ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ব্যাংক ঋণ পরিশোধে ছোট উদ্যোক্তারাই এগিয়ে

প্রকাশিত: ০৩:৫৪, ২১ জুন ২০১৬

ব্যাংক ঋণ পরিশোধে ছোট উদ্যোক্তারাই এগিয়ে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ ব্যাংকগুলো বড় ও মাঝারি শিল্প প্রতিষ্ঠানে ঋণ দেয়ার জন্য উন্মুখ হয়ে থাকে। রীতিমতো বড় উদ্যোক্তাদের পিছনে ছুটে বেড়ায়। কিন্তু ঋণ নিতে গিয়ে যত ঝামেলায় পড়তে হয় ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের। অথচ ক্ষুদ্র শিল্পোদ্যোক্তারা ঋণ পরিশোধে যতটা এগিয়ে বড় গ্রহীতারা টাকা ফেরত না দেয়ার দৌড়ে ততটাই এগিয়ে। অন্তত পরিসংখ্যান তেমনটাই বলছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ হালনাগদ প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে (জুলাই-মার্চ) ক্ষুদ্র, মাঝারি ও বড় শিল্পে মোট খেলাপী ঋণের পরিমাণ ১৫ হাজার ৫৩৯ কোটি ৬৮ লাখ টাকা। যা আগের অর্থবছরের (২০১৪-১৫) একই সময়ের তুলনায় ২৩ দশমিক ৬৪ শতাংশ বা ২ হাজার ৯৭১ কোটি ৬৮ লাখ টাকা বেশি। তথ্য মতে, আলোচ্য সময়ে আগের অর্থবছরের চেয়ে শুধু বড় শিল্পে খেলাপী ঋণের পরিমাণ বেড়েছে ৪০ দশমিক ৬৫ শতাংশ। যাতে মোট খেলাপীর পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৮ হাজার ৫৫৯ কোটি টাকা। আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় মাঝারি শিল্পে ৪ দশমিক ৬০ শতাংশ বেড়ে খেলাপীর পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৫০১ কোটি এবং ছোট শিল্পে প্রায় ২১ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৪৭৮ কোটি টাকায়। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইর সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন বলেন, যে খাতের কথা বলে ব্যাংক ঋণ নেয় সেখানে অনেকেই আছে যারা ভিন্ন খাতে এ টাকা খরচ করে। তারা ইচ্ছাকৃতভাবেই খেলাপী হয়। আবার অনেকে ১০-১৫ বছর ধরে ব্যবসা করতে করতে কোন এক সময় ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তখন তারা খেলাপী হয়। দুই বিষয় এক নয়। এ ব্যবসায়ী নেতা বলেন, যারা ইচ্ছাকৃতভাবে খেলাপী হয়, নিয়ম বহির্ভূতভাবে টাকা খরচ করে, তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া উচিত। যা নিয়মতান্ত্রিকভাবে ব্যবসা করে ক্ষতিগ্রস্ত হয়, সেখানে ব্যাংকের উচিত তাদের পাশে দাঁড়ানো। বেড়েছে শিল্প খাতে ঋণ বিতরণ। চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে মার্চ মাসে এ খাতে প্রায় ৪৮ হাজার ৭৮৩ কোটি টাকার ঋণ বিতরণ হয়েছে। ২০১৪-১৫ অর্থবছরের একই সময়ে এর পরিমাণ ছিল ৪৪ হাজার ৮০৪ কোটি টাকা। এ হিসেবে আগের অর্থবছরের তুলনায় এবারে ঋণ বিতরণ বেশি হয়েছে তিন হাজার ৯৭৯ কোটি টাকা বা ৮ দশমিক ৮৮ শতাংশ। বিতরণ করা ঋণের মধ্যে ৩৭ হাজার ৩৩১ কোটি টাকা নিয়েছে বড় শিল্পের উদ্যোক্তারা। ৬ হাজার ৮৫৫ কোটি টাকা মাঝারি শিল্পের ও ৪ হাজার ৫৯৫ কোটি নিয়েছে ক্ষুদ্র শিল্পের উদ্যোক্তারা। এছাড়া চলতি বছরের মার্চ মাস পর্যন্ত বড়, মাঝারি ও ক্ষুদ্র শিল্পের অনাদায়ী ঋণের পরিমাণ রয়েছে যথাক্রমে ১ লাখ ৭ হাজার ২৯১ কোটি, ২৫ হাজার ৬৩৮ কোটি এবং ৯ হাজার ২১৬ কোটি টাকা। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনে আদায়ের যে চিত্র দেয়া হয়েছে তাতে দেখা গেছে, ২০১৪-১৫ অর্থবছরের জুলাই-মার্চ সময়ের চেয়ে চলতি অর্থবছরের একই সময়ে অর্থাৎ প্রথম ৯ মাসে বড় শিল্প থেকে আদায় বেড়েছে ৩ দশমিক ১৩ শতাংশ, মাঝারি শিল্পে ৯ শতাংশ আদায় কমেছে এবং ক্ষুদ্র শিল্পে আদায় বেড়েছে ৩৫ দশমিক ৩৮ শতাংশ। এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা অর্থনীতিবিদ ড. এবি মির্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, যেসব শিল্প প্রতিষ্ঠানের রেকর্ড খারাপ তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে। আলোচনা করে তাদের কাছ থেকে ঋণগুলো আদায়ের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। আর অর্থঋণ আদালতে যেসব মামলা পড়ে আছে সেগুলো যাতে দ্রুত নিষ্পত্তি হয় তার ব্যবস্থা করতে হবে। তবে যেসব প্রতিষ্ঠান ঋণের টাকা ফেরত দিতে গড়িমসি করে তাদের কোন ব্যাংকই যাতে ঋণ না দেয় সেরকম একটি ব্যবস্থা দাঁড় করানোর পরামর্শ দেন এ অর্থনীতিবিদ। তিনি বলেন, কেউ কেউ রাজনৈতিক দাপটে বিভিন্ন ব্যাংক থেকে টাকা নেয়, ফেরত দেয় না। আবার তাদের বিরুদ্ধে তেমন কোন ব্যবস্থাও নিতে দেখা যায় না। উল্লিখিত সময়ে গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর ৩৫ শতাংশ, বেসরকারী বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর ১৫ দশমিক ৮৫ শতাংশ, বিদেশী ব্যাংকের ৬০ দশমিক ৯৯ শতাংশ, বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোর ১৪ দশমিক ১২ শতাংশ এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ৩৪ দশমিক ১৮ শতাংশ খেলাপী ঋণ বেড়েছে।
×