ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মো. হুমায়ুন কবীর

পিএসসি পরীক্ষার বিষয়ে জরুরী সিদ্ধান্ত প্রয়োজন

প্রকাশিত: ০৪:০৯, ২০ জুন ২০১৬

পিএসসি পরীক্ষার বিষয়ে জরুরী সিদ্ধান্ত প্রয়োজন

নতুন শিক্ষানীতি প্রণীত হয়েছে। সেই শিক্ষানীতি দ্রুত কার্যকরের স্বার্থে এবছর (২০১৬) থেকেই প্রাথমিক শিক্ষা অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত উন্নীত করা হয়েছে। আর বর্তমানে প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থা অনুযায়ী পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত প্রাথমিক স্তর এবং অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত নিম্ন-মাধ্যমিক বা জুনিয়র স্কুল স্তর। সেই অনুযায়ী বর্তমানে পঞ্চম শ্রেণী শেষান্তে প্রাইমারী স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষা (পিএসসি) এবং অষ্টম শ্রেণি শেষান্তে জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষা (জেএসসি), মাদ্রাসার জন্য জুনিয়র দাখিল পরীক্ষা (জেডিসি)। প্রথাগত মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষার (এসএসসি) আগে এ দুটি সার্টিফিকেট কোর্স পরীক্ষা নিয়ে অনেক তর্ক-বিতর্ক ও মিশ্র প্রতিক্রিয়া রয়েছে। তার ওপর কোমলমতি শিশুদের জন্য রয়েছে সৃজনশীল নামক একটি সম্পূর্ণ নতুন পদ্ধতি যা সংশ্লিষ্ট শিক্ষকেরাও এখনো পুরোপুরি বুঝে উঠতে পারেননি। এমনি একটি অবস্থার প্রেক্ষাপটে বিগত প্রায় চার-পাঁচ বছর যাবৎ পিএসসি, জেএসসি, জেডিসি ইত্যাদি পরীক্ষা গৃহীত হয়ে আসছে। বিষয়টি নিয়ে প্রথমদিকে কিছুটা প্রতিবাদ, আলোচনা-সমালোচনা থাকলেও চার-পাঁচ বছর পেরিয়ে যাওয়ার পর তা এক প্রকার গা সওয়া হয়ে উঠেছিল শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষকদের। এটি আবারও আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসে প্রাথমিক শিক্ষাকে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত নিয়ে যাওয়ার জন্য। এখন দেখা যাক, কেন পিএসসি উঠিয়ে দেওয়ার ঘোষণা চাইছে অভিভাবকরা। প্রাথমিক স্তর পর্যন্ত পড়াশোনা করানোর জন্য সাধারণত শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরাই যথেষ্ট ছিল। কারণ পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত যে সব বই পাঠ্য রয়েছে সেগুলো পড়ানোর জন্য হাইস্কুল পাস করা একজন অভিভাবকই যথেষ্ট। তার মধ্যে যারা প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষায় অংশ নিতো তাদেরকে সাধারণত বিশেষ কোচিং কিংবা প্রাইভেট টিউটরের কাছে দেয়া হতো। কিন্তু এখন একেতো দুর্বোধ্য সৃজনশীল পদ্ধতি, তার ওপর পিএসসি, একইসঙ্গে আবার বৃত্তি পাওয়া না পাওয়ার বিষয়টিও জড়িত রয়েছে। দেখা গেছে, একটু ভালো এবং সচ্ছল পরিবারের সন্তানদেরকে নিতান্ত বাধ্য না হলে এখন আর কেউ সরকারী প্রাইমারী স্কুলে পড়ান না। এটি এখন শুধু শহরে নয়, প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলেও প্রসারিত হয়েছে। সেজন্য ভাল নামকরা স্কুলের কারিক্যুলাম অনুযায়ী পাঠ্য বইয়ের বাইরেও আরও একগাদা বই চাপিয়ে দিয়েছে তাদের স্কুল থেকে। সেজন্য দেখা গেছে, একজন পিএসসি পরীক্ষার্থীর জন্য বিএ-এমএ পরীক্ষার মতো গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এগুলোকে কেন্দ্র করে সারাদেশে গড়ে উঠেছে হাজারো কোচিং সেন্টার, টিউটোরিয়াল হোম ইত্যাদি। এমনকি প্রত্যেকটি বিষয়ের জন্য আলাদা আলাদা কোচিং কিংবা প্রাইভেট পড়ানো হয়ে থাকে। একদিকে স্কুল এবং সেখানকার ক্লাসের পড়া শেখা ও বাড়ির কাজ করা, আবার পিএসসিকে কেন্দ্র করে স্কুলের ভিতর কোচিং করানো, তারপর কোন একটি কোচিং সেন্টারে পড়ানো, সেখান থেকে আবার বিষষয়ভিত্তিক কোচিং যেমন- ইংরেজি, গণিত, বিজ্ঞান ইত্যাদি বিষয়ের জন্য আলাদাভাবে প্রাইভেট কোচিং করানো। এসব জায়গা থেকে কোন কিছু সলভ করে দেয় না। পাঠ বুঝিয়ে তারপর কিছু বাড়ির কাজ দিয়ে দেওয়া হয়, সেটা আবার বাড়িতে বাবা-মাকে করে দিতে হয়। এতে হিসাব করে দেখা গেছে, একজন ১১-১২ বছরের শিক্ষার্থী সকাল ছয়টা থেকে সন্ধে ছয়-সাতটা পর্যন্ত বাড়ির বাইরে কাটাতে হচ্ছে। সারাদিন শেষে সন্ধ্যায় বাসায় আসার পর আবার শুরু হয় বাবা-মায়ের পড়ানো এবং পড়া আদায়। তাতে যে বাসায় একজন পিএসসি পরীক্ষার্থী রয়েছে সে বাসায় সেবছরের জন্য কার্যত কোন সামাজিক আচারাদি বলতে কিছু থাকে না। আমি ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে বলছিÑ আমার বাসার আশেপাশে এমন অনেক পরীক্ষার্থী রয়েছে যাদের দিকে তাকানো যায় না। অথচ পঞ্চম শ্রেণীতে মাত্র ছয়টি পাঠ্যবই। এগুলো স্কুলে বসিয়েই বাচ্চাদের বছরে ৩-৪ বার রিভিশন দেওয়ানো সম্ভব। আমরা এ বয়সে পঞ্চম শ্রেণীতে পড়ার সময় পাখির বাসা ভাঙতে ভাঙতে এবং নদী-খাল-বিলে মাছ ধরতে সময় চলে গেছে। তারপরও ইনশাল্লাহ বৃত্তি পেয়েছিলাম। সেজন্যই আজ অভিভাবকদের মধ্যে পিএসসি নিয়ে একধরনের বিরক্তিবোধ তৈরি হয়েছে। সেজন্যই তারা এখন এটি বাতিল করার জন্য আন্দোলনে পর্যন্ত নামতে বাধ্য হয়েছেন। যেহেতু প্রাথমিক শিক্ষাকে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত করা হয়েছে, সেজন্য আগামী বছর থেকে পিএসসি থাকবে না সেটাতো পরিষ্কার হয়েছে। কিন্তু সমস্যা হয়েছে ২০১৬ সালেরটি নিয়ে। এ বিষয়টি নিয়ে ইতোমধ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে কিছু ব্যবস্থার কথা জানানো হয়েছে। কিন্তু এরই মধ্যে যেহেতু বছরের ছয়মাস অতিবাহিত হয়ে পড়েছে, পিএসসি পরীক্ষার আর মাত্র বাকি আছে বড় জোর পাঁচ মাস। সেজন্য শিক্ষার্থীদের মানসিক চাপ কমানোর জন্যই তা আগে ভাগেই জানা দরকার। তা যত তাড়াতাড়ি ও আগে জানা যাবে ততই সকলের জন্য মঙ্গল বয়ে আনবে। পরীক্ষা রেখে বা না রেখে যেভাবেই হোক এ বিষয়ে মন্ত্রণালয় দ্রুত একটি সিদ্ধান্ত নেবে বলে সবার আশা ও বিশ্বাস। লেখক : ডেপুটি রেজিস্ট্রার, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় যশধনরৎভসড়@ুধযড়ড়.পড়স
×