ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সাড়ে ৬ কোটিরও বেশি মানুষ শরণার্থী ও গৃহচ্যুত ॥ জাতিসংঘ

বিশ্বে বাস্তুহারা মানুষের সংখ্যায় নতুন রেকর্ড

প্রকাশিত: ০৩:৫০, ২১ জুন ২০১৬

বিশ্বে বাস্তুহারা মানুষের সংখ্যায় নতুন রেকর্ড

যুদ্ধবিগ্রহসহ নানা কারণে বিশ্বব্যাপী উদ্বাস্তু মানুষের সংখ্যা নতুন রেকর্ড গড়েছে। ২০১৫ সালের শেষ নাগাদ এই সংখ্যা ছয় কোটি ৫৩ লাখে পৌঁছে। জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা (ইউএনএইচসিআর) সোমবার একথা জানিয়েছে। এদিকে সংস্থাটির প্রধান ফিলিপো গ্যান্ডি ইউরোপের উগ্র স্বদেশিকতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। খবর এএফপি ও বিবিসির। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এ যাবতকালের সবচেয়ে বড় শরণার্থী সঙ্কটে পড়েছে ইউরোপ। এই শরণার্থী স্রোতের কারণে মহাদেশ জুড়ে উগ্র-ডানপন্থী দল ও বিতর্কিত অভিবাসনবিরোধী নীতির প্রতি সমর্থন বাড়ছে। ২০ জুন বিশ্ব শরণার্থী দিবস উপলক্ষে সোমবার প্রকাশিত বার্ষিক প্রতিবেদনে ইউএনএইচসিআর বলেছে, এই প্রথমবারের মতো বিশ্বে শরণার্থীর সংখ্যা সাড়ে ৬ কোটি ছাড়িয়ে গেছে। এর অর্থ হলো বিশ্বের মোট জনসংখ্যার এক শতাংশ বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে। এই শরণার্থীদের অর্ধেকের বেশিই যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়া, আফগানিস্তান ও সোমালিয়ার। ২০১৫ সালে উদ্বাস্তু মানুষের সংখ্যা বেড়েছে ৫৮ লাখ এবং বিশ্বে প্রতি ১১৩ জন লোকের মধ্যে একজন শরণার্থী। ইউরোপের শরণার্থী সঙ্কট নিয়ে ব্যাপক আলোচনা সত্ত্বেও জাতিসংঘ বলেছে, ৮৬ শতাংশ শরণার্থীকে নিম্ন ও মধ্যআয়ের দেশগুলো আশ্রয় দিয়েছে। সংস্থাটি আরও বলেছে, বেশিরভাগ শরণার্থীর আবেদনই গ্রহণ করেছে জার্মানি। এতে দেশটির শরণার্থী গ্রহণের প্রস্তুতি প্রতিফলিত হয়েছে। ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন ফর মাইগ্রেশন (আইওএম) জানিয়েছে, গত বছর সমুদ্রপথে ১০ লাখ ১১ হাজার ৭০০’রও বেশি শরণার্থী ইউরোপে পৌঁছে। যদিও অন্য সংস্থাগুলো বলেছে, এই সংখ্যা আরও বেশি। এছাড়া প্রায় ৩৫ হাজার শরণার্থী স্থলপথে ইউরোপ গিয়েছে। এসব শরণার্থীর বেশিরভাগেরই গন্তব্য হলো জার্মানি ও সুইডেনের মতো ইউরোপের ধনী দেশগুলো। গ্র্যান্ডি বলেছেন, সংঘর্ষ ও নিপীড়নের ফলে উদ্বাস্তু মানুষের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় অভিবাসন বিরোধী রাজনৈতিক মনোভাব শরণার্থীদের পুনর্বাসনের ইচ্ছাকে বাধাগ্রস্ত করছে। শরণার্থী বিষয়ে দেশগুলোর একসঙ্গে কাজ করার ইচ্ছাই শুধু নয়, সমষ্টিগত স্বার্থও আজ পরীক্ষার মুখে। এই শরণার্থী সঙ্কট ইউরোপীয় ইউনিয়নে (ইইউ) তাৎপর্যপূর্ণ রাজনৈতিক মতভেদ সৃষ্টি করেছে। এক মন্তব্যে ইউএনএইচসিআর প্রধান বলেছেন, ইউরোপীয় নেতাদের নীতির সমন্বয় ও শরণার্থীদের সম্পর্কে নেতিবাচক ধ্যান-ধারণা পাল্টাতে আরও অনেক কিছু করা প্রয়োজন। অভিবাসন বিরোধীরা, যারা শরণার্থী ও অভিবাসীদের বিরুদ্ধে জনমত উস্কে দিচ্ছে, তারাই উগ্র স্বদেশী পরিবেশ সৃষ্টির জন্য দায়ী। সেটি আজকের ইউরোপের জন্য উদ্বেগের বিষয়। তিনি আরও বলেন, এটা দুর্ভাগ্যজনক যে, শরণার্থী সঙ্কট মোকাবেলায় ইইউ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছিল, কিন্তু তা কার্যকর হয়নি। ১৯৯০’র দশক থেকে উদ্বাস্তু লোকের সংখ্যা বাড়ছে। তবে ২০১১ সালে সিরীয় যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর এই হার এক লাফে অনেক বেড়ে গিয়েছে। বিশ্বের ছয় কোটি ৫৩ লাখ উদ্বাস্তুর মধ্যে চার কোটি আট লাখ নিজ দেশেই রয়েছে এবং দুই কোটি ১৩ লাখ লোক সীমান্ত পার হয়েছে এবং তারা এখন শরণার্থী হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। বিশ্বের সবচেয়ে বেশি শরণার্থী ফিলিস্তিনের এবং এই সংখ্যা ৫০ লাখেরও বেশি। এর পরেই সিরিয়ার স্থান এবং দেশটির শরণার্থীর সংখ্যা ৪০ লাখ ৯০ হাজার, আফগানিস্তানের ২০ লাখ ৭০ হাজার ও সোমালিয়ার ১০ লাখ ১০ হাজার।
×