ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

জিপিএ-৫ পেয়েও অনেকে স্থান পায়নি ॥ কলেজে ভর্তি চলছে

প্রকাশিত: ০৫:১২, ২০ জুন ২০১৬

জিপিএ-৫ পেয়েও অনেকে স্থান পায়নি ॥ কলেজে ভর্তি চলছে

বিভাষ বাড়ৈ ॥ প্রথম মেধাতালিকা অনুসারে সারাদেশের কলেজগুলোতে চলছে একাদশ শ্রেণীর ভর্তি কার্যক্রম। এবার শিক্ষার্থীদের চাহিদার বিবেচনায় সর্বাধিক পছন্দের তালিকায় শীর্ষে আছে রাজউক উত্তরা মডেল কলেজ। সারাদেশে সর্বাধিক সংখ্যক শিক্ষার্থী এই কলেজে ভর্তির জন্য আবেদন করেছে। দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানে যথাক্রমে আছে ঢাকা সিটি কলেজ ও আদমজী ক্যান্টনমেন্ট কলেজ। এদিকে এখন পর্যন্ত বড় ধরনের কোন বিড়ম্বনা ছাড়া কার্যক্রম চললেও সর্বোচ্চ গ্রেড জিপিএ-৫ পেয়েও অসংখ্য শিক্ষার্থী প্রথম মেধাতালিকায় স্থান না পাওয়ায় উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়েছে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মাঝে। ৫ থেকে ১০টি কলেজে আবেদন করেও বহু মেধাবীর কেবল অপেক্ষমাণ তালিকায় থাকার ঘটনায় বাড়ছে এ উদ্বেগ। তবে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও শিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তারা অপেক্ষমাণ তালিকায় স্থান পাওয়া শিক্ষার্থীদের আশ্বস্ত করে বলেছেন, উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। এবার একেকজন শিক্ষার্থী সর্বোচ্চ ২০টি কলেজে আবেদনের সুযোগ পেয়েছে। অনেকেই ৫ থেকে ১০ কলেজে ভর্তির জন্য মনোনীত হয়েছে। কিন্তু তারা যখন একটি কলেজে ভর্তি হয়ে বাকি প্রতিষ্ঠানের আসন ছেড়ে দেবে তখনই অপেক্ষমাণ তালিকার প্রার্থীরা সামনে চলে আসবে। অপেক্ষমাণ তালিকায় থাকা শিক্ষার্থীদেরও চিন্তার কিছু নেই। আগামী ২২ তারিখে প্রথম পর্বের ভর্তির পর স্বাভাাবিকভাবেই অপেক্ষমাণ তালিকা থেকে শিক্ষার্থীরা চলে আসবে মেধা তালিকায়। শিক্ষার্থী কোন কলেজে ভর্তির পরও পছন্দের কোন কলেজে আসন ফাঁকা পেলে পরবর্তীতে সেখানে ভর্তির সুযোগ পাবে। ফলে ভয়ের কিছু নেই বলে আশ্বস্ত করছেন কর্মকর্তারা। শিক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, শনিবার থেকে প্রথম মেধাতালিকার ভর্তি শুরু হয়েছে। চলবে ২২ জুন পর্যন্ত। এরপই ২৪ জুন অপেক্ষমাণদের মেধাতালিকা প্রকাশ হবে। পর দিন ২৫ থেকে ২৭ জুন ওই মেধাতালিকায় স্থান প্রাপ্তরা ভর্তি হতে পারবে। সেই তালিকার পরও যদি দেখা যায় কলেজগুলোতে অধিকসংখ্যক আসন খালি পড়ে আছে তবে ২৮ জুন থেকে ভর্তি কার্যক্রম সকলের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়ার পরিকল্পনা আছে শিক্ষা বোর্ডের। বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান বলেছেন, আমরা চাইব যাতে কোন শিক্ষার্থী ভর্তির বাইরে না থাকে। তবে যেসব প্রতিষ্ঠান আশানুরূপ শিক্ষার্থী পাবে না তাদের স্বার্থ রক্ষা করাও ভর্তি উন্মুক্ত করার একটা কারণ বলে বলছেন অনেক কর্মকর্তা। শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেছেন, সরকারী-বেসরকারী কলেজগুলোতে একাদশে ভর্তিতে এবার ২১ লাখ ১৪ হাজার ২৬৫টি আসন রয়েছে। ফলে সাত লাখ আসন এবার ফাঁকা থাকবে। সবাই তার পছন্দের কলেজ স্বাভাবিকভাবেই নাও পেতে পারে। তবে আসনের জন্য কেউ ভর্তি হতে পারবে না- এমন হবে না। তবে এবার একেকজন শিক্ষার্থী ১০টি অনলাইনে ও এসএমএসে ১০টি কলেজে আবেদনের সুযোগ পেয়েছে। ফলে অনেকেই একাধিক কলেজে ভর্তির জন্য মনোনীত হয়েছে। এ অবস্থান স্বাভাবিকভাবেই প্রথম পর্বের ভর্তির পর অপেক্ষমাণ তালিকা থেকে অধিক শিক্ষার্থী চলে আসবে মেধাতালিকায়। ভর্তি প্রক্রিয়ার ওপর সার্বক্ষণিক নজর রাখাছেন ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের কলেজ পরিদর্শক ড. আসফাকুস সালেহীন। সর্বোচ্চ গ্রেড জিপিএ-৫ পেয়েও অসংখ্য শিক্ষার্থী প্রথম মেধাতালিকায় স্থান না পাওয়ায় উদ্বেগের তথ্য আসছে তার কাছে। ৫ থেকে ১০টি কলেজে আবেদন করেও বহু মেধাবীর কেবল অপেক্ষমাণ তালিকায় থাকার ঘটনায় বিষয়ে তিনি বলছিলেন, হ্যাঁ বিষয়টি আমাদের কাছে আসছে। অনেকেই ফোন করে বলছেন, আমার ছেলে ৮ থেকে ৯টি কলেজে আবেদন করেও একটিতে মেধাতালিকায় আসেনি। সবগুলোতেই অপেক্ষমাণ তালিকায় নাম। এ কর্মকর্তা বলছিলেন, এটা হতে পারে। যেহেতু একেকজন শিক্ষার্থী অনেক প্রতিষ্ঠানে মনোনীত হয়েছে তাই এটা হতেই পারে। তবে প্রথম মেধা তালিকার ভর্তির পর দেখা যাবে অপেক্ষমাণ তালিকার অধিকাংশই তাদের পছন্দের কলেজে মনোনীত হবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তবে এটা সত্যি যে ভাল মানের প্রতিষ্ঠানে আসন সংখ্যা কম। কিন্তু সকলের চাহিদাও সেখানেই। ফলে প্রতিযোগিতা অধিক। ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের বিদ্যালয় পরিদর্শক মইনুল ইসলাম বলছিলেন, একেকজন অনেক প্রতিষ্ঠানে মনোনীত হয়েছে, ফলে তারা যখন একটি কলেজে ভর্তি হবেন বাকিগুলোর আসন খালি হবে। দেখা গেছে যারা সবচেয়ে ভাল প্রতিষ্ঠানে মনোনীত হয়েছে, তারা অন্য প্রতিষ্ঠানেও মানোনীত হয়েছেন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ভাল মানের প্রতিষ্ঠানে প্রতিযোগিতা তো থাকবেই। যেখানে রাজধানীর সর্বোচ্চ চাহিদাসম্পন্ন ভাল প্রতিষ্ঠানগুলোতে আসন ৫ হাজারের কম, সেখানে গোল্ডেন জিপিএ-৫ ই পেয়েছে এবার ১৮ হাজার। ফলে প্রতিযোগিতা কোন পর্যায়ে হচ্ছে বোঝাই যায়। এদিকে এবার শিক্ষার্থীদের চাহিদার বিবেচনায় সর্বাধিক পছন্দের তালিকায় শীর্ষে আছে রাজউক উত্তরা মডেল কলেজ। দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানে যথাক্রমে আছে ঢাকা সিটি কলেজ ও আদমজী ক্যান্টনমেন্ট কলেজ। বোর্ড ও কলেজগুলো থেকে পাওয়া তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, রাজউক উত্তরা কলেজে সর্বাধিক ৩২ হাজার ৭৫০ জন শিক্ষার্থী আবেদন করেছে। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ঢাকা সিটি কলেজ ৩১ হাজার ৯৬১টি আবেদন। ৩০ হাজার ৫৮ আবেদন নিয়ে তৃতীয় অবস্থানে আদমজী ক্যান্টনমেন্ট কলেজ। চট্টগ্রাম সরকারী সিটি কলেজ ২৯ হাজার ৮৬২ আবেদন নিয়ে চতুর্থ। পঞ্চম অবস্থানে সরকারী বাঙলা কলেজ, ষষ্ঠ অবস্থানে কবি নজরুল সরকারী কলেজ, সপ্তম বিএএফ শাহীন কলেজ (তেজগাঁও), অষ্টম ঢাকা কলেজ, নবম রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজ, দশম ঢাকার সরকারী শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ। এরপর এগারোতম অবস্থানে রয়েছে রাজশাহী সরকারী সিটি কলেজ। এরপর যথাক্রমে চিটাগাংয়ের ওমরগণি এমইএস কলেজ, বিএএফ শাহীন কলেজ (কুর্মিটোলা), নিউ গভ: ডিগ্রী কলেজ রাজশাহী, চট্টগ্রামের হাজী মুহম্মদ মহসীন কলেজ, সরকারী আনন্দমোহন কলেজ, রাজশাহী কলেজ, বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ পাবলিক কলেজ, ময়মনসিংহের শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম কলেজ ও নারায়ণগঞ্জের সরকারী তোলারাম কলেজ। উল্লেখ্য, এবার দুই মাধ্যমে আবেদন করেছে ১৩ লাখ এক হাজার ৯৯ জন মাধ্যমিক পাস করা কলেজ ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী। আবেদন জমা পড়েছে ৪৪ লাখ ৯২ হাজার। আবেদনকারীদের মধ্যে নয় লাখ ৩৭ হাজার অনলাইনে ও বাকিরা আবেদন করেছে এসএমএসে। বরিশালে ৬৫ হাজার ১০২, চট্টগ্রামে এক লাখ ৭ হাজার ৩৩০, কুমিল্লায় এক লাখ ২৬ হাজার ৩৫৯, ঢাকায় চার লাখ ৯ হাজার ৬৭৫, দিনাজপুরে এক লাখ ৩২ হাজার ৪৬৮, যশোরে এক লাখ ২৬ হাজার ৭৪৯, সিলেটে ৭৩ হাজার ৭১, মাদরাসা বোর্ডে এক লাখ ১৪ হাজার ৫৫৪ এবং কারিগরি বোর্ডে এক লাখ ১০ হাজার ৮০৭ জন আবেদন করেছে। গত ১১ মে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়, যাতে ১৬ লাখ ৪৫ হাজার ২০১ জন অংশ নিয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন ১৪ লাখ ৫২ হাজার ৬০৫ জন। এবার জিপিএ-৫ পেয়েছে এক লাখ ৯ হাজার ৭৬১ শিক্ষার্থী।
×