ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে দুই এ্যাথলেটের আপীল, আইএএএফ বিশ্বের অন্য দেশগুলোর অপরাধ চাপা দিয়েছেÑ দাবি রাশিয়ান ক্রীড়ামন্ত্রী মুটকোর, সাবেক ডোপবিরোধী সংস্থা প্রধানের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা

রাশিয়াই দায়ী এ্যাথলেটদের নিষিদ্ধে!

প্রকাশিত: ০৫:২৬, ২০ জুন ২০১৬

রাশিয়াই দায়ী এ্যাথলেটদের নিষিদ্ধে!

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ রাশিয়ার ট্র্যাক এ্যান্ড ফিল্ড এ্যাথলেটরা আগামী অলিম্পিকে থাকছেন না। বিষয়টি নিশ্চিত হয় শুক্রবার রাতে ভিয়েনায় অনুষ্ঠিত এ্যাথলেটিক্স ফেডারেশন্সের আন্তর্জাতিক সংস্থার (আইএএএফ) গবর্নিং বডির সভা শেষে। নবেম্বরে দেয়া সাময়িক নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকায় আগস্টে রিও ডি জেনিরো অলিম্পিকের এ্যাথলেটিক্সে অংশ নেয়া হবে না রাশিয়ানদের। আর আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটিও (আইওসি) এই সিদ্ধান্তে কোন হস্তক্ষেপ করা দূরের কথা সেটাকে সমর্থনও দিয়েছে। বিষয়টি নিয়ে রাশিয়া জুড়েই চলছে তোলপাড়। দেশটির কেন্দ্রীয় তদন্তকারীরা সাবেক এন্টি ডোপিং ল্যাবরেটরি প্রধান গ্রিগোরি রডচেনকভের বিরুদ্ধে মামলা ঠুকে দিয়েছে। রাশিয়ার ক্রীড়ামন্ত্রী ভিটালি মুটকো দাবি করেছেন শুধু রাশিয়ান এ্যাথলেটিক ফেডারেশনের ওপর ঢালাওভাবে দোষ চাপিয়ে বিশ্বব্যাপী অন্য অপরাধসমূহকে আড়াল করেছে আইএএএফ। কিন্তু আইএএএফ প্রধান সেবাস্তিয়ান কো উল্টো অভিযোগ করেছেন এ্যাথলেটদের এই দুর্ভাগ্য বরণের জন্য দায়ী মূলত রাশিয়াই। এই নিষেধাজ্ঞা অন্যায় হিসেবে দাবি করে ক্রীড়া সালিশ-নিস্পত্তি আদালতে এটি বাতিলের আপিল করেছেন দুই রাশিয়ান এ্যাথলেট। রেস ওয়াকার ডেনিস রিঝেগোরোদভ ও সভেতলানা ভাসিলিয়েভা এ আপিল করেন। রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা পেয়ে রাশিয়ার এ্যাথলেটরা বড় আকারেই নিষিদ্ধ ড্রাগ গ্রহণ করে থাকেন এমন অভিযোগে গত নবেম্বরেই সাময়িক নিষেধাজ্ঞা ছিল রাশিয়ান এ্যাথলেটিক ফেডারেশনের ওপর। ২৭ সদস্যের কাউন্সিল ভোটে সেই সাময়িক নিষেধাজ্ঞা বর্ধিত করার রায় দেয় আইএএএফ। ঘটনাটির সূত্রপাত মূলত একটি ডকুমেন্টারি মুভি থেকে। ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে জার্মানির এআরডি চ্যানেল একটি মুভি মুক্তি দেয়। মুভিটির নাম ছিল, ‘দ্য ডোপিং সিক্রেট- হাউ রাশিয়া ক্রিকেটস চ্যাম্পিয়ন্স’ (ডোপ রহস্য- যেভাবে রাশিয়া চ্যাম্পিয়নদের তৈরি করে)। ওষুধের অসদ্ব্যবহার এবং দুর্নীতি রাশিয়ান ক্রীড়াক্ষেত্রে কেমন প্রভাব ফেলেছে সেটা দেখানো হয় এ ছবিতে। পরে সরজমিনে কিছু প্রত্যক্ষ ঘটনা নিয়ে একটি ডকুমেন্টারিও হয়। এরপর বিশ্ব ডোপবিরোধী সংস্থার (ডব্লিউএডিএ) দৃষ্টিতে আসে বিষয়টি এবং টনক নড়ে কর্তাদের, রাশিয়ার এ্যাথলেটদের ওপর বিশেষ তদন্ত পরিচালনা করে তারা দীর্ঘদিন। অবশেষে গত বছর নবেম্বরে ব্যাপক ডোপপাপের তথ্যাদি ও ঘটনা শনাক্ত করে ডব্লিউএডিএ এবং তাদের রিপোর্টের ভিত্তিতেই রাশিয়ান এ্যাথলেটিক্স ফেডারেশনের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়। গত ১৩ নবেম্বর আইএএএফ রাশিয়ান মেম্বার ফেডারেশনকে (রুসাফ) সাময়িকভাবে এবং ২৬ নবেম্বর পূর্ণ সমর্থন নিয়ে নিষিদ্ধ করে। ফলে এরপর থেকে সব আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে পারেনি রাশিয়ান এ্যাথলেটরা। আর শুক্রবার আইএএএফের ঘোষণার কারণে এখন অলিম্পিকেও অংশ নেয়া হবে না রাশিয়ার ট্র্যাক এ্যান্ড ফিল্ড এ্যাথলেটদের। রাশিয়াকে দেয়া এ নিষেধাজ্ঞায় দেশটির প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনও তীব্র ক্ষোভ জানিয়ে সিদ্ধান্তকে ‘অন্যায় ও অবিচার’ বলে দাবি করেন। আর দেশের ক্রীড়ামন্ত্রী মুটকো এখন দাবি করলেন এর মাধ্যমে আইএএএফ দৃষ্টির আড়াল করল বিশ্বের অন্য ডোপ কলঙ্কগুলোকে। তিনি বলেন, ‘রাশিয়ান এ্যাথলেটিক ফেডারেশনের ওপর সব দোষ চাপিয়ে আসলে আইএএএফ নিজেদের দায়িত্ব পালনের দায়টা সেরেছে। কিন্তু আইএএএফকেই এখন বিষয়টি খোলাসা করতে হবে। আরেকটি বিষয় এখানে সবাইকে জানাতে হবে পরিষ্কার করে যে আইএএএফ সভাপতি নিজেই ঘুষ গ্রহণের অভিযোগে তদন্তাধীন আছেন।’ রাশিয়ার এ্যাথলেটিক ফেডারেশনও দারুণ সক্রিয় হয়ে উঠেছে নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকার পর। কেন্দ্রীয় অপরাধ তদন্ত কর্মকর্তাদের কাছে তারা মামলা ঠুকে দিয়েছে রাশিয়ান এন্টি ডোপিং ল্যাবরেটরির সাবেক প্রধান রডচেনকোভের বিরুদ্ধে। তার বিরুদ্ধে মামলায় বলা হয়েছে তিনি তার কার্যালয়ের অপব্যবহার করেছেন। তিনি অবশ্য দায়িত্ব শেষে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমিয়েছেন। সে সময় তিনি বলেছিলেন, ‘২০১৪ সোচি অলিম্পিকে অনেক এ্যাথলেটকে প্রস্তুত করার জন্য রাশিয়াকে লড়তে হচ্ছে ডোপিংয়ের বিরুদ্ধে।’ তদন্তকারীরা এখন বলছেন রডচেনকোভ ২০১৪ সালে তার নিম্ন পদস্থদের নির্দেশ দিয়েছিলেন এ্যাথলেটদের দেয়া রক্তের নমুনাগুলো ওলট-পালট করতে। সেসব সংরক্ষণেরও কোন দায়িত্ব নেননি তিনি। তবে এসব কার্যক্রম আরও আগেই পরিচালনা করা উচিত ছিল রাশিয়ার এমনটাই দাবি করলেন আইএএএফ প্রধান সেবাস্তিয়ান কো। অনেকে বলছেন রাশিয়ান এ্যাথলেটিক ফেডারেশনকে নিষিদ্ধ করায় যারা দোষী নয় তারাও বঞ্চিত হচ্ছে এবার অলিম্পিকে অংশ নিতে না পেরে। আইএএএফ সভাপতি কো মনে করছেন এজন্য দায়ী রাশিয়ার কর্মকর্তারাই। তিনি বলেন, ‘আমি একটা বিষয়ে খুবই পরিষ্কারভাবে বলতে চাই যে কোন নির্দোষ এ্যাথলেটের বিপক্ষে আমরা কোন ব্যবস্থা নেইনি।
×