ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

মাহবুবা সুলতানা

এই ঈদে বাড়ির অন্দরসাজ

প্রকাশিত: ০৫:৩২, ২০ জুন ২০১৬

এই ঈদে বাড়ির অন্দরসাজ

এই ঈদে যদি আমরা বাড়িটিকে নান্দনিক করে তুলতে পারি তাহলে বাহ বা জুটবে অতিথিদের কাছ থেকে, নিজেরাও থাকতে পারব পুরোটা সময় প্রফুল্ল। উৎসবের বাকি মাত্র কয়েকদিন। এই ঈদে বাড়ির ইন্টেরিয়রে বিভিন্ন পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে আলোর সমাহার ঘটিয়ে নান্দনিকতা ফুটিয়ে তুলতে পারেন সহজে। বাড়ির প্রত্যেক ঘরে চাই আলো ব্যবহারে ভিন্নতা। আলোর সঠিক এবং নানান ধরনের ব্যবহার বাড়িকে করে তোলে নান্দনিক এবং আপনার বাড়ির আলোর সাজ হয়ে উঠতে পারে অন্যের কাছে অনুকরণীয়। শোবার ঘর বেডরুমের সাজ ও আলোকসজ্জা হবে আরামদায়ক, রোমান্টিক ও আধুনিক। বেডরুমের আকৃতি ও আসবাবপত্র বুঝে লাইটিং করুন। আসবাবপত্রে যাতে আলো বাধাগ্রস্ত না হয় সেদিকে খেয়াল রাখুন। বেডরুমে উঁচু লাইট ব্যবহার না-করাই ভাল। আলো যাতে আপনার চোখে সরাসরি না পড়ে সেদিকে লক্ষ্য রাখুন। অনেক বেশি আলো আপনার ঘুম বা আরামে বাধা হতে পারে। বসার ঘর ঈদে অতিথি-আপ্যায়নে বসার ঘরটি পরিপাটি করতে হবে সবার আগে। বসার ঘরের আলোকসজ্জা অবশ্যই হতে হবে আধুনিক ও সুন্দর। স্ট্যান্ডিং-লাইট হলে সোফার ডান বা বাম পাশে রাখুন। ঝোলানো সুন্দর বাতি হলে তা মাঝে ঝুলিয়ে তার দু বা চারপাশে সোফা রাখুন। যদি কোনাকুনি করে বাতি রাখেন তবে বসার ঘরটিকে দেখতে বড় দেখাবে। টিভি দেখার সময় অবশ্যই আলো কমিয়ে নিতে হবে। অতি উজ্জ্বল আলোতে টিভি দেখলে তা ক্ষতির কারণ হতে পারে। খাবার ঘর খাবার ঘরের সিলিংয়ে উজ্জ্বল আলো ব্যবহার করুন। এতে ঘরটি বড় ও খোলামেলা লাগবে। আপনার খাবার ঘরের আকৃতি বুঝে বাতির সংখ্যা ঠিক করুন। খাবার ঘরটি যদি ডিজাইন করতে চান তাহলে সিলিং ও লাইটের রঙে সামঞ্জস্য রাখতে পারেন। রান্নাঘর বাড়ির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্থান রান্নাঘর একটি। তাই রান্নাঘরে বাতির পরিমাণ হবে বুঝেশুনে। আপনার রান্নাঘরটি যদি ১০০ বর্গফুটের হয় তাহলে সেখানে লাইটের সংখ্যা হবে ২টি, আর ২৫০ বর্গফুটের হলে ৪টি। সবজি কাটার স্থানটি উজ্জ্বল হবে যাতে কাটাকুটিতে দেখার কোন সমস্যা না হয়। চুলার ওপর অবশ্যই একটি বাতি রাখবেন যাতে রান্না করতে সুবিধা হয়। শিশুর ঘর বাসার ছোট্টমণির ঘরটির আলোকসজ্জার দিকেও নজর দিন। রুমটি হবে তার বয়স অনুযায়ী। সাধারণত আলো ঝলমলে রঙিন পরিবেশ বাচ্চারা পছন্দ করে। কার্টুনের মলাট দেয়া বিভিন্ন আকৃতির লাইট বাচ্চারা পছন্দ করবে। তবে খেয়াল রাখবেন যাতে সেটা অতিরিক্ত না হয়ে যায়। শিশুদের রুমের রঙ অনুযায়ী আলো নির্বাচন করুন। তার পড়ালেখার টেবিলের ওপর অবশ্যই একটি লাইট দেবেন। বাথরুম মানুষের রুচি বোঝা যায় বাথরুম আর রান্নাঘর করে। তাহলে আপনি কেন রুচিশীল হবেন না? মনে রাখবেন বাথরুমে পর্যাপ্ত আলো হওয়াটা জরুরী। বেসিনের আয়নার ওপর লাইট পেসমেন্ট করুন। টাইলসের রঙ হতে হবে হালকা। যেমন হালকা সবুজ বা হলুদ টাইলস হলে তাতে সাদা লাইট দিলে আপনার বাথরুমটি যত ছোটই হোক তা খোলামেলা লাগবে। আলোর উৎস দুই রকম হতে পারে। একটা প্রাকৃতিক, অপরটা কৃত্রিম। প্রাকৃতিক আলোর উৎসগুলোকে একটু ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে ব্যবহার করে আপনি পুরো ঘরকে নান্দনিক করে তুলতে পারেন। পাঠক, আপনাদের জন্য রইল ঘরের অভ্যন্তরীণ আলোকসজ্জা অর্থাৎ ইন্টেরিয়র লাইটিংয়ের বিষয়ে কিছু টিপস-বাড়ির ড্রইংরুমটি সাধারণত ঘরের প্রধান দরজার খুব কাছাকাছি হয়ে থাকে। চেষ্টা করুন এই রুমের জানালাগুলোকে একটু গোছানোভাবে তৈরি করতে। যদি বাড়ির প্রধান দরজা আলাদা করিডোরে হয় তাহলে ড্রইংরুমটি দরজাবিহীন শুধু দেয়াল দিয়ে আলাদা করতে পারেন। এতে আলো-বাতাস বেশি আসবে। ড্রইংরুমের দেয়ালের কিছু অংশে কাচ বসিয়ে দিতে পারেন। এতে বাড়তি আলোর যোগ থাকবে। এখন অনেকেই বাড়িতে কাচের ব্লক ব্যবহার করেন। এতে দিনের আলোকে আপনি একটা ডাইমেনশন দিতে পারবেন। এ ধরনের ব্লক বসাতে খরচ খুব বেশি হয় না। তবে চাইলে আপনি সিলিংয়ের দিকে ব্লক বসাতে পারেন। আমাদের দেশে বাড়ির সিলিংয়ে ফোকর প্রচলন না থাকলেও এখন অনেকেই ছাদের অংশে এ ধরনের ফোকর বসিয়ে থাকেন। এতে ঘরের ছাদঘেঁষে এক ধরনের আলো প্রবেশ করে। ড্রইংরুমের এক-পাশের দেয়ালটুকু পুরোটা কাচ দিয়ে তৈরি করতে পারেন। ছাদের সঙ্গে খানিকটা কাৎ করে এই কাচের দেয়ালটি দাঁড় করিয়ে দিলে কিন্তু মন্দ হবে না। অন্যদিকে কৃত্রিম আলোকসজ্জার ক্ষেত্রে লাইটগুলোকে এমনভাবে ব্যবহার করতে হবে যাতে ঘর গরম হয়ে না ওঠে। খুব শক্তিশালী হ্যালোজেন বাতি ঘরে না রাখাই ভাল। ঘরে দু’ধরনের আলোর ব্যবস্থা রাখবেন। একটি হচ্ছে নান্দনিক, যেখানে আলোর পরিমাণ কম থাকবে এবং আলো বেশ রঙিন ও ছড়ানো-ছিটানো হবে। আরেক ধরনের আলোকব্যবস্থা হলো সাধারণ, যেখানে দু’তিনটি বেশি পাওয়ারের বাতি থেকে আলো ছড়িয়ে পড়বে ঘরের প্রতিটি কোনায়। ঘরে নান্দনিক আলো আনতে স্পটলাইটের বিকল্প নেই। কারণ এই লাইটকে আপনি আপনার ইচ্ছেমতো নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন। আর যে কোন নির্দিষ্ট স্থানে আলো ফেলতে পারলেই ঘরে আলো-আঁধারি ছুটোছুটি করবে। যদি স্পটলাইটের সুযোগ না থাকে তাহলে আলো কোন মাটির মটকা, বেতের ঝুড়ি অথবা বাঁশের খোলের মধ্যে লুকিয়ে ফেলতে পারেন। এতে ঘরের লাইটিংয়ে বিভিন্ন মাত্রা যোগ হবে। দেয়ালগুলো আলোকময় করতে দেয়াল ঝুলিয়ে কিছু বাতি সেট করতে পারেন। আর রুমের যেখানে বাতি আছে সেই জায়গাগুলোতেই কেবলমাত্র ছবি ঝোলান। সেক্ষেত্রে বাতি বসানোর আগেই দেখে নিন কোথায় কোথায় ছবি ঝোলাবেন। একটি বড় কিংবা অনেকগুলো ছোট ছোট রট-আয়রনের মোমবাতির স্ট্যান্ড রাখুন। এগুলো ঘরের সৌন্দর্য বাড়ানোর পাশাপাশি লোডশেডিংয়েও কাজে দেবে। তবে বাতিগুলো যেন অবশ্যই দেয়াল থেকে দূরে থাকে। নইলে দেয়ালে কালি পড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকবে।ঘরে যদি কোন কস্টিউম-কর্নার থাকে সেখানে রঙিন বাতি ব্যবহার করা যেতে পারে। বাতির উপরে অবশ্যই শেড দিয়ে দিন। এটাই বর্তমানে স্টাইল। নইলে খুব খারাপ দেখাবে। কাপড় আর বাঁশের কঞ্চি দিয়ে চমৎকার ল্যাম্প-স্ট্যান্ড বানানো যায়। এ ধরনের ল্যাম্প-স্ট্যান্ড একদিকে যেমন আপনার ঘরের শোভা বাড়াবে তেমনি নান্দনিকতাও ফুটিয়ে তুলবে।
×