ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

উত্তরায় অস্ত্র উদ্ধার

প্রকাশিত: ০৩:৪১, ২১ জুন ২০১৬

উত্তরায় অস্ত্র উদ্ধার

রাজধানীর উত্তরা থেকে স্মরণকালের সবচেয়ে বড় অস্ত্র ও গুলি উদ্ধার করা হয়েছে। দেশে বড় ধরনের নাশকতা চালাতেই এগুলো মজুদ করা হয়েছিল বলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মনে করছে। বিগত সময়ে জঙ্গীদের ব্যবহার করা অস্ত্রের সঙ্গে উদ্ধারকৃত অস্ত্রের হুবহু মিল রয়েছে। শনিবার গোপন সংবাদের ভিত্তিতে পুলিশ জানতে পারে উত্তরার ১৬ নম্বর সেক্টরের বৌদ্ধ মন্দিরের পাশে খালে সংঘবদ্ধ একটি চক্র বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও গুলি ফেলে রেখেছে। তথ্যের ভিত্তিতে ফায়ার সার্ভিসের একদল ডুবুরি ওই খালে তল্লাশি চালিয়ে ১০৮টি চায়নিজ পিস্তল, ২৫০টি ম্যাগাজিন, ১১টি বেয়নেট ও এক হাজার গুলি উদ্ধার করে। অস্ত্র ও গুলিগুলো পানির নিচে ৮টি ব্যাগে মোড়ানো ছিল। ধারণা করা যায় দেশব্যাপী চলমান সাঁড়াশি অভিযানে ভীত হয়ে সন্ত্রাসীরা হয়ত এখানে মজুদ করতে পারে। বিশেষ করে মাদারীপুরে কলেজ শিক্ষককে হত্যা চেষ্টায় জনতার হাতে আটক শিবিরকর্মী ফায়জুল্লাহ গ্রেফতার ও ক্রসফায়ারে মৃত্যুর পর তারই সহযোগীরা নিজেদের নিরাপদ রাখতে এই ব্যবস্থা গ্রহণ করে থাকতে পারে বলেও অনেকের ধারণা। রাজধানীর এত কাছে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র উদ্ধারে নড়েচড়ে বসেছে প্রশাসন। অস্ত্র গোলাবারুদগুলো নতুন। এগুলো চীনের হলেও বরাবরের মতো আইএসআইর তত্ত্বাবধানে বাংলাদেশে এসেছে বলে অনেকের ধারণা। তাদের সঙ্গে দেশী-বিদেশী একাধিক চক্র জড়িত থাকতে পারে। গোয়েন্দা সংস্থা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যাপক নজরদারি ও সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে সাঁড়াশি অভিযানের মধ্যেও এই ধরনের অস্ত্র উদ্ধার ঘটনা শঙ্কিত হওয়ার মতো। একই সঙ্গে এত অস্ত্রের মজুদ আইনশৃঙ্খলার প্রতি চরম হুমকিস্বরূপ। জঙ্গী বা সন্ত্রাসী সংগঠন এসব অস্ত্র ব্যবহার করার সুযোগ পেলে আইনশৃঙ্খলার চরম অবনতি হতে পারত। এই ধরনের আরও মজুদ অন্য কোথাও আছে কিনা তা অনুসন্ধান জরুরী। প্রয়োজনে সাঁড়াশি অভিযানের পরিধি আরও প্রসারিত করা দরকার বলে আমরা মনে করি। আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহার যে হারে বাড়ছে, সেই তুলনায় উদ্ধার হয় খুবই সামান্য। এই মুহূর্তে আন্ডারওয়ার্ল্ডে কী পরিমাণ অবৈধ অস্ত্র রয়েছে প্রশাসনের কাছে তার কোন সঠিক হিসাব আছে বলে মনে হয় না। দেশের সীমান্তগুলোই মূলত অবৈধ অস্ত্র আসার প্রধান গেট। এক সময় সীমান্তের বেশ কয়েকটি পয়েন্ট দিয়ে ঢুকত অবৈধ অস্ত্রের চালান। সীমান্ত গলে এসব অস্ত্র হাতবদল হয়ে পৌঁছে যেত ঢাকায় জঙ্গী-সন্ত্রাসীদের হাতে। এখন সেই পরিবেশ পরিস্থিতি না থাকলেও মাঝে মাঝে দু-চারটি অস্ত্র উদ্ধারের কথা জানা যায়। অপরাধ বিশ্লেষকরা মনে করেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিরাপত্তামূলক তৎপরতা যখন কম থাকে তখনই জঙ্গী-অপরাধীরা বেপরোয়া হয়ে ওঠে। বলা হচ্ছে বর্তমানে জঙ্গী-সন্ত্রাসীদের হাতে এমন অত্যাধুনিক অস্ত্র আছে, যা আইশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে নেই। উত্তরায় উদ্ধারকৃত অত্যাধুনিক অস্ত্রগুলোই তার প্রমাণ। তাই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতার আরও গতি বাড়ানো দরকার। অস্ত্র ও খুনাখুনি একই সূত্রে গাঁথা। একটি অপরটির সঙ্গে সূত্রবদ্ধ। সীমান্ত দিয়ে আসা অস্ত্র রোধ করতে হবে। বিদ্যমান উৎকণ্ঠাময় বাস্তবতায় কর্তৃপক্ষ দায়িত্বশীল হবেন, এটাই প্রত্যাশা।
×