ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

মাহে রমজান

প্রকাশিত: ০৫:০৮, ২০ জুন ২০১৬

মাহে রমজান

অধ্যাপক মনিরুল ইসলাম রফিক ॥ পবিত্র মাহে রমজানের আজ ১৪তম দিবস। আজ যাকাত সম্পর্কে কিঞ্চিত আলোচনা। যাকাত ইসলামের পঞ্চস্তম্ভের অন্যতম এবং মহান আল্লাহর ফরজকৃত একটি বাধ্যতামূলক দেয়। কুরআন মাজীদে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ৮২ বার যাকাতের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। সূরা তাওবার ৬০নং আয়াতে সুস্পষ্ট ভাষায় যাকাত ফরজ করা হয়েছে এবং তা ব্যয়ের খাতসমূহ নির্দিষ্ট করে দেয়া হয়েছে। যদিও ইসলামের সূচনাকাল হতেই এর প্রচলন ছিল, দ্বিতীয় হিজরীতে রোজা ফরজ হওয়ার পর একই বছরের শাওয়াল মাসে যাকাত ফরজ হয়। তথাপি এর পূর্ণাঙ্গ ও সুশৃঙ্খল ব্যবস্থা মক্কা বিজয়ের পর ক্রমান্বয়ে গড়ে ওঠে। নবম হিজরীতে যাকাতের বিধান পূর্ণাঙ্গরূপে কার্যকর করা হয়। কুরআন মাজীদের বহু স্থানে বলা হয়েছে, ‘তোমরা নামাজ কায়েম করো এবং যাকাত দাও।’ মহানবী হযরত মুহাম্মদ (স) বলেন, ইসলামের মূলভিত্তি পাঁচটি : এই সাক্ষ্য দেয়া যে, আল্লাহ ব্যতীত কোন ইলাহ নেই এবং মুহাম্মদ (স) আল্লাহর বান্দা ও রাসূল, নামাজ কায়েম করা, যাকাত আদায় করা, হজ আদায় করা এবং রমজানের রোজা রাখা।’-(মিশকাত)। যাকাত ফরজ সম্পর্কে আরও বহু হাদীস বিদ্যমান। সাহাবী ইবনে আব্বাস (রাদি.) বলেন, আল্লাহ তায়ালা তার নবীকে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ (আল্লাহ ব্যতীত কোন ইলাহ নেই) কালিমাসহ প্রেরণ করেছিলেন। লোকেরা তা গ্রহণ করার পর তাদের প্রতি নামাজ ফরজ করা হয়। তারা তাও পালন করতে থাকলে তাদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়। তারা এটাও সত্যরূপে গ্রহণ করলে তাদের ওপর যাকাত ফরয করা হয়।’ অতএব যাকাত একটি বাধ্যতামূলক কর্তব্য এবং আর্থিক ইবাদত। কোন ব্যক্তি স্বেচ্ছায় যাকাত প্রদান না করলে তার নিকট হতে রাষ্ট্র তা বল প্রয়োগে আদায় করবে। যাকাত প্রদান না করা একটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ। মহান আল্লাহ এবং তার রাসূল (স) যাকাত আদায়ের জন্য উৎসাহিত করেছেন এবং কৃপণতাবশত তার পরিশোধ না করার পরিণতি সম্পর্কে সতর্ক করেছেন। যে সব শর্তসাপেক্ষে মালের ওপর যাকাত ধার্য করা হয় তা হলো : (১) মালের ওপর পূর্ণ একটি (চান্দ্র) বছর পূর্ণ মালিকানা বিদ্যমান থাকতে হবে। (২) মাল এমন প্রকৃতির হতে হবে যার ওপর যাকাত ধার্য হতে পারে। (৩) মাল নিসাব পরিমাণ বা নিসাবের মূল্যের সমপরিমাণ হতে হবে। (৪) ঐ নিসাব পরিমাণ মাল তার মৌলিক প্রয়োজনের অতিরিক্ত হতে হবে। মালিকানা বলতে কোন বস্তু ও ব্যক্তির মধ্যকার শরীয়াহসম্মত যোগসূত্রকে বোঝায়, যা ব্যক্তিকে ঐ বস্তু নিঃশর্তভাবে ভোগ ব্যবহারের অধিকার দেয় এবং অপর লোকের হস্তক্ষেপ বাধা দেয়। (ইসলামের যাকাত বিধান ১/৯০)। নগদ অর্থ, সোনা, রুপা, ব্যবসায়িক পণ্য, পালিত পশু, কৃষিজপণ্য ইত্যাদির ওপর যাকাত ধার্য হয়। ওয়াকফ সম্পত্তি, সরকারী সম্পত্তি, নিত্য প্রয়োজনীয় ব্যবহার্য জিনিস, বাড়িঘর ইত্যাদির ওপর যাকাত ধার্য হয় না। কৃষিজ ফসল ফলমূল ইত্যাদির ক্ষেত্রে পূর্ণ এক বছর মালিকের দখলে থাকা শর্ত নয়। তা যখন আহরিত হয় তখন তার ওপর যাকাত (উশর) ধার্য হয়ে থাকে। সুতরাং আসুন, আমরা যাকাত প্রদানের মাধ্যমে মাহে রমজানে আমাদের সহায় সম্পত্তি পবিত্র করে তুলি এবং গরিব দুঃখীদের হক আদায় করে আল্লাহর কাছে নিজেকে তার প্রিয়ভাজন করার প্রয়াস চালাই।
×