ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

হাবিপ্রবির মজার স্কুল

প্রকাশিত: ০৬:৫৭, ১৯ জুন ২০১৬

হাবিপ্রবির মজার স্কুল

নাম আসমা। বয়স ৯। পোশাকে আশাকে দারিদ্র্যতার স্পষ্ট ছাপ। তবে চোখেমুখে এক ধরনের বুদ্ধির দিপ্তী। বাবা নেই। মা ছুটা কাজ করে হাবিপ্রবির শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিব হলের ডাইনিংয়ে। প্রায়শ সে মায়ের সঙ্গে মায়ের কর্মস্থল হলের ডাইনিংয়ে আসে। সামর্থ্য না থাকায় মা সালমা তাকে স্কুলে ভর্তি করাতে পারেনি। আসমার সরলতা ও পড়ার আগ্রহ দেখে ওই হলের ছাত্রী ফারহানা তাকে হাবিপ্রবির মজার স্কুলে ভর্তি করে দেয়। এখন সে মজার স্কুলের নিয়মিত ছাত্রী। পড়ছে তৃতীয় শ্রেণীতে। হাবিব, ফারুক, ফারজানা, পাপিয়া, রুখসানার মতো ১৫০ জন সুবিধা বঞ্চিত ছেলেমেয়ে পড়ছে হাবিপ্রবির মজার স্কুলে। এখন তারা স্বপ্ন দেখছে। পথ শিশুদের এই চোখভরা স্বপ্নকে রাঙিয়ে দিতেই যাত্রা শুরু করেছে হাবিপ্রবি মজার স্কুল। হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের একঝাঁক উদ্যমী তরুণ শিক্ষার্থীর উদ্যোগে ২০১৫ সালের ৯ নবেম্বর যাত্রা শুরু হয়। বর্তমানে স্কুলটি হয়ে উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের পার্শ্ববর্তী এলাকার সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের স্বপ্নকে রাঙিয়ে তোলার আলোকবর্তিকা। হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনুষদের ও বর্ষের শিক্ষার্থীদের স্বেচ্ছাশ্রমে পরিচালিত হচ্ছে স্কুলটি। এ তরুণ শিক্ষার্থীরা তাদের পকেট খরচ থেকে কিছু অর্থ বাঁচিয়ে সুবিধাবঞ্চিত এই শিশুদের বই, খাতা, কলম ও টিফিনের জন্য ব্যয় করছে। স্কুলটির শিক্ষক রয়েছে ৪০ জন। শিশু শ্রেণী থেকে নবম শ্রেণী পর্যন্ত পাঠদান দেয়া হয় এখানে। শিক্ষকরা পর্যায়ক্রমে সপ্তাহে ছয় দিনই ক্লাস নেন এই স্কুলে। প্রতিদিন বিকেল ৪টা থেকে ৫টা পর্যন্ত চলে পথ শিশুদের ক্লাস। তবে শীতকালে ক্লাসের সময়সূচী কিছুটা এগিয়ে নিয়ে আসা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশের বিভিন্ন এলাকা থেকে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের বিভিন্নভাবে বুঝিয়ে মজার স্কুলে নিয়ে আসা হয়। হাবিপ্রবি স্কুলে অস্থায়ীভাবে ক্লাস নেয়া হয়। স্কুল ছুটির পর মজার স্কুলের ক্লাস শুরু হয়। বঞ্চনার শিকার কোন শিশু একবার মজার স্কুলে এলে আর ফিরতে চায় না। মজার স্কুলে আসা সব শিশু বিনামূল্যে বই, খাতা, কলম, রাবার, স্কেল, পেন্সিলসহ যাবতীয় শিক্ষা উপকরণ ও টিফিন সরবরাহ করা হয়। শুধু প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাই নয়, মজার স্কুল শিক্ষার্থীদের মানসিক পরিশুদ্ধতার জন্য সুস্থ সাংস্কৃতিক চর্চা এবং খেলাধুলার সুযোগও করে দেয়। মজার স্কুলের অন্যতম স্বেচ্ছাসেবক মোঃ রুবেল হোসেন জানান, আমাদের উচ্চশিক্ষার জন্য সরকার আমাদের পেছনে প্রচুর অর্থ ব্যয় করছে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের পার্শ্ববর্তী এলাকার অনেক ছিন্নমূল ও সুবিধাবঞ্চিত ছেলেমেয়ে রয়েছে যারা শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত। সামাজিক এই দায়বদ্ধতা থেকে আমরা মজার স্কুল প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেই। মমিনুল ইসলাম
×