ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

নিন্দিত হত্যাকাণ্ড

প্রকাশিত: ০৪:১৮, ২০ জুন ২০১৬

নিন্দিত হত্যাকাণ্ড

যুক্তরাজ্যের মতো অপেক্ষাকৃত নিরাপদ দেশে প্রকাশ্য দিবালোকে একজন এমপির হত্যাকা- শুধু ব্রিটেনবাসীকে নয়, একই সঙ্গে স্তম্ভিত করেছে সমগ্র বিশ্ববাসীকেও। এখানে উল্লেখ করা আবশ্যক, লেবার পার্টির সদস্য ৪১ বছর বয়সী জো কক্সকে গত বৃহস্পতিবার নিজ নির্বাচনী এলাকা উত্তর ইংল্যান্ডের ইয়র্কশায়ারের ব্রিস্টলে দিনদুপুরে ছুরি মেরে ও গুলি করে হত্যা করা হয় নির্মমভাবে। তিনি যুক্তরাজ্যের ইউরোপীয় ইউনিয়নে (ইইউ) থেকে যাওয়ার পক্ষে জনসমর্থন আদায়ে প্রচার চালাচ্ছিলেন। হত্যাকারী সন্দেহে ৫২ বছর বয়সী টমাস মেয়ার নামের এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেছে ব্রিটিশ পুলিশ। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের এক সময়ের নব্য নাৎসিবাদী সংগঠন ন্যাশনাল এ্যালায়েন্সের (এনএ) কট্টর সমর্থক। এমপি জো কক্স নারী, অভিবাসী ও শরণার্থী ইস্যুতে বৈষম্য দূরীকরণে নিয়মিত প্রচার চালাতেন। আর এ কারণেই তিনি কট্টরপন্থী জাতীয়তাবাদীদের আক্রমণের শিকার বলে ধারণা করা হচ্ছে। জো কক্সের অকালমৃত্যুতে শোক প্রকাশের জন্য সোমবার সংসদ অধিবেশন ডেকেছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী। এ ঘটনায় ব্রিটেনের ইইউতে অবস্থানবিষয়ক প্রচার স্থগিত করা হয়েছে। এদিন সন্ধ্যায় পার্লামেন্ট চত্বরে জোর প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে হাজির হন প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন ও লেবার পার্টির নেতা জেরেমি করবিনসহ যুক্তরাজ্যের প্রায় সব রাজনীতিক। এটি গণতান্ত্রিক রাজনীতির একটি প্রকৃষ্ট উদাহরণ। ব্রিটিশ এমপি জো কক্সের মর্মান্তিক হত্যাকা-ে গভীর শোক প্রকাশ করে বার্তা পাঠিয়েছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ১৯৯০ সালে আইরিশ আর্মির গাড়িবোমা হামলায় কোন ব্রিটিশ এমপির মৃত্যুর পর এটাই প্রথম এ ধরনের ঘটনা। জো কক্স এতদিন ধরে ব্রেক্সিটের বিপক্ষে প্রচার চালাচ্ছিলেন। খুন হওয়ার তিন মাস আগে থেকেই তিনি ই-মেইলে প্রায় নিয়মিত হত্যার হুমকিসহ হেট মেসেজ পেয়ে আসছিলেন। এ ব্যাপারে ব্রিটিশ পুলিশ ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে আশ্বাসও দিয়েছিল। তবে পুলিশ সক্রিয় হওয়ার আগেই আততায়ীরা খুন করে ফেলল একজন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিকে। এ নিয়ে ব্রিটিশ গণমাধ্যমে চলছে তীব্র সমালোচনা। যুক্তরাজ্যের ২৩ জুন অনুষ্ঠেয় ইইউ প্রশ্নে গণভোট যতই এগিয়ে আসছে, এর পক্ষে-বিপক্ষের প্রচার ততই তীব্র হয়ে উঠছে। বাড়ছে উত্তেজনা, ক্ষোভ-অসন্তোষ। ইইউ জোটের মধ্যে থেকে অর্থনীতি, আইন, অভিবাসনসহ বিভিন্ন বিষয়ে যুক্তরাজ্যের স্বার্থ রক্ষা হচ্ছে নাÑ এই যুক্তিতে দেশটির রাজনীতিক ও নাগরিকদের একটি বড় অংশই জোট ত্যাগের পক্ষে। গণভোটের চূড়ান্ত রায় যাই হোক না কেন, তার আগেই ঘটে গেল জো কক্সের মর্মান্তিক হত্যাকা-। এটি অসহিষ্ণু কর্মকা-ের একটি নমুনা, গণতন্ত্রে যার স্থান নেই। মানবাধিকারের চূড়ান্ত লঙ্ঘন তো বটেই। বাংলাদেশে সন্ত্রাসী ও জঙ্গী দমন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষা তালেবান-আইএস আছে কি নেই ইত্যাদি প্রশ্নে যুক্তরাজ্য প্রায়ই যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে গলা মিলিয়ে সমালোচনা করে থাকে। বাংলাদেশে মানবাধিকার ও নাগরিক নিরাপত্তা নেই বলে অভিযোগ করতেও দ্বিধা করে না। সে ক্ষেত্রে নিজেদের দেশের অবস্থার কথা একবারও ভাবে না। ব্রিটেনের জো কক্সের হত্যাকা- এবং আমেরিকার অরল্যান্ডোর ঘটনা প্রমাণ করে যে, বর্তমান বিশ্বে সন্ত্রাসের ব্যাপ্তি আন্তর্জাতিক। খোদ ব্রিটিশ এমপিরা শিকার হচ্ছেন সন্ত্রাসের। ফ্রান্সে সস্ত্রীক পুলিশ কর্মকর্তা নিহত হয়েছেন সন্ত্রাসীদের নৃশংস হামলায়। সন্ত্রাসীদের কোন ধর্ম নেই, জাত-পাত-বর্ণ নেই; বরং সর্বত্রই তারা সন্ত্রাসী। মানবতার শত্রু। যৌথভাবে সম্মিলিত উদ্যোগে এদের মোকাবেলা ও নির্মূল করতে হবে। এ বিষয়ে বিশ্বকে একমত ও ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। বিশ্বশান্তি ও সম্প্রীতির নিঃস্বার্থ অবদানের জন্য জো কক্স স্মরণীয় হয়ে থাকবেন। তার মৃত্যুতে আমরা জানাই গভীর শোক ও সমবেদনা।
×