ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

জনসমর্থন পেতে প্রতিদ্বন্দ্বী পক্ষগুলোর জীবন-মরণ প্রয়াস

ইইউ ত্যাগ প্রশ্নে ॥ শেষ পর্যায়ে ব্রিটিশ ভোটযুদ্ধ

প্রকাশিত: ০৩:৪৮, ২১ জুন ২০১৬

ইইউ ত্যাগ প্রশ্নে ॥ শেষ পর্যায়ে ব্রিটিশ ভোটযুদ্ধ

ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ত্যাগ প্রশ্নে ব্রিটেনে বৃহস্পতিবারের গণভোটের প্রাক্কালে সোমবার প্রতিদ্বন্দ্বী পক্ষগুলো গণজোয়ার নিজেদের পক্ষে আনতে কঠোর লড়াইয়ে লিপ্ত হয়। এর আগে পার্লামেন্ট সদস্যের হত্যাকা-ের পর প্রচার অভিযান স্থগিত থাকে। ইইউ ত্যাগের পক্ষে-বিপক্ষের রাজনীতিকরা ভোট অনুষ্ঠানের মাত্র তিনদিন থাকতে ভোটারদের কাছে তাদের আবেদন জানানোর চেষ্টা করেন। খবর এএফপির। ইইউ ত্যাগের পক্ষ ‘ব্রেক্সিটে’র নেতা বরিস জনসন ডেইলি টেলিগ্রাফ পত্রিকায় লিখেছেন, আপনারা ইউরোপীয় ইতিহাসের সমগ্র গতিই পাল্টে দিতে পারেন। তিনি আবেদনের সুরে বলেন, আমি আশা করি আপনারা ইইউ ত্যাগের পক্ষে ভোট দেবেন এবং এ মহান দেশের ভাগ্যের নিয়ন্ত্রণ আবার নিজেদের হাতে নেবেন। এ সুযোগ আর আমাদের জীবদ্দশায় আসবে না এবং আমরা যেন তা আর না হারাই আমি সেই প্রার্থনা করি। প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন রবিবার সন্ধ্যায় বিবিসির টেলিভিশনের এক অনুষ্ঠানে ইইউতে থাকার পক্ষে ভোট দিতে ভোটারদের প্রতি আহ্বান জানান। সেই অনুষ্ঠানে এক শ্রোতা ইইউর একনায়কতন্ত্রের প্রতি তোষণনীতি গ্রহণের দায়ে ক্যামেরনকে অভিযুক্ত করেন। ক্যামেরন বলেন, যদি আমরা ইইউ ত্যাগের পক্ষে ভোট দেই তা হলে আমরা ইইউ ছেড়েই যাচ্ছি। আমার মনে হয় না ব্রিটেন শেষ পর্যন্ত ইইউ ছেড়ে যাবে। আমরা সেখানে থেকে লড়াই করব। আমাদের তাই করা উচিত। ব্রিটেনে ইউ ত্যাগের পক্ষে-বিপক্ষে ঠিক ৫০ ভাগ মানুষের সমর্থন রয়েছে বলে গবেষণা কেন্দ্র হোয়াট ইউকে থিংসের জরিপে দেখা যায়। বৃহস্পতিবারের গণভোটে ব্রিটেনই ২৮ সদস্য রাষ্ট্রের ইইউ ত্যাগ করবে এমন প্রথম দেশ হতে পারে। এ সম্ভাবনা গত সপ্তাহে শেয়ার বাজার কাঁপিয়ে তোলে। তখন ইইউ ত্যাগের পক্ষে সমর্থন বাড়তে দেখা যাচ্ছিল। সরকারবিরোধী লেবার পার্টির নেত্রী জো কক্সের হত্যাকা- ব্যাপক শোকের সঞ্চার করে এবং গণভোটকে কেন্দ্র করে চলমান প্রচার অভিযানের সুর বিভেদমূলক কিনা সেই প্রশ্নের জন্ম দেয়। কক্স ইইউপন্থী বলে পরিচিত। বিচারের মুখে ক্যামেরন ॥ ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন ইউরোপকে কেন্দ্র করে বছরের পর বছর ধরে বিরোধের মুখোমুখি হওয়ার পর বৃহস্পতিবারের গণভোটের দিন বিচারের সম্মুখীন হবেন। জনমত জরিপে গণভোটের প্রতিদ্বন্দ্বিতা সমানে সমানে বলে দেখা যায়। দি ব্রিটেন ইইউ ত্যাগ করবে এমন প্রথম দেশ হয়, তা হলে ছয় বছর ক্ষমতায় থাকার পর ক্যামেরনের সমাধিলিপি লেখা হবে। লন্ডনের কুইন মেরি ইউনিভার্সিটির রাজনীতির অধ্যাপক টিম বেইল বলেন, তিনি ইইউতে থাকার পক্ষের নেতৃত্বে নিজেকে স্থাপন করেছেন। তাই এ ভোটযুদ্ধে হেরে গেলে তার বিশ্বাসযোগ্যতার বিরাট ক্ষতি হবে। তিনি এএফপিকে বলেন, সম্ভবত আমরা কয়েকদিন বা সপ্তাহের মধ্যে যখনই নেতৃত্ব নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে তখনই তাকে তার বিদায় নেয়ার ইচ্ছার আভাস দিতে দেখব। এমনকি ব্রিটেন যদি ইইউতে থাকার পক্ষেও ভোট দেয়, তবু কনজারভেটিভ পার্টির নেতা ক্যামেরনকে সামনে কঠিন সময় পার করতে হবে। কারণ তখন তাকে তার দলকে বিভক্ত করেছে এমন এক তিক্ত প্রচার অভিযানের পর তার কর্তৃত্ব পুনর্প্রতিষ্ঠার জন্য কঠোর পরিশ্রম করতে হবে। যে কোন অবস্থাতেই তিনি বেশি দিন প্রধানমন্ত্রী নাও থাকতে পারেন। কারণ তিনি নতুন নেতৃত্বের জন্য সুযোগ সৃষ্টি করতে ২০২০ সালে নির্বাচনের আগেই ঐ পদে ইস্তফা দেবেন বলে আভাস দিয়েছেন। গণভোট উপলক্ষে প্রচার অভিযানকালে ক্যামেরন যুক্তি দেখান যে, ব্রেক্সিটের ফলে ব্রিটেনের অর্থনীতি গুরুতরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কিন্তু তাকে তার বিরোধী ‘লিভ’ শিবিরের যুক্তি খ-ন করতে প্রচ- বেগ পেতে হয়। বিরোধীদের যুক্তি হলো, সরকারী সেবার ওপর চাপ কমাতে ইইউ দেশগুলো থেকে অভিবাসী আগমন হ্রাস করা প্রয়োজন এবং যদি ব্রিটেন ইইউ ত্যাগ করে তবেই কেবল তা সম্ভব। কনজারভেটিভ পার্টির সিনিয়র নেতা ও সাবেক অর্থমন্ত্রী কেনেথ ক্লার্ক বলেন, গণভোটে হারলে ক্যামেরন ৩০ সেকেন্ডও ক্ষমতায় থাকতে পারবেন না। ক্লার্ক ইইউতে থাকতে চান।
×