতিবেশীর প্রতি এটা সার্বভৌম ভারতের প্রতিশ্রুতি। এর আগে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির আপত্তির মুখে ২০১১ সালে তখনকার কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন সরকার তিস্তা চুক্তি থেকে পিছু হটতে বাধ্য হয়। এরপর থেকে তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তির বিষয়ে বারবার তাগিদ দিয়ে আসছে ঢাকা। পশ্চিমবঙ্গের গণমাধ্যমের খবর, মমতা তার ঘনিষ্ঠজনদের বলেছেন, কংগ্রেসের নেতৃত্বে জোট সরকারের আমলে রাজ্যের সঙ্গে কোন আলোচনা ছাড়াই যেভাবে চুক্তিটি করার চেষ্টা হচ্ছিল, তাতে এপার বাংলার কৃষকেরা ক্ষতিগ্রস্ত হতেন। তিস্তার পানির বণ্টন আলোচনার মাধ্যমেই ঠিক হওয়া উচিত বলে তিনি মনে করেন। প্রায় এক বছর পর কেন্দ্র ও রাজ্যের মধ্যে সেই আলোচনাই শুরু হতে চলেছে। তিস্তা ইস্যু আমরা গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করছি- মমতা ॥ তিস্তার পানি বণ্টন নিয়ে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী দিল্লীতে নিযুক্ত হাইকমিশনার সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলীকে বলেছেন, তিস্তার পানিবণ্টন বিষয়টি আমরা গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করছি। সোমবার বিকেলে সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলী কলকাতার নবান্নে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে গেলে মমতা ব্যানার্জী তাঁকে এই আশ্বাস দেন। হাইকমিশনার দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় আসায় মমতা ব্যানার্জীকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানান। তিনি মমতা ব্যানার্জীকে বাংলাদেশের মানুষের আবেগের কথা জানিয়ে সুবিধামতো সময়ে ঢাকায় আসার আমন্ত্রণ জানান। মমতা ব্যানার্জীও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে কলকাতায় যাওয়ার আমন্ত্রণ জানান।
×