ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ভেনিজুয়েলাকে উড়িয়ে সেমিফাইনালে আর্জেন্টিনা

প্রকাশিত: ০৫:২৬, ২০ জুন ২০১৬

ভেনিজুয়েলাকে উড়িয়ে সেমিফাইনালে আর্জেন্টিনা

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ সব সমালোচনা যেন ধুয়ে-মুছে পরিষ্কার করতে মরিয়া লিওনেল মেসির আর্জেন্টিনা। প্রায় দুই যুগের শিরোপা জিততে না পারার বেদনা হয়ত এবারই ঘোচাতে চলেছে দিয়াগো ম্যারাডোনার দেশ। অপ্রতিরোধ্য ছন্দে শতবর্ষী কোপা আমেরিকা ফুটবলের সেমিফাইনালে উঠে সে স্বাক্ষরই রেখেছে জেরার্ডো মার্টিনোর দল। বাংলাদেশ সময় রবিবার সকালে কোয়ার্টার ফাইনালে আর্জেন্টিনা ৪-১ গোলে উড়িয়ে দিয়েছে ভেনিজুয়েলাকে। যুক্তরাষ্ট্রের ফক্সবোরোর জিলেট স্টেডিয়ামে গোটা ম্যাচেই আলো ছড়িয়েছেন অধিনায়ক মেসি ও গোলরক্ষক সার্জিও রোমেরো। পুরো ম্যাচেই অসাধারণ খেলা মেসি একটি গোল করা ছাড়াও দুই গোল বানিয়ে দিয়েছেন। এক গোল করে আর্জেন্টিনার ইতিহাসে সর্বোচ্চ গোলের রেকর্ডও ছুঁয়েছেন ক্ষুদে এই জাদুকর। তবে এর মধ্যেও রোমেরো গোলপোস্টে যে নৈপুণ্য দেখিয়েছেন সেটা রীতিমতো অবিশ্বাস্য। ভেনিজুয়েলাকে বিধ্বস্ত করার ম্যাচে আর্জেন্টিনার হয়ে জোড়া গোল করে স্বরূপে ফিরেছেন গঞ্জলো হিগুয়াইন। মেসি ছাড়া অপর গোলটি করেছেন এরিক লামেলা। ভেনিজুয়েলার একমাত্র গোলদাতা সলোমন রনডন। ফাইনালের টিকেট পাওয়ার মিশনে সেমিফাইনালে আর্জেন্টিনার প্রতিপক্ষ স্বাগতিক যুক্তরাষ্ট্র। বাংলাদেশ সময় বুধবার সকালে অনুষ্ঠিত হবে ম্যাচটি। কিক অফ থেকেই আক্রমণাত্মক ফুটবল খেলতে থাকে আর্জেন্টিনা। যার ফলশ্রুতিতে ৮ ও ২৮ মিনিটে হিগুয়াইনের নৈপুণ্যে ২-০ গোলে এগিয়ে যায় আসরের বর্তমান রানার্সআপরা। এরপর দুর্দান্তভাবে ঘুরে দাঁড়ায় বদলে যাওয়া ভেনিজুয়েলা। প্রথমার্ধের বাকি সময়ে আর্জেন্টিনার রক্ষণভাগকে রীতিমতো তটস্থ করে রাখেন রনডন, মার্টিনেজরা। বিশেষ করে প্রথমার্ধের শেষদিকে দুটি অবিশ্বাস্য সেভের পাশাপাশি একটি পেনাল্টিও রুখে দিয়ে নায়ক বনে যান আর্জেন্টাইন গোলরক্ষক রোমেরো। এই তিনবারই ভেনিজুয়েলা গোল পেতে পারত। ২-০ তে শেষ হওয়া প্রথমার্ধ হয়ে যেতে পারত ২-৩, এমনকি ২-৪! মূলত দুই গোলে পিছিয়ে পড়ার পরই জ্বলে উঠে ডুডামেলের শিষ্যরা। যার ফলশ্রুতিতে ৩৫ থেকে ৪৫ মিনিট পর্যন্ত আক্রমণের ঢেউ বইয়ে দেন ভেনিজুয়েলার ফুটবলাররা। ৩৫ মিনিটে জ্যাভিয়ের মাশ্চেরানোর ভুলে প্রথম ডুবতে বসেছিল আর্জেন্টিনা। কিন্তু দুর্দান্তভাবে ঝাঁপিয়ে সেভ করেন রোমেরো। ৩৯ মিনিটে কর্নার থেকে রনডনের হেডা বার পোস্টে লেগে ফিরে আসে। পরপর দুটি সুবর্ণ সুযোগ হাতছাড়া করা ভেনিজুয়েলা আবারও বঞ্চিত হয় ৪১ মিনিটে। এবার রলফ ফেলটশ্চারের অসাধারণ শট বাঁক খেয়ে বার ঘেঁষে গোলমুখে ঢোকার মুখে ফিস্ট করেন রোমেরো। এরপর ৪৪ মিনিটে রোমেরোর ভুলেই ভেনিজুয়েলা পেয়ে যায় পেনাল্টি। যে কারণে নায়ক হতে হতে খলনায়ক হওয়ার শঙ্কা ছিল! কিন্তু না, এবারও অবিশ্বাস্য দক্ষতায় ম্যানুয়েল সেইজাসের পেনাল্টি শট রুখে দিয়ে হিরো বনে যান রোমেরো। বিরতির পর ৬০ মিনিটে মেসির চোখ ধাঁধানো গোলে ব্যবধান ৩-০ করে আর্জেন্টিনা। এই গোল করেই আর্জেন্টিনার হয়ে ৫৪তম আন্তর্জাতিক গোলের রেকর্ড গড়েন বর্তমান ফিফা সেরা তারকা। অর্থাৎ টুর্নামেন্টে নিজের চতুর্থ গোল করে বার্সিলোনা সুপারস্টার সাবেক তারকা গ্যাব্রিয়েল বাতিস্তুতার দীর্ঘদিনের গোলের রেকর্ড স্পর্শ করেন। ৭০ মিনিটে ভেনিজুয়েলা এক গোল ফেরত দিলেও পরের মিনিটে আর্জেন্টিনার হয়ে চার নম্বর গোল করেন লামেলা। আর্জেন্টিনার সর্বকালের সর্বোচ্চ গোলদাতার রেকর্ডটি দীর্ঘদিন ছিল বাতিস্তুতার দখলে। ২০০২ সালে আন্তর্জাতিক ফুটবল থেকে বিদায়ের আগে ৫৪ গোল করেছিলেন ‘বাতিগোল’ খ্যাত এই আর্জেন্টাইন স্ট্রাইকার। ভেনিজুয়েলার বিপক্ষে এক গোল করে মেসি ছুঁয়ে ফেলেছেন বাতিস্তুতাকে। আর একটি গোল করলেই আর্জেন্টিনার সর্বোচ্চ গোলদাতার রেকর্ডটি এককভাবে নিজের করে নিতে পারবেন মেসি। সেমিফাইনালে যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষেই থাকছে সে সুযোগ। আর্জেন্টিনার জার্সি গায়ে এখনও খেলে যাচ্ছেন এমন খেলোয়াড়ের মধ্যে মেসির সবচেয়ে কাছাকাছি আছেন সার্জিও এ্যাগুয়েরো ও গঞ্জালো হিগুয়াইন। ৭৬ ম্যাচ খেলে এ্যাগুয়েরো করেছেন ৩৩ গোল। আর ৬১ ম্যাচ খেলে হিগুয়াইন করেছেন ২৮ গোল। ম্যাচ শেষে অনন্য রেকর্ড গড়া মেসি বলেন, ‘রেকর্ড গড়তে পেরে আমি সত্যিই আনন্দিত। বাতিস্তুতার পাশে নাম লেখানো সত্যিই বিশেষ কিছু। কিন্তু সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো ম্যাচের ফলাফল।’
×