ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

‘জঙ্গীবাদ হারাম’

প্রকাশিত: ০৪:১৮, ২০ জুন ২০১৬

‘জঙ্গীবাদ হারাম’

ধর্মের অপব্যাখ্যা দিয়ে চলা জঙ্গী সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে দেশে প্রথমবারের মতো লক্ষাধিক আলেমের ফতোয়া প্রকাশিত হয়েছে। জঙ্গীবাদীদের মনোবৈকল্য দূর করা এ ফতোয়া প্রকাশের উদ্দেশ্য। সন্ত্রাস ও জিহাদ যে এক জিনিস নয় এবং জঙ্গীরা ‘শহীদী মৃত্যু’ বলে যা প্রচার করছে সেটাও ঠিক নয়Ñ তা পবিত্র কোরান-হাদিসের আলোকে যুক্তি দিয়ে তুলে ধরা হয়েছে ফতোয়ায়। বলাবাহুল্য কোন তত্ত্ব বা দর্শন সম্পর্কে সহমত পোষণ না করতে পারলে ভিন্নমত প্রতিষ্ঠার জন্য দরকার আরেকটি তত্ত্ব বা দর্শনের। কলমের বিপক্ষে দাঁড়াবে আরেকটি কলম, চাপাতি বা ছুরি নয়। ধর্ম ব্যবসায়ীরা ধর্মের দোহাই দিয়ে যেসব অধর্ম করে বেড়ায় ধর্মের যুক্তিপূর্ণ সঠিক ব্যাখ্যাই হতে পারে তার যোগ্য জবাব। শনিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এক লাখ মুফতি, আলেম-ওলামার স্বাক্ষর সংবলিত সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদবিরোধী মানবকল্যাণে শান্তির ফতোয়া প্রকাশ করা হয় যেটিতে ইসলামের নামে জঙ্গীবাদ ও আত্মঘাতী হামলাকে সুস্পষ্টভাবে হারাম বলে আখ্যা দেয়া হয়েছে। মাদ্রাসা মানেই যেমন জঙ্গীদের আস্তানা নয়, তেমনি বিভিন্ন সময়ে আটককৃত জঙ্গীবাদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের অধিকাংশই মাদ্রাসা শিক্ষায় শিক্ষিতÑ এটাও অনস্বীকার্য। তবু দুয়ে দুয়ে চার মেলানো অযৌক্তিক। আজ দেশে এটা অত্যন্ত স্পষ্ট হয়ে উঠেছে যে পবিত্র ইসলাম ধর্মের অপব্যাখ্যা দিয়ে জঙ্গীবাদের সৃষ্টি করা হচ্ছে। বিশেষ করে মাদ্রাসার অল্প বয়সী ছাত্রদের এই মানবধ্বংসী পথে টেনে আনা হচ্ছে ধর্মকে পুঁজি করে। আর এটা করছে ধর্ম ব্যবসায়ীরা তথা ধর্মভিত্তিক রাজনীতির ধ্বজাধারীরা। বহু ধর্মভীরু মুসল্লিকেও তারা বিভ্রান্ত করছে। ফলে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের বহু ধর্মভীরু মানুষ ধর্মের দোহাই দিয়ে সন্ত্রাসী কার্যক্রমে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে তেমনভাবে সোচ্চার হন না। অথচ ইসলাম শান্তির ধর্ম, এখানে জঙ্গীবাদের বিন্দুমাত্র স্থান নেই। আমরা দেখেছি এ দেশকে জঙ্গীবাদী রাষ্ট্র বানানোর প্রচেষ্টা বার বার ব্যর্থ হয়েছে অতীতে। জামা’আতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ সে চেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হয়েছে। তৎপর ছিল হিযবুত তাহ্রীরসহ নানা নামের ইসলামী দল। দেশে একযোগে ৬৩ জেলায় বোমার বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছিল। পহেলা বৈশাখে রমনার বটমূলে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে, উদীচীর অনুষ্ঠানে, নারায়ণগঞ্জ, ময়মনসিংহ, যশোরসহ বিভিন্ন স্থানে বোমা বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছিল। এমনকি হযরত শাহজালালের মাজারে, বিচারালয়ে ও শিক্ষাঙ্গনেও বোমার বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছিল। শায়খ আবদুর রহমান ও বাংলা ভাইয়ের ভয়ঙ্কর জঙ্গী কর্মকা- জনগণকে উদ্বিগ্ন করে তুলেছিল। সম্প্রতি দেশে জঙ্গীদের এমন কিছু তৎপরতার সংবাদ গণমাধ্যমে এসেছে যা জানিয়ে দিচ্ছে জঙ্গীরা তাদের কৌশল পরিবর্তনের মাধ্যমে মানবতাবিনাশী কর্মকা- অব্যাহত রেখেছে। মানুষ শান্তি চায়। হানাহানি কারও কাম্য নয়। বাংলাদেশকে জঙ্গী রাষ্ট্রে পরিণত করার লক্ষ্যে একাত্তরের পরাজিত শক্তির যে কোন চেষ্টা ব্যর্থ করতে দল ও মতের উর্ধে উঠে স্বাধীনতার পক্ষের সব শক্তিকে তথা দেশবাসীকে সম্মিলিতভাবে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারকাজ সম্পন্ন হতে এখনও অনেক পথ পাড়ি দিতে হবে। আগামীতে যত বাধাই আসুক বাংলাদেশ তার পথের কাঁটা সরিয়ে শান্তি ও সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাবেÑ এমনই প্রত্যয় ও সঙ্কল্প দেশবাসীর। বাংলাদেশে জঙ্গীবাদের কোন স্থান নেই। মাদ্রাসাগুলোতে এবং মসজিদে নিয়মিতভাবে প্রকাশিত ফতোয়ার আলোকে ধর্মের বাণী তথা জঙ্গীবাদবিরোধী বয়ান দেয়া হলে অবশ্যই তা কার্যকর ভূমিকা রাখবে। সাধারণ মানুষ বুঝতে সমর্থ হবে রাজনৈতিক স্বার্থে জঙ্গীবাদ উস্কে দেয়ার জন্যই ইসলামের ভুল ব্যাখ্যা প্রদান করা হচ্ছে।
×