ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

স্বনির্ভর অর্থনীতি

প্রকাশিত: ০৩:৪১, ২১ জুন ২০১৬

স্বনির্ভর অর্থনীতি

অর্থমন্ত্রী ২ জুন জাতীয় সংসদে ২০১৬-১৭ অর্থবছরের বাজেট পেশ করেছেন। এবারের বাজেটে আয় ও ব্যয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে যথাক্রমে ২ লাখ ৪৮ হাজার ২৬৮ কোটি টাকা ও ৩ লাখ ৪০ হাজার ৬০৫ কোটি টাকা। জাতীয় বাজেটের কলেবর বৃদ্ধির প্রবণতা গত কয়েক বছর ধরেই লক্ষ্য করা যাচ্ছে। যে কারণে প্রায় সবাই একবাক্যে বলছেন উচ্চাভিলাষী। এটা সত্য যে, স্বপ্ন দেখা ভাল। একটি দেশ ও জাতি স্বপ্ন না দেখলে এবং সে অনুযায়ী পদক্ষেপ গ্রহণ না করলে সামনে অগ্রসর হতে পারে না কখনই। আর তাই একটি উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বাংলাদেশেরও স্বপ্ন দেখা বাঞ্ছনীয় ও যুক্তিসঙ্গত। স্বপ্ন দেখার সঙ্গে সঙ্গে সক্ষমতার বিষয়টিও ভাবতে হবে অবশ্যই। কেননা, স্বপ্ন শুধু দেখলেই তো হবে না, সেটি বাস্তবায়নও করতে হবে। বাজেটে ঘোষিত সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) এবার আয় করতে হবে ২ লাখ ৩ হাজার ১৫২ কোটি টাকা। আসলেই এটি উচ্চাভিলাষী লক্ষ্যমাত্রা। বর্তমান অর্থবছরের সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় এ হার হবে ৩৫ দশমিক ৪ শতাংশ। বিগত বছরে যেখানে কর আদায়ের প্রবৃদ্ধি ৩০ শতাংশ ধরেও অর্ধেকের বেশি অর্জন করা যায়নি, সেখানে এবার ৩৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন প্রায় অসম্ভব। সে কারণে এবারের বাজেটেও যে কাটছাঁট করা হবে, তা অতীত অভিজ্ঞতায় নিশ্চিত করে বলা যায়। অথচ রাজস্ব আদায়ের প্রধান উৎস হলো আয়কর। গত কয়েক বছর ধরেই বাজেটে বিদেশী ঋণের ওপর কম নির্ভরতার বিষয়টি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। নিঃসন্দেহে স্বনির্ভর অর্থনীতি গড়ে তোলার লক্ষ্যে এটি একটি ভাল পদক্ষেপ। সরকারের আয়ের লক্ষ্যমাত্রার ৭১ দশমিক ৩ শতাংশই আসবে জনসাধারণের কাছ থেকে। সে কারণেই ভ্যাটের আওতা সম্প্রসারণসহ বিভিন্ন সেক্টর থেকে কর আহরণের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতির চাকা সচল ও সক্রিয় রাখতে হলে করের আওতা বাড়ানো ছাড়া গত্যন্তর নেই। তবে সমস্যা হলো, দেশের কিছু মানুষ সহজে কর দিতে চান না। সাধারণভাবে কর সম্পর্কে একটি ভীতিও আছে জনমনে। কর প্রদানের জটিলতা ও হয়রানিও অস্বীকার করা যায় না। প্রায় ১৭ কোটি জনসংখ্যা অধ্যুষিত দেশে নিয়মিত কর প্রদান করেন এমন সংখ্যা কম। এরপরও যারা কর দেন, তারা নানা কারণে গড়িমসি করেন, কর রেয়াত চান। গত কয়েক বছর ধরে সরকার ছোটবড় ব্যবসায়ীদের ওপর ১৫ শতাংশ হারে মূল্যসংযোজন কর বা মূসক বসানোর উদ্যোগ নিয়েছে। ব্যবসায়ী সংগঠনগুলো তা মানতে নারাজ। তারা আয় অনুযায়ী বিভিন্ন স্তরে প্যাকেজ ভ্যাট দিতে আগ্রহী। এর জন্য বাজেটের আগে তারা রাজপথে নেমে আন্দোলন-সংগ্রামও করেছেন। সরকার তাদের দাবির মুখে নমনীয় দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করেছে। এখন আবার পোশাক ও বস্ত্র খাতের ছয়টি সংগঠন পণ্য রফতানিতে দেড় শতাংশ উৎসে কর করার প্রস্তাবে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তারা এটি আগের মতো দশমিক ৬ শতাংশ রাখার দাবিতে সোচ্চার। তারা বলছেন উৎসে কর কমানো না হলে বিনিয়োগ নিরুৎসাহিত হবে। পোশাক ও বস্ত্রশিল্পের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা ধরে রাখা যাবে না। কর ও মূসক কমানোর ক্ষেত্রে এরকম আরও দাবি-দাওয়া প্রায় প্রতিদিনই আসছে গণমাধ্যমে বিভিন্ন পণ্য উৎপাদক ও ব্যবসায়ী সংগঠনের পক্ষ থেকে। বাজেট কাটছাঁট, কর ও মূসক আদায়ের হ্রাস-বৃদ্ধি নিয়ে কারও পক্ষে-বিপক্ষে বলা আমাদের উদ্দেশ্য নয়। একটি দেশের আয়-উন্নয়নসহ সরকারকে তো শেষ পর্যন্ত নির্ভর করতে হয় জনসাধারণের টাকা, তথা কর, মূসক ইত্যাদির ওপর। পদ্মা সেতু, রূপপুর পারমাণবিক কেন্দ্র, মেট্রো রেল, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটসহ অন্তত ১০টি উচ্চাভিলাষী অথচ সময়োপযোগী প্রকল্প সরকার হাতে নিয়েছে। সরকারকে তো এসব ব্যয় মেটাতে হবে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে রাজস্ব আহরণ করেই। সে জন্য কর দেয়ার মানসিকতা ও সক্ষমতা গড়ে তুলতে হবে সর্বস্তরে। সরকার আগামী দু’বছর পর থেকে কৃষক ও কৃষি খাত থেকেও কর আদায়ে আগ্রহী বলে জানা গেছে। জাতীয় প্রবৃদ্ধি ৭ থেকে ৮ শতাংশে উন্নীত করতে হলে করের আওতা বাড়ানোর পাশাপাশি বিনিয়োগ সক্ষমতা ও উৎপাদনশীলতা বাড়াতে হবে অবশ্যই।
×