ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

হানিফ ফ্লাইওভার ও সায়েদাবাদের রাস্তায় যাত্রী দুর্ভোগ চরমে

অফিস দখল নিয়ে শ্রমিক সংঘর্ষে তিন ঘণ্টা যান চলাচল বন্ধ

প্রকাশিত: ০৫:৪৭, ২১ জুন ২০১৬

অফিস দখল নিয়ে শ্রমিক সংঘর্ষে তিন ঘণ্টা যান চলাচল বন্ধ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ রাজধানীর গুলিস্তানে পরিবহন শ্রমিকদের একটি কার্যালয় দখলের ঘটনাকে কেন্দ্র করে দু’পক্ষের সংঘর্ষে প্রায় তিন ঘণ্টা যানবাহন চলাচল বন্ধ ছিল মেয়র হানিফ ফ্লাইওভার ও সায়েদাবাদের রাস্তায়। এতে দেশের পূর্বাঞ্চল ও বৃহত্তর চট্টগ্রামের যাত্রীদের দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। এদিকে এ ঘটনাকে নিয়ে আজ ঢাকা থেকে দেশের পূর্ব ও দক্ষিণাঞ্চলে পরিবহন ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়ন। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক করম আলী সোমবার বিকেলে জনকণ্ঠকে ধর্মঘট আহ্বানের কথা জানিয়ে বলেন, সোমবার সকালে ঢাকা জেলা সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের লোকজন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের কার্যালয়ের তালা ভেঙ্গে অফিস দখল করে সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দেয়। পাশাপাশি কার্যালয় ভাঙচুর করারও অভিযোগ করেন তিনি। এ খবরে ইউনিয়নের লোকজন জয়কালী মন্দির থেকে সায়েদাদ-যাত্রাবাড়ী সড়ক অবরোধ করে। এক পর্যায়ে দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয় এবং তা পুরো এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় ফ্লাইওভার ও নিচের রাস্তা দিয়ে যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকে। খবর পেয়ে ওয়ারী জোনের পুলিশের ডিসি নূরুল ইসলাম দু’পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে মঙ্গলবার সকাল এগারোটায় সংকট সমাধানে বৈঠক আহ্বান করেন। পাশাপাশি বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন সমিতির কার্যালয় বুঝিয়ে দেয়ার আশ্বাস দেন তিনি। বিকেল পর্যন্ত তা কার্যকর না হওয়ায় ধর্মঘটের ডাক দেয়া হয়। সংগঠনের প্রচার সম্পাদক শেখ রিপন জানান, ধর্মঘটে বিভিন্ন শ্রমিক ইউনিয়নের সমর্থন রয়েছে। তিনি জানান, আমাদের কার্যালয় না ফিরে পাওয়া পর্যন্ত পরিবহন ধর্মঘট চলবে। গুলিস্তান ও সায়েদাবাদ থেকে বৃহত্তর সিলেট ও চট্টগ্রামের কোন গাড়ি চলবে না বলেও জানান তিনি। তিনি জানান, আমরা বৈধভাবে সংগঠন পরিচালনা করছি। নিজেরাই কার্যালয়ের ভাড়া দিচ্ছি। কিন্তু প্রভাবশালীরা অন্যায়ভাবে কার্যালয় দখলের অপচেষ্টা চালাচ্ছে। দুপুরে সংঘর্ষের পর পরিবহন শ্রমিকরা ফ্লাইওভারে বাস আড়াআড়ি রেখে দেন। লাঠি সোটা নিয়ে দু’পক্ষ রাস্তায় অবস্থান নেয়। চলে ধাওয়া পাল্টাধাওয়া। এতে রোজায় প্রচ- গরমের মধ্যে দুর্ভোগে পড়তে হয় যাত্রীদের। বেলা ৩ তিনটার দিকে গাড়ি চলাচল পুনরায় শুরু হয় জানিয়ে ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার (ট্রাফিক-সাউথ) মফিজউদ্দিন আহমেদ বলেন, বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ কক্ষের কর্তব্যরত অপারেটর ফজলুল হক বলেন, চলাচল শুরু হলেও গাড়ির চাপ অস্বাভাবিক। খুবই ধীরে চলছে গাড়ি। বঙ্গভবনের পূর্ব দিকে শ্রমিক ইউনিয়নের একটি কার্যালয়ের দখল নিয়ে শ্রমিকদের দুপক্ষের মধ্যে দুপুর বারোটার দিকে সংঘর্ষ বাঁধে বলে জানান যাত্রাবাড়ী থানার ওসি আনিসুর রহমান। এরপর শ্রমিকরা হানিফ ফ্লাইওভারের উপরে আড়াআড়ি করে বাস রেখে পথ আটকে দেয়। ফলে গুলিস্তান থেকে যাত্রাবাড়ীর পথে ফ্লাইওভারের উপর দিয়ে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এছাড়া গুলিস্তান মহানগর নাট্যমঞ্চের পাশে ও সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালের সামনের সড়কও বাস রেখে যানচলাচল বন্ধ করে দেয়া যাত্রাবাড়ীর ওসি আনিসুর জানান, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়ন ও ঢাকা জেলা শ্রমিক ইউনিয়নের ওই সংঘর্ষেও পর যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তা এলাকায়ও যান চলাচল বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। ডিএমপির ওয়ারী বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার মাইনুল হাসান জানান, যে কার্যালয় নিয়ে গোলমালের শুরু, তা এখন তালাবদ্ধ। কাউকে ঢুকতে দেয়া হচ্ছে না। সেখানে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। দুই পক্ষের সঙ্গে কথা বলে যান চলাচল স্বাভাবিক করা হয়েছে। কার্যালয়টি নিয়ে তাদের সবার সঙ্গে কথা বলে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেয়া হবে । শফিকুল নামে এক বাস শ্রমিক বলেন, ওই কার্যালয়টি বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের ছিল, কিন্তু রবিবার রাতে ঢাকা জেলা শ্রমিক ইউনিয়নের নেতা সফর আলী ও সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মোঃ রহিম তা দখল করেন। এ কারণে আজ বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের কর্মীরা বাস চালানো বন্ধ করে দিয়ে ওই অফিসে তালা ঝুলিয়ে দেয়। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্লাহ বলেন, ঢাকা জেলা শ্রমিক ইউনিয়নে কোন শ্রমিক নেই। যত শ্রমিক আছে সব বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন ইউনিয়নের পরিচয়পত্র বহন করে। কিন্তু ২০০১ সালের একটি মামলায় ঢাকা জেলা শ্রমিক ইউনিয়ন আদালতে জিতে যায়। একারণে রবিবার রাতে তারা ওই কার্যালয়টির নিয়ন্ত্রণ নেয়। এনায়েত উল্লাহ বলেন, যাদের কোন শ্রমিকই নেই, তাদের আবার অফিস কী প্রয়োজন? যেহেতু তারা আদালতে জয়লাভ করেছেন। তাহলে তারা অন্য স্থানে একটি অফিস তৈরি করলেই হয়, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের অফিস দখল করার তো প্রয়োজন নেই। বিপ্লবী সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক আলী রেজা জনকণ্ঠকে বলেন, অন্যায়ভাবে সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের কার্যালয় দখল করা হয়েছে। তাই সংগঠনের ডাকা পরিবহন ধর্মঘটের প্রতি সমর্থন জানিয়ে তিনি বলেন, সকল শ্রমিক যেন এই ঘটনার প্রতিবাদে গাড়ি না চালান। তিনি ঈদ উপলক্ষে পরিবহন শ্রমিকদের বোনাসের দাবিও জানান। এদিকে সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ ও রাস্তা বন্ধ করে দেয়ার ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক লীগ। সংগঠনটির নেতারা বলছেন, পরিবহন চাঁদাবাজি ও আধিপত্য বিস্তারের ঘটনাই সংঘর্ষেও মূল কারণ। দীর্ঘদিন ধরে রাজধানীর চারটি টার্মিনালে চাঁদাবাজি চলছে। ঈদ সামনে রেখে পরিবহনে চাঁদাবাজি আরও বেড়েছে।
×