ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

শিরোপা লড়াই থেকে ছিটকে গেল মোহামেডান

প্রকাশিত: ০৬:৪৭, ১৯ জুন ২০১৬

শিরোপা লড়াই থেকে ছিটকে গেল মোহামেডান

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লীগের সুপার লীগের দ্বিতীয় রাউন্ড শেষে লিজেন্ডস অব রূপগঞ্জ শীর্ষে ছিল। তাদের ১৮ পয়েন্ট ছিল। এরপর এক এক করে ভিক্টোরিয়া, আবাহনী, প্রাইম দোলেশ্বর, প্রাইম ব্যাংক ও মোহামেডান ছিল। প্রাইম দোলেশ্বর, প্রাইম ব্যাংক ও মোহামেডানের ১৪ পয়েন্ট ছিল। তৃতীয় রাউন্ডে দলগুলো খেলতে নামার আগে হিসেব ছিল এমন, যদি রূপগঞ্জ জিতে, তাহলে ১৪ পয়েন্টে থাকা যে দলই হারবে, তাদের বিদায় নিশ্চিত হয়ে যাবে। অর্থাৎ শিরোপা স্বপ্ন শেষ হয়ে যাবে। কারণ রূপগঞ্জ জেতা মানেই হচ্ছে ২০ পয়েন্ট হয়ে যাওয়া। দোলেশ্বর, প্রাইম ব্যাংক, মোহামেডানের মধ্যে যে দল হারবে, তাদের ১৪ পয়েন্টই থাকবে। বাকি থাকবে আর দুটি ম্যাচ খেলা। তা জিতলেও ২০ পয়েন্ট হওয়া সম্ভব নয় ১৪ পয়েন্টে থাকা হারা দলের। সেই হিসেবে সবার আগে বিদায় নিল মোহামেডান। প্রাইম দোলেশ্বরের কাছে ৭ উইকেটে হেরে মোহামেডানের শিরোপা স্বপ্ন চুরমার হয়ে গেল। দোলেশ্বরের সেই স্বপ্ন এখনও বেঁচে থাকল। একইদিনে ভিক্টোরিয়াকে ৬ উইকেটে হারিয়ে শিরোপার আরও কাছে চলে গেল আবাহনী। মোহামেডানের পর শিরোপা রেস থেকে ছিটকে পড়ল প্রাইম ব্যাংকও। দলটিকে ৫ উইকেটে হারিয়ে বিদায় করে দিয়ে পয়েন্ট তালিকার শীর্ষে থাকল রূপগঞ্জ। এমনদিনে একটি অঘটনও ঘটল। আবাহনীর তাসকিন আহমেদের বাউন্সারের শিকার হলেন ভিক্টোরিয়ার সোহরাওয়ার্দী শুভ। বলের আঘাত পেয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়লেন। শেষ পর্যন্ত হাসপাতালেও যেতে হলো। এক পেসার, দুই স্পিনেই বাজিমাত আবাহনীর ॥ ফেসবুকে নিজের ভ্যারিফাইড পেজে ভক্ত-সমর্থকদের সঙ্গে ভিডিওতে প্রশ্ন-উত্তর পর্বের শুরুটাই আবাহনী দিয়ে হয়েছিল অধিনায়ক তামিম ইকবালের। শুরুতেই বলেছিলেন, ‘আশা করি আমরাই (আবাহনী) শেষ পর্যন্ত চ্যাম্পিয়ন হব। তবে এ জন্য বাকি থাকা তিন ম্যাচের মধ্যে ভিক্টোরিয়া ও লিজেন্ডস অব রূপগঞ্জকে হারাতেই হবে। এ দুটি ম্যাচ আমাদের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ।’ সেই গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচের একটির কাটা দূর হয়ে গেল আবাহনীর। পেসার তাসকিন আহমেদ এবং দুই স্পিনার সাকিব আল হাসান ও সাকলায়েন সজিবের দুর্দান্ত বোলিং নৈপুণ্যে ভিক্টোরিয়াকে ১৩৯ রানেই অলআউট করে দেয় আবাহনী। ভিক্টোরিয়া খেলতে পারে মাত্র ৩৬.২ ওভার। তাসকিন, সাকিব ও সাকলায়েন তিনজনই তিনটি করে উইকেট শিকার করেন। এত কম রান স্কোরবোর্ডে থাকলে প্রতিপক্ষ হেসে খেলেই জেতার সুযোগ পায়। সেই জয় তুলেও নিয়েছে আবাহনী। ২৯.২ ওভারে ৪ উইকেট হারিয়ে ১৪০ রান করে জিতে যায়। ১২৪ বল হাতে রেখেই জয় পায় আবাহনী। তামিম ৩৩, ভারতের দিনেশ কার্তিক অপরাজিত ৩২ ও নাজমুল হোসেন শান্ত ২২ রান করেন। দিনটিতে যে একটি অঘটন ঘটে, সেটি মিরপুরে হওয়া এ ম্যাচেই। তাসকিনের বাউন্সারে আঘাত পেয়ে শুরুতে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। এরপর মাঠ ছাড়তে বাধ্য হন। হাসপাতালেও যেতে হয় সোহরাওয়ার্দীকে। ইনিংসের ২৫তম ওভারের ঘটনা। পাঁচ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়া ভিক্টোরিয়ার হয়ে ব্যাট করছেন সোহরাওয়ার্দী শুভ। তাসকিনের করা ওভারের তৃতীয় বলটি ছিল বাউন্সার। সেটি সরাসরি গিয়ে আঘাত করে সোহরাওয়ার্দীর মাথার পিছনে। হেলমেটের নিচে মাথার পেছনদিকে ঘাড়ের কাছে। বল লাগার পর শুভর নিঃশ্বাস নিতে সমস্যা হয়। মাটিতে বসে পড়েন তিনি। সাথে সাথেই সোহরাওয়ার্দীর কাছে এগিয়ে যান তাসকিন-সাকিব-তামিমসহ আবাহনীর খেলোয়াড়রা। কিছুক্ষণের মধ্যে মাঠে ঢোকে ফিজিও টিম। স্ট্রেচারে করে তাকে মাঠের বাইরে নিয়ে আসা হয়। এরপরই তাকে এ্যাম্বুলেন্সে করে এ্যাপোলো হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ডাক্তারী পরীক্ষা করে জানা গেছে, কোন শঙ্কা দানা বাঁধতে পারেনি। শুধু ঘাড়ের সার্ভাইকাল ভাটিকাতে ছোট একটা চিড় ধরা দিতে পারে। কিছুক্ষণ খেলা বন্ধও থাকে। আবার তা শুরু হয়। শেষ পর্যন্ত জয় তুলে নেয় আবাহনী। পয়েন্ট তালিকার দ্বিতীয় স্থানেও অবস্থান করছে আবাহনী। এখন আবাহনীর পয়েন্ট ভিক্টোরিয়ার চেয়ে ১ বেশি, ১৮ পয়েন্ট। মোহামেডানের স্বপ্ন শেষ করে দিল রকিবুল, নাসির ॥ আবাহনীর বিপক্ষে সুপার লীগের প্রথম রাউন্ডের রেজাল্ট কি হবে তা বিসিবির সভাতেই নির্ধারণ হবে। এর আগে যা হচ্ছে তা নিয়েই ভাবতে হচ্ছে প্রাইম দোলেশ্বরকে। সেই হিসেবে শনিবার যদি মোহামেডানের কাছে হেরে যেত দোলেশ্বর তাহলে হয়ত শিরোপা স্বপ্ন থেকে অনেক দূরে সরে যেত। এমনকি স্বপ্ন শেষও হয়ে যেতে পারত। কিন্তু রকিবুল হাসানের অপরাজিত ৮৬ রানের সঙ্গে নাসির হোসেনের অপরাজিত ৫২ রানের ঝড়ো ইনিংসে তা হয়নি। উল্টো রকিবুল ও নাসিরের ইনিংসে মোহামেডানের শিরোপা জেতার খায়েশই শেষ হয়ে গেল। শিরোপা জেতার স্বপ্ন আর বেঁচে থাকল না মোহামেডানের। আগে ব্যাট করে যখন ৪৯ ওভারে ২১৩ করতেই গুটিয়ে গেল মোহামেডান, তখনই সবাই আঁচ করতে পারে, শিরোপা স্বপ্ন ধূলিসাৎ হওয়ার ক্ষণ গণনা শুরু। শেষ পর্যন্ত তাই হলো। ৪৮ ওভারে ৩ উইকেট হারিয়ে ২১৪ রান করে জিতে যায় প্রাইম দোলেশ্বর। মোহামেডান যেখানে ১৪ পয়েন্টেই আটকে থাকল, সেখানে দোলেশ্বরের পয়েন্ট ভা-ারে মোট ১৬ পয়েন্ট জমা হয়ে গেল। শিরোপা জেতার আশাও বেঁচে থাকল। তিন অর্ধশতকেই কাত প্রাইম ব্যাংক ॥ হারলেই শিরোপা স্বপ্ন চুরমার হয়ে যাবে প্রাইম ব্যাংকের। এর বিপরীত আর কোন হিসেবই ছিল না। তাই হলো। রূপগঞ্জের কাছে সহজ হারে এবার আর শিরোপা জিততে পারল না বর্তমান চ্যাম্পিয়ন প্রাইম ব্যাংক। তিন অর্ধশতকের সঙ্গে এক ৪৭ রানের ইনিংসেই স্বপ্ন শেষ হয়ে যায় প্রাইম ব্যাংকের। আগে ব্যাট করে নুরুল হাসান সোহানের (৭৫) দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে ৫০ ওভারে ৮ উইকেট হারিয়ে ২২২ রান করে প্রাইম ব্যাংক। ভাল অবস্থা দাঁড় করায়। কিন্তু রূপগঞ্জের নাহিদুল ইসলাম (৬৪*), আসিফ আহমেদ (৫১), মোহাম্মদ মিঠুন (৫০), এ তিন ব্যাটসম্যানের অর্ধশতকের সঙ্গে সৌম্য সরকারের ৪৭ রানেই জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় রূপগঞ্জ। ৪৬.৫ ওভারে ৫ উইকেট হারিয়ে ২২৫ রান করে জিতে রূপগঞ্জ। এ জয়ে রূপগঞ্জ এককভাবেই ২০ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষস্থান দখল করে রেখেছে। স্কোর ॥ আবাহনী-ভিক্টোরিয়া ম্যাচ-মিরপুর ভিক্টোরিয়া ইনিংস ১৩৯/১০; ৩৬.২ ওভার (মুমিনুল ২৩, সোহরাওয়ার্দী ২১ (রি.হা.), আল আমিন ১৭, মজিদ ১৬; সাকলায়েন ৩/১৩, সাকিব ৩/২৮, তাসকিন ৩/৩০)। আবাহনী ইনিংস ১৪০/৪; ২৯.২ ওভার (তামিম ৩৩, কার্তিক ৩২*, শান্ত ২২, লিটন ১৮, মোসাদ্দেক ১৮*, সাকিব ৯; সিলভা ২/৩১)। ফল ॥ আবাহনী ৬ উইকেটে জয়ী। ম্যাচসেরা ॥ সাকিব আল হাসান (আবাহনী)। প্রাইম দোলেশ্বর-মোহামেডান ম্যাচ-ফতুল্লা মোহামেডান ইনিংস ২১৩/১০; ৪৯ ওভার (সৈকত ৫১, আরিফুল ৪৮, মুশফিক ২০, নাঈম ১৮, মিলন ১৭; রেজাউল ২/২৩)। প্রাইম দোলেশ্বর ইনিংস ২১৪/৩; ৪৮ ওভার (রকিবুল ৮৬*, নাসির ৫২*, রনি ২৮, বেবি ১৭)। ফল ॥ প্রাইম দোলেশ্বর ৭ উইকেটে জয়ী। ম্যাচসেরা ॥ নাসির হোসেন (প্রাইম দোলেশ্বর)। রূপগঞ্জ-প্রাইম ব্যাংক ম্যাচ-বিকেএসপি প্রাইম ব্যাংক ইনিংস ২২২/৮; ৫০ ওভার (সোহান ৭৫, তাইবুর ৩৫, শুভাগত ৩২, চাঁদ ৩০; নেগি ২/৩০)। রূপগঞ্জ ইনিংস ২২৫/৫; ৪৬.৫ ওভার (নাহিদুল ৬৪*, আসিফ ৫১, মিঠুন ৫০, সৌম্য ৪৭; শুভাগত ২/২২)। ফল ॥ রূপগঞ্জ ৫ উইকেটে জয়ী। ম্যাচসেরা ॥ নাহিদুল ইসলাম (রূপগঞ্জ)।
×